নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব।

এম টি উল্লাহ

আমি এম টি উল্যাহ। আইনি উপন্যাস ‘‘অসমাপ্ত জবানবন্দী’’ ও ‘‘নিরু”, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বই ‘‘মায়ের মুখে মুক্তিযুদ্ধ’’ ও ‘‘একাত্তরের অবুঝ বালক’’ এর লেখক। পেশায়-আইনজীবী।www.facebook.com/mohammad.toriqueullah , Email- [email protected]

এম টি উল্লাহ › বিস্তারিত পোস্টঃ

সম্পত্তি দান/হেবা করার আগে জেনে নিন

০১ লা নভেম্বর, ২০২০ রাত ১২:১০

দানকে মুসলিম আইনে হেবা বলা হয়।সাধারণত দানের মাধ্যমে একজন সম্পত্তির মালিক তাঁর ওয়ারিশ কিংবা অন্য যে কাউকে সম্পত্তি হস্তান্তর করতে পারেন। এটি আইন স্বীকৃত। সাধারণত কেনাবেচার ক্ষেত্রে দামের বিনিময় হয়, কিন্তু দানের ক্ষেত্রে এ রকম বিনিময় হয় না। দান করতে হলে দাতার এবং গ্রহীতার সম্পূর্ণ ইচ্ছা ও সম্মতি থাকতে হয়।
দান বৈধ হতে হলে ৩টি শর্ত পূরণ করতে হয় –

**দাতা কর্তৃক দানের (ইজাব) ঘোষণা প্রদান।
**গ্রহীতা তার পক্ষ হতে দান গ্রহণ করা বা স্বীকার করা।
**দাতা কর্তৃক গ্রহীতাকে দানকৃত সম্পত্তির দখল প্রদান।


**এছাড়া উক্ত দানের মধ্যে নিম্নোক্ত উপাদানসমূহ থাকতে হবে।

>দাতাকে সুস্থ মস্তিষ্কের সাবালক ব্যক্তি হতে হবে।
>দাতার জীবনকালের মধ্যে দান কার্য সম্পন্ন হতে হবে।
>দান গ্রহণের পূর্বে দাতার মৃত্যু হলে দান বাতিল বলে গণ্য হবে।
>দানের সময় সম্পত্তিতে দাতার মালিকানা ও দখল থাকতে হবে।
>দান স্বেচ্ছায় এবং পণবিহীন হতে হবে।
>দান গ্রহীতা মানসিক ভারসাম্যহীন বা নাবালক হরে তার পক্ষে অভিভাবক দান গ্রহণ করতে পারবেন। দান যে কেউ গ্রহণ করতে পারেন।
>মুসলিম আইন অনুযায়ী দাতা তার সমুদয় সম্পত্তি যে কাউকে দান করতে পারেন। দায়ভাগ মতে একজন হিন্দু যাদের ভরণপোষণে আইনত বাধ্য তাদের জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা রাখার পর বাকী সম্পত্তি দান করতে পারেন।
দখল হস্তান্তরের পূর্বে দান প্রত্যাহার করা যায়। দখল হস্তান্তরের পরে দান প্রত্যাহারের জন্য আদালতের ডিক্রি লাগবে।
দানকারী ঋণের দায় এড়ানোর বা অন্য কোন অসৎ উদ্দেশ্যে প্রতারণামূলকভাবে দান করলে, পাওনাদারের আবেদনে ঐ দান বাতিলযোগ্য হতে পারে।
>মৃত্যুশয্যাকালীন দান উইলের ন্যায় কার্যকরী হবে অর্থাৎ ঐ দান অনাত্মীয়ের অনুকূলে করা যাবে কিন্তু মোট সম্পত্তির ১/৩ ভাগের বেশী দান করা যাবে না। তবে উত্তরাধিকারীগণের সম্মতি থাকলে অনাত্মীয়কে ১/৩ ভাগের অধিক সম্পত্তি দান করা যাবে। এ অবস্থায় কোন উত্তরাধিকারীকে দান করা যাবে না।
>রেজিস্ট্রেশন (সংশোধন) আইন ২০০৪ এর ৭৮এ ধারা এবং সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ১২৩ ধারা অনুযায়ী দান লিখিত ও রেজিস্ট্রিকৃত হতে হবে।
>অজাত ব্যক্তি বরাবরে দান করলে দানের তারিখ হতে ৬ মাসের মধ্যে সে জন্ম গ্রহণ কররে সে দান বৈধ হবে।


