নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অনেক কিছু লিখতে চেয়েছিল। কিন্তু লেখাগুলো খুঁজে পায়নি। অনেক কিছু বলতে চেয়েছিল। কিন্তু সেগুলো শোনারও সময় কারও ছিল না

মন থেকে বলি

Stay Hungry. Stay Foolish.

মন থেকে বলি › বিস্তারিত পোস্টঃ

(সম্ভবত) রম্য: চতুর্মাত্রিক গোসল

৩০ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৯:০৪





ছেলেরা বিড়াল আর মেয়েরা হচ্ছে জলহস্তি। ব্যাপারটা অনেক আগে থেকেই জানতাম কিন্তু আজকের মতো করে টের পাইনি। কীভাবে পেলাম? বলছি।


খেয়াল করেছেন নিশ্চয়ই যে গোসল করতে মেয়েদের লাগে অনেকটা সময়। ঠিক যেমন হাতি পানিতে অনেকক্ষন ডুবে থাকে। তো এই ডুবে ডুবে (না, পানিতে ডোবা হাতি নয়, গোসলখানায় মেয়েরা) যে কী করে, সেটা জানতে পারলে বেশ হতো। যাক গে। সুযোগ হয়নি। তাছাড়া এটি ১৮+ কোন লেখাও নয়। সুতরাং...।


অন্যদিকে ছেলেরা অতি সুন্দরভাবে গোসল সেরে গা-মাথা মুছে বেরিয়ে আসতে পারে ঠিক দু মিনিটের মধ্যে। শাওয়ার হলে সেটা আড়াই মিনিট হবে। বালতি-মগ সিস্টেমে পৌনে দু।

অবাক হচ্ছেন? আরে, আমি জানি বলেই তো লিখছি। আর আপনার পাশে যে ছেলেটা (অথবা আমার মতো যে বৃদ্ধভামটা আছে), তাকে জিজ্ঞেস করলেও হবে। অবশ্য জেনে কোন লাভ নেই। কারণ এই জ্ঞান ছেলেমাত্রই আছে আর মেয়েমাত্রই অ্যাপ্লাই করবে না।


তার চে' বরং আমার আবিষ্কৃত মাল্টিটাস্কিং গোসলের কথাটা বলি। আর আবিষ্কারটা একটু আগে করা, গোসল করতে গিয়ে। আগে ডুয়েল টাস্কিং পারতাম। দক্ষতায় সেটি কোয়াড্রুপলে পৌঁছেছে।


নরম্যালি আমরা, মানে ছেলেরা 'গোসল করা' বলতে কী বুঝি, সেইটা আগে পৃথিবীকে বুঝতে হবে। আমাদের গোসলের তিনটি স্টেজ আছেঃ

- জেনরেল (ডেইলি),
- অ্যাডভ্যান্স (ফোর্টনাইটলি), এবং
- প্রো (ওয়ন্স ইন আ ব্লু মুন অথবা ব্যক্তিবিশেষে ইন আ লাইফটাইম)।


আপাতত জেনরেল গোসল দিয়ে বেসিকটা বোঝাই। তো, গোসল করা বলতে আমরা বুঝি চারটা কাজ।


১। সারা গা পানি দিয়ে ভেজাতে হবে। তবে ভেজা গা মোছাটা ম্যান্ডেটরি নয়। কারণ পানি এমনিতেই শুকিয়ে যায়। এটাই জেনরেল গোসল। যাঁরা একটু বয়স্ক ভদ্রলোক, তাঁরা অবশ্য গা মোছেন। অন্যভাবে বলতে গেলে এটিই গোসলের বেসিক।


