নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যাহা বলিব সত্য বলিব... নচেত চুপ থাকিব...

সত্য তখনই দাম পায়, যখন তার পাশে মিথ্যা নামক অদৃশ্য বস্তুটি স্থান পায়......

নহে মিথ্যা

নহে মিথ্যা › বিস্তারিত পোস্টঃ

গোলিয়ান টানেল

০২ রা মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৪:৩১





গোলিয়ান টানেল (Guoliang Tunnel) চায়নার তাইহ্যাং (Taihang) পর্বতমালায় অবস্থিত। আর এই টানেলের নাম গোলিয়ান করা হয়ছে এর উত্তরপশ্চিম দিকে অবস্থিত গোলিয়ান গ্রামের নামের সাথে মিল রেখে। মূলত এই গ্রামের কারনেই তৈরি করা হয়েছে এই বিস্ময় কর গোলিয়ান টানেল।



এই গোলিয়ান টানেল তৈরি করার পিছে বেশ ইতিহাস লুকিয়া আছে। আজ আপনাদের সেই গল্পই শুনাবো। ১৯৭২ সালের পূর্বে এই গোলিয়ান গ্রামে প্রবেশ করা বেশ কঠিন কাজ ছিল। এই তাইহ্যাং পর্বতমালার উপরে গোলিয়ান গ্রামের অবস্থান থাকার কারনে এখানে যাওয়া আসা প্রায় অসম্ভব ছিল। গোলিয়ান গ্রামে যেতে চাইলে এই পর্বত মালার উপর দিয়ে তৈরি আঁকাবাঁকা পথ ধরে, পাথরের তৈরি সিড়ি আর মই বেয়ে দীর্ঘ উঁচু পথ পাড়ি দেওয়া লাগত। এর ফলে বর্তমান জগত থেকে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এই গোলিয়ান গ্রাম। শহরে কোন ভারি যানবাহন যেতে না পারার কারনে এই গ্রামের কোন উন্নতি হচ্ছিল না। এমন কি সাধারন চিকিৎসার পর্যন্ত কোন ব্যাবস্থা করা সম্ভব হয়নি এই যোগাযোগ ব্যাবস্থার কারনে। এছাড়া টেলিফোনের লাইন বা ইলেক্ট্রিসিটি দেবার কোন ব্যাবস্থা করা যাচ্ছিল না এই গ্রামে। ৩০০ জনসংখ্যার এই গ্রাম প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পরেছিল।





আগের দিনে এরকম পাথরের তৈরি সিড়ি বেয়ে যাওয়া লাগত গোলিয়ান গ্রামে



কোন ভাবেই এই গ্রামের সাথে যোগাযোগ ব্যাবস্থার উন্নতি করা যাচ্ছিল না। এই উঁচু আর আঁকা বাকা পথে কোন ভাবেই পিচ ঢালাই দেওয়া পথ তৈরি করা সম্ভব ছিল না। অবশ্য ততকালিন সময়ে যদি চায়নিজ সরকার এই সব পাহাড় ভেংগে, সমতল ভূমি বানিয়ে রাস্তা বানাতেন তাহলে যোগযোগ ব্যাবস্থা স্থাপন করা সম্ভব হত। কিন্তু মাত্র ৩০০ জনের জন্য এরকম প্রাকৃতিক সৈন্দর্যের নিদর্শন পর্বতমালা ভেংগে রাস্তা বানানো মোটেও উচিত কাজ মনে হয়নি বিধায় তৎকালীন সরকার তেমন কোন ব্যাবস্থা নেয়নি।



সরকার কোন ব্যাবস্থা গ্রহন না করায়, ১৯৭২ সালে গ্রামের কয়েক জন মিলে উদ্দ্যোগ নেন যে তারা নিজেরাই এই পর্বতমালার কিনারা ধরে টানেল বানাবেন যাতে তার মধ্য দিয়ে রাস্তা তৈরি করা সম্ভব হয়। সেন মিংসেন (Shen Mingxin) তৎকালীন সময়ে গোলিয়ান গ্রামের প্রধান ছিলেন, আর তিনি গ্রামবাসীকে বোঝাতে সক্ষম হন যে এই রাস্তা নিজেদেরই তৈরি করতে হবে নিজেদের ভবিষ্যতের জন্যই।



