নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্বাধীনতা

শূন্য দীপ

নিষ্প্রয়োজন

শূন্য দীপ › বিস্তারিত পোস্টঃ

টেকনাফ - তেতুলিয়া সাইকেল ভ্রমণ ও কিছু বিরল অভিজ্ঞতা

০৩ রা নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:৩১



গল্পের পটভূমি টা রচনা হয়েছিল অনেকটা নাটকীয় ভাবেই। ২০১৩ সালের মার্চ মাসের কোন এক সন্ধ্যার ঘটনা। জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক এর হোম পেজ ঘাটতে গিয়ে হটাত দেখতে পেলাম একটি আবেদন। এক জন বেক্তি টেকনাফ তেতুলিয়া সাইকেল এ ভ্রমণ এর জন্য উপযুক্ত সঙ্গী খুঁজছেন। পোস্ট টির নিচে তেমন কোন রেসপন্স খুঁজে পেলাম না। তেমন একটা সময় অপচয় না করে পোস্ট টি আমিও স্কিপ করে গেলাম। বাঁধ সাধল রাতের বেলা যখন ঘুমতে গেলাম। বাংলাদেশ ভ্রমণ এর গল্প অনেক শুনেছি, অনেক দেখেছি। কিন্তু এত স্বল্প সময়ে , বেতিক্রমি এ ভ্রমণ অবলখন করেছি অনেক কম। রোমাঞ্চের ঠেলায় রাত এ ঘুম আসাই যেন দায় হয়ে দাঁড়াল। দেরি করলাম না, সকালে উঠেই তার পোস্ট এ হা বাচক রেসপন্স পাঠালাম। কিন্তু এর জন্য উপযুক্ত সময়ের প্রয়োজন। টানা সপ্তাহ দেরেক এর মত ছুটি প্রয়োজন, যেটা চাকরিজীবী কারো জন্য জোগাড় করা বেশ কষ্টকর ব্যাপার। ২ জন অপেক্ষা করতে থাকলাম সে সময়ের জন্য। এর মাঝে জুন মাসে কিনে ফেললাম সাইকেল এবং অক্টোবর এর কোরবানি ঈদ এর ব্রিজ হলিডে কে কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত নিলাম ও তাকে (তানভির) জানালাম। আর কোন দেরি হল না, শুরু হয়ে গেল চূড়ান্ত প্রস্ত্রুতি। ঘন ঘন ঢাকার বাইরে সাইকেল নিয়ে রাইড শুরু হল প্রস্ত্রুতি হিসাবে, রুট ম্যাপ নিয়ে বেস্ত হয়ে পরলাম সবাই। উত্তেজনা যখন চরমে তখন আমাদের সাথে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল আরও বেশ কয়েকজন।



খুব অল্প সময়ের মধ্যে ঠিক করে ফেললাম রাইড এর উদ্দেশ্য, লক্ষ্য এবার একটাই , “সবুজ বাংলাদেশ গড়ব – GO GREEN “ । গ্লোবাল এই যুক্তি টি উপযুক্ত উপায়ে মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিব বলে সিদ্ধান্ত নিলাম। সবুজ মানেই যে কেবল গাছ লাগানো নয়, এ ব্যাপারে সচেতনতা গড়ে তুলব। বাসায় বসে কিছু আর্টিকেল পরে নিলাম এ ব্যাপারে ও সম্ভাব্য স্পন্সর দের কাছে পুরো ব্যাপার টা Presentation আকারে তুলে ধরলাম। ACI Motors, Kaler Kontho & Dhaka F.M 90.4 দেরি করল না স্পন্সর দিতে। অবশেষে ১০ তারিখ রাতে সব বাঁধা বিপত্তি এবং পরিবারের সাথে ঈদ এর আনন্দ উপেক্ষা করে আমরা ৮ তরুণ প্রাণ বেরিয়ে পরলাম অন্ন রকম কিছু অর্জন এর জন্য।



১২ অক্টোবর



সন্ধ্যা যখন আসন, গোধূলির আবছা আলোয় দূরে দেখতে পেলাম লেখা, “বাংলাদেশের সীমান্ত শেষ” ।

পিক আপ এর ড্রাইভার বললেন ভাই নামেন। বুঝতে দেরি হল না, আমরা বাংলাবান্ধা ০ পয়েন্ট এ চলে এসেছি। এখান পর্যন্ত গাড়ির পথ শেষ, শুরু করতে হবে বাংলাদেশ ভ্রমণ এর প্রথম পদচ্ছাপ। ০ পয়েন্ট এ বসে ম্যাপ টা দেখে নিলাম, সম্পূর্ণ উত্তর পয়েন্ট এ আছি আমরা বাংলাদেশের, এখান থেকে টেকনাফ এর রুট টা দেখলে মনে কিছুটা ভয়ের সঞ্চার হতেই পারে। নিজের মনকে সে ভয়ে ভিত হবার সুযোগ দিলাম না, বাসায় মার সাথে কথা বলে আমরা ৮ জন পরম করুনাময়ের নাম নিয়ে এক লাইন এ শুরু করে দিলাম যাত্রা টেকনাফ এর দিকে। মনে তখন ছিল না এক ফোটা সঙ্কা, কোন ভয়। ছিল নতুন কিছু জয় করতে যাবার আনন্দ। রাত ১০ তার মধ্যে সজোরে সাইকেল চালিয়ে চলে এলাম পঞ্চগড়। সেখানে আমাদের সাক্ষাৎকার নিলেন স্থানীয় কালের কণ্ঠের প্রতিনিধি। তিনি বাহবা জানিয়ে সে দিনের মত চলে গেলেন। পর দিনের প্রস্তুতি নিয়ে সে দিনের মত ঘুমিয়ে গেলাম সবাই।



