নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব।

এম টি উল্লাহ

আমি এম টি উল্যাহ। আইনি উপন্যাস ‘‘অসমাপ্ত জবানবন্দী’’ ও ‘‘নিরু”, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বই ‘‘মায়ের মুখে মুক্তিযুদ্ধ’’ ও ‘‘একাত্তরের অবুঝ বালক’’ এর লেখক। পেশায়-আইনজীবী।www.facebook.com/mohammad.toriqueullah , Email- [email protected]

এম টি উল্লাহ › বিস্তারিত পোস্টঃ

সুবর্ণচরের অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রকল্প: সম্ভাবনা ও আশঙ্কার সমীকরণ!

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১২:১৪

আবারও নোয়াখালীর সুবর্ণচরে অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আবারও কেন বলছি তার আলোচনা একটু পরে করছি।
বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগ ও ব্যাপক কর্মসংস্থানের জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এসইজেড-Special Economic Zone) সর্বোৎকৃষ্ট স্থান হিসাবে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থার (আঙ্কটাড) ‘ট্রান্সন্যাশনাল করপোরেশনস’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৮৬ সালে বিশ্বের ৪৭টি দেশে ১৭৬টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এসইজেড) ছিল। এখন সেটা বেড়ে ১৪৭টি দেশে ৫ হাজার ৪০০টিতে উন্নীত হয়েছে।
তারই ধারাবাহিকতায় এর গুরুত্ব অনুধাবন করে বাংলাদেশে সরকারি, বেসরকারি, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারি (পিপিপি) ও বিদেশি—চার ধরনের ১০০ টি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন নিয়ে কাজ চলছে বিগত কয়েক বছর ধরে । এর মধ্যে জোরেশোরে কাজ চলছে ২৮টির। এর মধ্যে ১৩টি সরকারি খাতে। বেসরকারি খাতে ১৫টি। (বেসরকারি খাতে ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল চূড়ান্ত লাইসেন্স পেয়েছে)। অথচ,Bangladesh Export Processing Zones Authority (BEPZA) এর সাবেক মহা-ব্যবস্হাপক এ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী সাহেবের তথ্য মতে , সরকার ২০০৮ সালে সর্ব প্রথম এসই-জোন করার উদ্যোগ নেয় সুবর্ণচরে।বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ বা বেজা (Bangladesh Economic Zones Authority) এর সর্বশেষ তালিকায় ৮৮ টি প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চল এর নাম পাওয়া যায় ( ৫৯ টি সরকারি মালিকানাধীন, ২৯ টি বেসরকারি) কিন্তু এর মধ্যে সুবর্ণচর তো দূরের কথা নোয়াখালী+ লক্ষ্মীপুর জেলার কোন নামই নাই । অথচ, শুধু
নোয়াখালীর সুবর্ণচরে ও পাশ্ববর্তী সংযুক্ত অঞ্চলে রয়েছে প্রায় ৬৬ হাজার একর খাস জমি!।

যাইহোক, সুবর্ণচরের অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রকল্প নিয়ে মূল আলোচনায় আসার আগে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার প্রশাসনিক প্রক্রিয়া জেনে নেওয়া যাক।

অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলতে প্রথম প্রয়োজন জমি/স্হান নির্বাচন। জমি নির্বাচনের স্বার্থে প্রাথমিক তথ্য চেয়ে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকদেরকে চিঠি দেওয়া হয় Bangladesh Economic Zones Authority- BEZA কর্তৃক। জেলা প্রশাসক কার্যালয় সরজমিনে প্রয়োজনীয় জরিপ সমপন্ন করে প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহ করার পর অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার জন্য পর্যাপ্ত খাস জমি, ওই জমি কতটা উপযোগী, জেলা শহর ও রাজধানীর সাথে ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা, নিকটবর্তী এলাকা অবধি বিদ্যমান গ্যাস ও ট্রেন লাইন, নদীর নৈকট্য, বিদ্যুৎ, অবকাঠামো, অধিগ্রহণ প্রক্রিয়াসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা কী রকম আছে তার যাচাই-বাচাই পূর্বক প্রতিবেদন প্রদান করে । জমিটি অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য উপযোগী হলে তবেই প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) এর নির্বাচন কমিটির কাছে উপস্থাপন করা হয়। এভাবেই ধাপে ধাপে অগ্রসর হতে থাকে পরবর্তী কার্যক্রম। চূড়ান্ত পর্যায়ে বেজা গভর্নিং বোর্ডের সভায় নীতিগতভাবে স্থান নির্বাচন চূড়ান্ত করা হয়। সর্বশেষ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তাবিত বাজেট (বরাদ্দ) সহ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী পরিষদের (একনেক) অনুমোদন এর জন্য উপস্থাপন করা হয়, অনুমোদিত হলে কার্যক্রম শুরু হয় ভূমি অধিগ্রণের মধ্যে দিয়ে।
আমার জানা মতে ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর ২০১৩ সালে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলতে জমি নির্বাচনে প্রাথমিক তথ্য চেয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে এবং সরজমিনে প্রয়োজনীয় জরিপ সমপন্ন করে প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহ পূর্বক প্রতিবেদন তৈরির বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। এখানে বলে রাখা ভাল, সার্বিক দিক বিবেচনা করে সর্বশেষ প্রস্তাবনা অনুযায়ী কিছু অঞ্চলে বিসিক এর ন্যায় ক্ষুদ্র শিল্প অঞ্চল গড়ে তোলার কথা বলা হয়। তারই আলোকে সুবর্ণচরে ৩৫০ একর
ভূমি বরাদ্দের কথা বলা হয়। অর্থাৎ এটা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এসইজেড) না হলেও মোটামুটি ক্ষুদ্র শিল্প অঞ্চলের রুপ পাবে। যার প্রেক্ষিতে সুবর্ণচরের চর আলাউদ্দিন, চর আকরাম উদ্দিন, পূর্ব চর মজিদ, পশ্চিম উড়িরচর, উড়িরচর, দক্ষিণ চর মজিদ, কনক গ্রাম, চর নোমান, চর বায়েজিদ, চর খোন্দকার, চর মোজাম্মেল, চর বনানী এবং চর মাকছুমুল হাকিম মৌজার সম্ভাব্য জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় মর্মে স্হানীয়ভাবে জানা যায় ।

