নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এখনো জোৎস্নাজলে- শিখিনি সাঁতার

‘অবিশ্বাস’ চিন্তার স্বাধীনতারই নামান্তর।

দ্বিজু

"রঙিন কাফনে মোড়া উৎসুক চোখে ছায়া ছায়া প্রতিবিম্ব দেখি মানুষ দেখি না।।" ভাবতাছি চান্দে যামুগা, হ আর থাকতাম না পিরথিবিত! কয়দিন আগে চানমিয়া যেই খেলাডা দেহাইলো! পুরা সুইয্যের মুখটাই ঢাইক্কা দিল! আবার হেই চান্দের জমি বেইচ্চা কোন বেডা নাকি কুডিপতি! আমি চান্দেই যামুগা।হুঞ্ছি আম্রিকা নাকি চান্দে গেছে ৪০ বছর পার হইয়া গেছে, এহনো লোকাল বাস অয় নাই! পাচফুট বিসা লাগবোনি!

দ্বিজু › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঘুড্ডি-১ (ছেলেবেলা নিয়ে একটি গল্পের প্লট)

২৯ শে জুলাই, ২০০৯ দুপুর ২:৫০





"আরে! আরে! এইডা এম্নে টান দিছ না, এম্নে হ্যছকা টান দিলে ঘুড্ডি তো গোত্তা খাইবই"

শুরু হলো আমার ওস্তাদ এর ভাষণ।

"আইচ্ছা তুই দেহাইয়া দে, বাষণ দেছ ক্যান? কামের কাম নাই খালি ওস্তাদী!"

"দে তুই নাডাই আমারে দে, এই দ্যাখ, এমনে এট্টু সুতা দিবি আরেট্টু টান দিবি"



আমি ঈর্শা চোখে তাকিয়ে রইলাম। ঘুড্ডি সে ভালোই ঊড়ায়, এইতো সেদিন, কালু-মনুদের তিনটা ঘুড্ডি কেটে দিয়ে আমরা সগৌরবে বাড়ি ফিরলাম, যদিও আমাদের এই বাহাদুরিতে আম্মা খুশি হলেন না অতটুকুও, তাঁর কাছে ঘুড়ি কাটাকাটি মানেই ধংশাত্মক খেলা। আমাদের গৌরবের গল্পে খুশি না হলেন, দিলেন আমাকে একটা খুশির খবর- "তোর নানি এইবার ইস্কিমের দান বেইচ্চা, তোরে একটা বল কিনা দিবো কইছে"।

আমার আনন্দের অপেক্ষা শুরু হলো, এমনিতেই আমি গ্রামের ছোটদের মহলে রাজা, একটা ফুটবল যদি ওদের জন্য প্রতিদিন মাঠে নিয়ে যেতে পারি, তাহলে মহারাজা হতে আর দেরি নেই।



"অই সাজান, অইদিন কালু যে তার শ্যাষ ঘুড্ডিডার পিছনে দৌর দিল, পাইছিলোনিরে?" বলে নেই, ওর নাম আসলে সাহজাহান, কালু আর মনু দুই ভাই আমাদের গ্রামের বিচ্ছু টাইপের ছেলে, বাকিরা সবাই ওদের কে ভয় পায়।

"হ আর পাইছে! ঠিকই হইছে! আমি কি অরে লাগাইতে কইছি আমারটার লগে! অই-ত লাগাইল আগে! আমগো নীল ঘুড্ডিডা কাটলো ক্যা! আমি কত কষ্ট কইরা বানাইলাম"

"আমারে ঘুড্ডি বানানো শিহাবি?"

"তোরে না ডাবুস বানান শিহাইলাম"

"অইডা না, আমারে পানক, বউ-পানক, আর বাক্স গুড্ডি বানান শিহাবি"

"বাক্স ঘুড্ডিত অনেকডি বাঁশের বেত লাগবো, এত বেত পামু কই!"