১৩ অক্টোবর



ভোর ৫ টাই সাইকেল নিয়ে বার হতেই বৃষ্টির আগমন ঘটল। শুরুতেই আবহাওয়ার এই প্রতিকূল অভ্যর্থনা মোটেই ভাল চোখে নিলাম না কেউ। কিন্তু এ জন্য কি আর ছুটে চলা থেমে থাকে? বৃষ্টি কে উপেক্ষা করে রওনা দিলাম আমরা। প্রথম দিন পঞ্চগড় এর বিভিন্ন ইউনিয়ন ছাড়িয়ে পউছালাম সর্বশেষ ইউনিয়ন দেবীগঞ্জ এ । পথে এক প্রাইমারী স্কুল এ আমাদের কিছু কার্যক্রম চালালাম ও সেখানকার ছোট ছেলে মেয়েদের সাথে গল্পে সময় কাটালাম ও তাদের মাঝে চকলেট বিলি করলাম। দেবিগুঞ্জ পৌছার পর উৎসুক মানুষের ভীর। সেখানকার মানুষদের সাথে আলাপচারিতার মাঝেই সেরে নিলাম সকালের নাস্তা। সেই সাথে চলল হোটেল গুলোতে বিদ্যুৎ ও পানি অপচয় বন্ধে আমাদের সচেতনতামূলক কার্যক্রম ও পোস্টার লেপন। সেখানে বাঁধ সাধল অন্য এক কারণে, বৃষ্টি বিঘ্নিত দিনে গতি নিয়ে সাইকেল চালানোর কারণে ২ জন মেম্বার প্রথম দিনেই অসুস্থ হয়ে পরলেন। বাপ্পি ও আবু বকর। কিছুটা আশাহত হলাম আমরা, কিন্তু দমার সময় নেই। ২ জনকে বাস এ তুলে দিয়ে (সাইকেল সহ) আমরা বাকি ৬ জন গ্রামের এক পথ ধরে প্রবেশ করলাম নীলফামারী জেলায়। পথে সোনাহার বাজারে চা বিরতির পাশাপাসি রোড সো করলাম। মানুষের কৌতূহল কে কাজে লাগিয়ে তাদের মাঝে তুলে ধরলাম আমাদের এই ভ্রমণ এ বার হবার মুখ্য উদ্দেশ্যগুলো। দুপুর ২.৩০ এর মধ্যে পৌঁছে গেলাম নীলফামারী জেলার দর্শনীও এক স্থান নীলসাগর এ । সমুদ্র নয় , কিন্তু সমুদ্রের নামে নাম। বিপুল জলরাশির কারণে স্থানীয় মানুষ একে নীলসাগর বলে ডাকে। সিদ্ধান্ত নিতে বেশি সময় নিলাম না আমরা, পুরো অঞ্চল টি একবার সাইকেল এ ঘুরেই লাফিয়ে পরলাম পানিতে। সারাদিনের ক্লান্ত শরীর নিয়ে দাপরা দাপ্রির পর যখন গোসল সেরে উঠলাম তখন সবাই বেশ ক্ষুধার্ত। কাছেই এক লোক আমাদের জন্য রান্নার বেবস্থা করলেন, অল্প সময়ে যা আয়োজন করলেন তা দিয়েই কনমত খাবার সেরে রওনা দিলাম সৈয়দপুর এর দিকে। তখন ছিল প্রায় পরন্ত বিকাল, গুরি গুরি বৃষ্টি মাথায় নিয়ে আমরা নীলফামারী সদর এ প্রবেশ করলাম। হাত এ সময় বেশি নেই, রাত ঘন হবার আগেই পথ এগিয়ে রাখতে হবে, না হলে পরের দিন গুলাতে বেশি চাপ সৃষ্টি হবে। হাল্কা চা নাস্তা সেরেই রওনা দিলাম আবার। টানা রাত ১০ তা পর্যন্ত সাইকেল চালানোর পর পৌঁছলাম সৈয়দপুর সদরে। নাহ! আজ আর নয়। সে দিনের মত জার্নি ক্ষান্ত দিয়ে থাকার জায়গা খোঁজা শুরু হল। শেষ মেশ আমাদের সব কাহিনী বর্ণনার পর সে দিন থাকার বেবস্থা হল সৈয়দপুর পুলিশ লাইন বাংলো তে।



১৪ অক্টোবর



ভোরের আলো ঠিক ভাবে ফোটার আগেই আদিলের তাড়াহুড়া শুরু হয়ে গেল। অনেক চেষ্টা করেও বিছানায় শুয়ে থাকতে পারলাম না। ঘড়িতে দেখি সময় ভোর ৪ টা। এর মাঝে আবার বাইরে বৃষ্টি। বুঝলাম সময় ও দিন কোনটাই আর আমার পক্ষে নেই। খুভ তারাতারি ব্যাগ গুছিয়ে সাইকেল বের করলাম সবাই। কেয়ারটেকার এর কাছে বিদায় নিএই যাত্রা শুরু করলাম দ্বিতীয় দিনের। সৈয়দপুর আর্মি ক্যাম্প পর্যন্ত ভাঙ্গা রাস্তা দিয়ে ঘুমে আক্রান্ত শরীর নিয়ে কষ্টে পার হলেও, ক্যান্টনমেন্ট থেকে পার্বতীপুর এর বিস্তীর্ণ, মসৃণ ও যানবাহন বিহীন রাস্তায় মুগ্ধ হলাম সবাই। মনের আনন্দে ভোরের প্রথম আলোয় ১ ঘণ্টা সাইক্লিং করে পার্বতীপুর বাইপাস এ পৌঁছলাম। এবার কিছুটা যাত্রা বিরতি। পথের পাশে জমিয়ে রাখা ভ্যান গুলোর উপর গা এলিয়ে শুয়ে পরল কয়েকজন। পুরো রাস্তার মোড়ে শুধু ২ টি দোকান খোলা। এক কাকা গরম লুচি ভাজা শুরু করলেন সকালের নাস্তার জন্য। ক্ষুধাটা মনে হয় লাগল ওনার তেলে ভাজা মচমচে লুচির গন্ধ শুনে, কিন্তু ভোর মাত্র ৫.৩০ , নাস্তা করার ব্যাপারে কেউ আগ্রহী না। কি আর করা গপা গপ কয়েকটি লুচি খালি গিলে রওনা হলাম পার্বতীপুর রেল জংশন এর দিকে। ভোর ৬.৩০ টায় পৌঁছলাম উত্তরবঙ্গের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রেল জংশন পার্বতীপুরে। বাংলাদেশের একমাত্র রেল কারখানা রয়েছে এখানে। সাইকেল পার্ক করে পুরো জংশন টা ঘুরে দেখতেই ভীর জমে গেল মানুষের। এলাকার স্থানীয় মুরুব্বীরা নামাজ শেষে এসে জানতে চাইলেন আমাদের কথা। বেশ কিছুক্ষণ তাদের সাথে কাটিয়ে , চা – টা খেয়ে রওনা দিলাম। এবার লক্ষ্য বাংলাদেশের অন্যতম বিখ্যাত এক স্থান, বরপুকুরিয়ার কয়লা খনি । পার্বতীপুর জংশন থেকে দক্ষিণে ফুলবাড়িয়ার দিকে অগ্রসর হতেই চোখ ধাঁধানো এক রাস্তায় থমকে দাঁড়ালাম। দু পাশে বিস্তীর্ণ ধান ক্ষেত এর মাঝে ১০-১২ ফুট এক প্রশস্ত রাস্তা। রাস্তায় গাড়ির চলাচল প্রায় নেই বললেই চলে। দক্ষিণে প্রবাহমান বাতাস ও মেঘলা আবাহাওয়া যেন পরিবেশটাকে আরও জমিয়ে তুলল। দু পাশের ধানের শীষের উপর দোল খেয়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখতে দেখতে ধীর গতিতে এগিয়ে চললাম, সেই সাথে চলল জমপেশ আড্ডা। একটু সময় বেশিই লাগল বরপুকুরিয়ার কয়লা খনির গেট এ পৌঁছতে। স্থানীয় স্রমিকদের গ্রাম ও বেশ কিছু বেস্ত বাজার ফেলে পৌঁছলাম ফুলবাড়িয়ার বিখ্যাত বরপুকুরিয়া কয়লা খনি। হাত এ সময় বেশি নেই, তার উপর পেটে প্রচণ্ড খিদা। ধুপ ধাপ কয়েকটা ছবি তুলে, পাশেই স্রমিক দের জন্য নির্মিত এক হোটেল এ সকালের নাস্তা সেরে নিলাম। সেখানকার শ্রমিকরা আমাদের চেয়ে আমাদের সাইকেল গুলা নিয়ে বেশি বেস্ত হয়ে পরলেন। থাক ও কথায় না যাই, সামনে পথ বহু দূর। ফুলবাড়ি থেকে সবার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রংপুর এর দিকে না ঢুকে রওনা দিলাম এক গুরুত্বপূর্ণ স্থলবন্দর, “হিলি” র দিকে। প্রচণ্ড বৃষ্টি উপেক্ষা করে বিরামপুর পার হয়ে হিলি যখন মাত্র ১৪ কি মি বাকি তখন রাস্তার পাশে চোখে পরল এক নিঃসঙ্গ বট গাছ ও তার পাশে বিস্তীর্ণ ধান ক্ষেত। দুপুর তখন ২.৩০।



