নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অেচনা পথীক পলাশ

অেচনা পথীক পলাশ › বিস্তারিত পোস্টঃ

সাঈদীকে নিয়ে ৩ জনের শেষ, বিচার চলছে ৬ জনের

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৮:৪৬

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের লক্ষ্যে ২০১০ সালের ২৫ মার্চ গঠিত হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। বিচার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে গত বছরের ২২ মার্চ গঠিত হয় দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল।



গঠনের পর প্রায় ৩ বছরের কাছাকাছি সময়ে এসে ৩ অভিযুক্তের বিরুদ্ধে বিচারিক প্রক্রিয়া শেষ করেছেন ট্রাইব্যুনাল। তাদের মধ্যে মানবতাবিরোধী অপরাধের ২ মামলার রায় ঘোষিত হয়েছে আর তৃতীয় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে রায় ঘোষিত হতে যাচ্ছে বৃহস্পতিবার।



জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলার এ রায় দেওয়া হচ্ছে। এর আগে ঘোষিত দু’টি মামলার রায়ে পলাতক জামায়াতের সাবেক রোকন (সদস্য) আবুল কালাম আজাদ বাচ্চু রাজাকারকে ফাঁসি ও জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে।



তবে সাঈদীর মামলার মধ্য দিয়ে প্রথম ট্রাইব্যুনালে প্রথম কোনো মামলার রায় ঘোষিত হবে। সাঈদীর মামলাটি ট্রাইব্যুনাল-১ এর ১ নম্বর মামলা।



অন্য দুই মামলার রায় ঘোষিত হয়েছে দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনালে। এর মধ্যে ফাঁসির আদেশ দিয়ে ২১ জানুয়ারি বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে আর যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দিয়ে ৫ ফেব্রুয়ারি কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে রায় দিয়েছেন ওই ট্রাইব্যুনাল।



বিচার চলছে আরও ৬ জনের

দুই ট্রাইব্যুনালে বিচার চলছে বিএনপি-জামায়াতের আরও ৬ নেতার। তাদের মধ্যে শেষ পর্যায়ে রয়েছে ৫ ধরনের ৬১ অভিযোগে অভিযুক্ত জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমের মামলার বিচারিক প্রক্রিয়া। মামলার শেষ ধাপে গোলাম আযমের বিরুদ্ধে যুক্তিতর্ক (আর্গুমেন্ট) উপস্থাপন করছেন রাষ্ট্রপক্ষ। আগামী রোববার ৩ মার্চ ৯ম দিনের মতো যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করবেন তারা। এরপর আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করলে আইন অনুসারে মামলার রায়ের তারিখ ঘোষণা করবেন ট্রাইব্যুনাল-১।



ট্রাইব্যুনাল-১ এ জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে। এ পর্যন্ত দু’জন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন এবং আগামী ৬ মার্চ ২য় সাক্ষীর জেরার দিন ধার্য রয়েছে। নিজামীর বিরুদ্ধে গত বছরের ২৮ মে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, লুট, ধর্ষণ, উস্কানি ও সহায়তা, পরিকল্পনা ও ষড়যন্ত্র এবং বুদ্ধিজীবী হত্যাসহ মোট ১৬টি ঘটনায় অভিযোগ এনে বিচার চলছে।



একই ট্রাইব্যুনালে বিচারের মুখোমুখি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের ২১তম সাক্ষী সাক্ষ্য দেবেন আগামী সোমবার ৪ মার্চ। গত বছরের ৪ এপ্রিল সাকার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল। এতে তার বিরুদ্ধে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় ২৩টি মানবতাবিরোধী অপরাধের উল্লেখ করা হয়। এসবের মধ্যে রয়েছে গণহত্যা, হত্যা, ধর্ষণ, অপহরণ করে গুডস হিলে নির্যাতন, দেশান্তরে বাধ্য করা, অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন অপরাধ।



