নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জুলকারনাইন নাঈম

জুলকারনাইন নাঈম › বিস্তারিত পোস্টঃ

নারীদের বেতনসহ মাতৃত্বকালীন ছুটি এবং কিছু না বলতে পারা কথা

২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১১:৩৮

আমার এক সহকর্মী শুনলাম "এক্সপেক্টিং"। মানে লম্বা একটা ছুটি নিতে যাচ্ছেন সামনেই, মাতৃত্বকালীন ছুটি। চার মাস সময় ধরে উনি বেতনসহ ছুটিতে থাকবেন। শুনে মনের মাঝে কেমন যেন হিংসা হিংসা ফিলিং বোধ করা শুরু করলাম। বেশ কয় বছর চাকরি করতে করতে প্রায়ই খুব অবসাদগ্রস্ত লাগে, তাও রোবটের মত কাজ করে যেতে হয়। তখন মনে হয়, ইশ এরকম যদি বেতনসহ চার মাসের ছুটি পেতাম, কতই না ভালো হত। যদি মোটা দাগে ভাবতে চাই, সন্তান জন্ম দান করা নারীর ব্যক্তিগত ব্যাপার। উনি তার ব্যক্তিগত কাজের জন্য চার মাসের ছুটি পাচ্ছেন বেতন সহকারে। ওনারা যদি এমন ছুটি পেতে পারেন ব্যক্তিগত কারণে, একজন পুরুষ কেন পাবে না। কাউকে যদি ব্যক্তিগত কারণে এভাবে চারমাসের বেতন সহকারে ছুটি দেওয়া, তবে অন্য কেউও ব্যক্তিগত কারণে এরকম চারমাসের বেতনসহ ছুটি ডিজার্ভ করে।

জানি, অনেকেই বলবে, নারী কি তাহলে সন্তান নেবে না? নারীকে কি তাহলে এমন ছুটি দেওয়া যাবে না? না, এটা মোটেও বলছি না। নারীদের সন্তান জন্মদানের সময়টায় অনেক কষ্ট করতে হয়। এমনকি মাত্র চার মাসের ছুটিকেও আমার খুব নির্মম ব্যাপার বলে মনে হয়। টেকনিকালি বলা হয়, বাচ্চার জন্মের দুই মাস আগে থেকে শুরু করে জন্মের দুই মাস পর্যন্ত এই ছুটির ব্যাপ্তি হয়। কিন্তু একটা দুই মাসের বাচ্চাকে বাসায় রেখে ৯-৫ টার অফিস করার কি আদৌ কোন মানে হয়। আর ঢাকা শহরের যে অবস্থা, ৯ টা মানে বের হতে হয় সাড়ে ৭ টায় বা ৮ টায়, আর সন্ধ্যায় ফিরতে ফিরতে সাড়ে ছয়টা থেকে সাতটা বেজেই যায়। এত লম্বা একটা সময় দুধের একটা শিশুকে বাসায় রেখে আসবে।

অনেকে বলতে পারেন, বাচ্চাকেও সাথে নিয়ে আসবে, বাচ্চাকে পাশে একটা পালঙ্কে রাখবে, প্রয়োজনে একটা নির্দিষ্ট কক্ষে নিয়ে দুধ খাওয়াবে। আমার পুরো ব্যাপারটাই অদ্ভূত লাগে ভাবতে গেলে। না হয় বাচ্চাকে পালা, না হয় অফিসের কাজ। আমার এক বন্ধুর মা কর্মজীবী ছিল, বেচারাকে বাসায় একা রেখে চলে যেত, সে বিছানায় শুয়ে শুয়ে কাঁদতো মা চাকরিতে গেছে বলে। অনেক বুয়া বা কাজের লোকের কাছে রেখে আসে। অনেক পালাক্রমে দাদী বা নানীর কাছে রেখে আসে। এরকম কত রকম ভাবে যে ব্যালেন্স করার ট্রাই করে, কিন্তু কিছুই হয় না। সত্যটা হচ্ছে, এভাবে ছোট বাচ্চাকে রেখে চাকরি করাটা শিশুটির জন্য খুবই অমানবিক ব্যাপার। এজন্যই কিন্তু ইসলামে বিয়ের সময় এটা বলা হয়, পুরুষকে নারীর সকল ভরণপোষণ দিতে হবে, কারণ নারীর শিশু জন্মদান ও ছোট্ট শিশুকে বড় করে তোলবার কাজ খুবই ইম্পর্টেন্ট, এবং এ সময় বাবার আর্থিক সাপোর্টটা খুব জরুরী, কারণ মাকে যদি ওই সময় আবার আয়ও করতে হয়, তবে মাতৃত্বের দায়িত্ব পালন করা খুবই কঠিন হয়ে পড়ে।