অলস দুপুরে ক্লান্ত শরীর এ পথিক এর বট গাছের নিচে আশ্রয় এর অনেক গল্প পরেছি, কিন্তু আজ ব্যাপারটা আবশ্যকীয়। ক্লান্ত শরীর যেন আর চলে না, এর চেয়ে কিছুক্ষণ জিরিয়ে নেয়াই শ্রেয়। ছোট একটা পুল পার হয়ে গা এলিয়ে শুয়ে পরলাম, দুপুর এর রোদ এর তাপ বুঝতে দিল না, শীতল সে ছায়া। চলল নিশ্চিন্ত মনে অলস এক আড্ডা, এর মাঝে হাল্কা ঘুমিয়ে নিলেন কেউ। ৩.৩০ এ উঠলাম সবাই, আর রেস্ট নয়, সোজা পৌঁছে গেলাম হিলি স্থল বন্দরে ঠিক বিকাল ৪ টায়। অপেক্ষমাণ বি জি বি রা স্বাগত জানালেন আমাদের আগমনের, সীমান্তের ওপারে কিছুদূর যাবার বেবস্থা করে দিলেন। ওপাশে অপেক্ষমাণ কিছু ভারতীয় নাগরিকরাও ব্যাপারটা বুঝে উঠতে না পেরে নিজেদের মধ্যে কি জানি বলা বলি আরম্ভ করলেন, তাদের ভুল ভাঙাল স্থানীয় বি জি বি রাই। সীমান্তে বেশ কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে হাল্কা খাওয়া দাওয়া সেরে রওনা দিলাম জয়পুরহাট এর উদ্দেশে। সন্ধ্যা যখন প্রায় আসন্ন তখন পৌঁছলাম জয়পুরহাট বাইপাস এ । এখান থেকে পূর্ব দিক চলে গেছে বগুড়া শহর এর দিকে, আমাদের আজকের লক্ষ্য ওখানেই। কিন্তু বিরুপ আবহাওয়া আর ঘনিয়ে আসা রাত কিছুটা ভাবিয়ে তুলল। লক্ষ্য টা আরও দুরহ মনে হতে থাকল যখন রাস্তার পাশে হটাত এক মাইল ফলক এ দেখতে পেলাম, বগুড়া ৬১ কি মি। সে দিকে তাকিয়েও না তাকানর ভ্যান করলাম যেন সবাই, আগে সামনের বাজার এ কিছু খেতে হবে। দুপুরে হাল্কা নাস্তা বাদে কিছুই হই নি। সামনের হিছমি বাজার এ নামতেই খিচুড়ি আর হাঁসের মাংস পেয়ে গেলাম। দোকানদার ও চরম আতিথেয়তায় আমাদের আপ্যায়ন করলেন। পেট পুরে খেয়ে যখন বার হব তখন সন্ধ্যা ৭ টা। অন্ধকার ঘনিয়ে এসেছে। সে সাথে চলছে অবিরাম বৃষ্টি। কয়েকজন প্রচণ্ড ক্লান্ত, তানভির ও আদিল এর খুঁটি সুটি আলোচনা লক্ষ্য করলাম, কিন্তু বুঝতে পেরেছিলাম সামনে আগানোর বিকল্প কোন পথ খোলা নেই। যেই কথা সেই কাজ, বেরিয়ে পরলাম সবাই। হাইওয়ে বাস এর রাস থেকে মুক্তি পেতে বেছে নিলাম ক্ষেতলাল হয়ে বগুড়া যাবার রাস্তা টা। এর পর হেড লাইট, রিয়ার লাইট, ব্লিঙ্কার, স্পোক লাইট জালিয়ে ছুটে চললাম গ্রামের রাস্তা ধরে বগুড়ার পথে। পথে অতিক্রম করা বাজার গুলোতে মানুষগুলো অবাক দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে রইল, কিন্তু সে কৌতূহল ভাঙ্গার সময় নেই আজ। যত তারাতারি সম্ভব পৌঁছতে হবে বগুড়া। অন্ধকার রাতে জোনাকির মত মিট মিট করে জ্বলতে থাকা আলো গুলো ছুটে চলল বেশ দ্রুত গতিতে, পিছন থেকে বেশ ভালই উপভোগ করতে থাকলাম রাতের সেই রাইডটি। অবশেষে বহু চড়াই উৎরাই পেরিয়ে রাত ১১ টায় পৌঁছলাম বগুড়া শহরে। সেখানে সাফিউল ভাই আমাদের থাকার বেবস্থা করে দিলেন। তার আতিথেয়তায় রাত টা বেশ ভালই কাটল।



১৫ অক্টোবর,



বেশ আরামের একটা ঘুম দিলাম শেষ রাতে। ১৬০ কি মি জার্নি সেই সাথে আগের রাতের মাত্র ২ ঘণ্টার ঘুম সব মিলিয়ে উঠতে ১০ টা বেজে গেল। শাফিউল ভাই উঠা মাত্র আমাদের জন্য ভুনা খিচুড়ি আর ডিম ভাজির বেবস্থা করলেন। ওনার মা এলেন আর আমাদের আপ টু নাও গল্প শুনলেন, কিছুটা বিমুগ্ধ হলেন ও দোয়া দিলেন ট্রিপ টির সফল সমাপ্তির, কিন্তু পরের দিন ঈদ বলে আমাদের ছাড়তে চাইলেন না। কিন্তু সে দিকে কি আর তাকাবার সময় আছে, বিদায় নিলাম সে দিনের মত। এবার লক্ষ্য কিছুটা দূরে যাবার, এমনিতেই সকালে দেরি হয়ে গেল উঠতে তার উপর ঈদ ঘনিয়ে আসছে, পথ এখনও বাকি বহু দূর, বেশ দ্রুত এগিয়ে চলতে থাকলাম। হটাত পথে থামালেন স্থানীয় মোহনা টিভির এক সাংবাদিক, বেশ দূর থেকেই লক্ষ্য করছিলেন আমাদের। হুট হাট কয়েকটা ছবি তুললেন ও জানতে চাইলেন আমাদের উদ্দেশ্য। বিদায় নিলাম তার কাছ থেকে , ও হাঁ Inspiration দিতে ভুল করলেন না তিনিও এগিয়ে চলার ব্যাপারে। শুরু হোল আবার এগিয়ে চলা। বগুড়ার শেরপুর পার হতেই শুরু হোল নতুন বিপত্তি, এত দিন যা হই নি, “টিউব লিক”।