অন্য ৩ অভিযুক্ত জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামান ও বিএনপির সাবেক নেতা সাবেক মন্ত্রী আব্দুল আলীমের বিচার চলছে দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনালে। তাদের মধ্যে কামারুজ্জামানের মামলা সবচেয়ে এগিয়ে।



মুজাহিদের বিরুদ্ধে ১৩ জন ও আলীমের বিরুদ্ধে ১১জন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন এ পর্যন্ত। গত বছরের ২১ জুন সুনির্দিষ্ট ৭ ধরনের ৩৪টি অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন মুজাহিদ, যেগুলোর মধ্যে রয়েছে, ঢাকা ও ফরিদপুরে শহীদ সাংবাদিক সিরাজ উদ্দিন হোসেনসহ বুদ্ধিজীবী হত্যা, সাধারণ মানুষ হত্যা, গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও দেশত্যাগে বাধ্য করা ইত্যাদি। মুজাহিদ একক ও দলবদ্ধভাবে সরাসরি জড়িত থেকে ও নেতৃত্ব দিয়ে কিংবা সহযোগিতা ও নির্দেশ দানের মাধ্যমে এসব ঘটনা ঘটান বলে অভিযোগে বলা হয়েছে। অন্যদিকে গত বছরের ১১ জুন ৭ ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধের মোট ১৭টি অভিযোগে আব্দুল আলীমকে অভিযুক্ত করেন ট্রাইব্যুনাল। তার বিরুদ্ধে ১২তম সাক্ষী সাক্ষ্যগ্রহণ দেবেন আগামী ১০ মার্চ।



পুনর্বিচারের আবেদনে দীর্ঘসূত্রতার কৌশল আসামিপক্ষের

আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন বিশেষজ্ঞ বেলজিয়ামের ব্রাসেলস প্রবাসী বাংলাদেশি আহমেদ জিয়াউদ্দিনের সঙ্গে ট্রাইব্যুনাল-১ এর পদত্যাগী চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হকের স্কাইপি কথোপকথনের সূত্র ধরে ৫টি মামলার পুনর্বিচারের আবেদন জানিয়েছিলেন আসামিপক্ষ। এ আবেদন ও তার শুনানির মধ্য দিয়ে বিচারিক প্রক্রিয়া বিলম্ব ও দীর্ঘসূত্রতা তৈরির চেষ্টা করেন তারা- এ অভিযোগ ওঠে।



ওই স্কাইপি কথোপকথনের সূত্র ধরে গত বছরের ৬ ডিসেম্বর মামলার সমস্ত বিচারিক প্রক্রিয়া শেষ হয়ে যাওয়ার পর ট্রাইব্যুনাল-১ এ ২৩ ডিসেম্বর সাঈদীর মামলাটির পুনর্বিচারের আবেদন জানান প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক। এর পর একে একে ট্রাইব্যুনাল-১ এ বিচারাধীন গোলাম আযম ও মতিউর রহমান নিজামী এবং ট্রাইব্যুনাল-২ এ জামায়াতের মোহাম্মদ কামারুজ্জামান ও আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে মামলা ৪টিরও পুনরায় শুরু করার আবেদন জানানো হয়।



শুনানি শেষে গত ৩ ও ৭ জানুয়ারি এসব আবেদন খারিজ করে দেন দু’টি ট্রাইব্যুনাল। ১০ জানুয়ারি এসব খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে আসামিপক্ষ রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) আবেদন করেন। ১৫-১৬ জানুয়ারি শুনানি শেষে ২১ জানুয়ারি সেসব আবেদনও ট্রাইব্যুনাল খারিজ করে দেওয়ায় মামলাগুলোর বিচারিক কার্যক্রমের সব প্রতিবন্ধকতা দূর হয়।



উল্লেখ্য, ২৪ ডিসেম্বর থেকে ১ জানুয়ারি পর্যন্ত ৬ কার্যদিবসে আবেদনগুলোর ওপর শুনানিতে অংশ নেন বিএনপি-জামায়াতপন্থী বাঘা বাঘা আইনজীবীরা। আসামিপক্ষে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ এমপি, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, সিনিয়র আইনজীবী বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেন, আসামিপক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক ও অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম। অপরদিকে আবেদনের বিরোধিতা করে রাষ্ট্রপক্ষেও লড়তে আসেন দেশের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী।



ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন

একই ঘটনার সূত্র ধরে ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক পদত্যাগ করায় ট্রাইব্যুনাল-১ এর পাশাপাশি পুনর্গঠিত হয় দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনালও। ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীর প্রথম ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন আর তার স্থলাভিষিক্ত হন এ ট্রাইব্যুনালেরই বিচারক প্যানেলের সদস্য বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।



সর্বাধিক আলোচিত সাঈদীর মামলা

গত ২৯ জানুয়ারি উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক (আর্গুমেন্ট) উপস্থাপন শেষ হওয়ার মধ্য দিয়ে সাঈদীর মামলার বিচারিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। ওই দিন যে কোনো দিন সাঈদীর মামলার রায় দেওয়ার তারিখের আদেশের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) বলে রেখে দেন ট্রাইব্যুনাল।



তবে এটি ছিল দ্বিতীয় দফার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন। এ পর্যন্ত একমাত্র এ মামলায়ই দু’দফায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের ঘটনা ঘটায় মামলাটি সবচেয়ে আলোচিত হয়ে উঠেছে। কারণ, গত ৩ জানুয়ারি শুনানি শেষে সাঈদীর মামলা পুনর্বিচারে আসামিপক্ষের আবেদন খারিজ করে দিলেও ইতিপূর্বে শেষ হওয়া রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক ফের শুনবেন বলে আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।



এরপর ১৩ জানুয়ারি রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরুর মধ্য দিয়ে সাঈদীর বিরুদ্ধে মামলাটির বিচারিক প্রক্রিয়া দ্বিতীয়বারের মতো শেষ পর্যায়ে পৌঁছে। ওই দিন থেকে ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত এবং ২৮ ও ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত ৫ কার্যদিবসে রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী। অন্যদিকে ২০ থেকে ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত ৭ কার্যদিবসে আসামিপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক ও অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম।



উল্লেখ্য, উভয়পক্ষের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে গত বছরের ৫ নভেম্বর শুরু হয় প্রথম দফার যুক্তিতর্ক (আর্গুমেন্ট) উপস্থাপন। রাষ্ট্রপক্ষে ৫ থেকে ১৫ নভেম্বর ও ৪ থেকে ৬ ডিসেম্বর মোট ১২ কার্যদিবসে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী। অন্যদিকে ১৮ নভেম্বর শুরু করে ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৩ কার্যদিবসে আসামিপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন সাঈদীর প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক ও অপর আইনজীবী অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম।



এরপরই স্কাইপি কথোপকথনের জের ধরে মামলার কার্যক্রম মুলতবি হয়ে যায়। ফলে ১ মাস ১৭ দিন বিলম্বিত হয় এ বিচারিক প্রক্রিয়া।



সাঈদীর মামলার ধারাবাহিক কার্যক্রম

বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরীর দায়ের করা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে একটি মামলায় সাঈদীকে ২০১০ সালের ২৯ জুন গ্রেফতার করা হয়। ওই বছরের ২ আগস্ট তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়।



২০১০ সালের ২১ জুলাই থেকে ২০১১ সালের ৩০ মে পর্যন্ত মোট ৩১৩ দিন তদন্ত করে ১১ জুলাই সাঈদীর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেন রাষ্ট্রপক্ষ। ১৪ জুলাই তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। অভিযোগের বিষয়ে শুনানি শেষে ৩ অক্টোবর সাঈদীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে এই মামলার আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। সাঈদীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনকালে মুক্তিযুদ্ধকালে সময়ে পিরোজপুর জেলায় হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ এবং এ ধরনের অপরাধে সাহায্য করা ও জড়িত থাকার ঘটনায় ২০টি অভিযোগ আনা হয়।



একই বছরের ২০ ও ২১ নভেম্বর রাষ্ট্রপক্ষের সূচনা বক্তব্য (ওপেনিং স্টেটমেন্ট) উত্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু ও প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট সৈয়দ রেজাউর রহমান।



