নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব।

এম টি উল্লাহ

আমি এম টি উল্যাহ। আইনি উপন্যাস ‘‘অসমাপ্ত জবানবন্দী’’ ও ‘‘নিরু”, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বই ‘‘মায়ের মুখে মুক্তিযুদ্ধ’’ ও ‘‘একাত্তরের অবুঝ বালক’’ এর লেখক। পেশায়-আইনজীবী।www.facebook.com/mohammad.toriqueullah , Email- [email protected]

এম টি উল্লাহ › বিস্তারিত পোস্টঃ

সিডিও সনদ; শুধুই কি প্রতিশ্র“তি?

১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৩:৪৫





সভ্যতার বিকাশের সূচনা লগ্ন থেকে নারীর অবদান যেমন সর্বজন অস্বীকৃত তেমনি অধিকারের প্রশ্নে নারী যথারীতি অবহেলিত। তাই নারীরাও তাদের বঞ্চনার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে আসছে সেই আদি থেকে। যার ফলে বিশ্বব্যাপী নারী অধিকারের প্রশ্নে বৈষম্য দূরীকরণ সম্পূর্ণরূপে সম্ভব না হলেও তার একটা প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি দাড়িয়েছে। সিডিও সনদ তারই একটি প্রতিলিপি। ১৯৭৯ সালের ১৮ই ডিসেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে গৃহীত হয় নারীর প্রতি বৈষম্য বিলোপ সনদ সিডিও (ঈড়হাবহঃরড়হ ড়ভ ঃযব ঊষরসরহধঃরড়হ ড়ভ ধষষ ভড়ৎসং ড়ভ উরংপৎরসরহধঃরড়হ ধমধরহংঃ ড়িসবহ-ঈঊউঅড)। এটিই প্রথম কোন সনদ যেখানে নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্যকে আইনী ও প্রকৃত বাস্তবে বিলোপ করার ঘোষণা দেওয়া হয়। তাই এই সনদকে বলা হয়ে থাকে নারীর আন্তর্জাতিক ‘ইরষষ ড়ভ জরমযঃং’। সিডিও দলিলের মূল কথা হলো ‘নারীর অবদানকে মূল্যায়িত করার পাশাপাশি স্বাভাবিক জীবন চলার পথে গুরুত্বের সাথে সমতা স্থাপন ও মানুষ হিসেবে নারীর সার্বিক উন্নয়ন ও বিকাশের জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করা। এই সনদে স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্রসমূহ সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও নাগরিক নির্বিশেষে সকল ক্ষেত্রে নারী গুরুত্বের মধ্যে সমতা প্রতিষ্ঠার জন্য অঙ্গীকারাবদ্ধ। এ পর্যন্ত বিশ্বের ১৮৫টি দেশ সিডিও সনদ স্বাক্ষর ও অনুমোদন করেছে। বাংলাদেশ ১৯৮৪ সালের ৬ ডিসেম্বর সিডিও সনদ অনুমোদন করে (২টি ধারা ব্যতীত)। যার ফলে বাংলাদেশ সরকার এই সনদের বিষয়বস্তু বাস্তবায়নের জন্য অঙ্গীকারাবদ্ধ। কিন্তু ২৭ বৎসর পরও আমরা কতটুকু বাস্তবায়িত করতে সক্ষম হয়েছি? দেখা যাক কি অবস্থা এই ক্ষেত্রে;



