![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
১) নারিন্দা থেকে আতাভাই এসেছিলেন খোঁজখবর নিতে। খোদা ভক্ত, পরহেজগার সদাপ্রসন্ন মানুষ, কিন্তু ইসলামের নামে পাকিস্তানিরা যা করছে, তাতে তার প্রসন্নতা, শান্তি এবং ঘুম-নষ্ট হয়ে গেছে। বললেন, "বুঝলে জাহানারা, ওদের আর বেশি দিন নাই। ইসলামের নামে ওরা যা করছে, তাতে খোদার আরশ পর্যন্ত কেঁপে উঠছে। মসজিদে বসে কোরান তেলাওয়াত করছিলেন ক্বারী সাহেব, তাকে পর্যন্ত গুলি করে মেরেছে। খোদার ঘরে ঢুকে মানুষ খুন! মায়ের সামনে ছোট বাচ্চাকে বেয়নেট খুঁচিয়ে মেরেছে। বয়ঃপ্রাপ্ত ছেলের সামনে মাকে বেইজ্জত করেছে। ভেবেছে খোদাতালা সইবেন এত অনাচার? ওরা নিজেদের ধংস নিজেরাই ডেকে আনছে।"
২) ডাক্তারের গলা ভারি হয়ে উঠল, আমরা সবাই নীরবে চেয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম। ডাক্তার প্রায় আর্তনাদের মতো স্বরে বললেন, "ধর্ষিতা মহিলা। অল্প বয়সী মেয়ে থেকে শুরু করে প্রৌঢ় মহিলা, মা, নানী, দাদী- কেউ রেহাই পান নি। অনেক বুড়ি মহিলা বাড়ি থেকে পালান নি, ভেবেছেন তাঁদের কিছু হবে না। অল্প ময়সী মেয়েদের সরিয়ে নিজেরা থেকেছেন, তাঁদেরও ছেড়ে দেয় নি পাকিস্তানি পাষন্ডরা। এক মহিলা রুগীর কাছে শুনেছিলাম তিনি নামাজ পড়ছিলেন। সেই অবস্থায় তাঁকে টেনে রেপ করা হয়। আরেক মহিলা কোরান শরীফ পড়েছিলেন, শয়তানরা কোরান শরীফ টান দিয়ে ফেলে তাঁকে রেপ করে।"
৩) "আম্মা, দেশের এই রকম অবস্থায় তুমি যদি আমাকে জোর করে আমেরিকায় পাঠিয়ে দাও, আমি হয়তো যাব শেষ পর্যন্ত। কিন্তু তাহলে আমার বিবেক চিরকালের মতো অপরাধী করে রাখবে আমাকে। আমেরিকা থেকে হয়তো বড় ডিগ্রি নিয়ে এসে বড় ইঞ্জিনিয়ার হবো; কিন্তু বিবেকের ভ্রুকুটির সামনে কোনদিনও মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারব না। তুমি কি তাই চাও আম্মা?" -- শহীদ রুমী।
৪) জামী ফিরে এসে বলেছিল বদি নাকি ভয়ানক উতলা হয়ে থাকত। খালি বলতো "আমি আর বাঁচতে চাই না। আমি আত্মহত্যা করব।" একবার সে ঘরের প্লাগ পয়েন্টে আঙ্গুল ইলেক্ট্রিক শক খেয়ে মরতে চেয়েছিল। আরেকবার হঠাৎ দৌড় দিয়েছিল এই আশায় যে দৌড়াতে দেখলেই খানসেনারা ওকে গুলি করবে। কিন্তু ঝানসেনারা খুব সেয়ানা। ওরা বুঝে গিয়েছিল চারধারে এত পাহারার মাঝখানে খালি হাতে দৌড় দেয়ার কি অর্থ। গুলি না করে কয়েকজন খানসেনা তিনদিক থেকে এগিয়ে এসে ওকে ধরে ফেলে।
৫) "বইনরে। বড্ড মারছে আমার আজাদরে। আমি কইলাম বাবা কারো নাম বল নাইতো? সে কইল না মা, কই নাই। কিন্তু মা যদি আরো মারে? ভয় লাগে যদি কইয়া ফেলি? আমি কইলাম বাবা, যখন মারবে তুমি শক্ত হইয়া সহ্য কইরো।"-- শহীদ আজাদের মা।
উপরের সবগুলো লাইন শহীদ জননী জাহানারা ইমামের ‘একাত্তরের দিনগুলি’ বই থেকে নেয়া। রক্তে আগুন জ্বালিয়ে দেয়ার মত একেকটা ঘটনা। এই বীরাঙ্গনা, শহীদদের আত্মত্যাগেই তো আমরা পেয়েছি এই সোনার বাংলাদেশকে। তো স্বাধীনতা যুদ্ধে ছেলে, স্বামী হারানো জাহানারা ইমামকে আমরা কি দিয়েছি জানেন? রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা। এবং এই মামলা নিয়েই শহীদ জননী চলে গেলেন না ফেরার দেশে! আমরা উঠতে বসতে ভারত, পাকিস্তানকে গালি দেই। আমরা কি করেছি মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য? অবহেলায়, ক্ষুধায় দারিদ্রতায় নিগৃহীত হচ্ছেন আমাদের সূর্য সন্তানেরা। অপর দিকে তুলে দিচ্ছি চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের গাড়িতে জাতীয় পতাকা। পোলাপান স্বাধীনতা দিবস, দিবসের মাঝে গুলিয়ে ফেলে। রফিক, সালাম, জব্বারদের বানিয়ে ফেলে বীরশ্রেষ্ঠ। কয়টা সেক্টর ছিল এটাও অনেকে জানে না। স্কুল, কলেজ নামে কতগুলো খোয়াড় বানিয়ে তৈরি করছি একের পর এক ফার্মের মুরগী। তারা ট্রান্সফর্মারস, ক্যাপ্টেন এমেরিকা দেখে বড় হয়। অথচ একেকটা অপারেশন জ্যাকপটের দুর্ধর্ষ সব মিশনগুলো বড় পর্দায় দেখে তাদের শিহরিত হওয়ার কথা ছিল। আমরাই যখন আমাদের ইতিহাস নিয়ে বিকৃত করি তো অন্যরা তো আরো সুযোগ পাবে। ঘরে স্টার জলসা দেখে ফেসবুকে এসে স্ট্যাটাস দিই ভারতীয় পণ্য বর্জন কর। সারাদিন শাহরুখদের সিনেমা গুলো দেখে রাস্তায় প্রতিবাদ করি এই দেশে ভারতীয় চলচ্চিত্র প্রদর্শনী বন্ধ হোক। আমেরিকা যখন আমাদের দেশ নিয়ে হস্তক্ষেপ করে তখন আমরা বাহবা দেই। আবার আমেরিকা যখন ইরাক, আফগানিস্তানে হামলা করে আমরা তাদের পতাকা পোড়াই। সত্যিই আমরা আজব জাতি!
২| ১৮ ই মার্চ, ২০১৫ দুপুর ১:৫৬
ভাবুক হিল্লোল বলেছেন: আসলেই ভাই কিছু বলার নাই।
©somewhere in net ltd.
১|
১৮ ই মার্চ, ২০১৫ সকাল ১০:০২
বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায় বলেছেন:
কিছু বলার নাই।