এ মামলায় সাঈদীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয় ওই বছরের ৭ ডিসেম্বর। প্রায় সাড়ে চার মাসে তদন্ত কর্মকর্তাসহ ২৭ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দেন। তাদের মধ্যে ২০ জন ঘটনার বিষয়ে এবং সাতজন জব্দ তালিকার বিষয়ে সাক্ষ্য দেন।



ঘটনার সাক্ষীরা হলেন, মাহাবুব উদ্দিন হাওলাদার, রুহুল আমীন নবীন, মিজানুর রহমান তালুকদার, সুলতান আহমেদ হাওলাদার, মাহতাব উদ্দিন হাওলাদার, মানিক পসারি, মফিজ উদ্দিন পসারি, মোঃ মোস্তফা হাওলাদার, মোঃ আলতাফ হোসেন হাওলাদার, বাসুদেব মিস্ত্রি, আব্দুল জলিল শেখ, আব্দুল আওয়াল এমপি (বর্তমান), গৌরাঙ্গ চন্দ্র সাহা, আব্দুল হালিম বাবুল, মোঃ সেলিম খান, জুলফিকার আলী, মধুসূদন ঘরামী, মোঃ হোসেন আলী, মোঃ মোবারক হোসেন ও সাইফ হাফিজুর রহমান।



আর জব্দ তালিকার সাক্ষীরা হলেন, পিআইবির ক্যাটালগার মোঃ রবিউল আলম খান, পিআইবির চতুর্থ শ্রেণীর বুক সার্টার এসএম আমিরুল ইসলাম, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের গাইড কাম কম্পিউটার অপারেটর ফাতেমা বেগম, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের গাইড মোঃ নেছার, বাংলা একাডেমির গ্রন্থাগারিক ইজাব উদ্দিন মিয়া, বাংলা একাডেমির গ্রন্থাগারিক ডিস্ট্রিবিউটর মাসুম উল কবির এবং বিশিষ্ট সাংবাদিক আবেদ খান।



রাষ্ট্রপক্ষের ২৮তম ও শেষ সাক্ষী হিসেবে এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. হেলালউদ্দিন সাক্ষ্য দেওয়া শুরু করেন গত বছরের ৮ এপ্রিল। নয় কার্যদিবসে ২৪ এপ্রিল তার সাক্ষ্য শেষ হয়। আসামিপক্ষ ২৫ এপ্রিল তাকে জেরা শুরু করেন। ৪৮ কার্যদিবসে ১৩ আগস্ট তার জেরা শেষ হয়। এর মাধ্যমে শেষ হয় রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা।



এছাড়াও রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত কর্মকর্তার কাছে দেওয়া ১৫ সাক্ষীর জবানবন্দি ট্রাইব্যুনালের আদেশে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করা হয়। তারা হচ্ছেন উষা রানী মালাকার, সুখরঞ্জন বালি, আশীস কুমার মণ্ডল, সুমতি রানী মণ্ডল, সমর মিস্ত্রি, সুরেশ চন্দ্র মণ্ডল, গণেশ চন্দ্র সাহা, শহিদুল ইসলাম খান সেলিম, মোঃ মোস্তফা, আব্দুল লতিফ হাওলাদার, আইয়ুব আলী হাওলাদার, সেতারা বেগম, অনিল চন্দ্র মণ্ডল, রানী বেগম ও অজিত কুমার শীল।



গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর থেকে সাঈদীর পক্ষের সাক্ষীদের সাফাই সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। এর আগে সাঈদীর পক্ষে সাফাই সাক্ষ্য দিতে আসামিপক্ষ ৪৮ জনের নামের তালিকা দিলেও ২০ জন সাক্ষীকে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য অনুমোদন দেন ট্রাইব্যুনাল। ২০ জনের মধ্যে আসামিপক্ষ ১৭ জন হাজির করে সাফাই সাক্ষ্য দেওয়ান। গত ২৩ অক্টোবর তারা আর কোনো সাফাই সাক্ষী আনতে না পারায় সেদিনই সাফাই সাক্ষ্যগ্রহণ বন্ধ করে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের তারিখ ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল।