"আরে! আমার নানীর মুড়া আছে, আস্তা বাঁশ একটা নিয়া আমু। আইচ্ছা আইজকা রাবিয়া কইরে? আফাতারার লগে?"

"বুবু লইয়া গেছে হাঁটতে, বড়াব্বাগো বাইত"

"কার বুবু, আমার না তোর?"



ওদের সাথে আমাদের সম্পর্কের মারপ্যাঁচ আমি আজও বুঝে উঠতে পারিনি, ওর মা আমার মা কে খালা ডাকে, যদিও বয়সে বুবুই অনেক বড় আম্মার চেয়ে। আম্মাও তাকে খালা ডাকে। সাহজাহান-রাবিয়া ওরা আম্মাকে বুবু ডাকে, আবার আমরাও ওদের মাকে বুবু ডাকি। রাবিয়া আমার মতোই বয়স, আমাদের সাথেই থাকতে তার পছন্দ, কিন্তু আমার বড় দুই বোন বলে- "অয় মাইয়া মানুষ তোগো লগে মাঠে ঘুরবো ক্যান?" আমি মিস করি ওকে, কারন ও না থাকলে সাহজাহান সাহেব ওস্তাদিটা কেবল আমার উপরই করে। সাহজাহান, আমার সবচে ভালো বন্ধু, আমার চেয়ে তিন থেকে চার বছরের বড়, আম্মা প্রায়ই বলেন ওর বয়স নাকি ১২/১৩ হবে, ওকে আমার ভাই বলে ডাকতে হবে। সাইজ অবশ্য আমার সমানই, তবে গায়ে অনেক শক্তি আর মাথায় অনেক বুদ্ধি। আমার ওকে 'সাজান' বলে ডাকতেই ভালো লাগে।

"আমার বুবু, তোর আম্মা"

"আমার বুবু কই?"

"মা'দো আইলারগঞ্জ গেছে, আব্বা'র মিলাদ দিত"

"মিলাদ দিবো ক্যান?"

"হেতে মরছে, এল্লাইগা" সাহজাহান মনে হয়, আমার প্রশ্নবানে কিছুটা বিরক্ত।

"মরছে ক্যান?"

"হেইডা আমি ক্যামনে কমু! আমিদো তহন ছোড আছলাম" বিরক্ত হলেও সন্ধার পূর্ব পর্যন্ত, প্রতিনিয়ত আমার অসংখ প্রশ্নের উত্তর সাহজাহান কে দিতে হয়, কারন সন্ধার পর পড়তে বসলে আমিইতো ওর আসল ওস্তাদ, ওকে এখনো অ-আ-ক-খ শিখাচ্ছি, মানে নার্সারী, আর আমি ওর দুই ক্লাস উপরের ছাত্র। প্রায় দুই বছর হলো, ও এখনো অ-আ-ক-খ এগুলো শেষ করতে পারেনি। আমি বুঝিনা ওর সারাদিন এর বুদ্ধিগুলো দিয়ে অ এগুলো শিখতে পারছ না কেনো! ওর মা বলে, "বাই, অয় সব বুদ্দি মাডেই রাইখ্যা দিয়া আইয়ে" দু-বছর হলো ওরা আমাদের এখানে এসেছে।



আমার মায়ের স্বভাব হলো খাবার এর সময় যদি কোনো ভিখিরি ও আসে তাকে ছাড়া সে খাবে না। দু-বছর আগে কোনো একটা বন্যার পরপর একদিন এক ভর-দুপুরে বুবু ভিক্ষে করতেই এসেছিলো আমাদের বাড়ি, সাথে ফুটফুটে দুটো ছেলেমেয়ে। আমরা তিন ভাই-বোন তখন মাত্র স্কুল থেকে ফিরেছি, হাত মুখ ধুয়ে খেতে বসবো। দেখে মোটেই ভিখিরি মনে হচ্ছিলো না ওঁদের, আম্মা জিজ্ঞেস করলেন, "খালা আফনের বাড়ি কই?""ভাত খাইছেন?""ভিক্ষা করেন ক্যান?" আরো অনেক প্রশ্ন, সব মনে নেই, গল্পে গল্পে জানা গেলো- সাহজাহান দের বাবা নেই, কিছু জমি ছিলো, বুবুই দেখাশোনা করে সংসার চালাতেন, বন্যায় ঘর-দোর-জমি-ফসল সব ভাসিয়ে নিয়ে গেছে।



