নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্যপ্রীতি

এনলাভ৩৬৫

এনলাভ৩৬৫ › বিস্তারিত পোস্টঃ

এত সহজে কি সম্ভব?

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৫:২৮

এ দাবি ‘লুজার’দের



খন্দকার মনিরুল আলম



তারিখ: ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩





শাহবাগ চত্বর থেকে ঘোষণা দেয়া হয়েছে, ইসলামী ব্যাংকসহ ইসলাম সম্পর্কিত সব প্রতিষ্ঠান বাজেয়াপ্ত করতে হবে। এ ধরনের বক্তব্য নতুন কিছু নয়। সময়ে সময়ে বিভিন্ন জন অথবা সংগঠনের পক্ষ থেকে মনগড়া অভিযোগ তুলে এসব প্রতিষ্ঠান বাজেয়াপ্ত অথবা সরকারি নিয়ন্ত্রণে আনার দাবি চার বছর ধরেই চলছে।



এটা যে পরাজিতদের (loser) দাবি তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ব্যবসায়-বাণিজ্য ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতায় কুলাতে না পেরে এক শ্রেণীর ব্যবসায়প্রতিষ্ঠান নিজের এবং অন্যদের দিয়ে এ ধরনের দাবি তুলছে।



প্রথমে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের প্রসঙ্গ আনছি। ৩০ বছর ধরে এই ব্যাংকটি সততার সাথে ব্যাংকিং ব্যবসায় করছে ইসলামি শরিয়া অনুযায়ী। সততার কথা এ কারণেই আসে যে, এই ব্যাংকটিতে ‘হলমার্ক’ ধরনের কোনো আর্থিক কেলেঙ্কারি কখনোই ঘটেনি। রাষ্ট্রায়ত্ত ও ব্যক্তি মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোতে যখন শত শত আর্থিক কেলেঙ্কারি ঘটেছে, তার থেকে ইসলামি ব্যাংক মুক্ত রয়েছে।



ব্যাংক শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে বিশ্বাস। এই বিশ্বাস আছে বলেই ৩০ বছরে ইসলামী ব্যাংকের গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮০ লাখে। সারা দেশে এর শাখা সংখ্যা ২৭৬। বাংলাদেশে ব্যাংকটির শেয়ারহোল্ডারের সংখ্যা হচ্ছে ৬০ হাজার। ২০১২ সালে ব্যাংকটি অপারেটিং মুনাফা করেছে ১৮৬০ কোটি। সরকারি খাতে নিয়ম অনুযায়ী রাজস্ব পরিশোধ করে নিট মুনাফা করেছে ৪৮৪ কোটি টাকা, যা দেশী ও বিদেশী শেয়ারহোল্ডাররা পেয়েছেন।



স্বল্প সময়ে সব দিক থেকে প্রভূত উন্নতি করে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ এখন দেশের শীর্ষ ব্যাংক হিসেবে পরিচিত। বেসরকারি খাতে প্রতিষ্ঠিত দেশের অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যাংক এখন মুনাফা ও সেবা ক্ষেত্রে ইসলামী ব্যাংকের ধারেকাছেও নেই। আর এটাই তাদের মর্মযাতনার কারণ। যে কারণে তারা প্রতিযোগিতায় হেরে বিভিন্ন পন্থায় ব্যাংকটির বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে।



ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের ব্যাংক বলে প্রচার করা হচ্ছে। এটা নির্জলা মিথ্যা প্রচার। ব্যাংকটির ৮০ লাখ গ্রাহক কি তাহলে জামায়াতের লোক? ব্যাংকটির শাখাগুলোতে গেলে দেখা যাবে সর্বস্তরের মানুষ এটির গ্রাহক। ইসলামি আইনে সুদ হারাম আর ব্যবসায় হালাল। যারা এই নীতিতে বিশ্বাস করেনÑ তারা ইসলামী ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট হোল্ডার, যার মধ্যে রয়েছে ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ। আমার গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জ, আওয়ামী লীগপ্রধান এলাকা। গোপালগঞ্জ বাজার ইসলামী ব্যাংক শাখাটি বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় শাখা, যার গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৩৩ হাজার। এ শাখায় আওয়ামী লীগ সমর্থক গ্রাহক সংখ্যা চোখে পড়ার মতো।



ইসলামী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বলেছেন, প্রতিষ্ঠাকাল থেকে এটি মানুষের মৌলিক চাহিদা তথা অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষা খাতের উন্নয়নসহ দেশের আমদানি, রফতানি কার্যক্রম ও প্রবাসী বাংলাদেশীদের কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে আনয়নের মাধ্যমে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। ইসলামী ব্যাংকের প্রতি জনগণের অবিচল আস্থা রয়েছে, যার ফলে দেশ-বিদেশে ব্যাংকের সুনাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইসলামী ব্যাংক ধর্ম-বর্ণ-গোত্র-শ্রেণী নির্বিশেষে সব মানুষের ব্যাংক। এটি জনকল্যাণের ব্যাংক।