সাঈদীর পক্ষে যে ১৭ জন সাক্ষ্য দেন তারা হলেন শামসুল আলম তালুকদার, আব্দুর রাজ্জাক আকন্দ, নুরুল হক হাওলাদার, আবুল হোসেন, খসরুল আলম, রওশন আলী, জামাল উদ্দিন ফকির, কুবাত আলী, হেমায়েত উদ্দিন, গোলাম মোস্তফা, আনোয়ার হোসেন, হাফিজুল হক, সাঈদীর ছেলে মাসুদ বিন সাঈদী, এমরান হোসাইন, আব্দুস সালাম হাওলাদার, আব্দুল হালিম ফকির ও গণেশ চন্দ্র সাহা।



সাঈদীর বিরুদ্ধে যতো অভিযোগ

সাঈদীর বিরুদ্ধে গঠন করা অভিযোগ, ৮৮ পৃষ্ঠার সূচনা বক্তব্য এবং ৭৭ পৃষ্ঠার চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন বা আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্রে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিন হাজারেরও বেশি নিরস্ত্র ব্যক্তিকে হত্যা বা হত্যায় সহযোগিতা, নয়জনেরও বেশি নারীকে ধর্ষণ, বিভিন্ন বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লুটপাট, ভাঙচুর এবং ১০০ থেকে ১৫০ হিন্দুকে ধর্মান্তরে বাধ্য করার ২০টি ঘটনার অভিযোগ আনা হয়েছে। এগুলো আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩-এর ৩(২) ধারা অনুসারে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ।



প্রথম অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ৪ মে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর নেতৃত্বাধীন দলের সদস্যরা পাকিস্তানি সেনাদের খবর দিয়ে পিরোজপুর সদর এলাকার মধ্য মাসিমপুর বাসস্ট্যান্ডের পেছনে নিয়ে যান। সেখানে পরিকল্পিতভাবে আগে থেকে জড়ো করা ২০ জন নিরস্ত্র মানুষকে গুলি করে হত্যা করা হয়।



দ্বিতীয় অভিযোগে বলা হয়, ৪ মে সাঈদী ও তার দল পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে নিয়ে মাসিমপুর হিন্দুপাড়ায় যান। সেখানে হিন্দু বাড়িগুলোতে লুট করেন এবং আগুন ধরিয়ে দেন। মানুষ পালাতে শুরু করলে সাঈদী ও তার দলের সদস্যরা এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করলে ১৩ জন শহীদ হন।



অভিযোগ-৩: ৪ মে সাঈদী পাকিস্তানি সেনাদের নিয়ে মাসিমপুর হিন্দুপাড়ায় মনীন্দ্রনাথ মিস্ত্রী ও সুরেশ চন্দ্র মণ্ডলের বাড়ি লুট এবং আগুন ধরিয়ে দেন। সাঈদী নিজে বিভিন্ন গ্রামের রাস্তার পাশের অসংখ্য বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন।



অভিযোগ-৪: ৪ মে সাঈদী তার রাজাকার বাহিনী ও পাকিস্তানি সেনাদের নিয়ে ধোপাবাড়ির সামনে এবং পিরোজপুর সদর পুলিশ স্টেশনের এলজিইডি ভবনের পেছনের হিন্দুপাড়া ঘিরে ফেলেন। এ সময় গুলি চালানো হলে দেবেন্দ্রনাথ মণ্ডল, জগেন্দ্রনাথ মণ্ডল, পুলিন বিহারী ও মুকুন্দ বালা মারা যান।