গ্রামবাসিরা তার কথা অনুযায়ি নিজেদের গৃহপালিত পশু আর উতপাদিত খাদ্য দ্রব্য বিক্রি করে এই টানেল তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় জিনিষ কিনলেন। গ্রামের ১৩ জন শক্তিশালী লোক মিলে লেগে গেলেন এই টানেল তৈরির জন্য। ১৩ জন মিলে মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যেই বানিয়ে ফেললেন ১২০০ মিটার (১ মাইল থেকে কিছুটা ছোট) লম্বা এই টানেল, এটি ৫ মিটার (১৫ ফিট) উঁচু আর ৪ মিটার (১২ ফুট) চওড়া, মূলত একমুখ (One way) যাত্রার জন্য তারা এই রাস্তা বানিয়েছিলেন।



এই কাজ সত্যিকার অর্থেই বেশ শ্রমের এবং বিপদজনক এক কাজ। এই কাজ করার সময় এই ১৩ জনের মধ্যে কয়েকজন দূর্ঘটনায় পরে মারাও গিয়েছিলেন কিন্তু বাকিরা কাজ চালিয়ে যান। তাদের এই সাহসিকতা আর শ্রমের কারনেই তৈরি হল গোয়ালিয়ান টানেল যা সারা বিশ্বের কাছে বিস্ময় কর এক রাস্তা।



১৯৭৭ সালের ১লা মে এই রাস্তা গাড়ির জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়, আর এর মধ্য দিয়ে গোলিয়ান গ্রামে প্রথমবারের মত প্রবেশ করল মোটরযান।







উপরের ছবিতে দেখতে পাচ্ছেন তারা এই টানেল তৈরি করার সময় এক জায়গা এরকম খোলা রেখেছে। একবার চিন্তা করে দেখুন স্থাপনা বিষয়ে কোন শিক্ষা না থাকা সত্ত্বেও তারা কত সুন্দর আর দক্ষতার সাথে এই কাজটি সম্পন্ন করেছে। যা সত্যিকার অর্থেই প্রশংসার দাবি রাখে। অবশ্য এই টানেল বানানো বেশ বুদ্ধিমানের কাজ ছিল, কেননা এর ফলে এই পর্বতমালার অর্ধেক কাটার কষ্টো তাদের করতে হয়নি বরং তার মধ্য দিয়েই রাস্তা তৈরি করে ফেলেছেন। এই টানেলে মোট ৩০টা জানালা রাখা হয়েছে। এই জানালা গুলা তৈরি করার মূল উদ্দেশ্য ছিল, টানেল তৈরি করার সময় যে পাথর বের হবে তা সহজেই উপর থেকে নিচে ফেলে দেওয়া যাবে, আর তৈরির পরে এই জানালা গুলি যেমন আলোর যোগান দেয় তেমনে বাতাস প্রবাহে সহায়তা করে।







২০০০ সালের পর থেকে চাইনিজ সরকার সিদ্ধান্ত নেয় তাদের দেশকে অনেকটাই উন্মুক্ত করে দিবে বাইরের বিশ্বের জন্য। আর এর জন্য তারা চায়নায় ট্যুরিষ্টদের ঘোরাবার জন্য জায়গার সন্ধানে নামে। তখন তারা দেখতে পান এই গেলিয়ান টানেল বেশ বিস্ময়কর, এছাড়াও গোলিয়ান গ্রামের বেশির ভাগ বাড়ি পাথর কেটে তৈরি করার জন্য তা বেশ দৃষ্টি আকর্ষন যোগ্য। তখন তারা এই গোলিয়ানকে চায়নার অন্যতম টুরিস্ট স্পটে বানানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন।



এক সময়ের সম্পূর্ন চায়না থেকে আলাদা অনুন্নত এই গোলিয়ান গ্রাম নিজেদের প্রচেষ্টায় আজ পরিনত হয়েছে চায়নার সবথেকে জনপ্রিয় টুরিস্ট স্পট গুলির মধ্যে একটিতে। আর এরই সাথে গোলিয়ান গ্রাম থেকে এখন পরিনত হয়েছে শহরে। হাসপাতাল, স্কুল, কলেজ, রাস্তাঘাট, ব্রীজ কি নেই এখানে। নিগৃহীত এই গ্রাম এখন অনেক অনেক উন্নত।