অ্যাডভান্স স্টেজে এর সাথে আরও দুটো কাজ যুক্ত হয়ঃ


২। গায়ে সাবান দেয়া; তবে প্রতিদিন নয়। যখন নিজের নাক সেটা সেন্স করবে তখন।

৩। সাবান দেয়ার পর ছোবড়া দিয়ে গা ঘসে ছাল তুলে ফেলা। অপশনাল।

৪। মাথায় শ্যাম্পু করা। এটাও প্রতিদিন অবশ্যই নয়। যখন প্লেটে খুশকি ঝরে ঝরে পড়বে শীতকালের পাতার মতো অথবা কানের লতি বেয়ে উকুন নেমে আসবে, তখন। সে ক্ষেত্রে সপ্তাহে একবার করা যেতে পারে। বিবাহিত হলে সপ্তাহে দু'বার। সচেতন স্ত্রী থাকলে শ্যাম্পুটা হবে মেডিকেটেড যাতে ইঁদুরমারা বিষ আর কড়া ফিনাইলের মতো বিদঘুটে গন্ধ।

(গা মোছাটা অবশ্য এখানেও ব্যক্তির সামাজিক অবস্থান এবং বয়সের সাথে সম্পর্কীত। ওই যে, আগে যেটা বললাম।)


প্রো-লেভেল গোসলটা কী তাহলে?


এইটা হলো সপ্তাহে অন্তত চার-পাঁচদিন সাবান দেয়া, অন্তত তিন দিন শ্যাম্পু করা, এবং প্রতিদিন শেইভ করে ফেলা। আর অতি অবশ্যই গোসলের পর গা মুছে নিয়ে তারপর কিছু একটা পরে বের হওয়া।


প্রো-লেভেল গোসলার কখনই চল্লিশ না-পেরোনো কোন ছেলে (অথবা লোক/ব্যাডা/ভাম) করবে না। কাজেই প্রিয় পাঠিকারা, অনর্থক সে চেষ্টা করবেন না। 'তোর মরা মায়ের মুখ দেখবি' অথবা 'তোরে আজ খাইসি' অথবা 'আমার মাথা ছুঁয়ে বল' - এসব শাবানাটাইপ ডায়লগ যদি বাস্তবায়ন করেও ফেলেন, তা-ও পারবেন না। মরদকা গোসল, হাতিকা দাঁত। (ছন্দ না মিললে না মিলুক গে)


আমি মধ্য-চল্লিশ। আমার স্ত্রী (আপনারা সম্ভবত তাঁর ছবি দেখেছেন) একজন অতিব আকর্ষনীয়, অসম্ভব ধৈর্যশীলা এবং অত্যন্ত সংবেদনশীল ভদ্রমহিলা। সুতরাং তাল মেলানোর জন্য হলেও আমাকে প্রো-গোসলার হতে হয়েছে।


বাট হাউ ডু আই ডু ইট?


মনে রাখবেন, পিটিয়ে মেরে ফেললেও ছেলেরা পাঁচ মিনিটের বেশি সময় ধরে গোসল করবে না। অবশ্য তারা দু-তিন ঘন্টা কমোডের ওপর বসে থাকতে পারে। সেটা অন্য কাহিনী যেটি আরেকদিন বলা হবে।


কাজেই আজ আপনাদের শেখাবো কীভাবে প্রতিদিন প্রো-গোসলার হওয়া যায় এবং সেটা ম্যাক্স পাঁচ মিনিটের মধ্যে।


প্রয়োজনীয় উপকরণ:

১। শেভিং ফোম/জেল এবং রেজর
২। শ্যাম্পু; অভাবে সাবান।
৩। সাবান; অভাবে শ্যাম্পু।
৪। গা ঘসার ছোবড়া; অভাবে দুই হাতের নখ।
৫। পা ঘসার চাবড়া; অভাবে পানি বেরিয়ে যাওয়ার জালিটা।
৬। পানি (শাওয়ার অথবা মগ-বালতি)
৭। আয়না


কর্মপদ্ধতি:

শাওয়ার ছাড়ুন। চাঁদির কেন্দ্রে ছচ্ছড় করে পানি পড়ার সময়ে গোল হয়ে ঘুরুন। মাঝে মাঝে দোলনাদোলার মতো আগুপিছু করুন যেন পানি পুরো শরীরে পড়ে। একইসাথে দুই হাতে দিয়ে পাগলের মতো সারা শরীর কচলাতে হবে, বিশেষ করে দুর্গম গিরিপথজাতীয় স্থানে। পনের সেকেন্ড ইজ ইনাফ।