একটা নয় ২ টা নয়, ৪ টি সাইকেল এ লিক ধরা পরল, তানভির এর সাইকেল ত ৩০ মিনিট পর পর লিক হওয়া শুরু করে দিল। সে সব ঠিক করে আগাতে আগাতে সিরাজগঞ্জ আসতে আসতে রাত হয়ে গেল, সে সাথে ঈদ এর আগের দিন রাস্তায় প্রচণ্ড যানবাহনের চাপ, হাইওয়ে তে এরকম চাপ দেখে কিছুটা ভিত হয়ে পরলাম আমরা, রাত এ ফুল সেইফ গিয়ার নিয়ে চালানটাও বেশ রিস্কি মনে হচ্ছিল। দুরু দুরু বুক নিয়ে ধীর গতিতে পার করলাম অতি বেস্ত সে রাস্তা, পৌঁছলাম সিরাজগঞ্জ চৌরাস্তা, এখান থেকে আমরা ঢুকে যাব পাবনার দিকে, গাড়ির চাপ অনেকটাই কম এ দিকে। তার উপর রাত তখন ১১ টা, আরিফ জানান দিয়ে দিল আজ কিন্তু চান রাত । ব্যাপারটা স্মরণে থাকেলও ভুলে গিয়েছিলাম অনেকে। অন্য রকম এক চান রাত পার করব আজ ব্যাপারটা ভাবতে ভাবতে এগিয়ে গেলাম। রাত ঘন হতেই আকাশ পরিষ্কার হয়ে গেল, সে সাথে বিধাতা রাত টি আরও রোমাঞ্চকর ও সুন্দর করে তুললেন আকাশে লক্ষ তারার মেলা বসিয়ে। উল্লাপাড়া পৌঁছানর আগেই এক ব্রিজ এর উপর সবাই বসে নির্জন সে রাত উপভোগ করলাম। রাত তখন ১ টা, রাস্তায় হটাত ২/১ টি গাড়ি, এর বাইরে নেই কিছুই। নির্জনতা যেন প্রকৃতির অন্য রকম এক উপহার, যাকে উপভোগ করতে হয় বিশেষ কিছু উপায়ে। আজ সে সুযোগ এসেছে, এরকম রাত হইত খুভ কম ই এসেছিল জীবনে। সে বিষয়ে চিন্তার সময় বেশিক্ষণ পেলাম না, রাস্তা এখনও বাকি প্রায় ৭০০ কি মি এর মতন। কিছুটা ধীর গতি নিয়ে এগিয়ে চললাম, আজ রাতে যে আর ঘুমানো হবে না টা বুঝে গেছে সবাই, কারন কাজির হাট লঞ্চ টার্মিনাল তখনও প্রায় ৯২ কি মি বাকি। সারাটি রাত কেটে গেলো কখনও সাইকেল চালিয়ে, কখনও অঝোর বৃষ্টিতে, কখনও রাস্তার পাশে বন্ধ কোন চায়ের দোকানের বেঞ্চিতে শুয়ে বসে, কখনও টিপ টাপ বৃষ্টিতে ভিজে। ভোর যখন হল তখন আমরা কাসিনাথপুরে। শেষ করলাম ঈদ এর পূর্ববর্তী এক অভূতপূর্ব রাত।



১৬ অক্টোবর



আজকে খুশির ঈদ। কিন্তু জিনিসটা মোটেই আমাদের জন্য সুখের ছিল না যখন রাস্তার পাশের চায়ের দোকানি জানান দিল, ঈদ এর দিন আবার হোটেল খোলা পাইবেন নি? মুখ শুকিয়ে গেলো, পেটে প্রচণ্ড খিদা ! কি আর করা বাসি রুটি আর কলা খেয়ে কাটালাম ঈদ এর দিন এর সকাল। কাসিনাথপুর এর এক লোক আমাদের কে অনুরধ করলেন তাদের গ্রাম এ কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নেবার জন্য ও নামাজের জন্য সে সাথে হাল্কা চা নাস্তার। কিন্তু ঘড়ির সময় তার কথার সাথে মিলল না, প্লান অনুযায়ী পিছিএ রয়েছি আমরা অনেক। তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে, দ্রুত পৌঁছে গেলাম কাজিরহাট লঞ্চ ঘাটে। নির্ঘুম এক রাত কাটাবার পর বেশ ক্লান্ত আমরা, লঞ্চ ঘাট এ নেমে পদ্মা নদীতে বেশ জমপেশ একটা গোসল সেরে উঠে বেশ সতেজ অনুভব হল। আমি আগে গিয়ে ঘাট থেকে এক ট্রলার ঠিক করে ফেললাম, সে আমাদের নদী পার করে পৌঁছে দিবে সোজা গোয়ালন্দ ঘাট, রাজবাড়ি। পাক্কা ২.৩০ ঘণ্টা সময় নিল ট্রলার এ । ওপারে নেমেই দ্রুত রাজবাড়ি ফেলে ঢুকে পরলাম ফরিদপুর জেলায়, তখন প্রায় বিকাল ৩ টা। সিদ্ধান্ত নিলাম গ্রামের এক রাস্তা ধরে পৌছব ফরিদপুর সদরে। গ্রামের রাস্তা ধরে এগুতে এগুতে দেখলাম তখনও লোকজন গরু কাটা শেষ করে নি, কিছু মানুষ সেজে গুজে বেরিয়ে পরেছে ঈদ এর শেষ আলোটিকে উপভোগ করতে। রাস্তায় যেতে যেতে উৎসুক মানুষের প্রশ্নের উত্তর দিলাম। পথে এক বাজারে এক লোক থামিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “আপনাদের খবর ই কি ১৪ তারিখ কালের কণ্ঠে এসেছিল?” আমরা হাঁ জানাতেই, চায়ের দাওয়াত দিলেন, গল্প করলেন। সময় কাটালাম বেশ খানিকখন সে খানে। এর পর চলে গেলাম সোজা ফরিদপুর সদরে আমাদের এক বন্ধুর আত্মীয়র বাড়ি। বাড়িতে ঢোকার পর তিনি বার বার বিস্ময় প্রকাশ করতে থাকলেন এই বলে, “ ঢাকা থেকে আসছ তোমরা এই সাইকেল নিয়ে?”।



তার বিস্ময়সূচক বানী বাকরুদ্ধ হল যখন আমরা জানালাম আমরা পঞ্চগড় থেকে এসেছি। সে দিকে আর মন না দিয়ে খেতে বসে পরলাম সবাই, সারাদিন এর অভুক্ত শরীর। পেট পুরে ভাত খাবার পর বুঝতে পারলাম কিছুটা যে আজ ঈদ অতিবাহিত হচ্ছে। কয়েকজন গা এলিয়ে বিছানায় শুয়ে পরল। তানভির তাদের অবগতির জন্য জানিয়ে দিল লক্ষ্য আজকে ফরিদপুর এর ভাঙ্গায় পৌঁছান, যেটা আরও প্রায় ৩৫ কি মি দূরে। রাত তখন ৮ টা। এমন একটা সময় বিছানা থেকে উঠে সত্যিই সাইকেল চালানো দুরহ একটা ব্যাপার, কিন্তু যখন মনে হল আমাদের চূড়ান্ত লক্ষের কথা মনে এক ধরনের মটিভেসন পেলাম। বেশ ফুর ফুরা মন নিয়ে বিদায় নিলাম তাদের কাছ থেকে। বেশ দ্রুত সাইকেল টেনে পৌঁছে গেলাম ভাঙ্গা চৌরাস্তায়। নাহ ! আজ রাতে আর নয়। হোটেল এ ঢুকেই কোন কথা বার্তা না বলেই সোজা ঘুম।



