নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব।

এম টি উল্লাহ

আমি এম টি উল্যাহ। আইনি উপন্যাস ‘‘অসমাপ্ত জবানবন্দী’’ ও ‘‘নিরু”, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বই ‘‘মায়ের মুখে মুক্তিযুদ্ধ’’ ও ‘‘একাত্তরের অবুঝ বালক’’ এর লেখক। পেশায়-আইনজীবী।www.facebook.com/mohammad.toriqueullah , Email- [email protected]

এম টি উল্লাহ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভারত-ইরান সুসম্পর্ক: আবেগের উর্ধ্বে অর্থনীতি নির্ভর পররাষ্ট্রনীতির এক দৃষ্টান্ত

২৭ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ১০:৫০


উদীয়মান চীন ও অনিশ্চিত যুক্তরাষ্ট্রের মাঝে সুক্ষ্ম সুতার উপর হেঁটে চলছে মৌদির অর্থনীতি। যেখানে আবেগের কোন স্হান নেই। মুনাফা ব্যাতীত ভূ-রাজনীতিতে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে যে অনাগ্রহী চীনের পথ ধরেই এগিয়ে চলছে ভারত। তার সর্বশেষ নজির যুক্তরাষ্টের অবরোধের মাঝে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ-ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মাদ জাওয়াদ জারিফের বৈঠক। পাশ্চাত্যের সঙ্গে ইরানের স্বাক্ষরিত পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার এবং তেহরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ৮ মে ইরানের পরমাণু সমঝোতা থেকে তার দেশকে বের করে নেয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, আগামী ছয় মাসের মধ্যে ইরানের বিরুদ্ধে আরোপিত নিষেধাজ্ঞাগুলো পুনর্বহাল করা হবে। এমন উত্তপ্ত পরিস্হিতিতে বিশ্ব নেতৃত্বের দৃষ্টি যখন এই বৈঠকের দিতক ঠিক সে সময়েই বাজ পাঠালেন সুষমা। তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ‘আমাদের পররাষ্ট্রনীতি অন্যান্য দেশের চাপের মধ্য তৈরি হয়নি। যেকোনো দেশের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষার ক্ষেত্রে নয়াদিল্লি সম্পূর্ণ স্বাধীন এবং ভারতের পররাষ্ট্রনীতি কারো চাপের কাছে নতি স্বীকার করবে না… আমরা জাতিসংঘ অবরোধকে স্বীকার করি, কোনো বিশেষ দেশের অবরোধকে নয়। আগেও আমরা মার্কিন অবরোধ মানিনি।’ তার নজিরও আছে অবশ্য সুষমাদের। অতীতে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ইরান, ভেনিজুয়েলা ও উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে ব্যবসা করেছে ভারত। যুক্তরাষ্ট্র সরকার উত্তর কোরিয়ায় দূতাবাস বন্ধের অনুরোধ করলেও ভারত কর্ণপাত করিনি। এমনকি ইরানের বিরুদ্ধে শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞার সময়ও ভারত সেদেশ থেকে তেল কিনেছে।

শুধু তাই নয়, ব্রিকসের দুই দেশ(ব্রিক্স হলো পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রের: ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন এবং দক্ষিণ আফ্রিকা, আদ্যক্ষরের সমন্বয়ে নামকরণকৃত উদীয়মান জাতীয় অর্থনীতির একটি সংঘ) চীন ও রাশিয়ার পর এবার তাল মিলিয়ে চলতে ভারত বিন্দুমাত্র সংশয় রাখেনি। ভারত আরো বেশি এগিয়েছে এবং ইরানের কাছ থেকে তেল কেনা অব্যাহত রাখবে। ইরান হলো ভারতের তৃতীয় বৃহত্তম তেল সরবরাহকারী। তারা রাষ্ট্রীয় ব্যাংক ইউসিওর মাধ্যমে রুপিতে মূল্য পরিশোধ করতে চায়। আগের মেয়াদের চেয়ে ২০১৮ সালের মার্চ পর্যন্ত ইরানের কাছ থেকে ভারত ১১৪ ভাগ বেশি তেল কিনেছে। যদিও ভারত-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যের পরিমাণ ১১৫ বিলিয়ন ডলার। আর ভারত-ইরান বাণিজ্যের পরিমাণ মাত্র ১৩ বিলিয়ন ডলার।

