![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ফেসবুকের কল্যাণে (কিংবা অকল্যাণে) এখন যোগাযোগ কেবল টেক্সট-এর মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকে। তবু আস্তে আস্তে অল্প অল্প কথা বলতে বলতে কিভাবে যেন একে অন্যের সত্যিই আত্মাবন্ধুতে পরিণত হয়েছি। এক ছাদের নীচে না থেকেও একজনের আত্মার খুব কাছাকাছি আসা যায় এখন। তারপরও কোথায় যেন ফাঁক থেকে যায়। হঠাৎ করে তুমি ৩১ ডিসেম্বর রাতে বলে বসলে, অনেক হয়েছে কথা, লেটস মিট। আসলেই। অনেক অনেক কথা হল। একটা মানুষ আরেকটা মানুষের সাথে না দেখা হয়ে আর কত দিন কথা বলা যায়। কত দিন? চার বছর? দিন গোণা শুরু করি নি, কবে লাস্ট দেখা হয়েছে, তাই জানার উপায় নেই। কিন্তু মনে রাখাটা ইমপর্টেন্ট কি? মনে হয় না। মাঝে তুমি নিজেই হঠাৎ বন্ধ করে দিয়েছিলে কথা, আমিও কেন জানি আর বলি নি। আবারো হঠাৎ একদিন কোত্থেকে বলে উঠলে, কল করি? খুব অবাক হলাম। বহুদিন পর ডিরেক্ট কথা হল, ভিডিও কলে তোমাকে দেখা হল। এতই কি কঠিন ছিল এমন কথা বলা।
পরে জানতে পারলাম, এর মাঝেই তুমি জড়িয়েছিলে নতুন সম্পর্কে। এখন আবার সেই সম্পর্কের একটা বিষাদ সময় চলছে। কিন্তু সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয়ে গেছে, তুমি আর আগের মত লেখতে পারছো না। ডিপ্রেসড ফিল করছো। আশেপাশের মানুষগুলো শত্রু মনে হচ্ছে। সেসময় হঠাৎ হয়তো আমার কথা মনে হল, তাই না? জানি না, সরাসরি এসব জিজ্ঞাসা করার সুযোগ হবে না হয়তো কখনও। কিন্তু বড় ব্যাপার হচ্ছে, তোমার সাথে বহুদিন পর কথা হল, দেখা হল (ভার্চুয়ালি হোক), এটাই গুরুত্বপূর্ণ। তারপর বোধহয় ২ তারিখে অবশেষে বহু কঠিন ব্যাপার, দেখা হওয়ার ব্যাপারটা ঘটলো। সেসব অলরেডি কবিতায় লেখে ফেলছি। কিন্তু এবার লেখা দরকার কয়দিন আগের হাঁটার ঘটনাটা নিয়ে। অদ্ভূত একটা দিন ছিল।
মনে আছে, তুমি বলছিলে একটা ঘটনার কথা, নিউমার্কেটে কেউ হাঁটছিলো কাউকে সাথে নিয়ে। হঠাৎ ছেলেটা বলে উঠলো, "আমার মনে হচ্ছে, আমি যেন বউ নিয়ে হাঁটছি, এমন লাগছে।" এমন কথার শেষে খুব দ্রুতই দুজনের বিয়ে হয়ে গিয়েছিল। এখানেই জীবনের গল্প যদিও শেষ হয় না। কারণ এমন হুটহাট বিয়েতে ভালো ফলাফল আসা সৌভাগ্যের ব্যাপার। আমার সেদিন হাঁটতে গিয়ে মনে হচ্ছিল, আমাদের অলরেডি বিয়ে হয়ে গিয়েছে, ব্যস্ততার