নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব।

এম টি উল্লাহ

উপন্যাস ‘‘অসমাপ্ত জবানবন্দী’’ ও ‘‘নিরু”, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপন্যাস ‘‘মায়ের মুখে মুক্তিযুদ্ধ’’ ও ‘‘একাত্তরের অবুঝ বালক’’ এর লেখক। পেশায়-আইনজীবী। কর্মস্থল- হাইকোর্ট।www.facebook.com/mohammad.toriqueullah

এম টি উল্লাহ › বিস্তারিত পোস্টঃ

চেক ডিস্অনার ও মামলা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্য

০৮ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১০:৪৭


আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায়িক লেনদেন এবং অর্থ পরিশোধের প্রতিশ্রুতি হিসেবে একে অপরকে ব্যাংক চেক প্রদান করে থাকি। পরবর্তীতে অর্থ পরিশোধের ব্যর্থতায় চেক প্রদানকারীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করতে হয়। আসুন আমরা বিস্তারিত জেনে নিই কখন, কিভাবে মামলা দায়ের করতে হবে।

চেক ডিস্অনার কি:
চেক ডিস্অনার বলতে টাকা উঠোনোর জন্য ব্যাংকে চেক জমা দেয়া হলে ওই চেকটির বিপরীতে টাকা প্রদান করতে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের অস্বীকৃতিকে বোঝাবে।

কী কী কারণে ডিস্অনার হয়:
অপর্যাপ্ত তহবিল, চেকের মেয়াদ উত্তীর্ণ, প্রদানকারীর স্বাক্ষরের মিল না থাকা, টাকার পরিমাণ অংকে এবং কথায় মিল না থাকা, ইত্যাদি।

আদালতে প্রতিকার : চেকের মাধ্যমে প্রতারণার অভিযোগে ক্ষেত্রমতে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত অথবা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করতে হবে। চেকটি ব্যাংকের যে শাখায় ডিজঅনার হয়েছে ওই শাখাটি যে এলাকায় অবস্থিত, ওই এলাকা যে আদালতের এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে সে আদালতে মামলা করতে হবে। তবে এ অপরাধের বিচার হবে দায়রা আদালতে।

মামলা দায়ের পদ্ধতি : মামলা দায়েরের আগে কতিপয় শর্ত পূরণ করতে হবে। প্রথমত, মেয়াদের মধ্যে চেকটি পরিশোধের জন্য ব্যাংকে উপস্থাপন করতে হবে। ইস্যুর তারিখ থেকে ছয় মাস পর্যন্ত ব্যাংক চেকের মেয়াদ থাকে। এরপর চেকটি তামাদি হয়ে যায় অর্থাৎ কার্যকারিতা হারায়। দ্বিতীয়ত, চেক ডিজঅনার সংক্রান্ত তথ্য ব্যাংক থেকে প্রাপ্তির ৩০ দিনের মধ্যে চেক ইস্যুকারীকে চেকের অর্থ প্রদানের লিখিত দাবিনামা সংক্রান্ত নোটিস প্রেরণ করতে হবে। চেকের প্রাপক অথবা যথানিয়মে ধারক এই নোটিস প্রদান করবেন। নোটিস প্রাপ্তির ৩০ দিনের মধ্যে চেক ইস্যুকারী যদি চেকের মূল্য পরিশোধে ব্যর্থ হন তবেই হস্তান্তরযোগ্য দলিল আইনের ১৩৮ ধারার আওতায় তিনি শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন বলে গণ্য হবেন। তৃতীয়ত, অপরাধ সংঘটিত হওয়ার তারিখ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে আদালতে মামলা দায়ের করতে হবে।