অভিযোগ-৫: তৎকালীন পিরোজপুরের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সাইফ মিজানুর রহমান সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠন করেন। সাঈদী ও তার সহযোগী শান্তি কমিটির সদস্য মন্নাফ কয়েকজন পাকিস্তানি সেনাসদস্যকে নিয়ে ৫ মে পিরোজপুর হাসপাতাল থেকে তাকে ধরে বলেশ্বর নদের তীরে নিয়ে যান। একই দিনে পুলিশ কর্মকর্তা ফয়জুর রহমান আহমেদ (লেখক হুমায়ূন আহমেদ ও মুহম্মদ জাফর ইকবালের বাবা) এবং ভারপ্রাপ্ত এসডিও আবদুর রাজ্জাককেও কর্মস্থল থেকে ধরা হয়। সাঈদীর উপস্থিতিতে এ তিন সরকারি কর্মকর্তাকে গুলি করে লাশ বলেশ্বর নদে ফেলে দেওয়া হয়।



অভিযোগ-৬: ৭ মে সাঈদীর নেতৃত্বে শান্তি কমিটির একটি দল পাকিস্তানি সেনাদের নিয়ে পারেরহাট বাজারের আওয়ামী লীগ, হিন্দু সম্প্রদায় এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষের বাড়িঘর ও দোকান চিনিয়ে দেয়। এসব দোকান ও বাড়িতে লুটপাট করা হয়। এ সময় তারা মাখন লাল সাহার দোকান থেকে ২২ সের স্বর্ণ ও রুপা লুট করে।



অভিযোগ-৭: ৮ মে বেলা দেড়টার দিকে সাঈদী পাকিস্তানি সেনাদের নেতৃত্ব দিয়ে বাদুরিয়া গ্রামের নুরুল ইসলাম খানের ছেলে শহীদুল ইসলাম সেলিমের বাড়িতে নিয়ে যান। সেখানে নুরুল ইসলাম খানকে আওয়ামী লীগার ও শহীদুল ইসলামকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে চিহ্নিত করেন এবং পাকিস্তানি সেনাদের হাতে সোপর্দ করেন। পরে তাদের বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।



অভিযোগ-৮: ৮ মে বেলা তিনটার দিকে সাঈদী ও তার দলের সদস্যরা চিথোলিয়া গ্রামের মানিক পসারির গ্রাম লুট করেন। এখানে পাঁচটি ঘরে কেরোসিন দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। মানিক পসারির ভাই মফিজুদ্দিন ও ইব্রাহিম কুট্টিকে ধরে সেনা ক্যাম্পে ফিরে যাওয়ার সময় সাঈদীর প্ররোচনায় পাকিস্তানি সেনারা ইব্রাহিম কুট্টিকে হত্যা করে। মফিজকে সেনাক্যাম্পে নির্যাতন করা হয়।



অভিযোগ-৯: ২ জুন সকাল নয়টার দিকে সাঈদী ও তার সশস্ত্র সহযোগীরা ইন্দুরকানি পুলিশ স্টেশনের নলবুনিয়া গ্রামের আবদুল হালিম বাবুলের বাড়িতে লুটপাট করে মূল্যবান জিনিসপত্র লুট এবং আগুন ধরিয়ে দেন।



অভিযোগ-১০: ২ জুন সকাল ১০টার দিকে সাঈদীর নেতৃত্বে সশস্ত্র দল উমেদপুর গ্রামের হিন্দুপাড়ার ২৫টি ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। সাঈদীর ইন্ধনে বিসা বালী নামের একজনকে নারকেল গাছের সঙ্গে বেঁধে গুলি করে হত্যা করা হয়।



অভিযোগ-১১: ২ জুন সাঈদী টেংরাখালী গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মাহাবুবুল আলম হাওলাদারের বাড়িতে পাকিস্তানি সেনাদের নিয়ে যান। সেখানে তার বড় ভাই আবদুল মজিদ হাওলাদারকে ধরে নির্যাতন করা হয়। এরপর সাঈদী নগদ টাকা লুট ও মূল্যবান জিনিস নিয়ে যান। পরে বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।



অভিযোগ-১২: সাঈদীর নেতৃত্বে ১৫-২০ জনের একটি সশস্ত্র দল পারেরহাট বাজারের ১৪ জন হিন্দুকে ধরে দড়ি দিয়ে বেঁধে পাকিস্তানি সেনাদের কাছে নিয়ে যায়। পরে তাদের গুলি করে লাশ নদীতে ফেলে দেওয়া হয়।



