নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বই এর পোকা, স্কেচ এর নেশা, পেশায় স্থপতী আর বাংলাদেশের প্রতি অসীম ভালবাসা
অনেকদিন পরে কিছু লিখতে বসলাম...সময়ের অভাব, সেই সাথে কি লিখবো ভেবে পাইনা! মাঝেমাঝে মনে হয়, রাজীব নুর ভাইয়ের মত নিত্যদিনের কড়চাই লিখি..সবাইতো দেখি বেশ পছন্দও করে সেটা! সেটাই না হয় লিখি আজ...
প্রতিদিনের মত সেদিনও আ্যলার্মের বিশ্রী শব্দে ঘুম ভেংগে যায়, অনিচ্ছা সত্বেও ঘুমঘুম চোখে উঠে একেএকে গৎবাধা কাজ শুরু হয়,---ফজরের নামাজ পড়ে ছেলেকে ডেকে তোলা, সবার নাশতা রেডী করা, দ্রুত নিজে রেডী হওয়া, ছেলেকে স্কুলে ড্রপ করে আমরা দুজন বেড়িয়ে পরি অফিসের উদ্যেসে..সে যে কি ভয়াবহ ট্রাফিক জ্যাম ঠেলে অফিসে আসি!.প্রায়ই লেট হয়, আমার ফ্লেক্স টাইম থাকলেও আমার বরের বেশ টাইট শিডিউল, তাই প্রতিদিনই একই যুদ্ধ, যত তাড়াতাড়ি পারা যায়, ট্রাফিক ঠেলে তত দ্রুত কাজে আসার সংগ্রাম!
আমাদের এই অফিসপাড়া আগের মত ছিমছাম আর নেই, নিত্যনতুন হাইরাইজ বিলডিং উঠছে এখানে, কোন পার্কিং স্পেস নেই বললেই চলে,--সেই সাথে ট্যাকসি, উবার দের অত্যাচার..নিজেদের সবুজ ঘন গাছপালায় ভরা, ফাকাফাকা এলাকা ছেড়ে এই রুক্ষ, ব্যস্ত, সবুজহীন এলাকায় আসলে মনটা তিক্ত, বিষন্ন হয়ে ওঠে..আমার কাজ তো আরও কস্টের--কোনরকমে গাড়ী পার্ক করেই ছুটি আবার বিভিন্ন গন্তেব্য, ইন্সপেকশনের কাজে! কয়েকদিন আগে গিয়েছিলাম ফার রকওয়া নামক স্থানে, নতুন স্কুল বিল্ডিং হচ্ছে, সেটার কোড ইন্সপেকশনে। শহরটা খুবি সুন্দর, একেবারে আটলান্টিক ঘেষা, সাগরের নোনতা হাওয়ায় আর গাংচিলের শব্দে এলাকাটা মুখর!...যাহোক, কাজ শেষে বেলা বারো টার দিকে আবার ফিরছিলাম অফিসে বেল্ট পার্কওয়ে হাইওয়ে ধরে। ফেরার দিকের ৩ লেনের ডান লেনে ছিলাম আমি, এমনিতেই এসময়ে ট্রাফিক স্লো, তাই আমার বাম দিকের মাঝের লেনের গাড়ীটা খুবি স্লো যাচিছল আর তার বামের, মানে একেবারে লাস্ট বামের লেনের গাড়ীটাও মোটামুটি ধীরেই যাচিছল! এমন সময় পেছনের এক অধৈর্য গাড়ী প্রচন্ড স্পীডে আমার আর মাঝের লেনের গাড়ীর মধ্যে কেটে বের হয়ে গেল, ধড়াক করে উঠল আমার আত্মা..ইয়া আল্লাহ খুব বেঁচে গেছি,..এটা ভাবতে না ভাবতেই আবার মুহ্বর্তের মধ্যে আরেক টা গাড়ী ভয়াবহ গতীতে (৯০-১০০ মাইল/ঘন্টা) আমাদের মাঝ দিয়ে ছুটে বের হয়ে গেল, আমার গাড়ীর বাম দিকটা প্রচন্ড ভাবে আঘাত করে! ঐ সুক্ষ্ম সময়ের মধ্যে আমার চোখে ভেসে এল আব্বা, আম্মা আর আমার বাচ্চাদের মুখগুলো..মনে হল মারা যাচিছ, সেই সাথে কেমন হতভম্ব হয়ে গেলাম, না না বেঁচে আছি!...আমার গাড়ীটা সেই গাড়ীর ধাক্কায় ডান দিকের রেলিং ভেংগে হাইওয়ের পাশে ছিটকে পড়ার কথা, কিনতু কিভাবে যে বেঁচে গেলাম! শুধু বাম দিকের রিয়ার ভীউ মিরর টা ভেগে ঝুলে পড়ল..কি যে অসহনীয় অবস্থা! বা দিকের পেছনের লেনের কিছুই দেখতে পাচ্ছিনা, লেন পরিবর্তনও করতে পারছিনা! এ সমস্ত ক্ষেত্রে সাধারনত আমেরিকানরা দাড়িয়ে পড়ে কোন নিরাপদ কার্বে, পুলিশ আসা পর্যন্ত..কিন্ত ঐ হারামীটা আমাকের গাড়ীকে মেরে ছুটে পালিয়ে গেল! (হয়ত ঐ দুটা গাড়ী একজন আরেকজন কে চেইস করছিল!) ---আমি কোন রকমে প্রায় ৩৫ মাইল এভাবে মিরর ছাড়া চালিয়ে বাসায় ফেরত চলে এলাম! ১০/১৫ মিনিট রেস্ট নিলাম, অন্য কেঊ হলে ক্লান্ত, বিদ্ধস্ত হয়ে বিছানায় গড়িয়ে পড়ত..আমি পারলাম না, আবার কাজে নেমে পড়লাম..