১৭ অক্টোবর



সকালে ঘুম থেকে উঠেই এক বিপত্তি, সাইকেল এর ডিস্ক গেলো নষ্ট হয়ে। মুখ ভার করে নিয়ে গেলাম মেকার এর দোকানে, তিনি শুরুতেই ভয় লাগিয়ে দিলেন এই বলে, “ এই ডিস্ক এখানে পাওয়া যাবে না “ ।

অনেক কষ্টে খুঁজে সুজে পেলাম লোকাল ব্র্যান্ড এর একটি ডিস্ক, কোন মতন সেটি লাগিয়ে আল্লাহর নাম নিয়ে সে দিনের যাত্রা শুরু করলাম। অন্যান্য দিনের তুলনায় আজ দিনটি ভিন্ন, বহু দিন পর মনে হয় পরিস্কার আকাশ দেখলাম সেই সাথে কাঠ ফাটা রোদ। শুরুতে মনটা ফুরফুরে থাকেলও বেলা বারতেই রোদের তাপ বুঝিয়ে দিল কষ্ট কাকে বলে। কিছু দূর আগিয়েই পানি ও স্যালাইন বিশ্রাম দিতে হচ্ছিল। সে দিন দুপুরে দাওয়াত ছিল মাদারিপুরে আমাদের এক বন্ধুর বাড়িতে, সামান্য এই রাস্তাটিই অসামান্য মনে হচ্ছিল রোদের তাপের কারণে। যাক কড়া রোদ মাথাই নিয়ে প্রবেশ করলাম মাদারিপুর এর রাজইর পৌরসভায়। অভ্যর্থনা জানানোর জন্য আগের থেকেই উপস্থিত ছিল সেখানে “বাহার”। আমাদের নিয়ে গেলো তার বাড়িতে, দুপুরের যাত্রা বিরতি পেলাম একটা যাক ভালই। তক্ত দুপুরে পুকুরে জমপেশ একটা গোসল এর পর ভালই একটা খাবার হল বন্ধুর বাড়িতে। অনেক চেষ্টা করেও বার হতে মন চাইল না এরকম একটা খাবার এর পর। বুঝতে পারলাম আরেকটা ঘুম হীন রাত অপেক্ষা করছে, কিন্তু সে দিকে তাকাতে মন চাইল না কারোরই। ক্লান্ত শরীরে ২ ঘণ্টার একটা ঘুম দিয়ে নিলাম সবাই। সন্ধ্যা বেলা বাহার এর বাসা থেকে বিদায় নিয়ে রওনা দিলাম মাদারিপুর সদর এর উদ্দেশে, হটাত রাস্তায় দেখা হয়ে গেলো এক সাইক্লিস্ত এর সাথে। সেইফ গিয়ার ও সাইকেল দেখে বুঝতে পারলাম হইতবা তিনি ঢাকা থেকে এসেছেন, কথা বার্তা এগুতেই জানতে পারলাম তিনি সকালেই রওনা দিয়েছেন ঢাকা থেকে যাবেন কুয়াকাটা ভ্রমনে, কিছুটা বিস্মিত হলাম তার উদ্দম দেখে। যাই হোক মাদারিপুর সদর পর্যন্ত রাস্তাটা পার করলাম তার সাথে। এর পর বিদায় নিয়ে আমরা চলে গেলাম শরীয়তপুর ফেরী ঘাট এর দিকে এবং তিনি রএ গেলেন মাদারীপুর সদরে। মাদারীপুর সদর থেকে খুব বেশি দূরে নয় শরীয়তপুর ফেরী ঘাট, পৌঁছতে বেশি দেরি লাগল না। ফেরী তে উঠে পার হতে হবে ছোট্ট এক নদী, অপারেই শরীয়তপুর। ফেরী তে উঠে হটাত আকাশের দিকে তাকিয়ে তারিখ টা জানতে মনে হল। মোবাইলএ তারিখ দেখেই মনে পরল আজ জ্যোৎস্না রাত। মনে কোন আক্ষেপ রইল না আজ সারা রাত জেগে সাইকেল চালাতে, দুশ্চিন্তা কেবল একটাই, চাঁদপুর পর্যন্ত সামনের রাস্তা টা কেমন হয় জানি? ওপারে পৌঁছে কয়েক কিলো এগুতেই, পরিছন্ন, যানবাহন বিহীন ও নির্জন রাস্তা দেখে মন খুসিতে ভরে উঠল। সামনে বাজার এর কিছু লোক যখন অভয় দিল এ রাস্তায় কোন রিস্ক নেই তখন আরও নিশ্চিন্ত হলাম। ২ পাশে মাইল কে মাইল কলা গাছের সারি আর সামনে সীমাহীন এক রাস্তা, চাঁদের আলোয় গাছের ছায়া পর্যন্ত স্পষ্ট প্রতীয়মান ছিল সে রাস্তায়। লাইন বিহীন, এলোমেলো, নিরুদ্দেশ সাইকেল চালাতে চালাতে কখন যে রাত গভীর হতে থাকল টের পেলাম না। মাইল কে মাইল নেই কোন মানুষ, নেই কোন গাড়ির শব্দ। শরীয়তপুর এর গ্রামের ভিতর দিয়ে যেতে যেতে খেয়াল করলাম ঈদ কে উপলক্ষ করে গ্রামে গ্রামে বিয়ের রোল পরেছে, চলছে বিয়ে পূর্ববর্তী রাতের গান বাজনা আনন্দ। থামলাম এরকম এক বাড়ির সামনে, রাত তখন ২ টা। ও বাড়ির লোকজন বিয়ের আনন্দ উপভোগ করে নিজ বাড়ি জাচ্ছিলেন ঘুমোতে। আমাদের দেখে পরিচয় যানতে চাইলেন, পরে অনেকটা জোর করে নিয়ে গেলেন তাদের বাড়িতে। এত গভীর রাতেও বাড়ির লোকজনকে ডেকে তুলে আমাদের উঠোনে বসার বেবস্থা করে দিলেন ও আপ্যায়ন করলেন। মুগ্ধ হলাম অচেনা, অপরিচিত লোকজনের এমন ব্যাবহারে। তাদের কাছে যানতে পারলাম চাঁদপুর যাবার ফেরী ঘাট আর ২২ কি মি দূরে তাদের এখান থেকে। ধন্যবাদ জানিয়ে বিদায় নিলাম তাদের কাছ থেকে। সোজা এবার ফেরী ঘাট। ও মা , এ দেখি এক জনাকীর্ণ ফেরী ঘাট, নেই কোন ফেরী নেই কোন মানুষ, নেই কোন যানবাহন। দূরে অল্প আলোয় বুঝতে পারলাম একটি দোকান খোলা আছে। আমাদের দেখে প্রথমে থতমত খেয়ে গেলেন দোকানের সামনে বসে থাকা ২ জন মানুষ, কি ভাবলেন সে দিকে কালক্ষেপণ না করে জানতে চাইলাম ওপারে (চাঁদপুর) যাবার কোন ফেরী আছে কিনা? আমাদের কোন প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে, অনেকটা উৎসুক ও কিছুটা ভিত সন্ত্রস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন , “আপনেরা কেডা?” সবাই মিলে ভুল ভাঙ্গালাম তাদের । পরে আমাদের জানালেন ঈদ পরবর্তী দিন এ রাস্তায় গাড়ি কম থাকে, তাই ফেরী বন্ধ। আপনারা চাইলে ট্রলার এ যেতে পারেন অথবা ভোর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারেন যদি কোন ফেরী আসে। অনেক কথার পর সিদ্ধান্ত হোল ট্রলার এ যাব। রাত ৪ টাই ট্রলার এ উঠলাম, ঘুমে চোখ তখন যাই যাই , জ্যোৎস্না রাতে মেঘনার সৌন্দর্য তখন অনেকটাই ম্লান মনে হোল, ক্লান্ত ও ঘুমন্ত এ শরীরের তুলনায়। ট্রলার এ সাইকেল উঠান পর্যন্ত মনে হই জীবিত ছিলাম, এর পরই ঘুমের অসীম রাজ্যে পারি জমালাম।