কিন্তু তবুও কেন এতো ফিরিতি তাহাদের? এ বিষয়ে কথা বলে আইএমএফের পরিসংখ্যান। তাদের তথ্য মতে, ২০১৮ সালে ভারতের প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ হতে পারে এবং এর জিডিপি উন্নীত হতে পারে ২.৬ ট্রিলিয়ন ডলার। ফলে তারা ফ্রান্স, ইতালি, ব্রাজিল ও রাশিয়া থেকে এগিয়ে থাকছে। প্রবৃদ্ধি বজায় রাখার জন্য জ্বালানির খুবই প্রয়োজন। ফলে ইরানি জ্বালানি কেনা ভারতের জন্য জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়। ভারত ও ইরানের মধ্যকার ব্যাপকভিত্তিক অংশীদারিত্বের মধ্যে রয়েছে জ্বালানি, বাণিজ্য, বিনিয়োগ কানেকটিভিটি করিডোর, ব্যাংকিং, বীমা, জাহাজ চলাচল এবং আরো গুরুত্বপূর্ণভাবে ডলারকে এড়িয়ে রুপি ও রিয়ালে সবকিছু ব্যবহার করার সম্ভাবনা। ভারত-ইরান ইতোমধ্যেই ইউরো দিয়ে বাণিজ্য করছে। ফলে তারা মার্কিন ডলার এড়িয়েই বাণিজ্য চালিয়ে যেতে পারবে। তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের একতরফাভাবে ইরানি পরমাণু চুক্তি বাতিলের বিষয়টিও ইইউ গ্রহণ করছে না বলেই ধরা যায়। ফলে ভারতের তেল আমদানিও চালিয়ে যাবে যুক্তরাষ্ট্রের তোয়াক্কা না করে।
ভারত এখানেই থেমে থাকেনি। ভারত তার আলোচিত "পুবে তাকাও" নীতি বা "লুক ইস্ট" পলিসি ("Look East" Policy) অর্থাৎ দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশগুলির সঙ্গে ভারতের অর্থনৈতিক ও কৌশলগত বৈদেশিক সম্পর্ক বিস্তারের কার্যকরী পরিকল্পনা নীতির সাথে সাথে ইরান-আফগানিস্তানের দিকেও নজর দিয়ে যাচ্ছে । এইভাবে ভারত তাকে একটি আঞ্চলিক শক্তিতে পরিণত করার সাথে সাথে এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে চীনের কৌশলগত প্রভাব খর্ব করার নিমিত্তেও নিজেকে নিয়োজিত রেখেছে। যেমন, চীনের আদলে কানেকটিভিটি রাজনীতিও শুরু করে দিয়েছে ভারত। ভারত-আফগানিস্তান-ইরান কানেকটিভিটি করিডোর নিয়ে নয়া দিল্লির অব্যাহতভাবে কাজ করে চলছে। ইরানের চাহাবার বন্দরে এ পর্যন্ত ৫০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে ভারত । চাবাহার-জাহেদান রেলওয়ের নির্মাণকাজ চলছে। চাবাহার হলো ভারতীয় সংস্করণের নতুন সিল্ক রোড। এটি পাকিস্তানকে এড়িয়ে আফগানিস্তান ও মধ্য এশিয়ার সাথে ভারতকে যুক্ত করবে। মূলত ২০১৬ এর মে মাসে চাবাহার বন্দরকে করিডর হিসেবে ব্যবহার করার জন্য ত্রিপাক্ষিক চুক্তি করে ভারত। তাতে স্বাক্ষর করেছিলেন নরেন্দ্র মোদি, আসরাফ গনি ও হাসান রৌহানি