সিডিও এর ধারা ২ (ক)তে উল্লেখ রয়েছে ঃ ‘রাষ্ট্রসমূহ সংবিধান ও সংশ্লিষ্ট আইনসমূহে নারী পুরুষের সমতার নীতি অন্তর্ভূক্তি ও তার বাস্তবায়ন নিশ্চিত করবে’। এই ক্ষেত্রে যদিও বাংলাদেশের সংবিধানে নারী পুরুষের সমান অধিকারের কথা বলা হয়েছে বাস্তবায়ন কিংবা প্রচলিত আইনে রয়েছে চরম বৈষম্য। বিবাহ, তালাক, উত্তরাধিকার, অভিভাবকত্ব প্রভৃতি ক্ষেত্রে যা প্রতিয়মান। মুসলিম আইনে বিষয়গুলো সহনীয় হলেও হিন্দু আইনের ক্ষেত্রে পুরোটাই চরম বৈষম্যমূলক। যা সত্যিই সিডিও এর বিপরীত চিত্র প্রকাশ করে। অভিভাবকের ক্ষেত্রেও নারী রয়েছে অবহেলিত পর্যায়ে। ধারা ৪ (২)এ উল্লেখ করা হয়েছে ‘নারীর মাতৃত্বের সাথে যুক্ত যে সব অধিকার, সেই সব অধিকার রক্ষার জন্য রাষ্ট্রসমূহ বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে’। আমাদের দেশে সরকারী ক্ষেত্রে যদিও মাতৃত্বকালীন ছুটি হয় ৬ (ছয়) মাস কার্যকর, বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে এই ব্যাপারে অনেকটা উদাসীন। তারা নিজেদের মত করে ছুটি নির্ধারণ করে। আর গার্মেন্টসসহ অনেক প্রতিষ্ঠান তো এই সময় বেতনসহ ছুটি তো দূরে থাক, চাকুরী থেকে ছাঁটাই পর্যন্ত করে থাকে। ধারা ৬ (ছয়) তে উল্লেখ করা হয়েছে ‘নারীদের দিয়ে প্রতিতাবৃত্তি, পাচার, ক্রয়-বিক্রয় বা অন্য কোন অবৈধ ব্যবস্থা বন্ধ করার জন্য রাষ্ট্রসমূহ আইন প্রণয়নসহ সকল প্রকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবে। স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্রসমূহ এই ধরনের ব্যবসার সাথে জড়িত ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের জন্য কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে’। এই নিয়ে বাংলাদেশের সংবিধানের বিধান ছাড়াও [১৮(২) ও ৩৪ (১)] দন্ডবিধির ধারা ৩৭২, অবৈধ নারী পাচার দমন এ্যাক্ট ১৯৩৩, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (২০০৩ সালে সংশোধিত) প্রভৃতি কঠোর আইন থাকলেও এই বিষয়টা বাস্তবে অনেকটা নি®কৃয়তার পরিচয় দিতে সক্ষম হয়েছে। প্রতিতাবৃত্তি আমাদের দেশে নিষিদ্ধ আইনগতভাবে, কিন্তু বাস্তবে তা অনেকটা বেআইনি নয়। সরকার কর্তৃক এই ক্ষেত্রে নেই কোন সঠিক নির্দেশনা, যার ফলে একদিকে পতিতারা ভোগান্তির শিকার, অন্যদিকে আশ্রয়হীনভাবে মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে। নারী ও কন্যা শিশু ধর্ষণ, খুন, এসিড নিক্ষেপ, ফতোয়াবাজি, প্রতারণা, লাঞ্ছনা, ইভটিজিং প্রভৃতি আমাদের দেশের নিত্য নৈমত্তিক ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে। এই ক্ষেত্রে সরকার সিডিও এর অঙ্গীকার অস্বীকার করতে পারে না। বিভিন্ন তথ্য মতে, প্রতি বছর গড়ে প্রায় ৪ হাজার নারী ও শিশু বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়। তাদেরকে বাধ্যতামূলক পতিতাবৃত্তি, শ্রমদাসত্ব, অশ্লীল ছবি নির্মাণ ও ভিক্ষাবৃত্তিতে ব্যবহার করা হয়। এখনো প্রায় ৪০ হাজার বাংলাদেশী কিশোরী পাকিস্তানে পতিতারয়ে রয়েছে। শীকলকাতার