![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
উপন্যাস ‘‘অসমাপ্ত জবানবন্দী’’ ও ‘‘নিরু”, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপন্যাস ‘‘মায়ের মুখে মুক্তিযুদ্ধ’’ ও ‘‘একাত্তরের অবুঝ বালক’’ এর লেখক। পেশায়-আইনজীবী। কর্মস্থল- হাইকোর্ট।www.facebook.com/mohammad.toriqueullah
‘সোনা ফেলে আঁচলে গেরো’। বাংলাদেশের প্রোপটে প্রবাদটির প্রাসঙ্গিকতার বিষয়ে লেখককে এই পর্যায়ে অবতারণার প্রয়োজন হবে না, পাঠক মাত্রই প্রাসঙ্গিকতা খুঁজে নিতে সম হবে। স্বাধীন চেহতনায় উদ্বুদ্ধ এই জাতি তার শিার অধিকারের ব্যাপারে সর্বদা ছিল সচেষ্ট। কৃষক-শ্রমিক-পেশাজীবী-ব্যবসায়ী-ছাত্র তথা গণমানুষ তাইতো জাতিকে সামগ্রিক সংকটের হাত থেকে রার তাগিদে নিজেকে দিয়েছিল বিলিয়ে। তারা চেয়েছিল একখন্ড স্বাধীন ভূমি, শ্রমের মূল্য, পেশায় স্বাধীনতা, অবাধ ব্যবসায়ের পরিবেশ, শিার অধিকার কিংবা সর্বস্তরের সার্বিক স্বাধীনতা ও অধিকার। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নিজের রক্তে মাতৃভূমি রঞ্জিত করে, নিজেকে চড়–ই পাখির ভূমিকায় উত্তীর্ণ করে নেমেছিল সংকল্পিত পথে, ছিনিয়ে নিয়েছিল স্বাধীনতা, আগামীর জন্য। কিন্তু কতটুকু অর্জিত হয়েছে তা? স্বাধীনতা বা মুক্তির একটি বড় অংশ জুড়েই রয়েছিল শিার অধিকার নিশ্চিত করা প্রতিটি নাগরিকের জন্য, রাষ্ট্রীয়ভাবে। যে অধিকারের নিমিত্তে ছাত্ররা রাজপথে নেমেছিল ৪৮ এর রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সময়, ৫২ এর ভাষা আন্দোলনে, ৬২ এর শরীফ কমিশনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে, ৬৯ এর নূর খান কমিশনের বিরুদ্ধে, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানে, এমনকি ৭১’র স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতৃত্বে। যুক্তফন্ট্রের ২১ দফা, ছাত্র সমাজের ঐতিহাসিক ১১ দফা, এমনকি ৬ দফার মতো দাবিগুলোও সর্বপ্রথম এসেছিল ছাতদের দ্বারা, অধিকার প্রতিষ্ঠার নিমিত্তে। যার ফল যদিও আমরা পেয়েছি অনেকখানি, কালির হরফে। আমাদের সংবিধানের ১৭নং অনুচ্ছেদে তাইতো উল্লেখ করা হয়েছে ‘রাষ্ট্র- (ক) একই পদ্ধতির গণমুখী ও সার্বজনীন শিা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য এবং আইনের দ্বারা নির্ধারিত স্তর পর্যন্ত সকল বালক বালিকাকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিা দানের জন্য (খ) সমাজের প্রয়োজনের সহিত শিাকে সঙ্গতিপূর্ণ করিবার জন্য এবং সেই প্রয়োজনে সিদ্ধ করিবার উদ্দেশ্যে যথাযথ প্রশিণপ্রাপ্ত সদিচ্ছাপ্রণোধিত নাগরিক সৃষ্টির জন্য (গ) আইনের দ্বারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিররতা দূর করিবার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন। অন্যদিকে, মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণা পত্রের (১৯৪৮) ধারা ২৬(১), আই.জি.ই.এস.সি.আর এর ১৩ ও ১৪নং ধারাতেও বলা হয়েছে বাধ্যতামূলক ও অবনৈতিক শিার কথা, সেগুলো বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সরকার অঙ্গীকারাবদ্ধ। আমরা জানি ১৯৯০ সালের ১৩ ফেব্র“য়ারী বাংলাদেশ সরকার বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিা আইন (২৭নং এ্যাক্ট ১৯৯০) প্রণয়ন করে। যা খুবই ইতিবাচক ভূমিকা, কিন্তু বাপার হলো এখনো প্রায় ৩০০০ হাজার গ্রামে প্রাথমিক স্কুলই নেই, শিাতো দূরের কথা। অন্যদিকে সংবিধানের ১৭(৩) এ বলা হয়েছে, ‘আইনের দ্বারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিরতা দূর করিবার অন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিবে রাষ্ট্র’ কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে আইন কখন নির্ধারণ করবে সেই নির্ধারিত সময়টি? স্বাধীনতা, সংবিধান, গণতন্ত্র