যদিও সুষমা স্বরাজের এ বক্তব্য দেওয়ার কয়েক ঘন্টার মধ্যে ওয়াশিংটন থেকে রাশিয়ার এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র কেনার ব্যাপারে ভারতকে সতর্ক করে দেয়া হয়। যদিও ওয়াশিংটন আগে এধরনের ক্ষেপণাস্ত্র কেনার ব্যাপারে তাদের কোনো আপত্তি নেই বলে জানিয়েছিল। ভারত পুরোনো মিত্র রাশিয়া ও অংশীদার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বুঝে শুনেই চলতে চাইছে। যুক্তরাষ্ট্রের অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র পাওয়ার ক্ষেত্রে হয়ত ভারত এখন বাধার মুখে পড়তে পারে। চীনের সঙ্গে শক্তির ভারসাম্য এবং আফগানিস্তানে পাকিস্তানের প্রভাব খর্ব করে ভারত তার প্রভাব বৃদ্ধি করতে যেয়ে এর আগে ওয়াশিংটনের সঙ্গে কৌশলগত সহযোগিতা পেয়েছে। কিন্তু অর্থনীতি ও আস্হার সহিত বৈশ্বিক রাজনীতি স্বার্থে ভারত তার কাজ করে যাছে। এইতো আজ সোমবার রাশিয়ার কাছ থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) প্রথম চালান পেয়েছে ভারত। ভারতে গ্যাস-ভিত্তিক অর্থনীতি গড়ার জন্য দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির অংশ হিসেবে এই চালান আসলো। শুধু তাই নয় ভারত সরকার ‘রাশিয়ান হেলিকপ্টার্স’ ও ‘হিন্দুস্তান এরোনটিকস লি.’ (এইচএএল)-এর যৌথ উদ্যোগে রাশিয়ার কাছ থেকে ২০০ কামভ কা-২২৬টি এ্যাটাক হেলিকপ্টার কেনার ব্যাপারে মাল্টি-বিলিয়ন ডলারের চুক্তিটি অক্টোবরের মধ্যেই সম্পন্ন করার সকল উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সুতারাং ভারতের কথা ক্লিয়ার। যেখানে অর্থনৈতিক ও আস্হার বিষয় জড়িত সেখানে তারা কাজ করে যাবে। এতে সাময়িকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের মতো বড়ো শক্তির তোয়াক্কা তারা না হয় করলো না!
ইরান সম্পর্কে ভারতের পররাষ্ট্রনীতির এমন কঠিন অবস্থান শুধু যে মনস্তাত্ত্বিক কূটনীতি নয় বরং বলা চলে রাষ্ট্রীয় অর্থনীতির স্বার্থে। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের যে হারে মূল্যবৃদ্ধি হচ্ছে, তাতে ইরানের মতো দীর্ঘদিনের সহযোগীকে ছেড়ে নতুন উৎস খুঁজতে যাওয়ার কোন মানে খুঁজে পায়না ভারত। কারণ, যখন মার্কিন অবরোধের মুখে কেউ ইরানের কাছ থেকে তেল কিনতে সাহস পায়নি তখন চীন ও ভারত ইরানের কাছ থেকে তেল কিনেছে। ইরানের বিরুদ্ধে শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞার সময়ও ভারত সেদেশ থেকে তেল কিনেছে। কম সময়ে সরবরাহে সক্ষম ইরান ভারতকে তেল পরিবহনের ব্যয় থেকেও ছাড় দেয়। বিশ্বে তেলের তৃতীয় বৃহত্তম আমদানিকারক দেশটি তাহলে কেন ইরান থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে? বিশ্ব রাজনীতিতে ইরান-ভারতের এই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বর্তমানে ভিন্নতর উচ্চতায় উপনীত হয়েছে। উভয় দেশের দৃঢ়তায় দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন, ব্যবসা- বাণিজ্য বৃদ্ধি ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে যার প্রভাব ছাড়িয়ে চলছে অনেক হিসেব-নিকেশ কে।
[email protected]

