![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এক
নজর আলীর সুপুত্র হাবুল এখন মস্ত বড় পালোয়ান। এলাকার সকল উঠতি বয়সী ছেলেরা তাকে ভয় পেয়ে চলে। কারণ সে শুধু শুধুই এলাকার উঠতি বয়সী ছেলেদের জাপটে ধরে তার হাত থেকে মুক্ত হবার জন্য বলে। আর সে যখন তার বিশাল দুইখানা বপু দিয়ে বুকের সাথে কাউকে জাপটে ধরে সে সময় অপেক্ষাকৃত দুর্বল ছেলেদের জান যায় যায় অবস্থা। ছাড়া পাবার জন্য হাপিত্যেশ করে। আর হাবুইল্লা এই জিনিসটাতেই আনন্দ পায়। যেসব ছেলেদের শরীর দুর্বল তাদের মুখ দিয়ে তাকে দুলাভাই, খালু, ফুপা ইত্যাদি যার যে উপযুক্ত অবস্থা আছে সে নামে ডাকিয়ে নেয়।
তার পালোয়ান হওয়ার পেছনের ইতিহাস এলাকার সবারই জানা। শরীরের অবকাঠামো পরিবর্তন করতে সে ঢাকা শহরের এমন কোন নামি দামী জিমনেশিয়াম ও বডি বিল্ডার্সদের প্রশিক্ষক খুঁজে পাওয়া যাবেনা যেখানে সে ধর্না দেয়নি। নিজেকে হিন্দি ফ্লিমের নায়কদের মত দেখাবার জন্য যা যা দরকার তার সবই সে করেছে। কিন্তু সেরকম হওয়া কি সহজ কথা!
দুই
ফজর আলীর ছেলে মকবুল নিতান্তই রোগা শোকা একটা ছেলে। পালোয়ান হাবুইল্লার সমবয়সী। আবার স্কুলের সহপাঠীও ছিল। দুইজনে আপন চাচাতো ভাই হওয়াতে প্রায়ই তাদের মায়েরা নিজেদের ছেলেদের প্রশংসা করতে যেয়ে ঝগড়া বাধিয়ে দিতেন। বেশীরভাগ সময়তেই স্কুলের পুরনো বিভিন্ন কাহিনী নিয়ে তাদের ঝগড়া বাধত। দুই পরিবারের মাত্র দুটিই পুত্র। তাদের নিয়ে মায়েরা ঝগড়া বাধাবেনাই বা কেন!
মকবুল ইদানীং হাবুইল্লাকে এড়িয়ে চলছিল। কারণ পালোয়ান প্রায়ই তাকে জাপটে ধরতো। আর নিজের হেড়ে যাওয়া দিনগুলো স্মরণ করিয়ে দিয়ে তার যে জিত হয়েছিল সে কথা জোড় করে বলিয়ে নিত। মকবুল পালোয়ানের চাইতে একটু ভাল ছাত্র ছিল। তা নিয়েই তার মায়ের গর্ব। আর পালোয়ানের মা তার ছেলের পালোয়ান গিরি নিয়েই গর্বিত। মকবুল সিদ্ধান্ত নিলো যে ভাবেই হউক হাবুলকে একটা ফান্দে ফেলতে হবে। প্রতিদিনই একই রকম ভাবে অপদস্থ হতে তাকে আর ভাল লাগেনা। তাই অনেক চিন্তা ভাবনা করে সে পালোয়ানের কিছু দুর্বল দিক খুঁজে বের করল। শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নিলো হাবুলকে প্রেমে ফেলেই বধ করতে হবে।
তিন
হাবুলের শরীর গঠনের পিছনে সবচাইতে বড় উদ্দেশ্য ছিল মেয়েদের নজর কাড়া। মেইন রাস্তার ধারে যেখানে গলির মুখ, সেখানেই তাকে বিভিন্ন ছেলেদের সাথে আড্ডা মারতে দেখা যেত। সে অনেক চেষ্টা করতো মেয়েদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে। কিন্তু পারতো কৈ? আর এই সুযোগটাই কাজে লাগালো মকবুল। নিজ দূর সম্পর্কীয় এক খালাতো বোনের সাথে তার পরিচয় করিয়ে দিল। মেয়েটি সুন্দরী ছিল বটে, ছেলে পটানোটাও সে খুব ভাল জানত। একদিন মকবুল ও তার খালাতো বোন শান্তা হাবুলের সাথে কথা বলছিল। পালোয়ান নানা ভাবেই শান্তার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছিল। শান্তা পূর্ব পরিকল্পনা মতই অতি সুন্দর করে বলে দিল, “ভাইয়া আপকো বহুত কিউট লাগতা হ্যাঁয়”।
হিন্দি ভাষায় এমন ডায়লগ শুনে হাবুলের প্রাণ যায় যায় অবস্থা। সারা রাত সে ঘুমুতে পারল না। তার কাছে মনে হল স্বয়ং ঐচ্ছরিয়া তাকে অফার করেছে। পরদিন সকাল থেকেই রাতারাতি হাবুলের ভাব সাব পরিবর্তন হয়ে গেল। এখনো সে পালোয়ানই আছে সবার কাছে। কিন্তু এখন সে দারোয়ানও হয়েছে, সেটা হচ্ছে সম্ভাব্য প্রেমিকার দারোয়ান। সকাল থেকেই গলির মুখ থেকে চেয়ে থাকতে শুরু করল ঠিক শান্তাদের বাড়ির বরাবর। মকবুল ব্যপারটা একদিনেই আঁচ করতে পারল।
প্রেম ঘটিত কাহিনী থেকেই মকবুল হাবুলের চরম শত্রু থেকে পরম বন্ধু হয়ে গেল। সে কি খাতির! শান্তাকে দেখলে সেটা আরও বেড়ে যেত। মাঝে মাঝে শান্তাকে দেখে সে ইচ্ছে করেই শরীরের গেঞ্জিটা খুলে ফেলত। তারপর পাশের কাউকে বলত, “দোস্ত দেখিতো তোর গেঞ্জিটায় কেমন মানায় আমাকে?” একদিন তো শুঁটকো এক বন্ধুর গেঞ্জি পড়তে গিয়ে তারটা ফাঁসিয়েই দিল। তাতেও হাবুল দমলনা। শান্তার হাসি মুখ তার দেখা চাইই চাই।
চার
নজর আলীর সুপুত্র হাবুল এখনও মস্ত বড় পালোয়ান। কিন্তু সে এখন দারোয়ানও বটে। সেটা মকবুলের খালতো বোন শান্তার। ইদানীং তাকে বেশ উত্তেজিত দেখা যেতে লাগল। কারণ শান্তার বিয়ের প্রস্তাব আসা শুরু হয়েছে। হাবুল মনঃস্থির করেছে যেভাবেই হউক সেটা ঠেকাবে। আর এ কাজ করতে গিয়ে তার শরীর চর্চায় ব্যঘাত ঘটল। মাত্রাতিরিক্ত চোখের ব্যয়াম করতে গিয়ে ফিটনেসের বারোটা বাজিয়ে দিল। হাবুল পালোনের মস্ত বড় শরীরটা ঠিকই থাকল, কিন্তু একটা পরিবর্তন সবাই আবিষ্কার করলো। সেটা হল, হাবুল পালোয়ানের শরীরের মাঝ বরাবর বেশ বড়সড় একটা ‘ভ-দ্বীপ’।
©somewhere in net ltd.