নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জোছনায় ভুবনের ছবি

উড়ুউড়ু

আমি কখনই লটারী করি না কিন্তু মনে প্রানে বিশ্বাস করি যে আমার জীবনটাই একটা বড় লটারী।

উড়ুউড়ু › বিস্তারিত পোস্টঃ

ফেরা: প্রথম পর্ব (ছোট গল্প)

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৩:০২

ট্রেন ছাড়ার সময় হয়ে গেল। বিভ্রান্ত হবার কিছু নেই, সন্ধ্যা ছয়টার ট্রেন দেরি হওয়ায় অস্থির যাত্রাীগণকে স্টেশন মাস্টার বলেছিলেন ট্রেন তখন কাচাইডাঙ্গা। মনে মনে হিসেব করে বের করলাম আরও আড়াই ঘন্টার পথ। সেই পরির্বতিত সিডিউলে ট্রেন ছাড়ার সময় হয়ে এল। জানালার পাশের সিট পাই নি, পেলে ভাল হত। অবশ্য এই সিটে বসে জানালাকে দেখা যচ্ছে ২০ ইঞ্চি টেলিভিশনের মত, বিজ্ঞাপন বিরতিহীন টিভি দেখতে দেখতে যাওয়াটাও মন্দ হবে না। কতদিন পর এই পথে বাড়ি ফিরছি! সাত বছর, খুব বেশি কি সময়। আবার খুব কমও নয়। আমার কিন্তু ফেরার কথা ছিল না। যে প্রত্যয় আর ক্ষোভ নিয়ে বেরিয়ে ছিলাম তাতে ফেরা যায় না। সময়ের সাথে সাথে প্রচন্ড কষ্টগুলোও কি ফিকে হয়ে আসে? পরিদর্শক সবুজ পতাকা দোলা দিয়েছে হয়তো, প্রথম হুইসেল বেজে চলা শুরু করলো ট্রেন।

আমার কলিগ স্বপন ভাই খুব আমুদে লোক। সবার সাথে তার অনেক ভাব। অনেকবার চেষ্টা করেও আমার সাথে জমাতে পারেন নি।
উনি আমাকে বলতেন, রাশেদ সাহেব আপনি এমন ক্যারে ভাই?
আমি জানি 'ক্যারে' শব্দটা স্বপন ভাইয়ের টোপ। উনি অত্যন্ত সুশিক্ষিত ও স্মার্ট মানুষ। এই শব্দ ব্যবহার করে আমার কাছের মানুষ সাজতে চান, স্বাভাবিক জীবনে কখনও এভাবে কথা বলেন না। কিন্তু আমি ধরা দেই না তার টোপে।
আমি পাল্টা প্রশ্ন করি, কেমন?
উনি গড়গড় করে বলেন, এই যে ম্যাড় ম্যাড়ে। কোন প্রান নাই। কারও সাথে কথা নাই। আচ্ছা আপনার সারাদিনের জন্য কত শব্দের বরাদ্দ বলেনতো? এত হিসেব করে কথা বলেন কেন?
আমি হেয়ালি করে বলি, সবকিছু হিসেবের মধ্যে থাকাই ভাল।
উনি বলে যেতে থাকেন, ভাগ্যিস চাকরি নেবার সময় সিভি দেবার সিস্টেমটা ছিল । আপনার গ্রামের বাড়ি যে বরইবাড়ি, না হলে এতটুকুও কেউ জানতো না। অফিসে তড়তড় করে উপরে উঠছেন, স্যাররা সবাই এত ভালোবাসে আপনারে শুধু একটু যদি সামাজিক হতেন!
আমি ওনার কথা শুনে যাই।
'আমার কিন্তু আবার মাঝে মাঝে রহস্যও লাগে। এলাকায় খুন খারাবি করে পালিয়ে আসেন নাই তো?'
স্বপন ভাইয়ের রহস্য ভাঙ্গার কোন রকম চেষ্টা না করে আমি কাজের মধ্যে ডুবে যাই। ফাইলের পাতা উল্টাতে উল্টাতে বলি, হতেও পারে!
এই জনাকীর্ণ ট্রেনে বসেও সুনশান নিরবতায় আমি ভাবি কিছু শব্দ, 'সামাজিকতা, রহস্য, প্রান আর বরইবাড়ি।'

গত বছরগুলো অন্তরিন সময়ে সবচেয়ে বেশি বরইবাড়ির কথা মনে পড়তো। ছোট একটি মফস্বল শহর। এতছোট যে প্রায় সবাই সবার নাড়ি নক্ষত্রের খবর জানতো। সেই শহরের ইট বিছানো রাস্তা, অলিগলি, খেলাম মাঠ আর আমাদের বেলপুকুরের পুকুরপাড়। জানি না আজ কেমন আছে সব। এই তথ্য প্রযুক্তির যুগে সবার হাতে হাতে মোবাইল; ইন্টানেটে ফেইসবুক, গুগলম্যাপে সবকিছুই নাকি দেখা যায়। সারা দুনিয়া নাকি কানেক্টেড, সেই সংযোগ তারে বা বেতারে, মোবাইলে বা কম্পিউটারে।

যেদিন স্বপন ভাই প্রথম শুনলেন যে আমার ফেইসবুক নাই, উনি আকাশ থেকে মাটিতে পড়া রিএকশন দিলেন।
বললেন, রাশেদ সাহেব আপনি আমাকে ফ্রেন্ড না করেন সমস্যা নাই। তারপরও ফেইসবুক আইডি নাই এই কথা বলিয়েন না।
আমি নিরুত্তাপ উত্তর দিলাম, যা সত্যি তাই বললাম।
আমার চোখের দিকে তাকিয়ে উনি হয়তো বুঝলেন যে আমি মিথ্যা বলি নাই।
স্বপন ভাই যেতে যেতে বললেন, আপনার পক্ষেই সম্ভব ভাই। আপনি যে ছুপা রুস্তম আমি তো মুহূর্তের জন্য ভুলে গিয়েছিলাম।

পরের পর্ব পড়ুন এখানে....

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৩:২৬

রাজীব নুর বলেছেন: স্বপন, রাশেদের মতোন আমার একটাও বন্ধু নেই।

সুন্দর লিখেছেন।

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৩:৪০

উড়ুউড়ু বলেছেন: আমারো রাশেদের মত বন্ধু নেই... তবে স্বপনের মত কিছু আছে।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন।

২| ১৩ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ১০:১২

রাজীব নুর বলেছেন: ও এই লেখা তো আগে পড়েছি।

৩| ০৫ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ১২:৫০

চঞ্চল হরিণী বলেছেন: উল্টো থেকে শুরু করে প্রথমে এসে শেষ করলাম। জীবনে দুঃখকষ্ট অনেক থাকবে। চড়াই উৎরাই থাকলেই জীবনের আসল রূপ, গভীর অর্থ উপলব্ধি করা যায়। তাই এত নিষ্প্রাণ হয়ে যাওয়ার কোন মানে নেই। মানুষ ইচ্ছে করে নিষ্প্রাণ হয়না সত্য, তবে এই অবস্থা দ্রুত কাটিয়ে সপ্রাণ হওয়াটা মানুষের ইচ্ছের উপর নির্ভর করে। প্রয়োজন দৃষ্টি মেলে দেয়া, জীবনকে গ্রহণ করতে শেখা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.