নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব।

এম টি উল্লাহ

আমি এম টি উল্যাহ। আইনি উপন্যাস ‘‘অসমাপ্ত জবানবন্দী’’ ও ‘‘নিরু”, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বই ‘‘মায়ের মুখে মুক্তিযুদ্ধ’’ ও ‘‘একাত্তরের অবুঝ বালক’’ এর লেখক। পেশায়-আইনজীবী।www.facebook.com/mohammad.toriqueullah , Email- [email protected]

এম টি উল্লাহ › বিস্তারিত পোস্টঃ

পতিতাবৃত্তি ও পাচার ঃ কতটুকু নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি আমরা?

১২ ই জুন, ২০১৩ দুপুর ২:১৭

পতিতাবৃত্তি ও দেহ ব্যবসা কি সুস্থ স্বাভাবিক নারীর পেশা হতে পারে? আর দশটা পেশার মত এটাও কি নারীর কর্মক্ষেত্র হওয়া উচিত? এক্ষেত্রে আইন ও বাস্তবতার এক বিরাট সমন্বয় হীনতা কাজ করতেছে দেশে।



একদিকে যেমন রয়েছে আইনের বিধি-বিধান, অন্যদিকে দেহব্যবসাকে কেন্দ্র করে বি¯তৃত হচ্ছে নানা রকমের অপরাধ মূলক কর্মকান্ড, আর যৌন কর্মীরাও রয়েছে অনেকটা সংজ্ঞাহীন নাগরিক হিসেবে। এক হিসাব মতে দেশে মোট ৭৪৩০০ পতিতা রয়েছে। যার মধ্যে ৩০৭০০ জন ভাসমান যৌনকর্মীআমাদের দেশে সাধারণত চার ধরণের যৌন কর্মী রয়েছে ১) যৌনপল্লী বেইজ সেক্স ওয়ার্কার ২) রেডিডেন্স বেইজ সেক্স ওয়ার্কার ৩) হোটেল বেইজ সেক্স ওয়ার্কার ৪) স্ট্রিট বেইজ



যার মধ্যে স্ট্রিট বেইজ কর্মীরা যেমনি অসুরক্ষিত তেমনি মূলত জড়িত নানা ধরণের অপরাধ কর্মকান্ডের সাথে। উন্নত-অনুন্নত দেশে নির্বিশেষে, প্রধানত দারিদ্র এবং অর্থনৈতিক-সামাজিক বঞ্চনা, নারী ও শিশু কন্যাদের এই বৃত্তিতে যুক্ত হতে বাধ্য করে। আর সমাজ ব্যবস্থার যাতাকলে এই মানুষগুলোর নাই কোন নির্দিষ্ট পরিচয়, স্বাধীনতা, অধিকার, কিংবা নিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন।



যে মানুষগুলো নিজেদের দেহ বিলিয়ে দিয়ে জীবন যাপন করতেছে অথচ পকেট ভারী হচ্ছে সমাজের মোগলদের। “সেক্স ওয়াকার্স নেটওয়ার্ক অব বাংলাদেশ” নামে যৌনকর্মীদের একটি জাতীয় সংগঠন রয়েছে, যাতে দেশের মোট ২৯টি সংগঠন রয়েছে। যেগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেই এই কর্মীদের নিজেদেরই। পতিতালয়গুলোকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে বৃহৎ মাদকের আশ্রয়স্থল। টঘঐঈজ এর রিপোর্টে বলা হয়েছে “বাংলাদেশের পতিালয়গুলোতে নারী ও শিশুদের মাঝে (১৮-৩৫ বৎসরের) ৯০%ই মাদকসেবী। নারী ও শিশু নির্যাতন এবং নারী পাচার কার্যক্রমও এই ক্ষেত্রে নড়ক, যা অনেকটা পরিচালিত হচ্ছে দেহ ব্যবসাকে কেন্দ্র করেই। প্রতি বছর গড়ে প্রায় ১৫ হাজার নারী ও শিশু বাংলদেশ থেকে পাচার হচ্ছে। অন্য একটি হিসেবে প্রতি মাসে গড়ে ২০০-৪০০ নারী ও শিশু বাংলাদেশ থেকে পাচার হয় পাকিস্তানে। আর ১০ থেকে ১৫ হাজার শুধু ভারতেই।



