![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একটি সরকার (পড়ুন পতিত সরকার) পালিয়ে গেলো। পালিয়ে গেলো সরকার প্রধান। পালিয়ে যাওয়ার আগে অবৈধ ভোটচোর প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করলো কি করলো না, পরিত্যক্ত দেশের জনগনের তাতে কিছুই যায় আসে না। পৃথিবীর কোন স্বৈরাচার পালানোর আগে 'পদত্যাগ পত্র' জমা দিয়ে গেছে, এমন নজির কোথাও নেই। বউ পালিয়ে গেলে কাবিননামার কি কাম!
পালিয়ে যাওয়ার আগে শেখাসিনা নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে বিশাল শেখ পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে যান। যার ফলে এদের সেফ এক্সিট দেয়া হয় এবং এখন পর্যন্ত শেখ গুষ্ঠির একজনও ধরা পড়েনি। ধরে নেয়া যায় নেগোসিয়েশনের শর্তানুযায়ী এদের প্রত্যেকেই নিরাপদে দেশ ত্যাগে সক্ষম হয়েছে। বিপাকে পড়েছে প্রভাবশালী মন্ত্রী, এমপি, দলীয় নেতা এবং বিভিন্ন অঙ্গসংগঠন সহ সাধারণ নেতাকর্মীরা।
শেখাসিনা পালিয়ে যাওয়ার সময় এদেরকে এতিম করে দিয়ে যান। শেখ পরিবারের বাইরের কোন নেতাকর্মী মরলো কি বাঁচলো, সেটা নিয়ে মানবতার আম্মো শেখাসিনার কোন মাথাব্যথা ছিল না।
ফলে শেখাসিনার দেশত্যাগের সঙ্গে সঙ্গে তার মাফিয়া সরকারের পরাক্রমশালী এমপি-মন্ত্রী সহ দলের প্রভাবশালী নেতা এবং সাধারণ নেতাকর্মীরা সবাই গা ঢাকা দেয় এবং যে কোন মূল্যে দেশত্যাগের সুযোগ খুঁজতে থাকে। এই সুযোগের অপেক্ষাতেই ছিলো দীর্ঘ সতের বছরের অনাহারী বিএনপি। বিপুল অর্থের বিনিময়ে এরা ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগের ভীত-সন্ত্রস্ত এম্পি-মন্ত্রী এবং নেতাকর্মীদের দেশত্যাগের ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। যে যতো কুখ্যাত, পালানোর মূল্যও তাকে ততো বেশি দিতে হচ্ছে।
সমালোচকরা বিষয়টিকে যতোই বাঁকা চোখে দেখুক না কেনো, আমি বিএনপির এই কৌশল এবং বিচক্ষণতার প্রশংসা করি। পতিত সরকার এবং সরকারি দলের লোকজনকে পালিয়ে যাবার সুযোগ করে দিয়ে বিএনপি আসলে এক ঢিলে দুই পাখি মারছে।
এর ফলে বিএনপি আর্থিকভাবে এবং রাজনৈতিকভাবে অর্থাৎ দুভাবেই লাভবান হয়েছে। আর্থিক লাভের ব্যাপারটি সহজবোধ্য। তাই রাজনৈতিক লাভের কথা বলছি।
ধরুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পলায়ন্মুখ আওয়ামী লীগের সব নেতাকর্মীদের ধরে ধরে দেশের জেলখানা গুলো ভরে ফেললো। জনগণ আপাত বাহবা দিলো। কিন্তু কিছুদিন পর কি ঘটবে! নিয়ে নিম্ন আদালত জামিন না দিলেও উচ্চ আদালতে প্রায় সবাই জামিন পেয়ে যাবে। কারণ জামিন পাওয়া মানুষের অধিকার। ফ্যাসিস্ট শেখাসিনার ক্যাঙারু আদালত মানুষকে এই অধিকার না দিলেও বর্তমান সরকার নিশ্চয়ই এই অধিকার প্রয়োগের ক্ষেত্রে উচ্চ আদালতে কোন ধরণের হস্তক্ষেপ করবে না।
তাই বেশী হলে ছয় মাস জেল খেটে এদের বেশীরভাগেরই বের হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিলো। জেল থেকে বের হলেই পলাতক নেতা-কর্মীরা এসে এদেরকে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নিতো। কারামুক্ত এই সব দাগী নেতারা তখন বিপুল বিক্রমে বিভিন্ন যৌক্তিক-অযৌক্তিক ইস্যুতে রাজপথে নেমে সরকার এবং দেশকে অস্থিতিশীল করার চক্রান্তে লিপ্ত হতো।
এখন এই সব নেতাদের পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়ায় পুরোপুরি নেতৃত্ব শূন্য হয়ে গেল আওয়ামিলীগ। দলের শীর্ষ নেতা এবং মন্ত্রী-এম্পিদের পাসপোর্ট বাতিল করে দেয়ায় এবং মামলা-হামলার ভয়ে এরা আর সহসা দেশেও ফিরতে পারছেন না। ফলে এই ভয়াবহ নেতৃত্ব শূন্যতা কাটিয়ে উঠে রাজপথে আন্দোলন গড়ে তোলাতো দূরের কথা, আওয়ামিলীগের পক্ষে শিরদাঁড়া সোজা করে সহসা রাজপথে দাঁড়ানোই সম্ভব হবে বলে মনে হয় না।
এভাবে বিএনপির কৌশলের কাছে ধরা খেয়ে গেলো ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিস্ট আওয়ামিলীগ। ভোট ডাকাতি, রিজার্ভ চুরি, অর্থপাচার, গুম-খুন মানুষ হত্যা সহ নানা অপকর্মে জর্জরিত, বিপর্যস্ত এবং কলঙ্কিত এই দলটি এই অবস্থায় কিভাবে ঘুরে দাঁড়ায়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
©somewhere in net ltd.