১৮ অক্টোবর



আদিল এর ঠেলা ঠেলিতে ঘুম ভাঙল। চোখ খুলতেই সূর্যের আবছা আলো চোখে পরল , সেই সাথে বেশ জন সমাগম। হুঁশ আসতে বেশ খানিকটা সময় নিল। আস্তে আস্তে সব মনে পরল, শেষ রাত টি পুরটা লেগেছে প্রায় ৮.৫ কি মি নদীটি পার হতে। চাঁদপুর ঘাটে এসে পৌঁছলাম। ট্রলার থেকে নামার সময় শরীর এর ক্লান্তি টা যেন আরও বেড়ে গেলো, এই ২ ঘণ্টার ভাঙ্গা ভাঙ্গা ঘুমে যেন ক্ষতিটাই বেশি হোল, ধুত!! ঘাট এ নেমে সবাই গেলো এক মসজিদ এ ফ্রেশ হতে, কপাল ভাল এক দোকানে মাগ কফি পেয়ে গেলাম। ২ মগ কফি এক টানে শেষ করলাম। অনেকটাই চাঙ্গা ভাব ফেরত আসল, যদিও ব্যাপারটা অনেকটাই মানসিক কিন্তু তাই বা কম কি? আজকের দিন টা তো কোন মত পার করা যাবে !!!! দেখা যাক সামনে কি হয়। ভোর এর নির্জনতার মাঝে চাঁদপুর পৌরসভা পার করলাম। সকালে ফরিদ্গঞ্জ পৌরসভা পৌছতেই রাস্তার পাশে দাড়িয়ে থাকা এক ঘোল (মাঠা) বিক্রেতার সন্ধান পেলাম। সকলেই তা সাবার করতে বেস্ত হয়ে পরলাম। হটাত এলাকার কিছু যুবক এগিয়ে আসল, জানতে চাইল আমাদের কথা। খুলে বললাম সব কথা, আমাদের উদ্দেশ্য, দীর্ঘ এই যাত্রা পথ। গল্পে গল্পে অনেকটা সময় চলে গেলো সেখানে। বিদায় বেলায় তাদের একটা কথা বেশ ভাল লাগল, “ ভাই, আপনারা খুব ভাগ্যবান জীবনে এরকম কিছু সুযোগ পেয়েছেন” ।

এত দীর্ঘ পথের ক্লান্তি অনেকটাই ম্লান হয়ে গেলো প্রাপ্তির কিছু ঝোলার কথা চিন্তা করে। যাক, ফরিদ্গঞ্জ পৌরসভার শেষ প্রান্তে এসে নাস্তার জন্য দাঁড়ালাম। সাইকেল গুলো সারিবদ্ধ করে ব্যানার টি টানাতেই অজস্র লোকের ভীর জমল। নাস্তার ফাঁকে ফাঁকেই তাদের সাথে কথা চলল। তাদেরকে জানালাম কেন এসেছি এত দূর? “গো গ্রিন” বলতে আমরা কি বুঝাতে চাচ্ছি? “ জিরো টলারেন্স ফর আর্থ” কি? বিভিন্ন দোকানে আমাদের বক্তব্য সম্বলিত পোস্টার গুলো টাঙালাম, এর পর বেরিয়ে পরলাম আবার। দুপুর ১২ টায় প্রবেশ করলাম দক্ষিণ জনপদের গুরুত্বপূর্ণ এক জেলা নোয়াখালী তে। পথে যে বাসাতেই নলকূপ (পানির) খোঁজ এ দাঁড়ালাম তারাই বাসাই দাওয়াত দিতে থাকলেন অথবা বসতে বললেন। কিছুটা মুগ্ধই হলাম নোয়াখালীর মানুষের আচরণ দেখে। কিছু মানুষ আবার আমাদেরকে বিদেশি মানুষ ভেবে কিছু জিজ্ঞেস করতেই ভই পাচ্ছিলেন। যাই হোক, দুপুর এর তপ্ত রোদ এ ক্লান্ত, বিস্রান্ত শরীর নিয়ে ধীর গতিতে সাইকেল চালিয়ে রাইপুর, লক্ষ্মীপুর, চৌমুহানি হয়ে পৌঁছলাম ফেনী রোড এর থেকে ২৭ কি মি দূরে অবস্থিত জমিদার হাট নামক এক জায়গায়। আমার গ্রামের বাড়ি সেখানে, আজ রাত টি গ্রুপ সেখানেই কাটাবে বলে স্থির করল। রাত ১০ টায় বাড়ি পৌঁছে কোন মত খাবার সেরে ঘুম।





১৯ অক্টোবর



আরেকটি অলস সকাল কাটল, সকাল ৮ টায় ঘুম ভাঙলেও, বাইরের রোদ দেখে আর ডাব, পরোটা, গরুর মাংস, ডিম দিয়ে নাস্তা টা সারার পর বার হতে মন চাইছিল না কারো। টানা ২ দিন সাইকেল টানার পর এক রাতের ঘুম। স্বর্গীয় সুখ ছিল সে ঘুমে। অনেক কষ্টে মনকে বুঝিয়ে সকাল ১০ টায় বার হলাম ফেনীর উদ্দেশে। ১১.৩০ এ যখন ফেনী শহর ক্রস করছিলাম বিশ্রাম এর এক স্থান এ কিছু লোক সমাগম ঘটে গিএছিল, গ্রামের কিছু মুরুব্বি আমাদের কথা শুনলেন ও ঠিক অনুমান করতে পারছিলেন না পঞ্চগড় থেকে এসেছি মানে কি?? তাদেরকে ম্যাপ খুলে যখন বিস্তারিত সব বললাম কিছুটা বাকরুদ্ধ হয়ে রইলেন। ওখান থেকে আসার সময় কিছু আগন্তুক অই মুরুব্বিদের কাছে জানতে চাইলেন এরা কারা? নির্লিপ্ত কণ্ঠে চাচা উত্তর দিলেন , “ এরা দেশের ভবিষ্যৎ” ।

