নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রণব কুসুম দত্ত

অতি সাধারণ ভদ্র বাঙালি যুবক।

প্রণব কুসুম দত্ত › বিস্তারিত পোস্টঃ

অজ্ঞেয়বাদীর কথা

১০ ই জুলাই, ২০১৫ দুপুর ২:৩৪

বাজার থেকে হাফ ডজন ডিম কিনে নিয়ে আসলাম। ভাবছিলাম আমি যদি লন্ডনের কোন এক মুদির দোকানে গিয়ে বলতাম 'ডু ইউ কিপ ডিম? গিভ মি হাফ ডজেন ডিম প্লিজ!' দোকানদার নিশ্চয় ভুরু কুঁচকে বলত 'সরি!' অথবা 'পারডন মি!' সে তো জানেনা এগ মানে ডিম। ডিম মানে এগ!
এগ বলি বা ডিম- বস্তু কিন্তু এক। নামরকরণ আমরা যেভাবেই করিনা কেন তাতে পদার্থের অবস্থার কোন পরিবর্তন হয়না। পদার্থের বৈশিষ্টে এটা যোগ করা যেতে পারে। তবে এসব পদার্থবিজ্ঞানের আলোকে কথা নয়। মনোবিজ্ঞানের ভাবনা। স্পষ্ট করে ফিলোসফি বলি।
একটা ভাষা বোধহীন শিশু হয়ত জানেনা ডিমকে ডিম বলা হয়। কিন্তু তাই বলে ঐ সফেদ ডিম্বাকৃতির পদার্থটার বিলোপ হয়না। সে ডিম সম্পর্কে কিছু জানুক বা নাই জানুক এতে ডিমের কিছু যায় আসেনা। কোন একটা বস্তু বা বিষয় সম্পর্কে আমাদের অজ্ঞতা প্রমাণ করেনা যে ঐ বস্তু বা বিষয়ের অস্তিত্ব নেই। এভাবেই আমরা বলি ঈশ্বর আছেন! এভাবেই আমরা ভাবি- ডিম অথবা এগ যাই বলিনা কেন জিনিস এক! আল্লাহ বা ভগবান যাই বলিনা কেন বস্তু এক! আমরা দেখতে পাচ্ছিনা, বুঝতে পারছিনা বা আমরা জানিনা বলেই ঈশ্বর নেই তেমন তো নয়!
ডিমের তুলনায় ঈশ্বর অনেক বৃহৎ! এতটা বৃহৎ যে ঈশ্বর হাঁস মুরগীর কল্পনার বাইরে! তাই সমাধানে আসা সহজ হবেনা। ডিম পদার্থ আর ঈশ্বর অপদার্থ! বস্তুবাদী আলোচনার বিষয় নয় ঈশ্বর; ভাববাদের কেন্দ্র বলা যায়! তাই ঘটনাকে আরেকটু ঘোলা করা দরকার! ডিম কেনার সময় একটা বিষয় ভাবছিলাম। এই ডিমটা আছে বলেই কি আমি সত্য না কি আমি আছি বলেই ডিমটা সত্য? পরিষ্কার করে বললে, জগতের প্রেক্ষিতে আমি না কি আমার প্রেক্ষিতে জগত? জগতটা আছে বলেই কি আমি আমাকে তার চেয়ে স্বতন্ত্র বলে চিহ্নিত করি, না কি আমি আছি বলেই জগতটাকে আমি আমার চেয়ে আলাদা করে দেখতে পাই? আমি আর জগতকি একে অপরের নির্দেশক? জগতও সত্য, আমিও সত্য। কিন্তু এই সত্যটাকে উপলব্ধি করি আমি। জগত তো জড় মাত্র! আমাদের উপলব্ধির তারতম্যের অপর মোটামুটি সবকিছুই নির্ভর করে। সভ্যতার বিকাশ ও বিনাশ- সবকিছু! ডিমকে খাদ্য হিসেবে উপলব্ধি করেছি আমি। আমার কৃষ্ণভক্ত বন্ধুর কাছে এটা বিষভক্ষণ ও নরকের রাস্তা। উপলব্ধি দুরকম হল- তাই ডিমের প্রয়োগও দুরকম হল। সে বাঙালির ছেলে। ছেলেবেলা থেকে মাছ ডিম না খেয়ে প্রোটিনের ঘাটিতে ভুগছে! আর আমি বেশি খেয়ে কোলেস্টেরলের ঠেলায় আছি!
কথা হল উপলব্ধির তারতম্য ঈশ্বরের অস্তিত্ব অনস্তিত্বেও ঘটছে আমাদের। কারো কাছে ঈশ্বরের হাত পা নাক কান সব আছে। কারো কাছে আবার ঈশ্বর আছেন। খোদার আরস আছে। তিনি সেখানে বসবেন হাসরের দিনে। অথচ তার নাকি কোন অবয়ব নেই! একই সত্ত্বা নিয়ে নিয়ে যখন এত রকমের উপলব্ধি তখন ভাবতে হয়- সত্যি টা কি? অথবা আদোও এমন কিছু আছে কিনা? ডিমের আলোচনায় বলেছিলাম ডিমের মতন ঈশ্বরও সত্য এমন দাবী করা যায়। তবে ডিমের গঠন সবার কাছে এক হলেও ঈশ্বরের গঠন অভিন্ন নয়! এটার জন্যই চিন্তা হচ্ছে!