সবই বিদ্যমান থাকা স্বত্বেও চল্লিশ বছরের যুবক এই দেশ শিা নামক অঙ্গটির সুরা দিতে পারেনি, পারছে না। অন্যদিকে দিন থেকে দিনান্তে। তাকে আরো অবশ করার পাঁয়তারা করা হচ্ছে, সর্বদিক থেকে। যার ফলে এখনো প্রতিবছর প্রায় ১৬ লাখ শিশুকে প্রাইমারি লেভেলই পাঠ চুকিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে। উচ্চ শিাও নিশ্চিত হয়ে থাকে ৪/৫ শতাংশের জন্য, তাও বেসরকারি খাতের সমন্বয়ে। চল্লিশ বছরে আমরা সম হযেছি শিা ব্যবস্থার ৯৫% তুলে দিতে বেসরকারি খাত দানবের হাতে। দেশে আজ ৮২,২১৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে মাত্র ৩৭,৬৭২টি ও ১৮৭৯৫টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৩১৭টি সরকারি। উচ্চ শিার প্রধান হাতিয়ার ৯৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৬২টিই বেসরকারি মালিকানায়। উচ্চ শিার েেত্র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও চলছে অগোষিত ব্যবসায়িক বাস্তবতা, অধিকার এতই সুনিশ্চিত হয়েছে যে, দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৮ থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত লাগছে। যা কিছু েেত্র প্রাইভেটকেও হার মানাতে বাধ্য।
ইঞ্জিনিয়ারিং, তথ্য প্রযুক্তি, টেক্সটাইল এবং মেডিকেল শিাকে ইতিমধ্যে সাধারণ জনগণের নাগালের বাইর নিয়ে যেতে সম হয়েছে সরকারগুলো, পরিপূর্ণভাবে। আজকে ২০১০ সালে এসেও শিানীতিতে স্বাধীন দেশের উচ্চ শিার েেত্র বিধান রাখা হয়েছে” ..... সরকারি অনুদান ছাড়াও উচ্চ শিার প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যয় নির্বাহের জন্য শিার্থীদের বেতন ব্যবহার করতে হবে এবং ব্যক্তিগত অনুদান সংগ্রহের চেষ্টা চালাতে হবে। বাংলাদেশে বর্তমান পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোতে ভর্তি ফি ও বেতন খুবই সামান্য। অভিভাবকের আর্থিক স্বচ্ছতার প্রত্যায়ন পত্রের ভিত্তিতে শিার্থীদের বেতন নির্ধারণের চেষ্টা করা হবে”। (ধারা-৮, উচ্চ শিা, পৃষ্টা-১৪, কৌশল-১৪) যা শুধু হতাশাব্যঞ্জক ও অধিকার পরিপন্থীই নয়, জনগণের সাথে তামাশারও শামিল বটে।
বিগত ৪০ বছরের শিানীতি ও কৌশলগত পর্যালোচনায় দেশের নাগরিক মাত্রই বুঝতে সম হয়েছেন যে, শিার নীতিগত প্রশ্নে ঔপনিবেশিক শাসক, পাকিস্তানী স্বৈরশাসক ও স্বাধীন দেশের মেরুদন্ডহীন অপদার্থ শাসকদের মধ্যে তেমন কৌশলগতভাবে মৌলিক পার্থক্য নেই। তাইতো আজকে ছাত্র সমাজকে রাজপথে লাঞ্ছিত হতে হচ্ছে, বিসর্জন দিতে হচ্ছে তাদের স্বকীয়তা, সরকারগুলো নিয়েছে ‘পিছনে চলে নীতি’। মেধা, মনন ও প্রগতি আজকে হারতে যাচ্ছে বাণিজ্যের কাছে। ফলে আজও ছাত্র সমাজের বর্তমান দাবিদাওয়াগুলো ও স্বাধীনতা পূর্ব ৬২ এর শিা আন্দোলনের ২২ দফা, ঐতিহাসিক ১১ দফা থেকে ভিন্নতর কিছু নয়। বরং সংকট দিন থেকে দিনান্তে আরো জ্বলন্ত হচ্ছে। সরকারের অবস্থা হয়েছে সেই রোগীর মত, ‘একদিন এক ভদ্রলোক রাস্তায় হাঁটার সময়ে পাথরের সাথে ধাক্কা খেয়ে আঘাতপ্রাপ্ত হয়। সে ডাক্তারের কাছে গেলে ডাক্তার একটি মলম দিল নিরামক হিসেবে। যেখানে আঘাত পেয়েছে সেখানে মালিশ করতে বলা হয়। কিন্তু এক সপ্তাহের মধ্যে ব্যাথা ভাল না হওয়ায় রোগী ডাক্তার এর নিকট অভিযোগ করে। ডাক্তার বলে আপনি কোথায় মালিশ করেছৈন? রোগীর যথাযথ সঠিক উত্তর ‘সেই পাথরের গায়ে, যার সাথে ধাক্কা খেয়েছি’! ঠিক তেমনি আমাদের শিা ব্যবস্থা চলছে সেই রোগীর মলম তত্ত্বের ন্যায়। কারণ বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল জনবহুল দেশে শিকার বাণিজ্যকরণ নীতি তথা মলম তত্ত্ব দিয়ে আর যাই হোক, প্রত্যাশিত উন্নতি সম্ভব নয়। তাই সরকারকে ভাবতে হবে বাস্তবতার আলোকে, জাতির স্বার্থে।
মোহাম্মদ তরিক উল্যাহ
আইন বিভাগ, ৪র্থ বর্ষ, চ.বি।
©somewhere in net ltd.