| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বিতর্ক যে শুরু হবে সে ব্যাপারে আমি অনেকটাই নিশ্চিত ছিলাম। সময়টা নিয়ে কিছুটা অনিশ্চিত ছিলাম। বিতর্কটা শুধু শুরু করলেই তো হবে না, বিতর্কটাকে লাইম লাইটেও রাখতে হবে। গত কিছুদিনে ঘটে যাওয়া উপর্যুপরি বেশ কিছু ঘটনার প্রত্যেকটিই বেশ কিছুদিন ধরে শিরোনামে থেকেছে। এমন সময় বিবৃতিটা আসলে খুব আলোড়ন তুলতো না। একারণেই বোধ হয় এই দেরী। তবে স্বস্তির বিষয় বেশ কিছুটা দেরীতে শুরু হলেও অবশেষে শুরু হল। বিতর্কের সুত্রপাত শুরু হল একটি বিবৃতির মাধ্যমে। এখন আপ্রাণ চেষ্টা থাকবে যতটা সম্ভব বেশীদিন বিতর্কটা যতদিন শিরোনামে রাখা যায়।
সুখকর হোক কিংবা ট্র্যাজিক হোক, হেফাজত এপিসোড সম্ভবতঃ শেষ। বাবুনাগরী কে নিয়ে কিছু মেলোড্রামা হয়তো এখনও বাকী আছে। সফি সাহেবও জড়িয়ে পড়বেন কিনা ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। হলে নিঃসন্দেহে কিছুদিনের জন্য শিরোনাম ছিনতাই করবেন। তবে ‘রানা প্লাজা’ কে এখন আর শিরোনাম করে পোষাবে না, পাঠকের কাছে অনেকটাই একঘেয়ে হয়ে গেছে। অসুস্থ আর পঙ্গু হয়ে যাওয়া গার্মেন্টস কর্মীদের ঘ্যানঘ্যানে গল্প যদি ছাপতেই হয়, ভেতরের কোন পাতায় ছাপলেই হবে। বাকী থাকে বিরোধী দল। নতুন কিছু না করতে পারলে সে গুড়েও বালি।
‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ নিয়ে আন্দোলনের ও বেশ লেজে গোবরে অবস্থা। নেতারা প্রায় সবাই জেলে, কর্মীদের সংখ্যাও আশংকাজনক ভাবে কম। তার ওপর হরতাল ডাকলেই নতুন করে আরও একরাশ গ্রেফতার হচ্ছে। তাই এখন হুমকি ধামকি চলছে। ১/১১ এর মত হয় কি না তার লক্ষণ খুজতেই সবাই ব্যস্ত। উদ্বেগ নিয়ে তাকিয়ে আছে বিদেশী কুটনীতিকদের কথা শোনার জন্য। কার দিকে একটু বেশী সহানুভূতি দেখাচ্ছে? এখনও যেহেতু দুইকুল রক্ষা করেই বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে। তাই ধরে নেয়া যায় এই ব্যাপারটা লাইম লাইটে আসতে আরও কিছু সময় লাগবে। সম্পাদক সাহেবরা ঠিক করলেন বিবৃতিটা দেয়ার তাই এটাই মোক্ষম সময়।
যদিও বেশ পুরনো আর একঘেয়ে বিতর্ক। তারপরও শুরু হতে যাচ্ছে, বিষয় ‘বাক স্বাধীনতা’। এর আওতায় কি পরে? কতটুকু পর্যন্ত ‘বাক স্বাধীনতা’র গণ্ডি? বাক স্বাধীনতার নামে মিথ্যে বলা, উস্কানি এসব দেয়া যাবে কি না? যদি দেয়া হয় তার কারণে পত্রিকা বন্ধ করা উচিৎ কি না? সম্পাদককে গ্রেফতার করা যায় কিনা?
পত্রিকা আর টক শো তে তো শুরু হবেই ব্লগ আর ফেসবুক ও পিছিয়ে নেই। ব্লগ আর ফেসবুকে পক্ষ বিপক্ষ তৈরি হয়ে গেছে। লেখালেখি চলছে। যেহেতু এখানে কোন ব্যকরন নেই তাই যুক্তির সঙ্গে চলছে গালিগালাজ। তবে ‘টক শো’র ব্যাপার আলাদা। এই ব্যাপারটি যেহেতু সাংবাদিকদের হাতে তাই ওখানে বিষয়টা অন্য মাত্রা পাবে। এবং যথারীতি সেই পথেই এগোচ্ছে বিতর্ক। ‘সম্পাদক’ কে আটক করা উচিৎ কি না। সঙ্গে আরও কিছু বিতর্ক ডাল পালা ছড়াচ্ছে। ‘সংবাদ পত্রে’ যা খুশী তাই ছাপার অধিকার আছে কি না। কিংবা ‘মিথ্যা’ কিংবা ‘উস্কানিমুলক’ কোন লেখা প্রকাশ করা উচিৎ কি না। কেন যেন মনে হচ্ছে সরকার নিজেও চাইছে, এই নিয়ে বিতর্ক চলুক। শিরোনামে থাকুক এই বিষয়টা। ‘বিরোধী দল’ যেন সরাসরি শিরোনামে না আসে।
কিছু ব্যাপার বিতর্কে না এলেও, আসি আসি করছে তা হচ্ছে ফেসবুক, ব্লগ, ইউটিউব এসবেও নজরদারী করা উচিৎ কি না। কিংবা করলে তার কারণে সরকারকে অসহিষ্ণু ভাবা হবে কি না। ইতিহাস কি বলে? এমন বাঁধা নিষেধ আরোপ সত্যিকারের কোন উপকার এনে দেয় কি না। তার চেয়েও বড় প্রশ্ন আদৌ করা সম্ভব কি না। সমাজতান্ত্রিক দেশ গুলো চেষ্টা করেছিল কিংবা এখনও চীনে মাঝে মাঝেই করা হয়। পরিণতি কি খুব সুখকর?