পিছে ফিরে তাকালাম না। এত টা পথ পারি দিয়ে শারীরিক ও মানসিক ভারসাম্য যখন কিছুটা দুর্বল তখন এরকম কিছু Acknowledgement যেন স্বর্গীয় এক অনুভূতি এনে দিল পুরো শরীরে। ঢাকা – চট্টগ্রাম মহাসড়ক এর মসৃণ রাস্তায় প্রবল বেগে এগিয়ে চলল আমাদের ৬ জন ই। মিটার এর কাটায় দেখতে পেলাম গড় গতিবেগ প্রায় ১ ঘণ্টা ধরে ২৫-৩৫ এর মাঝে ওঠা নামা করছে। রোদ এর তাপ তখন প্রচণ্ড, পিচ ঢালা রাস্তায় যেন পা হাত পুরে যাচ্ছে। সে দিকে তাকানোর সময় নেই কারো। লক্ষ্য যেন অদুরেই হাত ছানি দিচ্ছে। বেশ গতি নিয়ে মিরসরাই পর্যন্ত পৌঁছে গেলাম অনায়াসেই। হটাত রাস্তার পাশে এক নির্জন বাড়ি ও তার পাশে সুন্দর ঘাট বাঁধানো পুকুর দেখে থামল সবাই। তপ্ত গরম এ একটু গোসল দরকার। ৩০ মিনিট এর যাত্রা বিরতি। সাইকেল থেকে নেমে পুকুরের পানিতে পা চুবতেই খেয়াল করলাম আজকের গরমে পায়ে বেশ বড় আকারের ফোসকা পরে গেছে। মোটামুটি এক ধরনের প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে গোসল সেরে রওনা দিলাম। বিকালে পৌঁছলাম সীতাকুণ্ড, সে খানে আংশিক নাস্তা বিরতি। সন্ধ্যার অন্ধকার ঘনিয়ে এলে আমরা আবার বেরিয়ে পরলাম চট্টগ্রাম শহর এর উদ্দেশে। বাঁধ সাধল আবার বৃষ্টি, তার উপর মরার উপর খাড়ার ঘা হয়ে দাঁড়াল হাইওয়ে র দ্রুত ধাবমান গাড়ির সারি। চোখে যেন দেখতে পারছিলাম না কিছুই। কিছু দূর এগিএই বুঝতে পারলাম, এভাবে আগান সম্ভব না। এট লিস্ট বৃষ্টি থামা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। কাটিয়ে দিলাম অলস ১.৩০ ঘণ্টা বৃষ্টি থামার অপেক্ষাই কুমিরার কোন এক জায়গায়। পিছিয়ে গেলাম অনেকখানি। রাত যখন ১২ টা তখন পার হচ্ছিলাম বন্দরনগরী চট্টগ্রাম। নিউ মার্কেট মোড়ে যাত্রা বিরতি দিলাম ২০ মিনিট। নগরী তখন অনেকটাই ঘুমিয়ে পরেছে। আজ রাতে থাকার আয়োজন হয়েছে চন্দনাইশ এ অবস্থিত এক ভাই এর বাসায়। যেতেই হবে সেখানে, রওনা দিলাম আবার। কর্ণফুলী ব্রিজ হয়ে রাত ২ টার সময় পৌঁছলাম তার বাড়িতে। এগিয়ে থাকলাম ৩৫ কি মি রাস্তা পরের দিনের জন্য, এটাই শান্তি শত কষ্টের পর। শেষ হোল আরেকটি দিন।



২০ অক্টোবর



রাতের রাজকীয় খাওয়া ও প্রশান্তির এক ঘুম। আহ ! সকাল টা যদি না হত? কিন্তু সে সুযোগ আর দিল না তানভির। ঘুম থেকে টেনে তুলেই বলল, “দীপ ভাই কইটা বাজে জানেন?” জেনেও না জানার ভান করলাম। এই দোষ হোল শরীরের? টানা কষ্ট করতে থাকলে সমস্যা নেই, কিন্তু একটু জিরালেই যেন আর চলতে চায় না। বের হতে হতে সকাল ১০ টা বাজল, ২ প্যাডেল মারতেই বুঝলাম চাকা লিক। সে গ্রামেই ১১ টা বেজে গেলো লিক সারাতে। বের হতেই চোখে পরল কক্সবাজার ১২৮ কি মি। বুঝলাম আজকে সম্ভব না রাইড টি শেষ করা, কিন্তু কক্সবাজার এ বেলা থাকতে থাকতে পৌঁছতে হবে। শুরু হোল গতি নিয়ে পথ চলা। কেরানীর হাট পার হতেই টিম স্পিরিট দেখে বুঝতে পারলাম, যে আমরা আমাদের লক্ষের প্রায় শেষ প্রান্তে চলে এসেছি। শরীর চলছিল না যেন কারোরই, সম্পূর্ণ মনের জোরেই যেন সাইকেল চালাচ্ছিলাম আমরা। পথ টিকে আরও ভয়াবহ রকমের দুরহ করে তুলল চকরিয়ার আগের ২৪ কি মি পাহাড়ি উঁচু নিচু রাস্তা। এত সুন্দর কিছু দৃশ্য চারিপাশে, কিন্তু কোন কিছুই যেন ক্লান্তি কে হার মানাতে পারছিল না, ক্লান্ত বিস্রান্ত শরীর নিয়ে চকরিয়া পৌঁছতে সময় লেগে গেলো বিকাল। সেখানে খাওয়া দাওয়া সেরে মালমঘাটা পৌঁছানর পর স্থানীয় লোকেরা না করল সামনের রাস্তায় রাত করে যাওয়ার জন্য। নাপিতখালি পর্যন্ত রাস্তাটি নাকি জনাকীর্ণ ও দু পাশে জঙ্গলের রাস্তা। অনেক আলোচনার পর সিদ্ধান্ত হল রিস্ক হলেও যেতে হবে, আর ১ দিন ও ডিলে করা যাবে না এই ট্রিপ টা। কোন প্রকার রেস্ট ছাড়াই ক্রমাগত দুরু দুরু মনে সাইকেল চালিয়ে রাত ১০ টায় পৌঁছে গেলাম কক্সবাজার। নাহ! সঙ্কা কেটে গেছে। আমরা এখন পর্যটন নগরীতে। সে রাতে থাকার বেবস্থা হল হোটেল সি পেলেসে। হোটেল কর্মকর্তা আমাদের গল্প শুনে বেশ সাশ্রয়ী মুল্লে আমাদের থাকার বেবস্থা করে দিলেন। রাতে ঘুমাবার সময় খানিকটা সময় ভেবে নিলাম কত টা বিস্তর পথ পারি দিয়ে এই কক্সবাজারে এলাম। ভাবার বেশিক্ষণ সময় পেলাম না, পথ যে আরও ৯৫ কি মি বাকি, ঘুমোতে হবে।



