নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভালবাসি সকলকে

তৌফিক মাসুদ

আমি মানুষকে ভালবাসতে চাই।

তৌফিক মাসুদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

পেঁপে রফিক

২৪ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১১:২৩



রফিক আজ বাজার করে দেখিয়ে দিতে চায় যে সে বাড়ির সবচেয়ে ভাল ছেলে। যে করেই হউক সে বাড়ির নিত্যদিনের ভোগ্যপণ্য কেনার কাজটা নিজের করে নিতে চায়। বাড়ির কাজের ছেলেটি রফিকের অত্যাচারে দুইমাসও টিকতে পারেনি। কারন ছেলেটি থাকলে ওর মা কখনোই বাজারে যেতে দিতনা। এতে রফিকের ধান্দাবাজি বন্ধ থাকত। বাজারে বাড়তি টাকা সে কখনোই ফেরত দিতনা। নানারকম হিসেব দেখিয়ে ডেবিট ক্রেডিট মিলিয়ে দিতো।

প্রচন্ড গরমের মধ্যে রফিক বাজারের একোন ওকোন ঘুরে সবজি কিনতে থাকলো। কিন্তু সে মাছ - মাংস কেনার পক্ষপাতী না। কারন এইগুলার বাজার দর সে ভালোমতই জানে। সবজি বাজারের দর প্রতিনিয়ত উঠানামা করে। তাই সে সবজি কিনতে থাকল। কেনাকাটা করতে করতে বাজারের এককোনে সামান্য জটলা দেখে এগিয়ে গেল। বাজারের এক কোণে এক উঠতি বয়সী ছেলে পেঁপে বিক্রি করছিলো। ছেলেটি চেঁচিয়ে বলছিলো, "স্যারেরা বাইছ্যা লন, যেইডাই নিবেন এক দাম বিশ ট্যাকা।" রফিক এত সস্তায় এমন রংচোরা হলদে ভাব পাকা পেঁপে দেখে লোভ সামলাতে পারলো না। সে বেছে বেছে দুই দুইটা পেঁপে কিনে নিল। মনে মনে প্রায় ৬০ টাকার ধান্দা লুকিয়ে রাখল। এ বাজারে নিশ্চই এই দুইটার দাম ১০০ টাকার কম হবেনা।

রফিক পেঁপে ছাড়াও বেশ কিছু সবজি কিনে বাড়ির দিকে ফিরছিল ঠিক তখনই তার মায়ের ফোন এল। বাড়িতে আলু শেষ হয়ে গেছে, সুতরাং তাকে আলুর বোঝাও নিতে হবে। রফিকের মনটা দমে গেল। এমনিতেই বাজারের ব্যাগের ওজন বেশ হয়েছে। সাথে দু-তিন কেজি আলু নিয়ে বাসায় ফিরতে রিক্সা না নিয়ে উপায় থাকবেনা। রফিকের ধান্দা আরেকটু কমে গেল। রিক্সাওয়ালাদের সাথে দরকষা কষি করতে থাকল। এই গরমে ভাড়া দিগুন। সে কোন ভাবেই অংক মেলাতে পাড়ছিল না।

বেশ কয়েক মিনিট এভাবে কেটে যাবার পর রফিক নিজেকে ভাগ্যবান মনে করতে শুরু করল। কারন পাশের বাড়ির গোবেচারা আংকেল টি রিক্সায় করে যাচ্ছিল। তার কোলের উপর বড় সড় একটা টিভি। রফিক বুঝল এই লোক বউ মেয়ের স্টার প্লাস আর জলসা দেখার চাহিদা পুরন করতে এই রোদের মধ্যে টিভি ঠিক করে বাড়ি ফিরছেন। কিন্তু রফিকের চাহিদাও যে তাকে পুরন করতে হবে। তাকে ফ্রি বাড়িতে পৌছে দিতে হবে।

রফিককে দেখেও লোকটি না দেখার ভান করেছিল। কারন এত্তবড় টিভি নিয়ে সে নিজেই রিক্সায় হিমশিম খাচ্ছিল। কিন্তু অন্যদিকে রফিক নাছোড়বান্দা। সে রিক্সাজ্যামে আটকে থাকা ভদ্রলোককে "স্ল্যামুলেকুম আংকেল, স্ল্যামুলেকুম আংকেল " বলে বার বার ডাকছিল। লোকটির দৃষ্টি আকর্ষন করতে না পেরে সে নিজেই বেহায়ার মত রিক্সায় উঠে পড়ল। উঠেই টিপ্পনী কাটল, "কী আংকেল, চেনেন না বুঝি? ঈদের সময় আপনার গরু তদারকি করতে আমাদের কাজের ছেলেটাই গিয়েছিল। তাই না? "

