ডিপ্রেশনের সাথে যুদ্ধ

২২ শে জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ৮:২৪

প্রায় আড়াই বছরের মত হল প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছি। প্রথম প্রথম খুব আশা নিয়ে পড়ানো শুরু করলেও, ইদানীং কেন জানি আগের মত ভালো লাগছে না। দিন দিন রিজাইন করার কথা শুধু মাথায় আসছে। মনে হয় যে বিভিন্ন বই টই লিখে টিখে আয় করার চেষ্টা করি, এসব পড়ানোর মত কাজ ছেড়ে দিই।

কিন্তু এখন যেরকম আয় করতে পারি, তেমনটাকি আমি খুব সহজে অন্য কোথাও আয় করতে পারবো? মনে তো হয় না। আমি মাস্টার্সে যখন কাজ করতাম, আমার সাথে একজন কাজ করতে, যার পড়ালেখার ব্রেইন খুব এমেইজিং কিছু ছিল না। কিন্তু ল্যাবে কাজ করতে পারতো। এখন পিএইচডি করে অলরেডি এক বছর কমপ্লিট, আগামী দুই তিন বছরের মধ্যে পিএইচডি শেষ। কিন্তু আমি যে নিজের মাঝে ভীষণ অহংকার বোধ করি, আমি অনেক জটিল জিনিস পড়ে বুঝতে পারি, অনেক কমপ্লিকেটেড ব্যাপার জানি, এসব দিন দিন হাস্যকর লাগে। হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তা নীতি, ডি ব্রগলির কণা তরঙ্গ তত্ত্ব, ক্যাথোড টিউব কিভাবে কাজ করে, এইসব হাবিজাবি যে ক্লাসে বলি, কেউ কি এসব নিয়ে আগ্রহ পায়? এই যেমন কালকে ইলেকট্রোফোরেসিস কিভাবে হয়, পড়ানোর কথা, কিন্তু কারো কি এসব জানার ইচ্ছে আছে? কি দরকার আমার বই পড়ার। আমার সহকর্মীরা যেভাবে সেভাবে একটা স্লাইড বানিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, যেভাবে পারছে পড়াচ্ছে, আর আমি বোকার মত প্রতি সেমিস্টারেই স্লাইড আরো ভালো মত প্রিপেয়ার করার চেষ্টা করছি। ইদানীং মানে খুঁজে পাই না। কি লাভ বলে, কি লাভ পড়িয়ে?

পাশ করার পর রেডিমেড চাকরি দিতে পারতেছি না, এটা আমার কন্ট্রোলেও নাই। তবু খুব খারাপ লাগে। এবং যা শেখানোর চেষ্টা করছি, খুব কম স্টুডেন্ট ওই সেমিস্টারে ওসব মনে রাখতে পারে, আর কিছু সেমিস্টার পরে তো কিছুই আর মনে রাখতে পারে না। কি লাভ পড়িয়ে। আমি ইদানীং অপরাধবোধে ভুগি। এর আগের সেমিস্টারে একটা কথা বলছিলাম, আমি শিক্ষকের ভূমিকায় অভিনয় করছি, আর স্টুডেন্টরা স্টুডেন্টের ভূমিকায় অভিনয় করছে। আমি আসলে কিছুই শেখাতে পারছি না। কিন্তু আমি যদি রিজাইন করি, আমার জায়গায় কি অন্য কেউ আরো ভালো পড়াবে? হয়তো পড়াতেও পারে, আমি অন্যের জায়গা দখল করে রেখেছি। হয়তো আমার বদলে অন্য কেউ খুব ভালো পড়াতে পারতো।

জানি না। মনটা খারাপ লাগছে। নিজের কোন গবেষণা করা হচ্ছে না। আসলে কি এমন লাইফ আদৌ চেয়েছিলাম কিনা, সেটা নিয়েও সন্দিহান। আমার এখন ফিজিক্স টিজিক্স নিয়ে পড়তে ইচ্ছে করে। যে বিষয় নিয়ে আমার সবচেয়ে বেশি আগ্রহ ছিল। এখনও অনেক আগ্রহ পাই। এখনও আগ্রহ পাই এভুলোশনারি সাইন্স নিয়ে পড়াশোনা করার, কিভাবে কি হয়েছে, এসব নিয়ে জানতে খুব ইচ্ছে হয়। কিন্তু এসবের সময় কই? যদি চাকরি ছেড়ে দিই, তারপর বিভিন্ন বই লেখা শুরু করি এসব বিষয়ে, তাহলে কি আমি সুখী জীবন পাবো? জানি না। অনেক টাকা ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ায় অলরেডি একটা বন্দি বন্দি ফিলিং-এ আছি, কোন সঞ্চয়ও নেই, বই প্রাথমিক ভাবে ছাপাতেও তো ৩০-৪০ হাজার টাকা লাগবে, সেটার জন্যেও তো জবটা লাগবে। কিন্তু তারপরও কোনভাবে সুখী ফিল করা দরকার। জানি না। বিভিন্ন বই খুলে রাখছি, কিন্তু পড়তে একটুও ইচ্ছে হচ্ছে না। একটুও না। কিন্তু জবও ছাড়ার উপায় নেই। কেন যে এত ক্লান্ত লাগতেছে, জানি না।

০ টি +০/-০