মানুষ যতই বলুক, যতই মাতৃত্বকালীন ছুটিই দিক না কেন, দিন দিন উন্নত বিশ্বের মতনই ব্যাপারটা ঘটবে। নারীরা সন্তান নিবে না। কারণ এভাবে সন্তান নিয়ে, বাসায় ছোট সন্তান রেখে আবার জব সামলানো কোন মুখের কথা না। তখন আস্তে আস্তে নারীরা এই ডিসিশনই নিতে শুরু করে যে, সন্তানই নিবে না। আমার এক শিক্ষকের এরকম পিএইচডির টাইমে পেটে বাচ্চা এসেছিলো, উনি তখন এবোরশন করান, এবং পরবর্তীতে কোন কমপ্লিকেশনের কারণে ওনার আর কোন বেবি হয় নি। ব্যাপারটা জানতে পেরে আমার খুব কষ্ট লাগছিলো। একটা সন্তানের মৃত্যু হল ক্যারিয়ারের কারণে। পাজলটা আমি কিছুতেই বুঝি উঠি না। নারীরা কি এরকম ক্যারিয়ার ভিত্তিক কারণে আসলেই একটা মানুষকে হত্যা করার অধিকার রাখে স্রেফ পেটে ধারণ করার কারণে। জানি না। ইসলামের কনসেপ্টগুলো আধুনিক যুগে বাতিল মাল হিসেবে ছুঁড়ে ফেলা হচ্ছে, কিন্তু এই যে নতুন যুগে প্রবেশ করছি, সেটা কতটুকু মানব সমাজের জন্য ভালো, এটা আমি জানি না। মা-বিহীন সন্তানের বড় হওয়ার কথা ভেবে আমার অনেক কষ্ট হয়।

আমি এখনও যুক্তি মেলাতে পারি না। একটা ব্যাপার হল, পুরুষদের মাতৃত্বের মত কোন ব্যাপার নেই যে তারা ওরকম ছুটি ডিজার্ভ করে। আবার অন্যদিকে নারীদের মাতৃত্বের ব্যাপার থাকলেও তারা যেহেতু বেতনসহ ছুটি পাচ্ছে ব্যক্তিগত কারণে, এক্ষেত্রে ছেলে চাকুরিজীবীরা এরকম বেতনসহ ছুটির স্কোপ হারাচ্ছে। আমার আম্মুকে জিজ্ঞাসা করছিলাম, কিভাবে নারীরা মাতৃত্বের কষ্ট সহ্য করে। আম্মু বলতেছিলো, আসলে সন্তান আসবে ভেবে মনের মাঝে আনন্দও আসে, তখন ওই কষ্ট সহ্য করার জন্য নারীর মন আস্তে আস্তে রেডি হয়। ঠেলা দিয়ে বলা যায়, তাহলে পুরুষরাও গর্ভধারণ করে চার মাসের ছুটি নিক, কিন্তু এসব তো সম্ভব না। কিন্তু যখন দেখি নারী সহকর্মী বেতনসহ ছুটি পাচ্ছে, কিন্তু আমি ওরকম কোন সুযোগ পাচ্ছি না, একটু তো খারাপ লাগেই।

আজই ব্ল্যাক মিররের থার্ড সিজনের ফাইনাল পর্বটা দেখছিলাম। নারী ডিটেকটিভ বলে দৃঢ়কণ্ঠে, "আমি কখনই বাচ্চা নিব না।" দিন দিন এমনই হতে থাকবে। মাঝের ট্রানজিশন পিরিয়ডটাতেই এই মাতৃত্বকালীন ছুটি নিয়ে কথা বলবে। একটা সময় হয়তো বাচ্চারা ল্যাবেই জন্ম নিবে, ডে-কেয়ারেই বড় হবে, এভাবে মা-বাবার সাথে তেমন কানেকশন থাকবে না, বন্ধু বান্ধবের মধ্যেই আশ্রয় খুঁজে নিবে। বাচ্চাদের মধ্যে ইমপ্যাথি কমবে, পথভ্রষ্ট হবে, ড্রাগ এডিক্টের সংখ্যা বাড়বে। এরকম চলতেই থাকবে। জানি না আসলে। এই ব্যাপারগুলো অনেক ব্যাপক। আপাতত যদি "মানসিক অবসাদ জনিত বেতন সহ ছুটি" বলে কিছু পুরুষদের জন্য থাকতো, বোধহয় নারীদের এই "মাতৃত্বকালীন" ছুটি নিয়ে এত কথা বলতাম না। এছাড়া বিদেশে অলরেডি "পিতৃত্বকালীন ছুটি" নিয়ে কথা উঠেছে, অনেক জায়গায় দেওয়াও হচ্ছে অল্প স্বল্প। ব্যাপারগুলো নিয়ে সমাজবিজ্ঞানীদের আরও গভীর ভাবে ভাবা দরকার, তথাকথিন "নারী-পুরুষ সমানাধিকার" টাইপ ক্লিশে কথা না বলে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.