তারপরের কথা হচ্ছে সেই অস্তিত্ববাদের। ঈশ্বরের প্রেক্ষিতে আমি না কি আমার প্রেক্ষিতে আমি? জগত ও আমার প্রেক্ষিতে বলেছিলাম আমরা একে অপরের নির্দেশক। বিষয়টা জটিল বটে। জগত জড় বলে একে আপেক্ষিক বা আমার স্বাপেক্ষিক বলা যায়। জগত বা আমি কোনটাই ভাববাদের বিষয় নই। আমাদের ওজন আছে, ভর আছে, স্পষ্ট গতি প্রকৃতি আছে। আমরা একে অপরের কাছে নির্দেশ্য! তাই বুঝি- জগত আছে বলে আমি টের পাই আমি আছি। আর আমি (সাবজেক্ট) না থাকলে এই প্রশ্ন কে ওঠাত 'জগত আছে কি নেই?' কিন্তু ঈশ্বরের ক্ষেত্রে এই তত্ত্ব খাটেনা। কারণ ঈশ্বর অনির্দেশ্য। ঈশ্বর ও আমি একে অপরের পরিণাম নই, নির্দেশক নই। আমি ভাবছি বলেই ঈশ্বর অস্তিত্বময় হচ্ছে! আপাতত বিষয়টা এরকম!
কিন্তু এই 'আমি' শব্দটা আমাদের সামনে একটা বিরাট প্রশ্ন নিয়ে আসে সেটা হল- 'কে আমি?' এর উত্তর পেতে গিয়ে আমাদের অনেক হিমশিম খেতে হয়। দেহ আমাদের আমিত্বের ধ্রুবক নয়, মন নয়, ইন্টেলিজেন্স নয়। কারণ এগুলো প্রতিনিয়ত বিবর্তনের আবহে আছে। আমাদের ব্রেইন আমাদের নিয়ন্ত্রণ করে এটা বিজ্ঞানের দাবী। কিন্তু ব্রেইনে ত্রুটি হলে ওষুধ পত্রের বন্দোবস্ত করতে হচ্ছে। Absolute reality বলতে যা বোঝানো হয় ব্রেইন ঠিক সেটা নয়। শুদ্ধতম গাঁজায় জোরে দুটান দিলে ব্রেইনের (নিউরনের) অবস্থা টলমাটাল হয়। সবচেয়ে বড় প্রশ্নটা আসে মৃত্যুকে নিয়ে? মরার পরেও ব্রেইন তাজা থাকে। তাহলে মরে কে? হিন্দু দর্শন বলছে দেহ মরে আত্মা থাকে! আমি হিন্দু দর্শনকে এজন্য প্রাইওরিটি দিচ্ছি কারণ আর কোন ধর্মদর্শন এই বিষয় নিয়ে এত গভীর আলোচনা করেনা! বৌদ্ধদর্শন এই আত্মাকে অস্বীকার করে গেছে, কিন্তু মানসিক সংস্কারের প্রবাহকে (জন্মান্তরীন কর্মফলপ্রসূত) পূণর্জন্মের নিয়ামক হিসেবে দাবী করছে যা প্রশ্নবিদ্ধ! এখন আত্মা আছে কি নেই তা বলতে পারছিনা, তবে মৃত্যুর সময় এমন একটা কিছু ঘটে, বা আমরা এমন একটা কিছু হারিয়ে ফেলি যাতে আমাদের আর আমি বোধ থাকেনা। অর্থাৎ আমিও বেঁচে নেই। বলতে পারেন- গভীর ঘুম অথবা অজ্ঞান হলেও এরকম হয়। কিন্তু মৃত্যুর অভিজ্ঞতা নেই বলে এদুটোর সাথে আমি কোন তুলনায় যেতে পারছিনা এই মূহুর্তে। ঘুম ভাঙে, মৃত্যুর ঘুম আর ভাঙেনা। আমার আরো একটা সংশয় আছে ঘুমানোর সময় স্বপ্ন দেখে কে?
যাই হোক আমি এটাই বোঝাচ্ছিলাম প্রকৃত 'আমি' কি বস্তু সেটা সেটা আমাদের কাছেই এখনো অধরা। তাই আমিত্বের বিচার দিয়ে যখনই আমরা কোনকিছুর মূল্যায়ণ করি তখন আমার কাছে দুটো ধারণা প্রথমেই মাথায় আসে-
১। অভিজ্ঞতাবাদ। আমরা যা কিছু ভাবি সব আমাদের অভিজ্ঞতার প্রেক্ষিতেই ভাবি। এটা দর্শনের ভাবনা।
২। আমাদের মস্তিষ্কের স্বতন্ত্র কার্যপ্রণালী ও আমাদের ডিএনএ- এর স্বতন্ত্র গঠন। আমরা একে অপরের থেকে ভিন্ন আদলে তৈরি। তাই আমাদের ভাবনাগুলো কখনো কখনো অপরের সাথে সাদৃশ্যতা পেয়ে গেলেও আমরা সম্পূর্ণ রূপে এক নই।
আমাদের ঈশ্বর ভাবনার সাথেও ওপরের দুটো ধারণাকে প্রাসঙ্গিক ফ্যাক্টর বলে রাখতেই হবে। আমরা যেখানে নিজেদের অস্তিত্ব নিয়েই এখনো দ্বিধান্বিত সেখানে ঈশ্বরের অস্তিত্ব নিয়ে নিঃসন্দিহান হওয়া আমার কাছে অযৌক্তিক লাগে। আমরা অস্তিত্ব নিয়ে দ্বিধান্বিত মানে কি আমরা কোনকিছু নিয়ে ভাবতে পারব না? তা কেন হবে? তবে perfect আর absolute এর মধ্যে ব্যাবধানটা কি সেটা জানা দরকার!
(ক্রমশ......)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.