ঐ যে কি বলছিলাম, সারাদিনের কড়চা লিখব! সকালেই মেয়ে আমাকে টেক্সট করেছিলো যে, ও আজকে আসতে চায় নিউ ইয়রকে, ওর নাকি খুব ভাত দিয়ে আমার রান্না করা ঝাল মুরগীর মাংস খেতে ইচ্ছে করছে!..ক্লাস শেষের পরে ও টিকিট কেটে বোস্টন থেকে রওয়ানাও দিয়ে দিলো! তাই আবার যুদ্ধে নামলাম--বাজার করে আনলাম, ওর পছন্দের খাবারগুলো একে একে সব রাননা করলাম--মুরগীর ঝোল, আলু ভরতা, ডাল ভরতা, চিংড়ী ভুনা!..রাত সাড়ে আট টায় ও ম্যানহাটানে এসে পৌছালো, ওকে তুলে বাড়ী ফিরতে রাত প্রায় দশটা বেজে গেল। আমার মেয়ের বুভুক্ষের মতো খাওয়া দেখে আমার সব কস্ট নিমিষে যেন উধাও হয়ে গেল!..খাওয়া শেষে সবাই মিলে নেটফ্লিক্সের মুভী দেখা শুরু করলাম, বাইরে তখন গভীর রাত..একটু হালকা বৃস্টি হচ্ছে, মেয়ে গুটিসুটি মেরে একই কম্বলের নীচে আমার কোল ঘেষে শুয়ে আছে---একটু অপরাধী ভাব নিয়ে মিস্টি হেসে বলল--"আম্মু হঠাৎ করেই আসলাম, আসলে এই উইকেনডে তেমন পড়ার চাপ নেই!" ....মানুষ সুখের পেছনে কতই না ছোটাছুটি করে,..অথচ এই ছোট ছোট গভীর সুখ গুলো আমরা একটু খুঁজলেই পেয়ে যাই....
০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ৮:৫৬
কাতিআশা বলেছেন: পুলিশ কে ৯১১ এ ফোন করার সুযোগ পাইনি..ব্যাটা আগেই এক নিমেষে ভেগে গিয়েছিল! আর ঝামেলা বাড়াতে চাইনি.. পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া!
২| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ৮:১৫
শের শায়রী বলেছেন: আপা বিদেশে দেখি অ্যাক্সিডেন্ট করলেই প্যা প্যু করে পুলিশ হাজির সাহায্য করার জন্য। আপনার কাছে যায় নি? দ্বিতীয়তঃ আপনার মেয়ের প্রিয় খাবার আমারো
৩| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ৯:১৯
রাজীব নুর বলেছেন: আপনি আমার চেয়ে হাজার গুন বেশি সুন্দর লিখেন।
আরো লিখুন।
০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ৮:৫৭
কাতিআশা বলেছেন: না না রাজীব ভাই আপনি অনেক ভাল লেখেন..পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া!
৪| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১২:৪৪
ঢাবিয়ান বলেছেন: সুন্দর লিখেছেন। বিদেশের জীবন আসলেই প্রতিনিয়ত এক যুদ্ধ । দেশে থাকা অনেকেই মনে করে বিদেশ মানেই কেবল আরাম আয়েশ আর এঞ্জয়মেন্ট।
০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ৮:৫৯
কাতিআশা বলেছেন: আসলেও তাই...প্রতিদিন নতুন করে এক যুদ্ধ ! অনেক ধন্যবাদ পড়ার জন্য !
৫| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ৮:৩৩
নেওয়াজ আলি বলেছেন: দারুণ প্রকাশ ।
০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ৮:৫৯
কাতিআশা বলেছেন: ভাল লাগার জন্য অনেক ধন্যবাদ ভাই!
৬| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১১:২৪
মোহাম্মাদ আব্দুলহাক বলেছেন: মানুষ সুখের পেছনে কতই না ছোটাছুটি করে,..অথচ এই ছোট ছোট গভীর সুখ গুলো আমরা একটু খুঁজলেই পেয়ে যাই....
এগুলোই আসল সুখ।
১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১০:৫৬
কাতিআশা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ভাই
©somewhere in net ltd.
১| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ৮:১৩
শের শায়রী বলেছেন: আপা বিদেশে দেখি অ্যাক্সিডেন্ট করলেই প্যা প্যু করে পুলিশ হাজির সাহায্য করার জন্য। আপনার কাছে যায় নি? দ্বিতীয়তঃ আপনার মেয়ের প্রিয় খাবার আমারো