নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভাঙ্গাতরী-৭৭৯

ভাঙ্গা তরী -৭৭৯

একই ঠিকানাতে বাড়ি ফেরা হবে...

ভাঙ্গা তরী -৭৭৯ › বিস্তারিত পোস্টঃ

তিতুমীর এক্সপ্রেস-২

২১ শে নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:১১



আড়চোখে তাকিয়ে দেখতে পায় মেয়েটি মোবাইলে গেম খেলছে । মোবাইল স্ক্রীন এ খুব গোলাগুলি চলছে। আজকাল বাচ্চারা এই সব গেম পেলে নাওয়া খাওয়া ভুলে যায়। মোবাইল হাতে পেলেই কোথায় থেকে খুঁজে খুঁজে গেম বের করে ফেলে খেলতে শুরু করে দেয়। আগেরদিনের কথা মনে পড়ে যায় তার। ছোটবেলায় সাইকেল চালানার খুব ঝোঁক ছিলো। বাসায় সাইকেল ছিলো না । কোন মেহমান সাইকেল চালিয়ে আসলে খুব খুশি হতো । মাকে বলে বা মেহমানের কাছে থেকে সাইকেলের চাবি টা কোন রকমে নিতে পারলেই হলো। তারপার আর তাকে পায় কে ! এখনকার দিনে হয়তো বাচ্চারা সাইকেল নয়, মেহমানের মোবাইলটার দিকে তীক্ষ্ণ নজর রাখে।
একটা চা নেয় সে। ট্রেনে এই চা ব্যাপার টা খারাপ না। তবে দাম তিনগুন। বাইরে যে চা ৫টাকা, ট্রেনে খেতে হয় ১৫ টাকায় । এমন আহামরি কিছু না। ট্রেন থেকে নেমে পড়লেই দাম ৫ টাকা হয়ে যাবে । ট্রেনে চায়ের ইজ্জত বেশী। চায়ে চুমুক দিয়েই মনে হয়, আরও এক কাপ নেয়া দরকার ছিলো। দুই হাতে দুই কাপ চা নিয়ে ডান হাতের চা টা মেয়েটির দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলতে পারতো, এই নিন আপনার চা। মেয়েটি হয়তো প্রথমে একটু না না করতো। কিন্তু নেয়া হয়ে গেছে আর চা তো ফেরত দেয়ার জিনিসি নয় এই অজুহাতে হয়তো রাজী করানো যেতো। সেই সাথে ট্রেনে বা বাসে সহযাত্রীর দেয়া কিছু খেতে হয় কিনা সেই প্রসঙ্গে আলাপ শুরু করা যেতো। সহযাত্রীর দেয়া খাবার খেয়ে ফিট হয়ে থাকা বেশ কিছু গল্প শোনা আছে তার। শুধু শুনেই গেছে। বলার সুযোগ পায়নি। আজকেও অল্পের জন্য চান্সটা মিস হয়ে গেলো। মাত্র কয়েক সেকেন্ড আগেই ব্যাপারটা মাথায় আসলে এতক্ষন অন্তত একটা গল্পের মাঝামাঝি যেতে পারতো । কি আর করা । আজকাল প্রায়ই এমন হয়, কোন কাজ শুরু করার পর তার মনে হয় এটা এভাবে না ওভাবে করা লাগতো। মাথাটা একটু স্লো হয়ে যাচ্ছে।
চা খাওয়ার মাঝামাঝি হেডফোন নামিয়ে রাখাটা খেয়াল করেছে সে । মানে গ্রিন সিগন্যাল। সুযোগ নষ্ট করা যায় না।
-সৈয়দপুর আপনার বাসা ?
-না। ওখানে একটা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় আছে । ওখানে পড়াই।
এবার একটু অবাক হয় সে। তার ব্যাগটি উপরে রাখার সময় সে আড়চোখ যতটুকু দেখেছে তাতে তার মনে হয়েছে হয়তো বিশ্ববিদ্যালয় কোচিং টোটিং করে। কিংবা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ম বা ২য় বর্ষ হতে পারে বড় জোড়। এই অঞ্চল থেকে প্রচুর ছেলে মেয়েরা শুধু পড়াশোনার জন্য রাজশাহী যায়। নিজের অনুমানের উপর দ্বিতীয় বারের মতো অশ্রদ্ধা আসে তার। ১ম বার এসেছিলো বছর খানেক আগে। রাজশাহীতে শিল্প ও কুটির মেলায় দেখা তার এক সিনিয়র কলিগের সাথে। সাথে একটি মেয়ে । পরিচয় করিয়ে দিলো, আমার বড় মেয়ে। কিছু একটা বলা উচিত ভেবে সে জিজ্ঞেস করেছিলো, তুমি কোন ক্লাসে পড়ো ? তার মনে হয়েছিলো ক্লাস নাইন টেন হতে পারে। মুচকি হেসে মেয়েটি বলেছিলো, রাজশাহী মেডিকেলে ইন্টার্নশীপ করছি। কি একটা অবস্থা । কোন রকমে পালিয়ে বেচেছিলো সেবার। কিন্তু এইবার প্রথম দেখায় ওরকম মনে হবার পর যখন মোবাইলে যুদ্ধ যুদ্ধ গেম খেলতে দেখেছিলো তখন ধরেই নিয়েছে অনুমান সঠিক।
