নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সকাল ১১ টা বাজতে ০৭ মিনিট বাকি। রোদ টা একটু চড়া। চোখে সানগ্লাস থাকার পরও বোঝা যাচ্ছে রোদ টা আজকে একটু ভোগাবে। কাঠ ফাঁটা রোদ বোধহয় এটাকেই বলে। কাঠ ফাটুক না ফাটুক এই রোদে বেশিক্ষন থাকলে মাথার মগজ গলে গলে পড়বে সে ব্যাপারে নিশ্চিত সাবেলা। রিকসার জন্য দাড়িঁয়ে থাকবে নাকি হাঁটবে ভাবতে ভাবতেই মনে পড়লো ফোনটা চার্জে রেখে এসেছে।
তার অবশ্য এটা নতুন কিছু নয়। এ যাবৎ কতগুলো ফোন যে হারিয়েছে। তবে বাসায় রেখে এসেছে এবং তার মনে পড়েছে এজন্য সে বরং মনে মনে খুশি। খুশি এই কারনে যে , বাসায় ফোন রেখে বেড়িয়ে আসা সেটাকে একটা বাধা হিসেবে অনেকেই হয়তো বলবে কিন্তু সাবেলার কাছে এটা শুভ লক্ষন বলেই মনে হচ্ছে। সচরাচর ফেলে আসলে সেটা যখন মনে পড়ে তখন আর ফেরত যাবার উপায় থাকে না । কিন্তু আজকে তার মনে পড়েছে সময়মতো। যেটাকে কোন কাজে যাবার আগে শুভ লক্ষন বলেই মনে হয়। স্কুল পড়ার সময় পরীক্ষার রেজাল্ট দেবার দিন যেমন চেষ্টা করতো সব কিছুতে যেন শুভ লক্ষন থাকে। কিছুটা উত্তেজনা নিয়ে বাঁকা পথ এড়িয়ে যতটা সোজা যাওয়া যায় চেষ্টা করতো। বাঁকা রাস্তায় গেলে রেজাল্ট খারাপ হবার একটা চান্স থাকে ।
শুভ লক্ষন বলবৎ রেখে বাসা থেকে ফোনটা নিয়ে এসেই প্রথম যে রিকসাটা পায় সেটাতেই উঠে পড়ে। সাধারনত এমনটা সে করে না। যে জায়গার ভাড়া সে জানে না সেখানে যাওয়ার রিকসা নেবার আগে অন্তত প্রথম রিকসা চালকের কাছে ভাড়া জিজ্ঞেস করে দরদাম করার একটা চেষ্টা করে, দ্বিতীয়টায় উঠে পড়ে। আজ আর সেরকম কোন ঝামেলায় জড়ানোর কোন ইচ্ছেই নেই তার। কোন বাধা বা অশুভ কিছু সে চাইছে না।
স্কুলের রেজাল্টের দিনের মতোই কিছুটা উত্তেজনা কাজ করছে । বছর দুয়েক পরে কানাডা থেকে ফিরেছে সে গতকাল। এখনই আসার পরিকল্পনা ছিলোনা । আর আট মাস পরে লেখাপড়ার পাট চুকিয়ে একেবারেই চলে আসার কথা ছিলো। কিন্তু মাস খানেকের একটা বন্ধ পেয়েছে । তবে বন্ধ পেয়েছে জন্যই দেশের কলেজ ভার্সিটির পড়ুয়াদের মতো ব্যাগ গুছিয়ে বেড়িয়ে পরেছে বাসার উদ্দেশ্যে ব্যাপারটা এমনটা নয়। আসার পেছনে তার অন্য একটি উদ্দেশ্যে আছে। বলতে গেলে সেটাই আসল উদ্দেশ্য । শিপুর বড় বোনের সাথে আলাপ হবার কথা। শিপুর সাথে পরিচয় কানাডাতেই । পরিচয় থেকে ভালোলাগা ভালোবাসা। সেটার পরিনয় দেয়ার উদ্দেশ্যেই মূলত দুজনেরেই সময় মিলিয়ে দেশে আসা।
