![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আজ দুইটা কেমিস্ট্রি ক্লাস নিতে হইছিলো। ইন্টার লেভেলে সব পোলাপাইন কেমিস্ট্রিকে এত ভয় পেয়ে আসে যে ভার্সিটি ওঠার পর সেই ভয়টা মনের মাঝে থেকেই যায়। আমারো ইন্টারের সময় কেমিস্ট্রি অত ভালো লাগতো না, কিন্তু ভার্সিটিতে পড়তে গিয়ে আস্তে আস্তে ভালো লাগছে।
বিভিন্ন ক্লাসে অনেক আগ্রহ নিয়ে অনেক কিছু বলার চেষ্টা করি। কিন্তু কয়জনের মাথায় কতটুকু ঢুকে, জানি না। আজ যেমন ইলেকট্রন এফিনিটি নিয়ে কথা বলছিলাম, দেখি যে নিজেই কনফিউজড হয়ে গেছি। ইলেকট্রন এফিনিটির ব্যাপারটা এমন, একটা পরমাণু ইলেকট্রন গ্রহণ করলে যে শক্তি বাইরে বেরিয়ে আসে, সেটাকে ওই পরমাণুর ইলেকট্রন এফিনিটি বলে। ফ্লুরিন, ক্লোরিন, অক্সিজেন, এসব পরমাণুতে ইজিলি ইলেকট্রন চলে আসতে পারে, তাই ওদের কক্ষপথে ইলেকট্রন রাখতে কম এনার্জি লাগে। এর ফলে বাকি এনার্জি বেরিয়ে যায়, অর্থাৎ ইলেকট্রন এফিনিটি বেশি হয়। কিন্তু কিছু কিছু ব্যাপারে ঘাপলা আছে। সেজন্য আজ বললাম সবাইকে ওই প্রশ্নের জন্য বোনাস নাম্বার দিয়ে দিব। একটা ঘাপলা হল যেমন নাইট্রোজেন। যদিও নাইট্রোজেন অনেক ইলেকট্রোনেগেটিভ, কিন্তু ২পি অরবিটালে তিনটা একই স্পিনের ইলেকট্রন থাকায় নতুন কোন ইলেকট্রন সহজে ঢুকতে পারে না। এজন্য নাইট্রোজেনের ইলেকট্রন এফিনিটি কম। এসব ব্যাপারে কত যে ঘাপলা আছে, ভালো মত নিজেরও আরো জানতে হবে।
যাই হোক অরবিটালের কথা বলছিলাম। তখন বাংলাদেশের লোকাল বাসের কথা তুললাম বোঝানোর জন্য। বাসে যেমন দুইটা দুইটা সিট থাকে, আর ফাঁকা বাসে সবাই একটা একটা করে সামনের দিকের সিটে বসে যায়। দ্বিতীয় সিটে বসতে অন্য কারো কেমন কষ্ট হয়, সেটা বলে একটু বোঝানোর চেষ্টা করলাম, কোন রকমে এক পা সিটে রেখে আরেক পা বাইরে রেখে খুব কষ্টে বসতে হয়, তারপর আস্তে আস্তে ঠেলতে থাকে ভেতরের মানুষকে, এসব কথায় পোলাপাইন হাসলো। ঠিক সেরকম একই অরবিটালে ইলেকট্রনের দুইটা সিট আছে, একটা হল জানালার কাছের সিট, ওখানে মানুষ আরাম করে বসতে পারে, কিন্তু বাইরের দিকের সিটে বসতে একটু কষ্ট হয়। এখন যদি সামনের দিকে ফাঁকা সিট দেখে মানুষ, তখন দুই সিটে একজন একজন করে বসে, কিন্তু যদি আবার বেশি ভেতরে যেতে হয়, তখন সামনের দিকেই বাইরের দিকের সিটটায় কষ্ট করে বসে। ইলেকট্রনের ক্ষেত্রেও এমনটিই ঘটে। বেশি উপরের স্তরে যদি যেতে হয়, তখন নিচের স্তরে বিপরীত স্পিনেই ইলেকট্রন বেচারা কষ্ট করে ঢুকে।
আজ ত্রিমাত্রিক ভাবে বিভিন্ন অরবিটালের শেইপের কনসেপ্ট বোঝানোর চেষ্টা করছিলাম, কেন ডাম্বেল শেইপড, বা বিভিন্ন রকমের শেইপ। মনে হচ্ছিল, যদি ত্রিমাত্রিক ভাবে বিভিন্ন হলোগ্রাফিক ফিগার চলে আসতো, বোঝাতে অনেক সুবিধা হত। একেবারে স্রোডিনজারের একুয়েশন দিয়ে আমি নিজেও আসলে বুঝি না, পোলাপাইনরে কি বোঝাবো। বিভিন্ন কথা বলতে সময় শেষ হয়ে যায়। তিন ক্লাসে মাত্র দেড় স্লাইড এগিয়েছি। এবারও পারবো না সিলেবাস শেষ করতে।
আরেকটা ক্লাসে এনট্রপি, গিবস ফ্রি এনার্জি, এনথালপি, এসব বোঝানোর চেষ্টা করছিলাম। পোলাপাইনও দেখলাম খুব পুশ করতেছে বোঝার জন্য। এনট্রপি জিনিসটা বোঝানো টাফ। আমি যেভাবে ব্যাখ্যা করি, এনার্জির যেই পার্ট এত বেশি ডিজঅর্ডারড হয়ে গেছে যে সেই এনার্জিকে কোন ওয়ার্কে কনভার্ট করা যাবে না, তখন সেই এনার্জির পরিমাণকে এনট্রপি বলে। এনট্রপি মানে এনার্জির বিশৃঙ্খলতা। এভাবে বোঝানোর ট্রাই করি। কিন্তু এনট্রপি সম্পর্কে নিজেরও আসলে অনেক পড়াশোনা করা দরকার, মনে হয় নিজেও একেবারে আত্মা দিয়ে বুঝি না।
ওখানেও নন স্পনটেনাস রিএকশনের সাথে স্পনটেনাস রিএকশনের কাপলিং এর কথা বলছিলাম। ক্লাসে একটা মেয়ে আছে, সে এবার প্রথম থেকেই খুব সাহসী হয়ে আমার সাথে কনভার্সেশন করতেছে। ব্যাপারটা একটু আনইজি ব্যাপার। ক্লাস থেকে বেরিয়ে নিশ্চিত বলে, দেখছিস, স্যারকে কিভাবে নাচাইতেছি আমার অরা দিয়ে। স্লাইড শেষ করলেই, স্যার, এখান থেকে কিভাবে প্রশ্ন আসবে। স্যার এইটার মানে কি। যাহোক, বলতেছিলাম, গ্লুকোজ আর ফ্রুক্টোজ নরমালি বন্ড করে না, কিন্তু এটিপি থাকলে করে। কিভাবে? কারণ এটিপি এসে গ্লুকোজকে গ্লুকোজ-১-ফসফেট বানায়। তখন বেচারা ফসফেটের ভার সহ্য করতে না পেরে ফ্রুক্টোজের সাথে বন্ড করে। যেমন, একটা সুন্দরী মেয়েকে দেখে একটা ছেলের খুব পছন্দ হইছে, কিন্তু বেচারাটাকে সুন্দরী মেয়েটা পাত্তাই দেয় না। কিন্তু ছেলেটা পড়াশোনায় ভালো। পরে যখন পরীক্ষায় খারাপ করে, মেয়েটা নিজেই হয়তো ছেলেটাকে এপ্রোচ করে একটু হেল্পের জন্য। এভাবে নতুন বন্ড ক্রিয়েট হয়। পরে ওই মেয়ে বলছিলো, ঠিক বলছেন স্যার, এমনই হয়।
মজাই লাগে। জানি না পোলাপাইন কতটা শিখে। কিন্তু এ্ই কথাগুলোই মজার মজার স্মৃতি তৈরি করে। জানি না ওরা মনে রাখে কিনা। তবে কেউ কেউ মনে রাখে। আজ এক স্টুডেন্ট বলছিলো, কেন ইলেকট্রনগুলো ঘুরতে থাকে, কেন ইলেকট্রন গতিশীল হল। বললাম, জানি না। দেখি, জানার চেষ্টা করতে হবে। এভাবেই তো সময় কাটে। খুব খারাপ না।
©somewhere in net ltd.