এদের অধিকাংশই পাঠান হয় ভারত, পাকিস্তান ও আরব আমিরাতে। তাদের বাধ্যতামূলক দেহ ব্যবসায় নিয়োজিত করা হয়। শুধু কলকাতার গণিকালয়েই ১৪% নারী বাংলাদেশী। দেশী ও আন্তর্জাতিকভাবে দেহ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে পর্যাপ্ত আইনী বিধিমালা। ১৯৮৯ সালে ওহঃবৎহধঃরড়হধষ ঈড়সসরঃঃবব ভড়ৎ চৎড়ংঃরঃঁঃবং জরমযঃং (ওঈচজ) যে ডড়ৎষফ ভড়ৎ চৎড়ংঃরঃঁঃবং জরমযঃং গ্রহন করে তাতে বলা হয়েছে পতিতাবৃত্তিকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা যাবে না এবং যথাযথ নীতিমালা প্রণয়ন করে রাষ্ট্র সমূহকে তা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। নারীর প্রতি বৈষম্য বিলোপ সনদ-সিডও ঈড়হাবহঃরড়হ ড়ভ ঃযব ঊষরসরহধঃরড়হ ড়ভ অষষ ভড়ৎসং ড়ভ উরংপৎরসরহধঃরড়হ অমধরহংঃ ডড়সবহ (ঈঊউঅড) যাকে বলা হয় নারীর আন্তর্জাতিক “ইরষষ ড়ভ জরমযঃং”। উক্ত সনদের ৬নং ধারায় বলা হয়েছে “শরীক রাষ্ট্রসমূহ নারীকে নিয়ে সব ধরণের অবৈধ ব্যবসা এবং দেহব্যবসার আকারে নারীর শোষণ দমন করার লক্ষ্যে আইন প্রণয়নসহ সকল উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে”।



আমাদের প্রতিবেশি ভারতেও দেহব্যবসাকে অবৈধ ঘোষণা ও নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করছে। ঞযব ওসসড়ৎধষ ঞৎধভভরপ (ঝঁঢ়ঢ়ৎবংংরড়হ) অপঃ.-৯৫৬ (ঝওঞঅ) ও ঞযব ওহফরধহ চবহধষ ঈড়ফব-এ এর জন্য যথাযথ বিধিবিধান রয়েছে। আমাদের দেশের প্রচলিত আইনগুলোতেও রয়েছে যথাযথ ব্যবস্থার কথা। দন্ডবিধির ৩৭২, ৩৭৩, ৩৬৪,ক ও ৩৬৬.ক ধারায় বেশ্যাবৃত্তির জন্য অপ্রাপ্ত বয়স্কদের ক্রয় ও বিক্রয়ের শাস্তির বিধান বর্ণিত হইয়াছে। ৩৭২ ধারায় বলা হইয়াছে যে, যে ব্যক্তি আঠার বৎসরের কম বয়স্ক কোন ব্যক্তিকে যে কোন বয়সে বেশ্যাবৃত্তি বা অন্য কেনা লোকের সহিত অবৈধ যৌন সহবাস অথবা কোন বেআইনী ও অসৎ উদ্দেশ্যে নিয়োজিত বা ব্যবহৃত হইবে এবং উদ্দেশ্যে কিংবা অনুরূপ ব্যক্তি যে কোন উদ্দেশ্যে নিয়োজিত বা ব্যবহৃত হইবে এইরূপ সম্ভাবনা রহিয়াছে জানিয়া তাহাকে বিক্রয় করে, ভাড়া দেয় বা প্রকারন্তরে হস্তান্তর করে, সেই ব্যক্তি যে কোন বর্ণনার কারাদন্ড যাহার মেয়াদ দশ বৎসর পর্যন্ত হইতে পারে এবং তদুপরি অর্থ দন্ডেও দন্ডনীয় হইবে।