** দান/হেবা রেজিস্ট্রেশন এর নিয়ম:
দান রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক। রেজিস্ট্রেশন (সংশোধন) আইন ২০০৪ এ নতুন সংযোজিত ৭৮এ ধারা অনুসারে স্থাবর সম্পত্তির দানপত্র দলিল অবশ্যই রেজিস্ট্রি করতে হয়। দান দলিল রেজিস্ট্রেশন ফি নিম্নরূপ:

=>স্বামী-স্ত্রী, পিতা-মাতা-সন্তান, দাদা-দাদী ও নাতি-নাতনী, সহোদর ভাই-ভাই, সহোদর বো-বোন এবং সহোদর ভাই ও সহোদর বোনের মধ্যে যে কোনো স্থাবর সম্পত্তির দানপত্র দলিল রেজিস্ট্রি ফি ১০০ টাকা

=>উল্লিখিত সম্পর্কের বাইরের ব্যক্তিবর্গের মধ্যে সম্পাদিত দানপত্র দলিল রেজিস্ট্রির ফি হবে কবলা দলিল রেজিস্ট্রির জন্য প্রযোজ্য ফি’র অনুরূপ।


=>জীবন স্বত্ত্বে দান দলিল রেজিস্ট্রেশন ফি:

স্প্যাম্প এ্যাক্ট ১৯০৮ এর ৫৮ নং আর্টিক্যাল অনুসারে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, মসজিদ, মাদ্রাসা, কবরস্থান (মুসলিম ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান) এর জন্য জীবন স্বত্ত্বে দানের বিধান হলো – যে প্রতিষ্ঠানের নামে সম্পত্তি দান করা হবে সে প্রতিষ্ঠান ঐ সম্পত্তি শুধু ভোগ-দখল করতে পারবে, সম্পত্তি কোনরূপ হস্তান্তর করতে পারবে না। এরূপ জমির ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করতে হবে দানকারীর নামে। কোন কারণে ঐ প্রতিষ্ঠানটি কার্যকর না থাকলে সম্পত্তি দানকারীর মালিকানায় চলে যাবে এবং দান দলিল স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে।
স্ট্যাম্প ফি ২%

রেজিস্ট্রেশন ফি ২.৫%, ই ফিস প্রযোজ্য

**দান আর উইল এক বিষয় নয়ঃ

অনেকে মুসলিম আইনে দানকে উইলের সঙ্গে মিলিয়ে ফেলেন। মনে রাখতে হবে, উইল জীবিতাবস্থায় কার্যকর করা যায় না। একমাত্র উইল ঘোষণাকারীর মৃত্যুর পর উইল কার্যকর হয়, কিন্তু দানের ক্ষেত্রে দাতার জীবিতাবস্থায় কার্যকর হয়। তবে দানের ক্ষেত্রে জীবিতাবস্থায় সম্পত্তি হস্তান্তর করে দিতে হবে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জেনে রাখতে হবে, মুসলিম আইনে উইলের ক্ষেত্রে উত্তরাধিকারীদের অনুমতি ছাড়া সম্পত্তির এক-তৃতীয়াংশের বেশি কার্যকর হবে না, কিন্তু হেবা বা দান পুরো সম্পত্তিই করা যাবে।

**দান কি বাতিল করা যায়
একবার দান করার পর এবং সম্পত্তি হস্তান্তর করার পর আদালতের ডিক্রি ছাড়া বাতিল করা যাবে না। তবে দানপত্র সম্পাদন করলেও সম্পত্তিটি হস্তান্তর না করা হলে কিছু ক্ষেত্রে দানপত্র বাতিল করা যায়। যেমন স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দান, দানগ্রহীতা যদি মারা যায়, যখন দাতা কিছুর বিনিময়ে গ্রহণ করবে, সম্পত্তি যখন ধ্বংস হয়ে যাবে প্রভৃতি।

**হেবা-বিল এওয়াজ:
মুসলিম আইন অনুসারে কোন কিছু বিনিময় নিয়ে দান করাকে বলে এওয়াজ বা হেবাবিল-এওয়াজ। সম্পত্তি হস্তান্তর আইন ১৮৮২ এর ১১৮ ধারা অনুসারে দু’জন ব্যক্তি যে ক্ষেত্রে পরস্পর নিজেদের মালিকানাধীন কোন জিনিসের মালিকানা হস্তান্তর করে সেক্ষেত্রে কোন একটি জিনিস টাকা না হলে সে আদান-প্রদানকে বলে এওয়াজ বা বিনিময়। এতে বিক্রয় চুক্তির উপাদান বিদ্যমান থাকায় এটি মূলত এক ধরনের বিক্রয়। এওয়াজ দলিলে বর্ণিত সম্পত্তির একজন দাতা তার নিজের সম্পত্তি অপরজনকে দেওয়ার পর তার প্রাপ্য সম্পত্তি তিনি না পেলে তিনি তার প্রদত্ত সম্পত্তি ফেরত পাওয়ার অধিকারী হবেন। হেবা বিল এওয়াজ অগ্রক্রয়যোগ্য নয়।