২১ অক্টোবর,



অন্য রকম একটা সকাল যেন আজ। সবাই বেশ উৎসাহ নিয়ে তৈরি হয়ে নিচ্ছে। এত দিন এর পুরনো ময়লা কিছু জামা রেখে সবাই আমাদের টিম উনিফরম গুলো পরে নিল। আল্লাহ বাঁচিয়ে রাখলে আজি আমরা নির্ধারিত লক্ষে পৌঁছে যাব। সবার মনেই আছে সেই কথা, ক্লান্তির ছাপ শরীরে থাকলেও, মনে নেই বিন্দু মাত্র। আজ তো আনন্দ করার দিন। না খেএই বেরিয়ে পরল সবাই, ইনানি তে নাস্তা করবে বলে। ৯ টাই সাইকেল নিয়ে সোজা অগ্রসর হতে থাকলাম দক্ষিণ দিকে। রাস্তা টাকে আরও আকর্ষণীও ও আনন্দময় করার জন্য বেছে নিলাম মেরিন ড্রাইভ হয়ে টেকনাফ যাওয়ার রাস্তাটি। মনমুগ্ধকর এ রাস্তাটিতে সাইকেল নিয়ে এই প্রথম। দু পাশে ঝাউ গাছ, পূর্বের পাহাড়, সমুদ্র পারের নারিকেল গাছ ও উত্তাল ঢেউ এর শব্দ নিয়ে পথ চলতে খুভ একটা কষ্ট হচ্ছিল না। পথে পথে বেশ কিছু টুরিস্ট হাত নেরে আমাদের অভিবাদন জানাল। দুপুর ১১ টাই ইনানি পৌঁছে কিছু টুরিস্ট দের সাথে কথা বলার পর তারা মানতেই নারাজ আমরা পঞ্চগড় থেকে এসেছি। অনেকেই ভাবছেন আমরা সাইকেল বাসে করে নিয়ে আসছি কক্সবাজার এ ঘুরতে। যাক সে ঘোর এ তেমন একটা কান না দিয়ে ডাব ও হাল্কা চা নাস্তা সেরে এগিয়ে চললাম টেকনাফ এর দিকে। রওনা দেওয়ার আগেই আমাদের মিডিয়া পার্টনার কালের কণ্ঠকে জানিয়ে রাখালাম আমাদের সম্ভাব্য পৌঁছানর সময় টেকনাফ ০ পয়েন্ট এ। ইনানি থেকে সামনে অগ্রসর হতেই সমুদ্রের বাতাসের বেগ যেন আরও প্রবল হয়ে উঠল। বেশ কষ্টকর হয়ে উঠল সামনে এগিয়ে চলা। বিরতির সংখ্যা আপেক্ষিক ভাবে বারিয়ে দিতে হল। এখান থেকে যত দূর সামনে এগুছি রাস্তার বাম পাস জুড়ে ততই হ্যাচারি চোখে পরল। সাগর পারে বাঁধ দিয়ে চলছে পোনা ধরার কাজ। আর এখানের গ্রাম গুলোও সাগরের বেশ কাছা কাছি। পর্যটক এর আনা গোনাও বেশ কমে গেলো। সাইকেল চালানো ছেড়ে রাস্তার পাশে এক ঝাউ গাছ তলায় শুয়ে পরলাম সবাই। সমুদ্রের প্রবল বাতাস, সে সাথে নির্জন নিস্তব্ধ রাস্তা, চোখ টা বন্ধ করে জিরিয়ে নিলাম কিছুক্ষণ। জীবনের কিছু মুহূর্ত আসলেই অমূল্য, অনুভব করলাম সে সময়। এর পর উঠে রওনা দিতেই শুরু হল রাস্তার দুরবস্থা। প্রচুর কালভারট আর উঁচু নিচু রাস্তাই চলা টাই দাই হয়ে দাঁড়াল। ঘড়িতে যখন ২.৩০ টা বাজে, তখন সুনলাম টেকনাফ আর ৩০ কি মি বাকি। উত্তেজনা তখন চরমে, ভাঙ্গা রাস্তায় প্রচণ্ড গতিবেগ নিয়ে এগিয়ে চলতে কারপন্ন করল না কেউ। টেকনাফ শহর থেকে মাত্র যখন ১ কি মি দূরে তখন থামলাম আমরা হাত মুখ ধুএ নিতে। কালের কণ্ঠ থেকে ফোন এলো, “কোথাই আপনারা ভাই? এখনও আসেন না কেন?” থাক আর দেরি করা যাবে না, অলরেডি ৪ টা বাজে। ঘড়িতে সময় যখন ৪.০৯.৩৭ তখন এলো অমূল্য সেই মুহূর্ত। কোন কথা না বলে আমরা টেকনাফ ০ পয়েন্ট এ এসে পৌঁছলাম। হাতের বাম দিকে আওয়ামীলীগ অফিস এর দিকে একটু এগুতেই বেশ কিছু মানুষ ঘিরে ধরল আমাদের। শুরুতে মিছিল টাইপের কিছু মনে করলেও বুঝতে পারলাম এরা আমাদের অপেক্ষায় থাকা সাংবাদিক দল। পৌঁছান মাত্র ফুলের তোড়া দিয়ে বরন করে নিল আমাদের। রাস্তার পাশেই সাইকেল গুলো স্ট্যান্ড করে ব্যানার টানাতেই শুরু হয়ে গেলো মুহুর্মুহু কামেরায় ছবি তুলার শব্দ ও হাত তালি। কিছুক্ষণ থমকে ছিলাম আমরা, যা হচ্ছে তার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না আমরা। প্রাপ্তির আনন্দ প্রকাশ করতেই ভুলে গিয়েছিলাম। হুঁশ আসার পর তানভীর অনেকটা আবেগেই জরিয়ে ধরল, সবাই সবাইকে ধন্যবাদ জানাল অসীম এ প্রাপ্তিতে গত ৯ টি দিন সাপোর্ট দেওয়ার জন্য। অনেকটা অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছিল সে মুহূর্তটা। আমার প্রতিটি পার্টনার এর মুখে তখন ছিল ক্লান্তিবিহিন নির্মল কিছু হাসি, সবাই ফোন নিয়ে বেস্ত হয়ে পরল আনন্দ ঘন সেই মুহূর্তটা আপনজনের সাথে ভাগা ভাগি করে নিতে। আজকের দিনটি শুধু গত ৯ দিন এর ক্লান্তিহীন কিছু পথ চলার ফসল নয়, এটি বেশ কিছু দীর্ঘ স্বপ্নের বাস্তবায়ন, আজকের প্রাপ্তিটি ক্ষণস্থায়ী নয়, অর্জন টি সারাজীবনের, আমৃত্যু বুকে বয়ে চলার মত কিছু অনুভূতি। লোকে লোকারণ্য হয়ে গেলো চার পাস। রাস্তায় ভীর জমে গেলো বেশ কিছু সময়ের জন্য। কালের কণ্ঠের স্থানীয় প্রতিনিধি জাভেদ হাবিব ও আসে পাশে থাকা সবার অনুরধে সংক্ষেপ এ বর্ণনা করলাম, কি করে পারি দিলাম আমরা ১১৭৬ কি মি এর এই দীর্ঘ পথ, কি দেখলাম এই বাংলায়, কেমন গেলো তেতুলিয়া থেকে টেকনাফ এর এই যাত্রা, কি উদ্দেশ্য নিয়ে পারি জমালাম আমরা এই যাত্রায়। ততক্ষণে কক্সবাজার এ বেক করার পিক আপ ঠিক করে ফেলেছে আদিল। সবাইকে বিদায় জানিয়ে উৎসুক মানুষের ভীর ঠেলে যখন ফিরছিলাম, কে যেন ভিড়ের মাঝ থেকে বলে উঠল, “ইচ্ছে থাকলে কি না হয়?”





বিস্তারিত ছবির গল্পে



Click This Link





মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.