সিগন্যালে আটকে গরমে ঘামতে শুরু করে দিয়েছে সে। গরমটা না থাকলে হয়তো ব্যাপারটা এতোটা খারাপ লাগতো না ওর। কানাডাতে থাকার সময় অন্যান্য অনেক কিছুর সাথে তার মনে হয়েছিলো একবার সে যেন ঢাকার আটকে থাকা জ্যামটাও খানিকটা মিস করে। হঠাৎ সামনে চোখ পড়তেই দেখে সামনের আটকে থাকা সিএনজিটার পাশে দাঁড়িয়ে একটি ছেলে ও মেয়ে কিছু একটা জিজ্ঞেস করছে চালককে। হয়তো কোথাও যাবে। কিন্তু ওখান থেকে সরে যেতে দেখে একটু যেন মায়াও লাগে ওর। ওর থেকে বয়সে অনেক ছোটই হবে । এই বয়সে প্রেম করাটার সীমাবদ্ধতাও অনেক। একটু নিড়িবিলি খুঁজতেই হয়তো সিএনজিতে উঠতে চেয়েছিলো কিন্তু ভাড়া বেশী চেয়েছে নিশ্চয়ই নয়তো এই কড়া রোদে না উঠে ছাড়বে কেন।
একটু পরেই ওদের দুজনকে তার রিকসা চালকের দিকে এগিয়ে আসতে দেখে। একহাজার টাকার একটা নোট বাড়িয়ে দিয়ে বলে মামা খুচরা হবে ? এতক্ষনে বুঝতে পারে ওরা সিএনজিতে উঠার জন্য যায়নি। রিকসা চালক না বলে দিলে ওরা সাবেলার দিকে তাকায়। কিছু বলার আগেই সাবেলা বলে, আমার কাছে আছে। পার্স থেকে টাকা বের করে দিয়ে ভাবতে থাকে, চেহারা দুজনেরই কত মিষ্টি। বেশ মানিয়েছে। কিন্তু দোকানে খচরা না খূঁজে রিকসা সিএনজিতে খঁজছে কেন তারা কিছুতেই বুঝতে পারে না সে। দুটো পাঁচশো টাকার নোট দিয়ে একহাজার টাকার নোট রেখে দেয় সে। ছেলে মেয়ে দুটো দ্রুত চলে যেতে দেখে ভাবে রোদে না জানি কতক্ষন ঘুরছে। জ্যামেও ছুটে গেছে ওর রিকসা চলতে শুরু করে।
একটু পরে রিকসা থেকে নেমে ভাড়া দেয়ার সময় খেয়াল করে তার কাছেও খুচরা টাকা নেই। রিকসাচালকে জিজ্ঞেস করলে সে বলে তার কাছেও পাঁচশত টাকা খুচরা হবে না। মনে মনে একটু হাসিও পায় তার। ভাবে বোকা ছেলে মেয়ে দুটোর মতো সে ও কি এখন রাস্তাতে ঘুরবে ? নাহ, এতো বোকা নয় সে। ফোনে রিচার্জ করে টাকা খুচরা করতে চলে যায় পাশের দোকানে। একটা সময় ছিলো যখন সুন্দর মেয়েরা রিচার্জ করতো না, কার্ড কিনতো। যাতে ফোন নং কেউ পেয়ে না যায়। হালচাল বদলেছে হয়তো এতোদিনে। ফোনে দুইশত টাকা রিচার্জ মেসেজে পেয়েই ওই ছেলে মেয়ে দুটোর হাজার টাকার নোটটা বাড়িয়ে দেয় সে।
মধ্যবয়স্ক দোকানী টাকাটা উল্টেপাল্টে দেখে চশমার উপর দিয়ে তাকায় সাবেলার দিকে। মুখে চওড়া হাসি নিয়ে জিজ্ঞেস করে,
-’কতদিন ?’
-’হোয়াট ?’ কিছুটা থতমত খেয়ে মুখ থেকে বেরিয়ে আসে সাবেলার।
ওর দিকে একইভাবে তাকিয়ে পুনরায় জানতে চায় সে,
’জাল টাকার ব্যবসা কতদিন ?’ এবার দোকানির গলার স্বর অনেক চড়া । আশেপাশের অন্যান্য লোকজনের দৃষ্টি আকর্ষনের জন্য যথেষ্ট।
’ওটা আমাকে দিয়ে দিন ।’ ঝামেলা এড়াতে অন্য টাকার নোট বের করে বাড়িয়ে দেয় দোকানির দিকে । কিছুটা অনুনয় বিনয়ও করার চেষ্টা করে। নাছোড় বান্দা দোকানীর তাচ্ছিল্যপূর্ণ হাসিতে বুঝতে পারে একটা বিপদে পড়তে যাচ্ছে সে। ততক্ষনে কৌতুহলী লোকজন ভিড় করতে শুরু করে দিয়েছে। দোকানির কর্কশ কন্ঠ শুনতে পায় সে,
-’ওদিক যেয়ে বসেন। সবুজ ৯৯৯ এ ফোন লাগা।’
©somewhere in net ltd.
১| ০৯ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৯
শায়মা বলেছেন: হায় হায় বিনা দোষে অপরাধী হতে হলো নাকি!!