এরপর থেকে ওরা আমাদের বাড়িতেই আছে। গ্রামের হিসেবে আমরা ধনীই বলা চলে। রান্না ঘর, গরু-ঘর ছাড়াও আমাদের তিনটে ঘর, মানুষ আমরা চারজন, আম্মা আমার বড় দুই আপু আর আমি, সবাই একঘরেই থাকি, তাই ওদের কে একটা ঘর দিয়ে দেয়া হলো।

আব্বু কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে এখন। আমাদের কে ছাড়া সে নাকি আর থাকতে পারছে না, আমাদের ও ক্যান্টনমেন্ট ভালো লাগে না, অনেক বছর তো থাকলাম। আম্মা বলে আব্বু নাকি মিলিটারী চাকুরী ছেড়ে দিয়ে ব্যবসা শুরু করবে, সাহজাহান আরেকটু বড় হলে আব্বু কে বলবে ওকে বাজার এ একটা দোকান করে দিতে। আমার তো আনন্দ, কি মজা! আমিও তখন ওর সাথে বেচাকেনা করবো, অনেক রঙ এর, অনেক ধরনের ঘুড়ির সুতো থাকবে আমাদের দোকানে। ওই ব্যাটা হাকিমের দোকানে ভালো সুতা পাওয়া যায় না, বাজারে আর কারো কাছেতো সুতাই নেই। ভালো সুতা কিনতে হলে ঊত্তরের মাঠের সেই বৈশাখী মেলার জন্য বছর ধরে বসে থাকো। এবার মেলায় আব্বু আসলে মোটা নাইলনের সুতা কিনে দিতে বলবো, সাহজাহান বলেছে মোটা নাইলনের সুতা না হলে বাক্স ঘুঁড়ি উড়ানো যায় না।



বিঃ দ্রঃ বানান ভুল থাকতে পারে, পরিক্ষার খাতাও আমি লেখার পর দ্বিতীয়বার দেখিনি কখনো। ক্ষমা করবেন, ধরিয়ে দিলে ঊপকৃত হবো

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে জুলাই, ২০০৯ বিকাল ৩:০৭

আকাশচুরি বলেছেন: ভালো লাগলো:)

২৯ শে জুলাই, ২০০৯ বিকাল ৩:২৬

দ্বিজু বলেছেন: ধন্যবাদ।
লিখবো কি লিখবো না, দ্বিধা-দ্বন্দ্ব থেকে লিখা, অনেকদিন পর।

২| ২৯ শে জুলাই, ২০০৯ বিকাল ৩:৩৮

তাজা কলম বলেছেন: ভাষা ব্যবহারে সাবলীলতা ভালো লেগেছে। ++

২৯ শে জুলাই, ২০০৯ বিকাল ৩:৪৭

দ্বিজু বলেছেন: funny post নয় তবু একটা icon ব্যবহার এর লোভ সামলাতে পারছি না।

৩| ২৯ শে জুলাই, ২০০৯ বিকাল ৩:৫৩

সুবীর বোস বলেছেন: ভালো লাগল...

২৯ শে জুলাই, ২০০৯ বিকাল ৪:০৬

দ্বিজু বলেছেন: ধন্যবাদ। ঃ)

৪| ২৯ শে জুলাই, ২০০৯ রাত ৯:৪৯

নুভান বলেছেন: বস আমার ছবিডা লন...আরউ জুস :D

৫| ৩০ শে জুলাই, ২০০৯ সকাল ৯:০৬

হাসান মাহবুব বলেছেন: +++

৬| ৩১ শে জুলাই, ২০০৯ দুপুর ১২:৪৮

দ্বিজু বলেছেন: ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.