প্রচার করা হচ্ছে, ইসলামী ব্যাংক জামায়াতে ইসলামীকে আর্থিক সহায়তা করে। এটি একটি জঘন্য মিথ্যা প্রোপাগান্ডা। বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণকারী সব কর্তৃপক্ষ ব্যাংকটির সব কার্যক্রম নিয়মিতভাবে নিরীক্ষণ, পরিবীক্ষণ ও তদারকি করে থাকে। আমার জানা মতে, বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা বোর্ডের সভায় উপস্থিত থাকেন এবং বোর্ডের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেন। এখন পর্যন্ত এমন কোনো বিষয় পরিচালনা বোর্ডে গৃহীত হয়নি যাতে বাংলাদেশ ব্যাংক আপত্তি তুলেছে।



ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ইসলামী ব্যাংক তার স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও সাফল্যের জন্য ইতোমধ্যে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্নভাবে প্রশংসিত ও পুরস্কৃত হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব তহবিলে ব্যাংকটি প্রতি বছর ব্যাংকিং সেক্টরে সর্বোচ্চ আয়কর প্রদান করছে। যুক্তরাজ্য ভিত্তিক শতাব্দী প্রাচীন আর্থিক ম্যাগাজিন দ্য ব্যাংকার তাদের সর্বশেষ মূল্যায়নে পৃথিবীর শীর্ষ এক হাজার ব্যাংকের মধ্যে বাংলাদেশের একমাত্র ব্যাংক হিসেবে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশকে তালিকাভুক্ত করেছে। বাংলাদেশে ইসলামী ব্যাংক ব্যাংকিং খাতে সর্বোচ্চ রেটিংপ্রাপ্ত ব্যাংক। আইডিবিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার মূল্যায়নে এটি শুধু বাংলাদেশের নয়, সারা বিশ্বে ইসলামী ব্যাংকের মডেল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। নিউ ইয়র্ক ভিত্তিক খ্যাতিমান ফাইন্যান্সিয়াল ম্যাগাজিন গ্লোবাল ফাইন্যান্স ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশকে বাংলাদেশের সেরা ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ইসলামী আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আটবার পুরস্কৃত করেছে। ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্টস অব বাংলাদেশ ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশকে ইসলামী ব্যাংকিং অপারেশন ক্যাটাগরিতে বেস্ট করপোরেট অ্যাওয়ার্ড ২০১১-এর প্রথম পুরস্কার দিয়েছে। সাউথ এশিয়ান ফেডারেশন অব অ্যাকাউন্টস ২০১০ সালের বেস্ট প্রেজেন্টেড অ্যাকাউন্টসের করপোরেট গাভর্নেন্স ডিসকোজারের জন্য সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশকে শ্রীলঙ্কান হ্যাটন ন্যাশনাল ব্যাংকের সাথে যৌথভাবে চ্যাম্পিয়ন পুরস্কার দিয়েছে।



ইসলামী ব্যাংক কেবল ব্যাংকিং সেক্টরেই নয়, অন্যান্য সেবামূলক খাতে যেকোনো বেসরকারি ব্যাংকের চেয়ে অনেক বেশি সহায়তা করে। জাতীয় পর্যায়ে ক্রিকেট ও ফুটবলে স্পন্সর হিসেবে ব্যাংকটি দেশের ক্রীড়া ক্ষেত্রে যথেষ্ট অবদান রেখে চলেছে।



দেশের ব্যাংকিং ও সেবা খাতে ইসলামী ব্যাংকের কনট্রিবিউশন সবাই জানেন। যারা ব্যাংকটির বিরুদ্ধে বিষোদগার করছেন তারাও এটি জানেন। কিন্তু তার পরও তারা বিদ্বেষ ছড়াচ্ছেন খড়ংবৎদের পক্ষ নিয়ে। কারণ অতি পরিষ্কার। প্রতিযোগিতায় না পেরে তারা ‘হেইট ক্যাম্পেইন’ শুরু করেছেন।







