![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পুরনো বইয়ের মান যাচাই না করেই হুমড়ি খেয়ে পড়েছিল ওরা চার বন্ধু। বইগুলো বিক্রি হওয়ায় দোকানদার গণেশ মনে মনে বেশ খুশিই ছিল। কিন্তু দ্বিতীয়বারে তপুর এখানে আসা ও তার কথাগুলো গণেশের কাছে রহস্যময় ঠেকেছে। ছেলেটি প্রথম বইটির পরের অংশগুলোও চায়। প্রথমটিতে নাকি গোপন কি একটা জিনিসের শেষ হয়নি। তপু বলছিল সে রহস্যের কথা জানলে নাকি গণেশ ওদের কাছে বইগুলো বিক্রিই করতোনা। আসলেই কী এমন লেখা আছে বইগুলোতে!!!!
জানুয়ারী, ১৯৮৬ ইং।
সকাল হতে না হতেই রবি রিফাতের বাড়িতে হাযির। রিফাত এতে একটুও আশ্চর্য হলনা। কারণ সেই তৌরী হচ্ছিল ওদের বাড়িতে যাবে বলে। রিফাত রবিকে নিয়ে ওর ঘরে গেল। রবি নিজের থাকা বইগুলোও সাথে নিয়ে এসেছিল। রিফাত সেগুলোই মনোযোগ দিয়ে পড়ছিল। আর রবি রিফাতেরগুলো। দুজনেই গভীর চিন্তায় মগ্ন। বিশ্বাসই করতে পারছিলনা পৃথিবীতে এমন ঘটনা ঘটে। তাও আবার তাদের খুব কাছে কোথাও।
রবি বইয়ের পাতা উল্টোতে উল্টোতে বলল, “ব্যাপরাটা বুঝলামনা, বইগুলোতে আসলে কী বলতে চাচ্ছে?”
রিফাত উত্তরে বলল, “আমিও পরিষ্কার বুঝলামনা। শুধু এতটুকু বুঝতে পাড়লাম এই এলাকার কোন এক জায়গায় এইখানকার প্রাচীন কোন এক জমিদার পুজো করতে দলবল নিয়ে গহীন পাহাড়ি বনে যেত। এই দুইটা বইয়ে শুধু তাদের সেই পুণ্যযাত্রার বর্ননা দেয়া আছে।”
রবি একটু যোগ করল, “জমিদারের সাথে কি ধরনের মানুষ যেত, কি ধরনের পুজোর উপকরণ সাথে নেয়া হত তাও বলা আছে।”
“কিন্তু তাতে আমাদের লাভ কি? সনাতন ধর্মালম্বীদের বহু মন্দির আছে গভীর বনের পাহাড়ের চুড়ায়, সেখানে অনেক প্রবীণ সন্যাসীরাও থাকে। সুতরাং ভক্ত হিসেবে সে জমিদার মশায় সেখানে পুজো করতে যেতেই পারেন, এতে আশ্চর্যের কিছু নেই”।
রিফাতের কথা শেষ না হতেই আড়াল থেকে কেউ বলে উঠল, “আছে আছে বন্ধু, আশ্চর্যের অনেক কিছু আছে!” এতক্ষণধরে লুকিয়ে ওদের দুইজনের কথা শুনছিল সাগর।
সাগরের কথা শুনে একটু উত্তেজিত হল ওরা দুইজন। রবি বলল, “সত্যি এর বাইরে আরও কিছু আছে? কি সেটা?” একটু আবেগ তাড়িতই হয়ে গেল সাগর।
সাগর ওদের পাশে এসে বসে বলল, “তোরা নিশ্চই জামিদারের সাথে কোন সুদর্শন বালকের বর্ননা পেয়েছিস”।
রবি বলল, “হু পেয়েছি, কিন্তু সে তো মাত্র এক জায়গায়, সামন্য একটু কথা বলা আছে”।
“আমার বইয়ে কিন্তু বেশ ভাল ভাবেই সেটা বলা আছে। জানিস কেন সেই বালককে পুজোতে নিয়ে যাওয়া হত?”
ওর প্রশ্নটা শুনে ওদের দুজনের চোখই চকচক করে উঠল। একসাথেই বলে ফেলল, “কেন?”