হাতে শ্যাম্পু ঢালুন এবং মাথায় মেখে ফেলুন। যেহেতু অলরেডি টাক পড়ে গেছে তাই চুলের সংখ্যা বুঝে শ্যাম্পুর পরিমান নির্ধারণ করুন। পরিমানটি সমানুপাতিক। দুই হাতের তালু সহযোগে দশ আঙুল দিয়ে খামচে খামচে মেখে ফেলুন পুরো স্কালে। পনের সেকেন্ড ইজ ইনাফ। কপাল, চোখ এবং কানের পাশে লেগে থাকা ফ্যানা মুছে ফেলুন।


শেভিং ফোম ঝাঁকিয়ে নিন। এবার খুব আলতো চাপে ভড়াৎ করে একগাদা ফোম বের করে ফেলুন (যেটা দিয়ে অন্তত চারজন শেভ করতে পারতো)। গালে ফোম মাখান। বাকি তিনজনের সমপরিমান ফোম থোপ্পা করে লাগিয়ে নিন যেন আপনাকে সান্তাক্লজের মতো দেখায়। এই অংশটুকু অত্যন্ত জরুরি। ছেলেবুড়ো মাত্রই গোসলের সময় বালগোপাল হয়ে যায়। তখন তাদের খেলতে হয়। এ হচ্ছে সেই খেলা। সময় লাগবে ম্যাক্স পনের-বিশ সেকেন্ড।


এবারে আমরা রিভার্স সাইকোলজির মতো রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিং করবো।


সাবান যেহেতু এর মধ্যে প্রায় পঞ্চাশ সেকেন্ড টাইম পেয়েছে শরীরে বসার, সে সব ময়লা লুজ করে ফেলেছে। এ হচ্ছে সেই ময়লা, যেটির ঘ্রান আপনি ছাড়া বাকি সবাই পায়। কাজেই এবারে ঘসার ছোবড়া দিয়ে এক এক টানে পুরো শরীর ফালি ফালি করে ফেলুন। বিশ সেকেন্ডের বেশি লাগার কথা না।


পায়ের গোড়ালিদুটো মেঝের জালিতে ঘসে নিন। পনের সেকেন্ড।


এইবার শাওয়ার ছেড়ে দিন। ঘাড়টা কবজার মতো পিছনের দিকে হেলিয়ে দিয়ে হেলেদুলে সারা শরীর ধুয়ে ফেলুন। সময় তিরিশ সেকেন্ড। মাথা ছাড়া আপনার গোসল কিন্তু সাকসেসফুলি শেষ।


এবার দাড়ি। প্রায় দেড় মিনিটের বেশি টাইম পেয়েছে ফোম। কড়কড়ে দাড়ি নরম হয়ে বিনীত ভঙ্গিতে অপেক্ষা করছে অনেকবার ব্যবহৃত ওয়ান-টাইম-রেজরের (!) টান খাওয়ার জন্য।


থামুন। আগেই রেজর নেবেন না। গালের থোপ্পামারা ফোম নিয়ে একটু খেলুন। যেমন ওসমানী গোঁফ বানালেন কিংবা ড্যানি ত্রেজোর মতো ঝুলে পরা গালপাট্টা।


খেলা শেষ। রেজর হাতে নিন। হতাশ চোখে পঁচিশবারের মতো ভাবুন, 'এইবার আরেকটা ওয়ান-টাইম-রেজর কিনতেই হবে'। এরপর একেক টানে রাজপথ তৈরি করে দাড়ি নির্মুল করুন। সময় তিরিশ থেকে চল্লিশ সেকেন্ড।


শ্যাম্পু অনেকটা টাইম পেয়েছে চুলের মধ্যে। খুশকি, উকুন এবং ইত্যাকার সমস্যা সামলে যাওয়ার জন্য যথেষ্ঠ। শাওয়ার নিচে শুধু মাথাটা এগিয়ে দিয়ে আয়েশ করে দাঁড়ান এবং ধুয়ে ফেলুন। বিশ সেকেন্ডের বেশি লাগলে আপনি বেসিক লেভেলে আছেন।