একটা সিগারেটের অভাব বোধ করে সে। চায়ের সাথে হলেই ভালো হতো। কিন্তু ট্রেনে এটা করা চলে না। উঠে গিয়ে দরজার পাশে দাড়িয়ে সিগারেট খাওয়া যায় কিন্তু এখন না। পরের স্টেশনে নামবে। সিগারেট টা খেয়ে সামনের দরজা দিয়ে উঠবে। মেয়েটিকে যেন সামনে থেকে দেখা যায়। পেছন দিক থেকে বড় ভুল অনুমান হয়ে গেছে।
নাটোর ষ্টেশনে নেমে পড়ে। একটা ক্রসিং আছে। কিছুটা সময় লাগবে। তিতুমীর কখনও সময়মতো যেতে পারে না গন্তব্যে। ইন্টারসিটি ট্রেনগুলোর মধ্যে তিতুমীর সবার ছোট ভাই। সবসময় বড়ভাইদের রাস্তা করে দেয়ার জন্য তাকে স্টেশনে স্টেশনে দাড়াঁতে হয়। তবে আজকে কিছুটা দেরী হলে হোক । কোন আপত্তি নেই তার।
আব্দুলপুর স্টেশনে এসে নেমে পড়ে দুজনেই। এখানে অন্তত মিনিট বিশেক দাড়াবে। ট্রেনের ইঞ্জিন ঘোরানো হবে। এতক্ষনতো বসে থাকার কোন মানে হয় না। হাসানের ডাকে কিছুটা ইতস্তত করলেও নেমে পড়ে মেয়েটি। একটা চা খাওয়াই যায়। এরইমধ্যে অনেক কথা হয়েছে তাদের । হাসান জেনে নিয়েছে সে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে মাস্টার্স করে মাস পাচেঁক হলো সেখানে জয়েন করেছে। কিন্তু খুব একটা ভালো লাগছে না সেখানে। অন্য কোথাও হলে চলে যাবে। দেশের বাইরে যাবার প্লান আছে। মাসে অন্তত দুবার বাসায় আসা যাওয়া করে এই ট্রেনেই। ওয়ানটাইম কাপে দুধ চা হাতে স্টেশনের এমাথা ওমাথা হাটতে গিয়ে পুড়ি, আলু ভাজির দোকানটা দেখিয়ে দেয় হাসান। আব্দুলপুর আসলে পুড়ি আলু ভাজিটা সে কখনও মিস করে না। আজকেও খেতো কিন্তু মেয়েটি খাবে না জন্যে তার খাওয়া হলো না। তবে পরে কখনও অবশ্যই খেয়ে দেখবে বলে জানায়। এটাই শেষ স্টেশন। পরের স্টেশন রাজশাহী। সেখানে তার ভাই আসবে তাকে নিতে।
পরদিন সন্ধাবেলা বাসার বেলকনিতে চা হাতে বসে হাসান। চা খাওয়ার পরে সিগারেটা ধরিয়ে ফোনটা হাতে নেয় সে। গতকাল সবকিছুই ঠিকঠাক থাকলেও একটা ছোট ভুল হয়ে গেছে। মেয়েটির নাম জানা হয়নি। রাজশাহী পৌছেছে দেড় ঘন্টা লেট এ। নামার সময় খুব বেশী কথা হয়নি আর। তবে তার আগেই সে ফোন নং টি নিয়ে রেখে দিয়েছে। ফোন নং থাকলে পরেও কথা বলা যাবে। কথার মাঝে তাকে তার ভিজিটিং কার্ড দিয়েছিলো অপর একটি ভিজিটিং কার্ড এ মেয়েছি তার নম্বর লিখে দিয়েছে। তবে নাম না জানাটা খারাপও হয়নি। এখন একটা ফোন করে ঠিকঠাক বাসায় পৌছেছে কিনা জিজ্ঞেস করা যায় সাথে তার নামটিও। ভিজিটিং কার্ডটি বের করে কিছুটিা উত্তেজনা নিয়ে নাম্বারটি তুলে ডায়াল করে সে।
অপর প্রান্ত থেকে মিষ্টি কন্ঠে একটি মেয়ে বলে ওঠে, “ আপনার ডায়ালকৃত নম্বরটি এখন আর ব্যবহৃত হচ্ছে না।”
(সমাপ্ত)

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫৬

এসো চিন্তা করি বলেছেন: আমি নতুন আমার লেখা পড়বেন আর সাপোর্ট করবেন ভাই ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.