নোটিশ প্রদান : চেক ইস্যুকারীকে উপরে বর্ণিত নোটিস তিনভাবে প্রদান করা যায়। প্রথমত, চেক ইস্যুকারীর হাতে নোটিসটি সরাসরি পৌঁছে দেওয়া। দ্বিতীয়ত, প্রাপ্তি স্বীকার রসিদসহ (এডি) রেজিস্টার্ড ডাকযোগে বাংলাদেশে তার জ্ঞাত ঠিকানায় নোটিস প্রেরণ করা। নোটিস জারির তৃতীয় পদ্ধতি হচ্ছে, বহুল প্রচারিত কোনো বাংলা জাতীয় দৈনিকে নোটিসটি প্রকাশ করা। কোনো কারণে যদি প্রথমবার চেকটি ডিজঅনার হওয়ার পর ৩০ দিনের মধ্যে নোটিস পাঠানো সম্ভব না হয়, তাহলে দ্বিতীয়বার চেকটি পরিশোধের জন্য ব্যাংকে উপস্থাপন করতে হবে। এভাবে একাধিকবার চেকটি ব্যাংকে উপস্থাপন করা যেতে পারে। মনে রাখতে হবে, চেকটি ইস্যুর তারিখ থেকে ছয় মাসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে পরিশোধের জন্য জমা না দিলে চেকটি কার্যকারিতা হারায়। নোটিস জারি ও মামলা করার জন্য কোনো অভিজ্ঞ আইনজীবীকে নিযুক্ত করা যেতে পারে।

কোম্পানির ক্ষেত্রে : হস্তান্তরযোগ্য দলিল আইন-এর ১৩৮ ধারায় বর্ণিত অপরাধ সংঘটনকারী যদি কোনো কোম্পানি হয় এবং ওই কোম্পানি যদি সংঘটিত অপরাধের জন্য দায়ী বলে প্রমাণিত হয়, তাহলে ওই অপরাধ সংঘটনের সময় কোম্পানির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সংঘটিত অপরাধের জন্য দায়ী হবেন এবং আইন অনুযায়ী দণ্ডিত হবেন। কোম্পানির ক্ষেত্রে হস্তান্তরযোগ্য দলিল আইনের ১৩৮ ধারার পাশাপাশি ১৪০ ধারা উল্লেখ করে মামলা করতে হয়।

আদালতে যা দাখিল করতে হবে : মামলা করার সময় আদালতে মূল চেক, চেক ডিজঅনার সংক্রান্ত ব্যাংকের চিঠি, আইনি নোটিস অথবা পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির কপি অথবা পোস্টাল রসিদ ও প্রাপ্তি স্বীকার রসিদের ফটোকপি ফিরিস্তি আকারে মামলার আবেদনের সঙ্গে দাখিল করতে হবে।

শাস্তি : তহবিল অপর্যাপ্ততার কারণে ব্যাংক চেক ডিজঅনার সংক্রান্ত অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ এক বছর মেয়াদ পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা চেকে উল্লিখিত অর্থের সর্বোচ্চ তিন গুণ পরিমাণ অর্থদণ্ড অথবা উভয় প্রকার দণ্ডের বিধান হস্তান্তরযোগ্য দলিল আইনে আছে। নগদ টাকার পরিবর্তে চেকের মাধ্যমে ঋণ অথবা অন্য কোনো দায়দেনা পরিশোধ উৎসাহিত করার লক্ষ্যে আইনে এ বিধান করা হয়েছে।