আপনার গোসল শেষ।


ফাউ হিসেবে আবিষ্কার করবেন যে, এই সব কেরামতির ফাঁকে কখন যেন গা শুকিয়ে গেছে। অর্থাৎ গা মোছার টাইমটা লাগল না। এটাই প্রো-লেভেল।


নতুনরা সম্ভবত কবজার মতো ঘাড় নাড়াতে না-ও পারতে পারেন। সেক্ষেত্রে মাথা ধোয়ার সময় শরীর আবার ভিজবে এবং আপনাকে গা মোছাবাবদ অতি মূল্যবান বিশটি সেকেন্ড খর্চা করতে হবে।


সবশেষে আয়নার দিকে তাকিয়ে নিচের মতো করে হাসুন। এটি একটি রিচুয়াল। নিজের মাল্টিটাস্কিংকে এইভাবে অ্যাপ্রিশিয়েট করতে হয়।


*** সতর্কীকরণঃ


১। ভুলেও অন্যমনস্ক হবেন না। তাহলে আজ আমার যা হয়েছিল, সেইটা হবে। শেভিং ফোম আর শ্যাম্পুর বোতল - দুটোই নীল রঙের বলে ভাবতে ভাবতে একের জায়গায় অন্যটা মেখে ফেলেছিলাম।


২। ফোম মাখার পর দুষ্টু শ্যাম্পু ভুরু টপকে চোখে ঢুকে যেতে পারে। সেই সম্ভাবনা অতি প্রবল। তখন 'গেলুম রে! মলুম রে!' বলে কল ছেড়ে মুখে পানির ঝাপটা দিতে যাবেন না। গেল ফোম ধুয়ে। স্রেফ দাঁতে দাঁত চেপে চোখ বন্ধ করে রাখুন। আর মাত্র দু-মিনিটই তো।


৩। সকেটের মতো ঘাড় ঘোরাতে না পারলে এই পদ্ধতি আপনার জন্য নয়। সে ক্ষেত্রে বিগিনার লেভেলে ফিরে যান। অর্থাৎ একেকদিন একেকটা কাজ। গায়ে দুর্গন্ধ হবে, মাথায় উকুন টেস্ট খেলবে। কী আর করা?


৪। আপনার বাথরুম যদি একইসাথে কাঁচাবাজার (!) এবং ফলপট্টি হয়, তাহলে ভুলেও, আবার বলছি ভুলেও এই কাজ করতে যাবেন না। বাথরুম কীভাবে কাঁচাবাজার এবং ফলপট্টি হয়, সেটি আরেকদিন বলার ইচ্ছা রইলো। এ ব্যাপারে আমার প্রামাণ্য অভিজ্ঞতা রয়েছে।


৫। এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রসেস; অন্তত ছেলেদের টাইম স্কেলে তো বটেই। কাজেই দরজা খোলার আগে চেক করে নিন আপনি নিচে কিছু পরিধান করেছেন কিনা। এত দীর্ঘ সময়ে ব্যাপারটা ভুলে যাওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু না। এ ব্যাপারে অ্যালার্ম ক্লক হিসেবে গালের বাড়তি ফেনা দিয়ে সামনের আয়নায় লিখে রাখতে পারেন অথবা অর্থবোধক কোন ছবিও এঁকে রাখতে পারেন।


এইভাবে, ঠিক এইভাবে, হে আমার প্রিয় পাঠককূল, আমি প্রতিদিন প্রো-লেভেলের গোসল সারি - ঠিক পাঁচ মিনিটের মধ্যে।


আমি পেরেছি। আপনিও পারবেন।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ১১:৩৭

জ্যাক স্মিথ বলেছেন: জ্ঞান বৃদ্ধি পাইলো।

২| ১৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:৩৫

মিরোরডডল বলেছেন:





মন, বরাবরের মতো ফানি লেখা।
এমাসে নতুন পোষ্ট নেই কেনো, স্টক শেষ?

জ্যাকের দেয়া ছবিটা কিউট।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.