আসলে যেসব কারণ দেখানো হচ্ছে, বিশেষ করে ‘উস্কানি’ তা হয়তো সম্ভব। তবে পত্রিকার চেয়েও মারাত্মক হতে পারে ‘রটনা’। ‘রামু’ ঘটনা কিংবা সাইদীর ‘চন্দ্রাভিযান’ পরবর্তী সহিংসতা ঘটতে সময় লাগে নি। কোন পত্রিকাও কাজটা করে নি। নিষিদ্ধ ঘোষিত পত্রিকাটি কিছু রটনা ছেপেছে, ব্যক্তিগত ভাবে অনেককেই ‘নাস্তিক’ উপাধি দিয়েছে, মিথ্যাচার কিংবা উস্কানি দিয়েছে তবে হেফাজতের উত্থানের পেছনে সবচেয়ে ভালো কাজ করেছে ‘রটনা’ ফর্মুলা। ‘ব্লগ কি’ কিংবা ‘ব্লগার কি’ জানবার প্রয়োজনও কেউ বোধ করেনি। একটি রটনা আর সবাই দলে দলে রওয়ানা হয়েছে। রটনার সবচেয়ে উপকারী অংশ হচ্ছে, এসব ঘটনা যারা ঘটায় তাঁদের কখনই কিছু হয় না। বিশেষ করে রটনা গুলো কে রটানো শুরু করেছে তাঁকে কখনই খুঁজে পাওয়া যায় না।
তাই হেফাজতের তাণ্ডবে কেবল এই পত্রিকার মিথ্যা রিপোর্ট তা বোধহয় না। কিছুটা হতে পারে তবে এই পত্রিকা সেসব না ছাপালেও তারা সহিংসতা করত। আসলে এই সহিংসতা তো ছিল প্রিপ্ল্যানড আর কিভাবে এদেরকে ‘ওয়াজ মাহফিল’ এর কথা বলে আনা হয়েছে তা তো এখন সবারই জানা। বাবুনাগরীর বক্তব্যে হয়তো আরও কিছু তথ্য বেরোবে।
আর মিথ্যা রিপোর্ট যদি কারণ হয় তবে বিটিভির মহাপরিচালককে তো প্রতিদিন গ্রেফতার করা উচিৎ। প্রতি হরতালের পরেই তো দেখানো হয় ‘হরতাল সফল হয় নি’। আর এই মিথ্যাচার কি তাঁরা নতুন করছেন? গত প্রায় ত্রিশ বছর ধরে সরকারের শিখিয়ে দেয়া মিথ্যাচার নিষ্ঠার সঙ্গেই করছেন। শুধু কি তাই, তাঁদের রিপোর্টিং এর দক্ষতা এতোটাই সুন্দর যে দেশের খবর জানবার জন্য আজকাল আর কেউই সরকারী টিভি কিংবা রেডিও কোনটারই দ্বারস্থ হন না।
ঠিক কি কারণে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে, বোধগম্য না। ব্যক্তিগত আক্রোশই বেশী বিশ্বাসযোগ্য কারণ মনে হচ্ছে। সম্প্রতি যে পনের জন সম্পাদক বিবৃতি দিলেন। সঙ্গে বোঝানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছেন তাঁদের এই বিবৃতি সেই বিতর্কিত সম্পাদকের কর্মকাণ্ডের প্রতি সমর্থনের জন্য না। তাঁরা সরকারের এই আক্রোশ নীতির প্রতিবাদ করছেন। তাঁদের কোথায় যুক্তি হয়তো আছে, তবে এটাও ঠিক তাঁরা বাস্তবসম্মত কোন সমাধানও দিতে পারবেন না। কারণ এর সমাধান তাঁরা নিজেরাও চান না।
ফলে মূল সমস্যা কিন্তু থেকেই যাচ্ছে। বিভিন্ন মিডিয়ায় ‘মিথ্যাচার’ বন্ধের দ্বায়িত্ব কে নেবে? বিভিন্ন পেশাদারী সমাজের মত পুরো সাংবাদিক সমাজও দুই শিবিরে বিভক্ত। ফলে এক পক্ষ অন্যায় করলেও অন্য পক্ষের কাছে হেরে যাওয়ার ভয়ে তাঁরা অন্যায়ের পক্ষেই সাফাই গান। তাই পেশাজীবি কিংবা সাংবাদিক সমাজ একমত হয়ে এই ‘মিথ্যাচার’এর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিতে পারবে না বা নেবে না। এমনটা কিছু করতে গেলেই বলা হবে এসব বিরোধী শিবিরের ‘ষড়যন্ত্র’। তাই এমন কিছু আশা করা নিরর্থক। আসলে দুই পক্ষ একটি বিষয়ে একমত, কেউ ই চায় না জবাবদিহিতা ব্যাপারটা থাকুক। কিংবা থাকলে থাকুক শুধুই কাগজে কলমে। আর সরকার কিছু করলে তার জন্য আছে বহুল ব্যবহৃত একটা অভিযোগ-- ‘বাক স্বাধীনতা’ য় হস্তক্ষেপ।
©somewhere in net ltd.