কারণে আমাদের বের হওয়া উঠে না, অবশেষে কোন শনিবার বিকেলে হাঁটতে বের হলাম আমরা। আমি তোমার মত গল্প লেখতে পারলে ঘটনাটা অন্যভাবে লেখতাম। হয়তো শাহেদ আর অপ্রা নামে দুইটা ক্যারাক্টার থাকতো। অপ্রার বিয়ে হয়েছে প্রায় দুই বছর। কিভাবে যে বিয়েটা হয়ে গেল, সে নিজেও জানে না। বয়স হয়ে যাচ্ছিল, আর কয়েকটা ফেইলড রিলেশনশিপ থেকে বহু কষ্টে রিকভার করার পর মনে হল, ধুর, বিয়ে করেই ফেলি। শাহেদ বহুদিন ধরেই ভালোবেসে যাচ্ছিল। এমনকি অপ্রা এটাও বলেছিলো, শাহেদ, তোমাকে বোধহয় ভালোবাসতে পারবো না, তবুও কি বিয়ে করতে চাও? শাহেদ বোকা, বিশ্বাস করেছিল, একই সাথে থাকলে ঠিকই ভালোবেসে ফেলবে। অপ্রা বোধহয় ভালোবেসে ফেলেছিলোও, কিছুটা সময়। একই সাথে থাকার ব্যাপার অগ্রাহ্য করা যায় না। তবু শাহেদ বিয়ের পর ওয়েট করেছিলো, বোধহয় চার মাস পার হবার পর সে অপ্রার শরীরকে প্রথম স্পর্শ করেছিলো, অপ্রাও সাড়া দিতে দ্বিধা বোধ করে নি। তবুও সেরকম কোন নিয়মিত ব্যাপার ছিল না। বিয়ে হবার পর দুইটা পরিবারেও সম্পর্ক মোটামুটি ঠিক, তবে শাহেদ তার অফিসের কাছে বাসা নিয়ে থাকছে অপ্রাকে নিয়ে। সেজন্য পারিবারিক ঝামেলার ব্যাপারটাও তেমন নেই। অপ্রা সৃষ্টিশীল মানুষ, শাহেদ বলেছে, তুমি সময় নাও, যখন ভালো ফিল করবা, আবার সব সৃষ্টিশীল কাজ করার জন্য ঝাপিয়ে পড়বে। তাড়াহুড়োর কিছু নেই। কিছু কিছু খুব কাঠখোট্টা টাইপ এসা্ইনমেন্ট নিয়েছে অপ্রা, কাজ করেছে। তবে তার স্বপ্নের জায়গায় এখনও যেতে পারছে না। আর শাহেদ অফিস নিয়ে একটু বেশি বিজি থাকে। সেভাবে সময় হয় না। বিয়ের পর শাহেদের মনে হতে লাগলো, আগেই বরং চ্যাটিং-এই যেন অপ্রার সাথে কথা হত, আত্মার কথা হত। এখন যেন ঠিক সেভাবে কথা হয় না। দুই বছর হয়ে গেলেও শাহেদের মনে হতে লাগলো, আসলেই কি এত দিন পার হয়ে গেছে মাঝে।
আজকের প্ল্যান এলোমেলো ভাবে হাঁটা। অপ্রার আবার শ্বাসকষ্ট আছে। বালুতে কষ্ট হয়। অন্যদিকে শাহেদের বহু দিনের স্বভাব প্রচুর হাঁটার। হাঁটতে অনেক আনন্দ পায় শাহেদ। হাঁটতে হাঁটতে চারপাশে তাকায়, নিজের মনে অনেক কিছু ভাবতে পারে, হাঁটা অনেক প্রিয় শাহেদের। অপ্রারও ভালো লাগে, কিন্তু শরীরটা সায় দিতে চায় না। হাঁটতে লাগলো, এলোমেলো সব কথা। কিছু সময় শুধুই চুপ করে হেঁটে যাওয়া। অপ্রা ভাবছে, এভাবেই কি জীবন চলতে