এমন কথা শুনে লোকটি বেশ অপ্রস্তুত হয়ে গেল। রফিক ভদ্র লোকটিকে চাপে ফেলে, বাজারের ব্যাগ পায়ের তলায় দিয়ে বেশ জুত করে বসল। বাকি পথ কেউ কোন কথা বলল না। বাড়ির সামনে রিক্সা থেকে নেমে মেকি ভদ্রতা দেখাবার জন্যেও সে ভাড়া দেবার কথা বলল না। হনহন করে বাড়িতে ঢুকে গেল। বাজারের ব্যাগ থেকে চুইয়ে চুইয়ে পানি পড়ছিল। সে যা কিনেছিল তার সবই শুকনো। তাই সে ভাবতে চাইলো না। ঘরে ঢুকেই মায়ের সামনে ধপ করে বাজারের ব্যাগটি ফেলে দিয়ে ঘরে যেয়ে ফ্যান ছেড়ে গা ঠান্ডা করতে লাগল। পেছনে মা জানতে চাইলো, কত টাকার কি কিনেছে সে? রফিক বিরক্তির সাথে বলল,"১০০ টাকায় দুইটা পেঁপে কিনছি, আর বাকি তো তুমিই দেখতাছ। "

কিছুক্ষণ পরে তার মা আবার চিৎকার করে ডাকলেন। "ঐ রফিক্যা, তর পেঁপে কৈ?"
পেছনে উত্তর আসে, "দেহ ভাল কইরা, আলুর নিচে।"
প্রতিউত্তরে মা দিগুণ শব্দে বলে উঠেন, " আরে না - লায়েক, আলুর নিচে রাইখ্যা তো পেঁপেরে আলু ভর্তা বানাইছত। এই ফরমালিন দেয়া পেঁপের দাম ১০০ টাকা না? আমারে শেখাও তুমি। "
রফিক এবার ধরা খেয়ে কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল, "সত্যি মা আমি দেইহ্যা ভালটাই কিনচি, কিন্তু হাড়ামজাদায় পাল্টায় দিছে মনে হয়।"
রফিকের মা এবার শান'ত গলায় বলল," শোন বাবা, তোর ভিতর ভালা কর, সব ভালা হইবো। এই পেঁপে যেমন, তুইও তেমন।"

কিন্তু রফিক কি নিজের মাঝে এই পেঁপের সাথে কোন মিল খুজে পেল?

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১১:৫৫

ঠ্যঠা মফিজ বলেছেন: সুন্দর লাগল গল্পটি ।

২৫ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৯:১৮

তৌফিক মাসুদ বলেছেন: শুভকামনা জানবেন।

২| ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১২:৩৪

অভ্রনীল হৃদয় বলেছেন: ভালো লাগলো।

৩| ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৯:১৯

তৌফিক মাসুদ বলেছেন: ভাল থাকবেন যেখানেই থাকুন।

৪| ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৫৪

কথাকথিকেথিকথন বলেছেন: ভাল লেগেছে গল্প ।

৫| ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৫৬

তৌফিক মাসুদ বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে।

৬| ২৬ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৮:৫৬

প্রামানিক বলেছেন: রফিক পেঁপে ছাড়াও বেশ কিছু সবজি কিনে বাড়ির দিকে ফিরছিল ঠিক তখনই তার মায়ের ফোন এল। বাড়িতে আলু শেষ হয়ে গেছে, সুতরাং তাকে আলুর বোঝাও নিতে হবে। রফিকের মনটা দমে গেল। এমনিতেই বাজারের ব্যাগের ওজন বেশ হয়েছে। সাথে দু-তিন কেজি আলু নিয়ে বাসায় ফিরতে রিক্সা না নিয়ে উপায় থাকবেনা। রফিকের ধান্দা আরেকটু কমে গেল। রিক্সাওয়ালাদের সাথে দরকষা কষি করতে থাকল। এই গরমে ভাড়া দিগুন। সে কোন ভাবেই অংক মেলাতে পাড়ছিল না।

খুব ভাল লাগল। ধন্যবাদ ভাই তৌফিক মাসুদ।

৭| ২৬ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৯:০৮

তৌফিক মাসুদ বলেছেন: আপনার অনুপ্রেরোনা বরাবরই অন্যরকম।

শুভকামনা রইল।

৮| ২৬ শে অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ২:৩২

হাসান মাহবুব বলেছেন: ভালো লাগলো।

৯| ২৬ শে অক্টোবর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

তৌফিক মাসুদ বলেছেন: শুভকামনা রইল।

১০| ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৪:১৪

চাঁদগাজী বলেছেন:

অসচ্ছল পরিবারিক অবস্হা লাখ লাখ রকিককে কস্ট দিচ্ছে।

১১| ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১১:৫২

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: ভাল লেগেছে

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.