সাগর বলল, “কোন পাহাড়ের গুহায় নিয়ে গিয়ে ওকে বলি দেয়া হত। দুর্ভাগ্যবশত আমার বইটা বোধেহয় শেষ বই। এটা লেখা শেষ হয়নি। তাই অনেক কিছুই অজানা থেকে গেছে। সেই পাহাড় কোথায় আর গুহাটাই বা কোথায় তা আমরা জানিনা। কেন সেই বালককে বলি দেয়া হয়েছিল তাও জানিনা। তবে আমার মনে হয়, আমাদের এতটুকু নিয়েই এগুতে হবে”।
রিফাত বলল, “হ্যাঁ তুই সঠিক বলেছিস। আমিও তোর সাথে আছি। তবে আমি তোর সাথে একটু যোগ করতে চাই। আমার মনে হয় সেই জমিদারের বলি দেবার উদ্দেশ্য কোন ধর্ম টর্মের ব্যপার না। মনেহয় সে কালো যাদুর চর্চা করত। আমরা কিন্তু বিদেশী বই গুলোতে এমন পেয়েছি”।
রবি বলল, “আচ্ছা তপুর কাছে গেলে কেমন হয়? ওর কাছে তো আরেকটা বই আছে। আমি মিলিয়ে দেখলাম ওর কাছে আমাদের বইগুলির প্রথম খন্ডটা আছে। সমাধান সেখানে মিলতে পারে”।
“হু ওর কাছে যাওয়া যেতেই পারে, কিন্তু আমার অভিজ্ঞতা বলছে, ও বরাবরের মত এবারও একাই পণ্ডিতি করবে। আর শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়ে আমাদের কাছেই ফেরত আসবে”।
তপুর উপড়ে যথেষ্ট আস্থা না থাকার পরেও ওরা তিনজনে তপুর বাড়িতে গেল। সেখানে যেয়ে তাদের সন্দেহ আরও ঘনীভূত হল। কারণ তপু নাকি বাড়ি থেকে বের হয়েছে সেই সকালে। কোথায় গেছে কেউ বলতে পারলনা। ওরা সন্দেহ করতে লাগল, সেই গুহার সন্ধান তপুর বইতে নেইতো আবার? বই পড়ে সে একাই পণ্ডিতি করতে এমন বিপদজনক পাহাড়ি বনে রওয়ানা হয়নি তো?
..............................
একদিকে রবি, রিফাত আর সাগর যেখানে ওকে হন্য হয়ে খুঁজছে। অন্যদিকে তপু ওদের কথা ভাবছেই না। সে শহর ছেড়ে বনের ভেতরে চলে এসেছে কখন! সাইকেল চালিয়ে মাইল আটেক আসা গিয়েছিল। কিন্তু পাহাড়ের খাড়া ঢালুতে সাইকেল চালানো যায়না। তাই সে ওটাকে একটা ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে রেখেছে। পায়ে হেঁটেই চলছে। বইয়ে দেয়া বেশ কয়েকটি চিহ্নও খুঁজে পেয়েছে। সে অনুযায়ী সে হাঁটছে। গভীর বন এখানে। মাঝে মাঝেই অজানা সব পশুর ডাক শুনতে পাওয়া যাচ্ছে। তপুর শরীরের লোমগুলো দাঁড়িয়ে গেছে। একাকী ভয় হচ্ছে। কিন্তু সে আজ ফিরে যাবে না। বন্ধুদের কাছে আর হাসির পাত্র হতে চায়না সে। সে জানে এবারে যদি সেই প্রাচীন গুহা আর গুহা মানবের সন্ধান পায় তাহলে শুধু বন্ধুদের কাছেই কেন, সারা পৃথিবীতে তার নাম ছড়িয়ে পরবে। সে মনকে বুঝ দিচ্ছে আর মাত্র একটি চিহ্নই পেতে বাকি আছে। এই শীতের দিনেও আবেগ আর উৎকণ্ঠায় তপু ঘামছে। তার মাথায় শুধু একটাই চিন্তা, সে গুহাটার রহস্য উদঘাটন করতে চায়। এমন ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ করে তপু পাহাড়ের ধারে কোন গর্তে পরে গেল। ‘মাগো’ করে চিৎকার করে উঠল। তপু বুঝতে পাড়ল সে গর্তের নিচের দিকে নেমে পড়ছে। সে নিরুপায়। কোন ভাবেই উপরে উঠতে পাড়ছেনা। আতঙ্ক আর ভয়ে তার জান যায় যায় অবস্থা। সে বুঝতে পারছে নিচে শূন্যে ঝুলে থাকা পা দুটিকে কেউ টানছে।
কে টানছে তাকে? সত্যি কি সে প্রাচীন গুহাতে আটকা পরেছে? গুহা মানবেরা এসে পরবে না তো? এই গহীন বন থেকে কে করবে তাকে উদ্ধার?
চলবে......
©somewhere in net ltd.