৩৭৩ ধারায় বেশ্যাবৃত্তির উদ্দেশ্যে অপ্রাপ্ত বয়স্ক নারী ক্রয় করা সম্পর্কে বলা হইয়াছে। এইরূপ ক্রয় করিলে তাহার শাস্তি দশ বৎসর পর্যন্ত কারাদন্ড এবং তদুপরি অর্থদন্ডও হইতে পারে। ৩৬৪.ক তে বলা হয়েছে, কোন ব্যক্তি যদি দশ বৎসরের কম বয়স্ক কাউকে খুন, গুরুতর আঘাত দাসত্ব কিংবা কাম-লালসার শিকারে পরিণত করার উদ্দেশ্যে হরণ করে, তাহলে সে মৃত্যুদন্ডে বা যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত হবে। যার মেয়াদ ১৪ বছর পর্যন্ত হতে পারে, তবে ৭ বছরের কম নয়। ৩৬৬.ক তে বলা হয়েছে কোন লোক যদি অপ্রাপ্ত বয়স্ক কোন বালিকাকে যার বয়স ১৮ হয়নি, সংগ্রহ করে তাকে কারো সাথে যৌন সংগম করাতে বাধ্য করে তাহালে সে কারাদন্ডে দন্ডিত হবে। যার মেয়াদ ১০ বৎসর পর্যন্ত হতে পারে এবং সে জরিমানা দন্ডেও শাস্তি যোগ্য হবে। নারীদের প্রতি নিষ্ঠুরতা (প্রতিরোধক সাজা) অধ্যাদেশ ১৯৮৩ এর ৪ ও ৫নং ধারা অনুসারে যেকোন বয়সের নারীকে বেশ্যাবৃত্তি অথবা যে কোন লোকের সহিত অবৈধ যৌনসংগম করিবার জন্য অথবা যে কোন অবৈধ ও নৈতিকতা বিরোধী কাজের জন্য ক্রয়-বিক্রয় বা আমদানী-রফতানী করা হইলে তাহার শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদন্ড বা ১৪ বৎসর পর্যন্ত কারাদন্ড এবং তদুপরি অর্থদন্ডেও দন্ডিত হইবে। উক্ত অধ্যাদেশের ৫নং ধারায় ১নং ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে যে, যখন একজন নারীকে কোন বেশ্যার নিকট অথবা যে কোন ব্যক্তির নিকট যে ব্যক্তি পতিতালয় রাখে অথবা পরিচালনা করে তাহার নিকট বিক্রয় করা হয়, ভাড়ার জন্য দেওয়া হয় অথবা অন্য কোন উপায়ে হস্তান্তর করে, যে ব্যক্তি এইরূপ হস্তান্তর করে ভিন্নতর প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত ধরিয়া লওয়া হইবে যে, সেই ব্যক্তি (নারীকে) বেশ্যাবৃত্তিতে ব্যবহার করিবার উদ্দেশ্যে হস্তান্তর করিয়াছে।

২নং ব্যাখ্যায় বলা হইয়াছে, যে ব্যক্তি বেশ্যা অথবা যে ব্যক্তি কোন পতিতালয় রাখে বা পরিচালনা করে সেই ব্যক্তি কোন নারীকে ক্রয় করিলে, ভাড়া নিলে অথবা অন্য উপায়ে দখল নিলে ভিন্নতর প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত ধরিয়া লওয়া হইবে যে, সে বেশ্যাবৃত্তি করানোর জন্য অনুরূপ নারীর দখল নিয়াছে।

নারী ও নির্যাতন দমন আইন (২০০০) এর ধারা-৫ এ বলা হয়েছে, কোন ব্যক্তি পতিতাবৃত্তির উদ্দেশ্যে কোন নারীকে বিদেশ থেকে এনে পাচার করা অথবা ক্রয় বিক্রয় বা হেফাজতে রেখে বেআইনী বা নীতি বহির্ভূত কোন কাজে নিয়োজিত রাখলে তাহলে উক্ত ব্যক্তি মৃত্যুদন্ড বা যাবজ্জীবন কারাদন্ডে অথবা ১০ বৎসর সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত এবং অর্থদন্ডে দন্ডিত হবে। বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৮(২) ও ৩৪(১) অনুযায়ী গণিকাবৃত্তি ও জুয়াখেলা নিরোধের জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এবং সকল প্রকার জবরদস্তি শ্রম নিষিদ্ধ ও আইনত দন্ডনীয়।

অতএব আমরা দেখেতে পাই যে, দেশের আইনে পতিতাবৃত্তি নিষিদ্ধ কিন্তু বাস্তবে তা নয়। আইন অনুযায়ী পতিতাদের উদ্ধার করে সম্মানজনক পুনঃবাসন করার কথা। এ উদ্দেশ্যে কিছু ভবঘুরে আশ্রয় কেন্দ্র তৈরি করা হয়েছিল কিন্তু এগুলো বাস্তবে পতিতালয়ের চেয়েও জঘন্য। সেখানে আশ্রিতরা আরো বেশি নিরাপত্তাহীন ও মানবেতর জীবন যাপন করতেছে। তাই বিষয়টি নিয়ে নতুন করে ভাবার সময় এসেছে। এটি যেমন পেশা হতে পারে না, তেমনি ভোগ্য বিষয়বস্তুও হয়ে থাকাটা কাম্য নয়।









মোহাম্মদ তরিক উল্যাহ

আইন বিভাগ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।


মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই জুন, ২০১৩ বিকাল ৩:৩৪

সীমান্ত উন্মাদ বলেছেন: সেটাই, প্রতিদিন নিজের সপ্ন আর শরীর বিক্রি করে বেঁচে থাকা এই সব মানুষেরদের নিরপত্তার কথা আমরা কি কেউ ভাবছি। এইটা একটা বিশাল প্রশ্ন।


লিখাটা ভালা লাগছে। উন্মাদিও শুভেচ্ছা জানবেন।

২| ১৩ ই জুন, ২০১৩ সকাল ১১:৪৯

ইয়াংেমন বলেছেন: kisui Bolar Nai...... Shudu Afsos R Afsos.

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.