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ১১:০৮

মাইনুল ইসলাম আলিফ বলেছেন: ওরা কাজে বিশ্বাসী..............।

২৭ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ১১:২৬

এম টি উল্লাহ বলেছেন: সেটাই।

২| ২৭ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ১১:০৯

রাকু হাসান বলেছেন:

খুব ভাল বিশ্লেষণ । পরাষ্ট্রনীতি জাতীয় স্বার্থেই হওয়া উচিত । সবার আগে নিজ দেশের স্বার্থ । অথচ আমরা সবাই বে বন্ধু করতে গিয়ে ,আদতে কেউ বন্ধু বলে দেখছি না ,বিশ্বরাজনীতির মঞ্চে

২৭ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ১১:২৬

এম টি উল্লাহ বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ পড়ার জন্য।

৩| ২৮ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ১:১১

চাঁদগাজী বলেছেন:


ভারতে কি শিয়াদের সংখ্যা বাড়ছে?

৪| ২৮ শে আগস্ট, ২০১৮ সকাল ৮:২৫

ইমরান আশফাক বলেছেন: বাংলাদেশের অর্থনীতি সেই পর্যায়ে পৌছায় নাই যে মার্কিন চাপ সম্পূর্নরুপে উপেক্ষা করতে পারবে। তবে সাম্প্রতিককালে আমরা বিশ্বব্যাংক ও অন্যান্য তথাকথিত দাতা সংস্হাকে যেভাবে চোখ-রাংগানী দিয়ে কথা বলতে শিখেছি সেটা কয়েকদিন আগে চিন্তাই করতে পারতাম না। পররাস্ট্রনীতিতেও আমরা আগের যে কোন সময়ের চেয়ে অধিক স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছি। তবে হ্যা, এখন থেকে আমাদের আবেগ পরিহার করে পররাস্ট্রনীতি প্রনয়ন করতে হবে।

২৮ শে আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:১৫

এম টি উল্লাহ বলেছেন: যথাযথ বলেছেন।

৫| ২৮ শে আগস্ট, ২০১৮ সকাল ৯:১৩

রাজীব নুর বলেছেন: এবার একটু গল্প দেন।

৬| ২৮ শে আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৩:১৭

টারজান০০০০৭ বলেছেন: ভারত বন্দনা ভালো হইছে !

জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনে একমাত্র ভারতই লাভবান হইয়াছে ! তাহা ছাড়া সুনির্দিষ্ট নীতি , মতাদর্শহীন পররাষ্ট্রনীতির কারণে তাহাদের পররাষ্ট্রনীতি চীনের মতোই নীতিহীন বাণিজ্য নির্ভর হইয়াছে। রাজনীতি ও কূটনীতিতে বিভিন্ন মতাদর্শ ও ধর্মের সম্মেলন ভারতকে সুবিধা দিয়াছে ! যেখানে গণতান্ত্রিক আদর্শ দরকার সেখানে গণতন্ত্র, যেখানে সমাজতন্ত্র দরকার সেখানে সমাজতন্ত্র, যেখানে যে ধর্মকে দরকার সেখানে সেই ধর্মের লোকদের কাজে লাগানোর সুবিধা ভারতকে আগাইয়া দিয়াছে ! তাহা ছাড়া তাহাদের ধজঃভঙ্গ মানবাধিকারকে টেকনা দিয়া খাড়া করার লোকও আছে।

ইরান এখন কাদায় পড়া গরু ! উহাকে দোয়াইতে অনেক সুবিধা ! তবে দোয়ানোর সাহস ভারতের আছে ! কম পয়সায় তেল গ্যাস পাইতেছে , কম কি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.