অভিযোগ-১৩: মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার দুই-তিন মাস পর সাঈদীর নেতৃত্বে পাকিস্তানি সেনারা নলবুনিয়া গ্রামের আজহার আলীর বাড়িতে যায়। সেখানে আজহার আলী ও তার ছেলে সাহেব আলীকে ধরে নির্যাতন করা হয়। সাহেব আলীকে পিরোজপুরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে নদীতে ফেলে দেওয়া হয়।



অভিযোগ-১৪: মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিকে সাঈদীর নেতৃত্বে ৫০-৬০ জনের একটি রাজাকার বাহিনী হোগলাবুনিয়ার হিন্দুপাড়ায় যায়। রাজাকারদের আগমন দেখে গ্রামের অধিকাংশ হিন্দু নারী পালিয়ে যান। কিন্তু মধুসূদন ঘরামীর স্ত্রী শেফালী ঘরামী ঘর থেকে বের হতে পারেননি। তখন সাঈদীর নেতৃত্বে রাজাকাররা তাকে ধর্ষণ করেন। এর ফলে স্বাধীনতার পর তিনি একটি কন্যা সন্তান প্রসব করেন। এ নিয়ে গ্রামে বিভিন্ন কথা ওঠায় শেফালী ঘরামী দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যেতে বাধ্য হন। পরে এই হিন্দুপাড়ার ঘরে আগুন দেওয়া হয়।



অভিযোগ-১৫: মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিকে সাঈদীর নেতৃত্বে ১৫-২০ জনের রাজাকার দল হোগলাবুনিয়া গ্রামের ১০ জন হিন্দু নাগরিককে ধরে। পাকিস্তানি সেনারা তাদের সবাইকে হত্যা করে লাশ নদীতে ফেলে দেয়।



অভিযোগ-১৬: সাঈদীর নেতৃত্বে ১০-১২ জনের রাজাকার দল পারেরহাট বন্দরের গৌরাঙ্গ সাহার বাড়ি থেকে তার তিন বোন মহামায়া, অন্ন রানী ও কমলা রানীকে ধরে পাকিস্তানি সেনা ক্যাম্পে নিয়ে যায়। সেখানে তিন দিন ধরে ধর্ষণ করে পরে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।



অভিযোগ-১৭: সাঈদী ও তার নেতৃত্বের রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা পারেরহাটের বিপদ সাহার সাহার মেয়ে ভানু সাহাকে তার বাড়িতে আটকে নিয়মিত ধর্ষণ করেন। এক সময় ভানু সাহা দেশ ত্যাগে বাধ্য হন। বর্তমানে তিনি ভারতে অবস্থান করছেন।



অভিযোগ-১৮: ভাগীরথী পাকিস্তানি সেনাদের ক্যাম্পে কাজ করতেন। সাঈদী এক দিন খবর দেন, ভাগীরথী মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়মিত নানা খবরা-খবর দেন। পাকিস্তানি সেনারা তাকে হত্যা করে লাশ বলেশ্বর নদে ফেলে দেয়।



অভিযোগ-১৯: সাঈদী প্রভাব খাটিয়ে পারেরহাটসহ অন্য গ্রামের ১০০-১৫০ জন হিন্দুকে ইসলাম ধর্মে রূপান্তর করে। তাদের মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়তে বাধ্য করা হতো।



অভিযোগ-২০: নভেম্বরের শেষ দিকে সাঈদী খবর পান, সাধারণ মানুষ ভারতে পালিয়ে যাচ্ছে। তার নেতৃত্বে ১০-১২ জনের একটি সশস্ত্র দল পরিকল্পিতভাবে ইন্দুরকানি গ্রামের তালুকদার বাড়িতে আক্রমণ চালায়। ৮৫ জন ব্যক্তিকে আটক করে তাদের কাছ থেকে মালামাল কেড়ে নেওয়া হয়। ১০-১২ জন বাদ দিয়ে বাকিদের কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.