থাকবে, শাহেদকে পাগলের মত ভালো না বেসেও এভাবে একসাথে আর কতদিন থাকবে। আর শাহেদ? শাহেদ পাশে অপ্রা থাকার পরও স্বভাবমত একা হাঁটার মত করেই যেন হাঁটছে। সে কি ভালোবাসে এখনও অপ্রাকে? প্রশ্নটা খুব হাসির মনে হল শাহেদের কাছে, গত ৭-৮ বছর ধরে তো অপ্রাই একমাত্র নারী হয়ে আছে তার জীবনে। নতুন প্রেমে পড়লে যে তীব্রতা থাকে, সেটা এখন চাইলেও শাহেদ মনে করতে পারে না। হয়তো ভালোবাসা কমে গেছে, কিন্তু সবসময়ই সামর্থ্যের পুরোটাই ছিল, এখন তো সামর্থ্যটাই কমে গেছে। বয়স বাড়ছে তো। অপ্রা যে খুব সুখী না, শাহেদ বুঝতে পারে। কিন্তু অপ্রাকে কি অন্য কেউ আরো সুখী হতে পারতো? অপ্রাকে তো সেই সুযোগ শাহেদ সবসময়ই দিয়ে রেখেছে, যখনই চলে যেতে চাইবে, শাহেদ বাঁধা দিবে না। সেজন্য এখনো নতুন কাউকে পৃথিবীতে আনার কথা ভাবছে না শাহেদ, কারণ অপ্রা যদি চলেই যায়, শাহেদ তার সন্তানের কাছে তো অপরাধী হয়ে যাবে। শাহেদ যতটা সহজে ভেবেছে, অপ্রা ঠিক তার মত করেই ভালোবাসতে শিখবে, পারে নি অপ্রা। শাহেদকে অপেক্ষা করতে হবে হয়তো আরও। অপেক্ষা।
হাঁটতে হাঁটতে হাতিরঝিলের উপর ঝুলন্ট টাইপ প্লাটফর্মে আসলো অপ্রা। ওখানে সব তরুণ বয়সী ছেলেরা সেলফি তোলায় ব্যস্ততায়। মোটামুটি ভীড়ই। শাহেদ যেন ঠিক একেবারে শেষ প্রান্তে যাবার ব্যাপারে অস্বস্তি বোধ করছিলো। অপ্রা থোড়াই কেয়ার করে। একেবারে যেন ঠেলেঠুলে একদম প্রান্তে এসে দাঁড়ালো। যেভাবেই হোক, টাইমিংটা চমৎকার ছিল বেশ ওই মুহূর্তে। সূর্য ডুবি ডুবি করছে, হাতিরঝিলের ওয়াটার বাসগুলো এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে যাচ্ছে। খুব চমৎকার সময়। শাহেদ এসে বললো, মনে হচ্ছে যেন লঞ্চে এসে দাঁড়িয়েছি। অপ্রা হঠাৎ খুব ভালো ফিল করতে থাকলো। কিছুটা যেন পাগলামীও করতে লাগলে, রেলিং হাত দিয়ে ধরে পেছনের দিকে হেলান দিয়ে আকাশ দেখছিলো অপ্রা। আশেপাশের মানুষও যেন একটু অদ্ভূত চোখে তাকালো। নরমালি হয়তো তরুণ প্রেমিক প্রেমিকা বিভিন্ন রকম লোক দেখানো কাজ কারবার করে, কিন্তু অপ্রার ব্যাপারটা এমন ছিল না। যেন অপ্রা কেয়ার করে না। বিবাহিত দম্পতি বুঝে আস্তে আস্তে যেন সরে যাচ্ছিল আশেপাশের মানুষেরা। সন্ধ্যা নেমে যেন রাত নেমে আসলো। অপ্রা বারবার আফসোস করছিলো, কেন এতদিন সে এখানে আসলো। কত কাছে বাসার! কেন আসলাম না এতদিন। শাহেদ কেন যেন বুঝতে পারে, অপ্রার পাশে অপ্রার ভালোবাসার কেউ এ মুহূর্তে থাকলে অপ্রা খুব ভালো ফিল করতে পারতো। শাহেদের উপস্থিতি পারছে না। মন একটু খারাপ হয় শাহেদের। আসলে সব কিছু কি পারফেক্ট হয়। হয়তো এই মুহূর্তটায় অপ্রা ভালো ফিল করছে না, কিন্তু জীবন তো স্রেফ মুহূর্তের না। জীবন অনেক বড়। সন্ধ্যা হতে মশাও উড়ে উড়ে আসছিলো। অপ্রা হয়তো আরও কিছুক্ষণ থাকতে চাচ্ছিলো। কিন্তু শাহেদ যেন ঠেলে ঠেলে তাকে সেখান থেকে নিয়ে আসলো, রাত হচ্ছে, বাসায় যেতে হবে। হয়তো অপ্রার প্রিয় কেউ একদম চুপচাপ বসে থাকতো। আটটা, নয়টা, হয়তো দশটাও কাটিয়ে দিতে পারতো। শাহেদ জানে না। কিন্তু শাহেদ তো শাহেদের মতনই। অন্য কারো মত তো হতে পারবে না। আর তাদের তো সুযোগ ছিল, অপ্রাকে আপন করে পাবার, কিন্তু তারা কেন চলে গেল। শাহেদ কখনই অপ্রাকে ওসব বিষয় নিয়ে প্রেস করতে চায় না, কারণ অপ্রা ওই জীবন ছেড়ে আসতে চায়, আর এসব বারবার বলে মনে করানোর কি দরকার। শাহেদকে বলেছিলো অপ্রা, তার কোন উপন্যাসে হয়তো চরিত্রকে ভেঙেচুরে ঠিকই লিখে নিবে। শাহেদ জানতে চায় না। কিভাবে ভালোবাসতে হয়, খুব ভালো ধারণা নেই তার, কখনও ছিল না। ভালোবাসা শিখেছে ফ্যামিলি থেকে। বাবা কিভাবে ভালোবাসে, মা কিভাবে ভালোবাসে, ঠিক ওভাবেই যেন অপ্রাকে ভালোবাসতে শিখেছে। এখনও শিখছে শাহেদ। আস্তে আস্তে অপ্রা আর শাহেদ ফিরতে থাকে ঘরের পথে। অপ্রার আসলে ভালোই লাগতে থাকে তখন। জীবন হয়তো খুব খারাপ না। অপ্রা কি কখনও শাহেদকে ভালোবাসতে পারবে? হয়তো। হয়তো না। শাহেদ কি কেবল ভালোবেসেই এভাবে সুখী বোধ করতে পারবে? হয়তো পারবে না। আসলে জীবনে আগে থেকে কতটুকুই বা প্রেডিক্ট করা যায়।
নাহ। আমি ভালো লেখতে পারি না। লেখতে পারলে ভালো হত। তুমি হয়তো আমাকে ভালোবাসতে পারতে। যাক। নাই বা পারলে এখন। বন্ধু যে অন্তত হতে পেরেছি, এই সৌভাগ্যও ঠিক কতজনের হয়, এটাও খুব বড় প্রশ্ন। কয়জন তার ভালোবাসার মানুষের সাথে এভাবে বিকেলে কোন এক অনবদ্য হাঁটা হাঁটতে পারবে? খুব বেশি মানুষ না।
মস্তিষ্ক মনে রাখতে দেয় না। সব ভুলিয়ে দিতে চায়। কিছুদিন পর কিছু মেমোরির ফ্র্যাগমেন্ট ছাড়া আর কিছুই বেঁচে থাকবে না। তাই তো ছদ্মনামে এভাবে লিখে রাখা। আমি তোমাকে যদি ব্লগের লিংক দেই-ও, জানি পড়বে না। কোন ঝুঁকি নেই।
©somewhere in net ltd.