ধরে নিলাম সরকার এদের দাবিতে সাড়া দিয়ে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশকে কোনো একটা অজুহাত দেখিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত করল তাহলে তার পরে কী হবে? ৮০ লাখ শেয়ারহোল্ডারের গচ্ছিত অর্থ যে নয়-ছয় হবে না তার গ্যারান্টি কোথায়? আমরা তো দেখেছি সোনালী ব্যাংকের ৩৫০০ কোটি টাকা একটি প্রতিষ্ঠান কিভাবে লোপাট করেছে। এ টাকা কি আদৌ কখনো উদ্ধার করা যাবে? ইসলামী ব্যাংকের গচ্ছিত গ্রাহকদের হাজার হাজার কোটি টাকা অন্য ‘হলমার্ক’ হাতিয়ে নেবে না? ইসলামী ব্যাংক রাষ্ট্রায়ত্ত হলে নিয়ম অনুযায়ী এর একটি পরিচালনা বোর্ড গঠন করবে সরকার। অন্য ব্যাংকগুলোর মতো এই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকটিতেও সরকার পরিচালনা বোর্ড গঠন করবে, যার মধ্যে সরকারদলীয় লোকজন থাকবেন। তাদের লোলুপ দৃষ্টি পড়বে ব্যাংকটির সোনার খনি স্বরূপ আমানতে এবং নয়-ছয় হবে মহা উল্লাসে। ব্যাংকটির ৬০ হাজার শেয়ারহোল্ডার এবং ৮০ লাখ গ্রাহক কি এটি মেনে নেবেন? বিদেশেই বা এর কী প্রতিক্রিয়া হবে? যে প্রতিক্রিয়া হবে তা মোটেই সুখের হবে না সরকারের জন্য। কারণ ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের মধ্যে ৭০ ভাগ হচ্ছেন বিদেশী, যার বেশির ভাগ আরব দেশ ভিত্তিক।



শাহবাগ চত্বর থেকে যে দাবি তোলা হয়েছে তা শুধু ইসলামী ব্যাংকের বিরুদ্ধে নয়, ইসলাম সম্পর্কিত যত প্রতিষ্ঠান রয়েছে তাদের সবার বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে। এগুলোকে বাজেয়াপ্ত করার দাবি করা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে ইবনে সিনা গ্রুপ পরিচালিত ইবনে সিনা ডায়াগনস্টিক। ইবনে সিনা হাসপাতাল, ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিক্যাল ইত্যাদি। ইবনে সিনা ডায়াগনস্টিক অনেক আগ থেকেই এক শ্রেণীর চিকিৎসকের চুশূল হয়ে আছে। কারণ ইবনে সিনা অন্যান্য ডায়াগনস্টিকের মতো রেফারকৃত ডাক্তারদের কমিশন দেয় না। এ কথা কে না জানেন, দেশের বড় বড় ও নামকরা ডায়াগনস্টিকগুলোও ডাক্তারদের বিলের ওপরে কমিশন দেয়। যত ছোট এবং কম নামকরা ডায়াগনস্টিকস তত বেশি কমিশনের হার। শতকরা ২৫ থেকে ৬০ এমনকি ৭০ ভাগ পর্যন্ত কমিশন পান এক শ্রেণীর চিকিৎসক। কমিশনের আশায় এসব চিকিৎসক অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষাও করার ব্যবস্থাপত্র দেন। অপর দিকে ইবনে সিনা ডাক্তারদের কমিশন না দিয়ে রোগীকে পরীক্ষার বিলের ওপরে শতকরা ২৫ ভাগ ডিসকাউন্ট দেয়। দরিদ্র রোগীদের জন্য এ ডিসকাউন্টের হার বেশিও হয়। ফলে ইবনে সিনা ডায়াগনস্টিকগুলোতে রোগীর সংখ্যা বড় বড় এবং নামকরা ডায়ানগস্টিকগুলোর চেয়ে অনেক বেশি। এ কারণে এ ধরনের ডায়াগনস্টিকস এবং চিকিৎসকেরা ইবনে সিনার ওপরে ুব্ধ। এ জন্য সুযোগ পেলেই তারা বিদ্বেষ ছড়ায়। শাহবাগ চত্বরকেও তারা সুযোগ বুঝে কাজে লাগাচ্ছে।



শাহবাগ চত্বরে উত্থাপিত দাবির অশুভ ফল ইতোমধ্যে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে ইসলামী ব্যাংকের এটিএম বুথ, কার্যালয়, ইসলামী ব্যাংক কমিউনিটি হাসপাতালসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হামলা ও ভাঙচুরের খবর পাওয়া যাচ্ছে। এসব ঘটনা বিচ্ছিন্ন বলে উড়িয়ে দেয়ার সুযোগ নেই। ছোট ছোট ঘটনা বড় ঘটনার জন্ম দেয়। ব্যাংকে জনগণের আমানত গচ্ছিত থাকে। জনগণের আমানত হেফাজতে রাখা কেবল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের একার দায়িত্ব নয়। এ দায়িত্ব রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত সরকারের ওপরেও বর্তায়। আশা করি, এ ব্যাপারে সরকার তার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করবে।



লেখক : সাংবাদিক ও সাবেক সভাপতি, জাতীয় প্রেস কাব

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.