নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ছোট বেলায় মা বলত তুই একটা খাম্বা তোরে দিয়া কিছুই হবে না।

টোকাই রাজা

ঘুমন্ত মানুষ গুলো যদি জেগে উঠে বলতো - আমি আছি

টোকাই রাজা › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোট গল্প (মিজান মামা) B-)

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:৩০

মিজান মামা নাকি স্বপ্নে ফেরেস্তা দেখেছেন। পুরো গ্রামে এই খবর মানুষের মুখে মুখে।

এই খবর শুনে আমার মাথায় কেবল একটা কথাই ঘোরপাক খাচ্ছে " ফেরেস্তা দেখতে কেমন? "

মিজান মামা মানুষের সাথে তেমন মিশত না,কিন্তু আমার সাথে তার অন্য রকম ভাব ছিল। একদিন দুপুরে মামাকে জিজ্ঞেস করলাম - তুমি তো স্বপ্নে ফেরেস্তা দেখেছ, ফেরেস্তা দেখতে কেমন?

মামা মুচকি হাসি দিয়ে বললেন- ফেরেস্তা দেখতে কুচকুইচ্চা কালা!

- এমা, ফেরেস্তা না নুরের তৈরি? তাহলে কালো হবে কেন?

মামা বলত- মানুষ তো মাটির তৈরি, তাইলে মানুষ মাইট্টা রঙ না হইয়া ধবধবে সাদা হয় কেন? আবার নিগ্রো হয় কেন?

আমি এর উত্তর দিতে পারতাম না। তবে অনেক লোক বলাবলি করত মিজান মামা স্বপ্নে ফেরেস্তা দেখে নাই,শয়তান দেখেছে।

মিজান মামাকে আমি কখনো নামাজ পড়তে দেখতাম না, তাহলে সে স্বপ্নে ফেরেস্তা দেখবে কিভাবে? আমার মনেও এই প্রশ্ন ছিল। নামাজ না পড়লেও তিনি প্রতি শুক্রবার পাশের গ্রামের এক মাজারে যেতেন। এই মাজারে যাওয়ার কারনে মিজান মামা গাঁজায় আশক্ত হয়ে পড়েন। আমি মিজান মামা'কে এই গাঁজা খেতে বারণ করতাম। মামা তখন বলত - তাইলে খামু কি?

আমি বলতাম - সিগারেট খাও অন্তত, এসব ভাল না।

মামা তখন উদাস ভঙ্গিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে একটা লম্বা শ্বাস ছেড়ে গম্ভীর ভাবে বললেন, শোন মাছুম, সিগারেটে নিকোটিন থাকে, গাঞ্জায় নিকোটিন নাই,তাই গাঞ্জা খাওয়াই ভাল!

অতিরিক্ত গাঁজার নেশায় মনে হয় মিজান মামা মাঝে মাঝে অদ্ভুত আচারণ করতেন। গ্রামের সবাই এর জন্য মিজান মামাকে পাগল মনে করত। কিন্তু আমার কাছে কখনো মিজান মামাকে পাগল মনে হত না, বরং অনেক জ্ঞানী মনে হত। আমাকে মাঝে মাঝে প্রশ্ন করত- আল্লাহ তো সব পারে, বলতো কোন জিনিসটা পারে না?

আমি বলতাম- কি বল? আল্লাহ তো সব পারে।

তিনি তখন হেসে বলতেন- আল্লাহ মিথ্যা বলতে পারে না।

মিজান মামা অদ্ভুত সব কাণ্ডকারখানার জন্য বিখ্যাত ছিল, শীত কাল আসলে মিজান মামা ১ মাসে ১ দিন গোসল করতেন। যেদিন গোসল করতেন সেদিন ১ বালতি গরম পানি পুকুরে ঢেলে দিয়ে গোসল করতেন। এই ১ বালতি গরম পানিতে নাকি পুরো পুকুরের পানি গরম হয়ে যেত। মিজান মামার এই কান্ড দেখে আমরা হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেতাম। আবার গরমকাল আসলে ঘটনা পুরো উলটো হয়ে যেত। সারা দিন আমাদের গ্রামের বুকে বয়ে যাওয়া নদীতে সাঁতার কাটতেন। সকালে নদীতে নামতেন বিকেলে উঠতেন, সারা গায়ে সবুজ শ্যাওলা জমে যেত।

কোন এক ভোর বেলায় মিজান মামা তার মা'কে ডাকলেন ওযুর পানি এনে দিতে, তিনি নামাজ পড়বেন, মিজান মামার মা ওযুর পানি নিয়ে আসলেন, কিন্তু মিজান মামা আর ওযু করে নামাজ পড়তে পারলেন না। নীরবে এই পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেন। জীবনের শেষবারের মত নামাজটাও পড়তে পারলেন না। জানাজা নামাজে শেষবারের মত মিজান মামাকে দেখেছিলাম, সেই চিরচেনা হাসি মুখটি আর ছিল না। কেমন জানি চেহারা বিকৃত হয়ে গিয়েছিল, খুবই ভয়ংকর।

অনেক বছর হয়ে গেল। আজ আর সেই মিজান মামা নেই, নেই সেই পুকুরও। আজ সেখানে উঁচু দালান। আর সেই নদী? আমাদের ছেলেবেলার মত সেও বুঝি চলে গেছে মিজান মামার হাত ধরে। নীরবে........ :(( :((

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:৪৫

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: ইস। পড়তে ভাল লাগছিল মামাকাহিনী।
শেষটায় মন খারাপ হলো

২| ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:২৪

ডঃ এম এ আলী বলেছেন: খুব ভাল লাগল এই ছোট গণ্পটি ।
শুভেচ্ছা রইল ।

৩| ০২ রা জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৫:৫১

বিজন রয় বলেছেন: নতুন পোস্ট দিয়ে দিন।

শুভেচ্ছা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.