**হেবা-বিল-এওয়াজ এর উপাদানসমূহ:
গ্রহীতাকে হেবা গ্রহণের বিনিময়ে দাতাকে অবশ্যই কিছু দিতে হবে।
দানের মাধ্যমে নিজেকে সম্পূর্ণরুপে নিঃস্বত্বে পরিণত করতে হবে।
হেবা-বিল এওয়াজের ক্ষেত্রে দখল দান আবশ্যক নয়।
হেবা-বিল-এওয়াজ প্রত্যাহারযোগ্য নয়।

- এম টি উল্যাহ
আইনজীবী
০১৭৩৩৫৯৪২৭০

মন্তব্য ১৩ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা নভেম্বর, ২০২০ ভোর ৪:৪৯

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:

গুরু্বপুর্ণ তথ্য সম্বলিত পোষ্টের জন্য ধন্যবাদ ।

০১ লা নভেম্বর, ২০২০ রাত ১১:১৩

এম টি উল্লাহ বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ

২| ০১ লা নভেম্বর, ২০২০ সকাল ১০:৩৭

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: অত্যন্ত দরকারী পোষ্ট।
আপনাকে ধন্যবাদ।

০১ লা নভেম্বর, ২০২০ রাত ১১:১৩

এম টি উল্লাহ বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ

৩| ০১ লা নভেম্বর, ২০২০ সকাল ১১:০৭

রাজীব নুর বলেছেন: জানলাম।

০১ লা নভেম্বর, ২০২০ রাত ১১:১৩

এম টি উল্লাহ বলেছেন: ধন্যবাদ

৪| ০১ লা নভেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:২৩

মোঃ ইকবাল ২৭ বলেছেন: দরকারী বিষয়। সচরাচর আজকাল এটিই বেশী চলে। ভাল পোস্ট, কাজে লাগবে।

০১ লা নভেম্বর, ২০২০ রাত ১১:১৩

এম টি উল্লাহ বলেছেন: ধন্যবাদ

৫| ০১ লা নভেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:৩২

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: আমি জয়দেবপুরে কিছু জমি কিনেছিবছর দুই আগে।এখন হঠাত শুনতে পেলে সেখান থেকে ৬ কাঠা জমি নাকি আরেক জনের কাছে এওয়াজ বদল করা আছে। বিক্রেতা বলছেন এমন কিছু তিনি করেন নাই। আর জিনি এওয়াজের কথা বলছেন তার কাছে কোনো কাজগ নেই এবং তিনি কিছু দাবিও করছেন না।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আগামীতে যদি এওয়াজের কাগজ বের হয় তাহলে কি ধরনের সম্যা হতে পারে?
এখন আমার করনিও কি?

০১ লা নভেম্বর, ২০২০ রাত ১১:১৬

এম টি উল্লাহ বলেছেন: আপনি আইন মোতাবেক নামজারী করে নিন। আর যেহেতু বিষয়টি যেহেতু অনুমান নির্ভর তাই সিদ্ধান্ত দেওয়া যাচ্ছে না। রেজিষ্ট্রি অফিসে তল্লাশি করে দেখতে পারেন এমন কোন দলিল হয়েছে কিনা

৬| ০১ লা নভেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৫৭

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: পোস্টটি প্রিয়তে নিলাম। ধন্যবাদ ভাইএম টি উল্লাহ।

০১ লা নভেম্বর, ২০২০ রাত ১১:১৪

এম টি উল্লাহ বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ

৭| ০২ রা নভেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:০৪

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: লেখক বলেছেন: আপনি আইন মোতাবেক নামজারী করে নিন। আর যেহেতু বিষয়টি যেহেতু অনুমান নির্ভর তাই সিদ্ধান্ত দেওয়া যাচ্ছে না। রেজিষ্ট্রি অফিসে তল্লাশি করে দেখতে পারেন এমন কোন দলিল হয়েছে কিনা

তল্লাশি করে যদি দলিল পাওয়া যায় তাহলে আমার কি করনীয় হবে?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.