নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে স্লোগান-নির্ভরতা বন্ধ করা অত্যন্ত জরুরি। স্লোগান হতে পারে একটি আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ, তবে যখন তা অযথা ব্যবহৃত হয়, তখন এটি নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
নেতা-ভিত্তিক স্লোগান যেমন "ওই নেতা", "সেই নেতা", "আমার নেতা", "তোমার নেতা" সমাজে এক ধরনের তেলমাখা সংস্কৃতি তৈরি করে। যখন রাজনৈতিক স্লোগান একজন নেতার নামে হয়ে থাকে, তখন ওই নেতাকে অতি মানব বা দেবতার পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এর ফলে নেতারা নিজেদের মানুষের চেয়ে উর্ধ্বে মনে করতে শুরু করেন।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রায়ই দেখা যায়, রাজনৈতিক কর্মসূচিগুলো রাস্তাঘাট বন্ধ করে, মাইক ব্যবহার করে জোরে জোরে স্লোগান দিয়ে করা হয়। এই ধরনের কর্মসূচি জনজীবনে ব্যাঘাত ঘটায়, শব্দ দূষণ সৃষ্টি করে, এবং সাধারণ মানুষের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। এর থেকে আমাদের বেরিয়ে আসা প্রয়োজন। ভারতীয় উপমহাদেশের পুরনো রাজনৈতিক কৌশল থেকে দূরে সরে এসে আমাদের নতুন ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি গড়ে তুলতে হবে, যেখানে কর্মসূচির মানদণ্ড হবে লোকসংখ্যার পরিমাপ নয়, বরং উদ্দেশ্য এবং পরিকল্পনার গভীরতা দিয়ে।
আমি যেই দেশে থাকি জার্মানি, সেখানে রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ এমন স্থানে অনুষ্ঠিত হয় যেখানে জনজীবনে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয় না। স্লোগানের পরিবর্তে বক্তৃতা এবং আলোচনা মূল আকর্ষণ। ওদের, জনসভা বা রাজনৈতিক কর্মসূচি কখনোই সাধারণ মানুষের জন্য সমস্যা তৈরি করে না। এমনও হয় জার্মানরা বা আমরা বুঝতেই পারি না, কোথাও রাজনৈতিক কর্মসূচি হচ্ছে কিনা।
আরেকটি দেশের কথা বলি। নরওয়ের রাজনৈতিক সংস্কৃতি অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ এবং সংগঠিত। সেখানে রাজনৈতিক কর্মসূচি পরিচালিত হয় সভা, সেমিনার এবং আলোচনা সভার মাধ্যমে, যেখানে নীতি ও আদর্শের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। স্লোগান এবং উত্তেজনার পরিবর্তে, তারা রাজনৈতিক বক্তব্য এবং প্রস্তাবনা নিয়ে আলোচনা করে, যা জনগণের মধ্যে শিক্ষণীয় এবং গঠনমূলক প্রভাব ফেলে।
শেষ একটি দেশ নিউজিল্যান্ডের উদাহারণ দিচ্ছি। নিউজিল্যান্ডে রাজনৈতিক কর্মসূচি আয়োজিত হয় এমনভাবে, যাতে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন কার্যক্রমে কোনো প্রভাব না পড়ে। সেখানে রাজনৈতিক দলগুলো জনসাধারণের সঙ্গে সরাসরি সংলাপ ও সভার মাধ্যমে তাদের বার্তা পৌঁছায়, যেখানে কোনো ধরনের শব্দ দূষণ বা ভয়-ভীতির পরিবেশ থাকে না।
অন্যদিকে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যে "লোকবল যুদ্ধ" চলে, সেটাও অত্যন্ত ক্ষতিকর। অধিক লোকবল দেখানোর জন্য অনেক সময় এমন ব্যক্তিদের আনা হয় যারা আদৌ সেই কর্মসূচিতে অংশ নিতে ইচ্ছুক নয়। এদের মধ্যে কারখানার শ্রমিক থেকে শুরু করে সমাজের দুর্বল ও নিরুপায় মানুষরাও রয়েছেন, যারা বাধ্য হয়ে অংশগ্রহণ করতে হয় শুধুমাত্র চাকরি বা নিরাপত্তার স্বার্থে। এই প্রকার রাজনৈতিক সংস্কৃতি বাংলাদেশে যতদিন থাকবে, ততদিন একটি প্রকৃত গণতান্ত্রিক ধারা গড়ে তোলা সম্ভব হবে না।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে স্লোগান ভিত্তিক, নেতা-নির্ভর কর্মসূচি থেকে বেরিয়ে এসে নীতি ও আদর্শভিত্তিক কর্মসূচির দিকে মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। তবেই আমরা একটি স্বচ্ছ, গণতান্ত্রিক ও সুষ্ঠু রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তুলতে পারবো, যা সকলের জন্য মঙ্গলজনক হবে।
বাংলাদেশের রাজনীতির সংস্কৃতি পরিবর্তন করুন.....
* স্লোগান হবে আন্দোলনের জন্য, ব্যক্তিপূজার জন্য নয়।
* রাস্তা বন্ধ করে, শব্দ দূষণ করে নয়, যুক্তিসংগত কর্মসূচির মাধ্যমে রাজনীতি গড়ুন।
* লোকবল প্রদর্শনের জন্য দুর্বল ও নিরুপায় মানুষদের ব্যবহার বন্ধ করুন।
* নতুন ধারার রাজনীতিতে মনোনিবেশ করুন, যেখানে নেতার নয়, নীতির জয় হবে।
২| ৩০ শে আগস্ট, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৯
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: এই সংস্কৃতি সহজে পরিবর্তন হবে না। আসলে সংস্কৃতি পরিবর্তন হতে অনেক সময় লাগে। যে দেশগুলির কথা বলেছেন ওরা আমাদের চেয়ে ৫০০ বছর আগানো। ওদেরকে রেফারেন্স ধরে আপাতত কোন লাভ নাই। আমাদেরকে এশিয়ার কিছু উন্নত দেশকে অনুসরণ করতে হবে যারা কয়েক দশক আগেও আমাদের মত ছিল। যেমন কোরিয়া, সিংগাপুর, মালয়েশিয়া।
©somewhere in net ltd.
১| ২৯ শে আগস্ট, ২০২৪ রাত ৮:১৬
কামাল১৮ বলেছেন: স্লোগান হবে কি জন্য আন্দোলন তার সারসংক্ষেপ।