পতিতালয়ে ১৪% নারী বাংলাদে। ধারা (৭) এ নারীদের রাজনৈতিক ও সামাজিক জীবনের কথা বলা হয়েছে। অথচ আমাদের দেশে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নারীরা সত্যিই অনগ্রসর, যদিও বড় দুই দলের প্রধান নারী। প্রত্যক্ষ নির্বাচনের ক্ষেত্রে নারী প্রার্থীরা বরাবরের মতোই অবহেলিত। সংরক্ষিত আসনের দোহাই দিয়ে তাদেরকে অনুৎসাহিত করা হয় সরাসরি নির্বাচনের ক্ষেত্রে। ইউনিয়ন প্রতিনিধির ক্ষেত্রে একটা নির্দিষ্ট অধিকার থাকলেও কার্যক্ষেত্রে তাদেরকে সেভাবে অগ্রাধিকার দেওয়া হয় না। ভূমিকা অনেকটা নিষ্ক্রিয় করে রাখা হয়। ধারা ১১ ও ১২ যথাক্রমে কর্মক্ষেত্রে ও স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা ও পুষ্টির অধিকারের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দিকটাও। এমনকি বাংরাদেশে কারখানা শ্রমআইন অনুযায়ী মজুরীসহ বাৎসরিক ছুটি, মাতৃত্বকল্যাণ ছুটি, কর্মজীবী মায়েদের শিশু সন্তানদের জন্য কর্মস্থলে দিবাযতœ কেন্দ্র (ডে-কেয়ার সেন্টার) স্থাপন ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা (বিশুদ্ধ পানীয়, খাবার কেন্টিন) প্রদান, নারী পুরুষ ভেদে শ্রমিকদের জন্য পৃথক টয়লেটের ব্যবস্থা প্রভৃতির দায়িত্ব মালিকদেরই। কিন্তু সার্বিক সুযোগ সুবিধা কিংবা অধিকার থেকে নারী শ্রমিকরা বঞ্চিত হয়েই আসছে। আজও কর্মক্ষেত্রে নারীদেরকে মজুরী বৈষম্য, পদ বৈষম্য, যৌন নিপীড়ন প্রভৃতির সম্মুখীন হতে হচেছ। এক সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়, গার্মেন্টেসে কর্মরত নারীদের শতকরা ৩০ ভাগ পেটের পীড়ায়, ২০ ভাগ মূত্রনালীর সংক্রম, ২৫ ভাগ চোখের অসুখ ও মাথাব্যাথা এবং ১৫ ভাগ দূভোগে। নারীরা পেশা ক্ষেত্রে মেধার পরিচয় দিতে সক্ষম হলেও অদৃশ্য কারণে তারা সঠিক জায়গায় বসতে অক্ষম হতে হচ্ছে। সমাজে নারী ও পুরুষের বৈষম্য যেমন বিদ্যমান জাতীয় বাজেটেও বিষয়টা বিরাজমান। প্রত্যক্ষ নারী উন্নযনে জাতীয় বাজেটের মাত্র ৩.১০ শতাংশ ব্যয় করা হয়। পরিতাপের বিষয় হচ্ছে নারীদেরকে নিয়ে যতটা না প্রচারণা কিংবা লোক দেখানো কার্যক্রম চালানো হচ্ছে ততটা তাদেরকে নিয়ে পরিকল্পনা হচ্ছে না। এন.জি.ও, সামাজিক কিংবা তথাকথিত মানবাধিকার প্রভৃতি ক্ষেত্রেও নারীদেরকে নিয়ে হচ্ছে নতুন নতুন কৌশলের অবলম্বন যা খুবই হাস্যকরও বটে। বৈষম্য কমে নাই এমনটি- যেমন বলার সুযোগ নেই, তেমনি প্রত্যাশিত উন্নয়ন এই ক্ষেত্রে যে হয়নি তা সকলে অবহিত।



সংবিধান, সিডিও, বিশেষ আইন প্রভৃতি আইনগত দলিলকে এখনো পর্যন্ত আমরা কাগজেই রাখতে সক্ষম হয়েছি। এটাই আমাদের ব্যর্থতা। তাই শুধু আনুষ্ঠানিকতা কিংবা কথার বুলি নই, এই ক্ষেত্রে যথাযথ বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপও নিতে হবে, সময়ের প্রয়োজনে।







মোহাম্মদ তরিক উল্যাহ

আইন বিভাগ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

[email protected]











মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.