সেই ১৩ জন আর গ্রামবাসি যারা নিজেদের সব কিছু বিক্রি করে, তাদের শ্রম দিয়ে তৈরি করেছিল এই টানেল। তারা জানতো না যে তাদের তৈরি এই টানেল কোন দিন সম্পন্ন হবে কিনা, তারা জানত না টানেল তৈরি হলেও তা টিকে থাকবে কিনা, আর তৈরি হলেও আসলেই উপকারে আসবে কিনা। তারপরেও তারা করেছে, অনেকটা অসাধ্যকে সাধন করেছে তারা। কোন কিছু চিন্তা না করেই ৫ বছর অকল্পনিয় কষ্টো করেছে এই টানেল তৈরির জন্য।



তারা এই টানেল তৈরি করতে যে জুয়া খেলেছিল আজ তারা সে খেলায় জয়ি। আর সেই জয় এনে দিয়েছে তাদের অনেক কিছু যা তারা কোন দিন কল্পনাও করেনি।







কি গোলিয়ান টানেল তৈরির ইতিহাস পড়ে নিশ্চই এখানে একবার ঘুরতে যেতে মন চাইছে? তা তো চাবেই কেননা কত যে সুন্দর এই জায়গা তা না গেলে নিশ্চই বোঝা যাবে না। তবে মনে রাখবেন, এই গোলিয়ান গ্রামের অবস্থান এই পর্বত মালার একদম উপরে আর এই রাস্তা বাম দিকে মোড় নিয়ে নিচু থেকে উপর দিকে উঠে গিয়েছে। আর এই টানেলের ৩০টি বৃত্তাকার আর চৌকনাকার জানালা থাকলেও তা কিন্তু এই টানেল আলোকিত করে রাখার জন্য মোটেও যথেষ্ট না, এই অন্ধকার আবার এই আলো। আপনি যদি এই টানেলের মধ্যে দিয়ে হাটতে চান তাহলে একটু দেখে শুনে হাটবেন কেননা অনেক বাক আর চারিদিকে আটকানো থাকার কারনে গাড়ি আপনার সামনে থেকে আসছে না পিছন থেকে সেটা আপনি কখনই বুঝতে পারবেন না। আর গাড়ি চালাতে গেলে তো আরো সাবধান। কেননা আপনার একটু অসাবধানতার কারনে হয়ত নিজের জীবন হারাতে পারেন।



শুধু এই কটি ছবি দেখে নিশ্চই মন ভরছে না? তাহলে চলুন এই টানেল নিয়ে বানানো একটা ভিডিও সাথে আরো অনেক ছবি দেখে নেই। তাহলে হয়ত আরেকটু বেশি অনুভব করা যাবে এই টানেলে ঘুরতে যাবার রোমাঞ্চকর অনুভূতি। কি বলেন??



"আরো ছবি এবং ভিডিও দেখুন"

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৪:৩৮

নীল আকাশ আর তারা বলেছেন: ++++++++++++

০২ রা মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৪:৪১

নহে মিথ্যা বলেছেন: :) :) :) :) :) :) :) :) :) :) :) :)

২| ০২ রা মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৫:১৬

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: আমাদের এইরকম ১৩ জন লোক আর এরকম স্বপ্ন দেখার নেতা দরকার।

আমারও হতে পারবে বিশ্বের সেরা এক দেশ!


দারুন জিনিষ শেয়ারের জন্য ধন্যবাদ্

০২ রা মার্চ, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:১৩

নহে মিথ্যা বলেছেন: একদম ঠিক বলেছেন...

৩| ০২ রা মার্চ, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৩৬

হতাশ নািবক বলেছেন: সত্যিই তাই ,

আমাদের এইরকম ১৩ জন লোক আর এরকম স্বপ্ন দেখার নেতা দরকার।

আমারও হতে পারবে বিশ্বের সেরা এক দেশ!

০২ রা মার্চ, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৫৩

নহে মিথ্যা বলেছেন: ইনশা-আল্লাহ... কোন জাতীর যদি যোগ্যতা থাকে তাহলে সেই জাতীকে এগিয়ে নিতে এরকম নেতা জন্মাবেই... তাতে কোন সন্দেহ নেই...

৪| ০২ রা মার্চ, ২০১৪ রাত ৯:৫৫

সুমন কর বলেছেন: পরে পড়তে হবে। শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।

০২ রা মার্চ, ২০১৪ রাত ১০:১১

নহে মিথ্যা বলেছেন: তাহলে আপনার পড়ার পরে... পড়ার জন্য ধন্যবাদ... =p~ =p~

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.