এখন সম্ভাবনার সাথে আশংকা কথা বলছি কারণ, আমাদের মনে রাখা প্রয়োজন, ২০০৮ সালে অর্থনৈতিক অঞ্চল(Economic zone) ও নতুন ক্যান্টনমেন্ট/সেনাবাহিনীর লজিস্টক ইউনিট (৫ টি) তৈরীর পরিকল্পনার অংশ হিসেব সরকার যে জায়গাগুলো নিবার্চন করে তার দুটিতেই সুবর্ণচরের নাম আসে। সেনাবাহিনী তারই অংশ হিসেবে সরকার এর কাছ থেকে ৬০,০০০ হাজার একর ভূমি বরাদ্দের আবেদন করে। যার মাঝে শুধু হাতিয়া- কেরিংচর-সন্দীপ ও সুবর্ণচর এরিয়াতেই ৪৫০০০ একর এর আবেদন করে। যার মাঝে সরকার ৩৫০০০ হাজার একর অনুমোদন করে সেনাবাহিনীকে। যার অর্ধাংশের বেশীই কেরিংচর ও সুবর্ণচর সংলগ্ন ভূমি। সেনাবাহিনী তাদের জায়গা বুঝে নিতে পারলেও অর্থনৈতিক অঞ্চল এর ব্যাপারটা একদম অভিবাবক হয়ে পড়ে। বিশ্বব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান আইএফসি (International Finance Corporation -IFC) ও আইডিএ (International Development Association-IDA) এর মাধ্যমে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার জন্য সমীক্ষাও চালানো হয়। কিন্তু প্রশাসনিক জটিলতা, ভূমির প্রকৃতি ও অধিগ্রহণ, আদালতে মামলা প্রভূতি কারণে সকল সম্ভাবনা থাকা সত্বেও রিপোর্টটি নেতিবাচক হয়ে যায়।
কারণ,
> প্রাথমিকভাবে প্রস্তাবিত জরিপের ২০,০০০ হাজার একর ভূমির মাঝে প্রায় ১৮,০০০ একর ভূমিই শক্তিশালী মহলের কবজায়।
>আর এ ভূমিকে সমতল করতে ৮-১০ ফুট অতিরিক্ত মাটির প্রয়োজন।
>তার মাঝে আবার যে ১১ হাজার ৫০ দশমিক ৬৭ একর চিংড়ী মহলের দখলে সেগুলো গভীর প্রজেক্ট। যা ভরাট করতে কমপক্ষে ২০ ফুট করে মাটির প্রলেপ দিতে হবে। যা একদিকে ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ তেমনি জটিলতায় ভরপুর।
>এ খাসজমিকে কেন্দ্র করে মহামান্য হাইকোর্ট এ কিছু মামলা (রীট) চলমান। যার নিষ্পত্তি প্রয়োজন আগে। (যদিও এ মামলাগুলো উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে স্বার্থ হাসিলের জন্য একটি চক্র করে রাখছে)
>যার কারণে সুবর্ণচর এর নামটা অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের তালিকা থেকে বাদ পড়ে যায়। [নেতিবাচক রিপোর্টের কারণ সম্পর্কে নোয়াখালীর (২০১৫ সালের) অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ০২/১১/২০১৫ সালে দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকায় এক সাক্ষাৎকারে জানান, ভূমিহীনদের বন্দোবস্ত প্রদানের লক্ষ্যে ২০০৮ সালে "নিজেরা করি" সহ ৮ টি এনজিও মহামান্য হাইকোর্টে একটি রীট দায়ের করেন। এতে ৩ টি উপজেলার ৮-১০ টি মৌজার বিশাল এলাকা রয়েছে। যার মধ্যে সুবর্ণচরের ১২ হাজার একর খাস জমি অন্তর্ভুক্ত। বর্তমানে এই ভূমির উপর আদালতে স্হিতি অবস্থা জারি রয়েছে। এছাড়া সুবর্ণচরে অবস্হিত কয়েকটি মৎস্য খামার মালিক মহামান্য হাইকোর্টে ৬ টি রীট দায়ের করেন। ফলে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এসইজেড) প্রতিষ্ঠার বিষয়টি শুরুতেই হোঁচট খেয়েছে]।
অন্যদিকে বেজা'র সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া ও জরিপকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে লিয়াজু করা তো দূরে থাক বরং স্থানীয় প্রভাবশালীদের কাছ থেকে অসহযোগিতার কথাও শুনা গেছে। চিংড়ী মহলের সাথে সাথে নিজেদের ভূমি টিকে রাখার জন্য একটি মহল সবোর্চ্চ পর্যায় এর রাজনীতিক সিদ্ধান্ত থাকা সত্বেও বিয়টিকে গুরুত্ব দেয়নি। ব্যক্তি পর্যায়ে লবিং তো দূরের কথা রাজনৈতিক পর্যায় থেকে দাবি তোলার বিষয়টিও ছিল উপেক্ষিত। তাই, সকল প্রকার অবৈধ হস্তক্ষেপ দূর করে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার বিষয়ে সুুবর্ণচরবাসীর সচেষ্ট হওয়া জরুরী।

- মোহাম্মদ তরিক উল্যাহ
আইনজীবী
[email protected]
+৮৮০১৭৩৩৫৯৪২৭০





মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ দুপুর ২:১০

রাজীব নুর বলেছেন: ভালো।

২| ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:২৪

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: গুরুত্বপূর্ণ ও তথ্যবহুল পোষ্টটি পড়ে ভাল লেগেছে।
ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.