আপিল : আদালত কর্তৃক প্রদত্ত দণ্ডের বিরুদ্ধে আপিলের সুযোগ আছে। চেকে উল্লিখিত টাকার কমপক্ষে শতকরা ৫০ ভাগ যে আদালত দণ্ড প্রদান করেছেন, সে আদালতে জমা দিয়ে আপিল করতে হবে। দেশের আদালতগুলোতে চেকের মাধ্যমে প্রতারণার অভিযোগে মামলা-মোকদ্দমা হরহামেশাই হচ্ছে। শাস্তিও হচ্ছে। কাজেই, সাবধান! ব্যাংক চেক দিয়ে প্রতারণার দিন শেষ।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্যঃ
১) একটি চেকের মেয়াদ চেকের গায়ে চেক দাতার দেওয়া উল্লেখিত বা লিখিত তারিখ হতে ৬ মাস পর্যন্ত।তাই উক্ত সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পর ব্যাংক গ্রহন না করার কারনে আদালতে Negotiable Instrument Act এর ১৩৮ ধারা অনুযায়ী আর টাকা দাবি করা যায় না।তাই ৬ মাস এর ভিতর চেক এর টাকা তোলার জন্য ব্যাংক এ উপস্থাপন করতে হয়।
২) উপরল্লিখিত নির্দিষ্ট সময়ের ভিতর উপস্থাপনে চেকদাতার একাউনট এ টাকা না থাকলে ডিসঅনার স্লিপ সংগ্রহ করে চেকের টাকা দাবি করে এক মাসের সময় দিয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে Negotiable Instrument Act এর ১৩৮ ধারা মোতাবেক টাকা পরিশোধের দাবি জানিয়ে নোটিশ সরবরাহ করতে হয় এবং নোটিশটি ছাড়তে হয় ডিসঅনার হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে।
৩) নোটিশ প্রাপ্তির ৩০ দিন পর মামলার কারন উদ্ভব হয়।মামলার কারন উদ্ভব হওয়ার ১ মাসের মধ্যে একজন ১ম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট বা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বরাবরে লিখিতভাবে অভিযোগ দায়ের করা যায়।আর নোটিশ গ্রহন না করলে নোটিশ ফেরত আসার তারিখ হতে এক মাসের মধ্যে অভিযোগ দায়ের করা যায়।
৪) চেকের প্রাপক বা দাবিদার এর পক্ষে তার নিজুক্তিও Attorney Holder মামলা করতে পারেন।
৫) অনেকের মনে প্রশ্ন থাকে ডিসঅনার কয়বার করাতে হয়।উত্তরটা হল একবার ডিসঅনার করালে ও মামলা করা যায়।

৬) নোটিশ সরবরাহ না করলে বা নোটিশ জারি না করে চেকের মামলা করা যায় না। নোটিশ রেজিস্ট্রি ডাকযোগে প্রাপ্তি স্বীকারোক্তি সহ জারি করাই উত্তম অথবা জাতীয় পত্রিকায় নোটিশ প্রচার করা যায়।

৭) স্থানীয় অধিক্ষেত্রঃ যে ব্যাংকে চেক উপস্থাপন করা হয় সেই ব্যাংক আদালতের যে স্থানীয় অধিক্ষেত্রে অবস্থিত সেই আদালতে মামলা দায়ের করতে হবে।

৮) যে কোন ধরনের ডিসঅনার এর কারনে মামলা দায়ের করা যায়।

৯) কোন কারনে আইনের নির্ধারিত মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেলে প্রতারনার জন্য মামলা করা যায়।

১০)কখনও কোন চেক হারিয়ে গেলে সাথে সাথে নিকটস্থ থানায় জি, ডি দায়ের করে ব্যাংক এর মাধ্যমে চেক স্টপ করাতে হয়।

১১) হারান চেক উদ্ধারের জন্য মামলা করা যায়।

১২) কিছু না লিখে বা টাকার সংখ্যা না লিখে অর্থাৎ খালি চেক কখন কাওকে সরবরাহ করা উচিত নয়।
[email protected]
facebook.com/mohammad.toriqueullah
01733 594 270

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১:৪৮

স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: ছয় মাসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে পরিশোধের জন্য জমা না দিলে চেকটি কার্যকারিতা হারায়।
ব্যাপারটি অদ্য পরিস্কার হলো ।

২| ০৯ ই অক্টোবর, ২০১৮ সকাল ৯:১৭

গগণ আলো বলেছেন: আমার বিয়েতে আমার এক ধনি আত্মীয় চেকে তিন হাজার টাকা দিয়েছিলেন। কিন্তু সাইন করেননি। আমরা আর লজ্জায় / সংকোচে তাকে তা জানাইনি।

তিন হাজার টাকা তখন অনেক টাকা ছিল।

৩| ০৯ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ৯:০৭

রাজীব নুর বলেছেন: আপনার কাছ থেকে কই কিছু যে জানছি !!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.