নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Never Say Never Again

...

মধুমিতা

আমি তোমার কাছে পৌছতে পারিনি পথে হয়েছে দেরী। তবু আজো স্বপ্ন দেখি - বন্ধ দড়জায় কড়া নাড়ি ।। আমি এক অতি সাধারণ মানুষ, আড়ালে থাকতেই পছন্দ করি ...

মধুমিতা › বিস্তারিত পোস্টঃ

সৌদি আরব ডায়েরি – ২৯ (তায়েফ শহরে কয়েকদিন- শেষ পর্ব...)

২১ শে জানুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৪:১৭



তায়েফ শহরে কয়েকদিন-১ Click This Link

তায়েফ শহরে কয়েকদিন-২ Click This Link

তায়েফ শহরে কয়েকদিন-৩ Click This Link



পরের দিন ৪ নভেম্বর ছিল শুক্রবার। এদিন তেমন ঘুরাঘুরি রাখিনি। বিকেল ৪ টায় SAPTCO বাসে করে আবহা ফিরব। তাই বেশ রিলাক্সের মাঝে ছিলাম। দেরী করে ঘুম হতে উঠি। সবাই মিলে জুম্মার নামাজ পড়তে গেলাম আলী ইবনে আব্বাস মসজিদে। অনেক বড় মসজিদ। এখানে ১২ জন সাহাবার কবর আছে যারা তায়েফবাসীদের দ্বারা শহীদ হয়েছিলেন।



আলী ইবনে আব্বাস মসজিদ



বাংলায় লেখা কবর জিয়ারতের নিয়মাবলী



নামাজ শেষে পার্কে গিয়ে বসলাম। সকাল ১০টায় নাস্তা করেছি, ক্ষুধা নেই বললেই চলে। কিন্তু খেয়ে হোটেলে ফিরে লাগেজ গোছাতে হবে, আবার আসা হবে না। ক্ষুধা যখন কোন মতেই আসলোনা, তখন রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার কিনে হোটেলে ফিরলাম।



পার্কের ভেতরে ...



খাওয়া দাওয়া শেষে, লাগেজ গুছিয়ে ৩ টায় চেক আউট করলাম। আজ মাহমুদ ভাইয়ের ভাতিজা এসেছে, আমাদেরকে বাসস্ট্যান্ড পৌছে দিবে। মাহমুদ ভাই জেদ্দা গিয়েছে কোন একটা ট্রিপ নিয়ে। এখানে হজ্জ মৌসুমে জমজমাট ব্যবসা থাকে।



আমরা ৫ মিনিটেই বাসস্ট্যান্ডে পৌছে গেলাম। মাহমুদ ভাইয়ের ভাতিজাকে বিদায় করে দিলাম। বাসস্ট্যান্ডে বসে আছি, তেমন ভীড় নাই। ৪ টা বেজে যায়। আমরা কাউন্টারে খোঁজ নিতে যাই। খবর শুনেতো মাথা খারাপ অবস্থা- বাস নাকি দুপুর ১.৩০ এ চলে গেছে। দিনে একটাই বাস, পরবর্তী বাস আগামীকাল দুপুর ১.৩০ এ। আমরা সবাই অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে রইলাম।



কি করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। আমাদের কাছে টিকিট আছে- ৪ টায় বাস ছাড়বে। আমরা ম্যানাজারের সাথে দেখা করলাম। ইংরেজি তেমন বুঝেই না। যতদূর বুঝলাম এখানে এসে আমাদের আগেই খোঁজ নেয়া উচিত ছিল, অনেক আগে রিটার্ন টিকেট কেটেছি, টাইম শিডিউল চেঞ্জ হয়ে গেছে। ওনার নাকি কিছুই করার নাই।



আমরা বজ্রাহত, ৬ তারিখে ঈদ। একদিন আগে আবহা পৌছতে চেয়েছিলাম, কতকিছু বাকী। আদিল ভাইয়ের বাসায় ঈদের দিন আমাদের সবার দাওয়াত, বাহির থেকেও অনেকে আসবে। কি করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। আমি ও আদিল ভাই অস্থির হয়ে উঠছিলাম। আমার অস্থির হবার কারনও আছে। গত বছর হজ্জ্ব করে ফেরার পথে আমি সৌদি এয়ারের ফ্লাইট মিস করে ছিলাম। সেকি বিশাল ঝামেলা ও টেনশন। আমার মাঝে সেই ভয় ও টেনশন এখনও কাজ করে- বিশেষ করে ভাষা না জানা একটি জায়গায়।



আমরা মাহমুদ ভাইয়ের ভাতিজাকে সবকিছু জানিয়ে ফোন দিলাম। সে অল্পকিছুক্ষনের মাঝেই এসে পড়লো। সে ভালো আরবী জানে, ম্যানেজারের সাথে কথা বললো। কোন লাভ হলো না। আমরা কাউন্টারে গেলাম আমাদের সবার টিকেট ফেরত দিতে, টাকা ফেরত দিবেনা। বললো যেখান থেকে কিনেছি সেখান থেকে নিতে। ... জ্বালা !!



আমরা ঠিক করলাম যেভাবেই হোক আজই আবহা ফিরতে হবে। আমাদের আলোচলা আশে পাশের সবাই কৌতুহলি হয়ে শুনছিল। যদি একান্তই না ফিরতে পারি, তাহলে আজ রাতটা হোটেলে থেকে আগামীকাল দুপুরে বাসে রওনা দেয়া যাবে।

আমরা বাহিরে বের হলাম মাইক্রোবাস ভাড়া করার জন্য। অনেকের সাথে আলাপ করলাম সবাই ১৫০০ রিয়াল চাচ্ছে। হয়তো ১২০০ রিয়ালে যাবে। কিন্তু পরক্ষনেই মত চেঞ্জ করে ফেললাম। মাইক্রোবাসে যাওয়া যাবেনা।ড্রাইভার সব সৌদি। এদের বিশ্বাস করা যায় না। মাঝ পথে গিয়ে মেরে ধেরে নামিয়ে দিলে কিছু করার থাকবেনা।



ট্রাভেল এজেন্সিতে খোঁজ নিলাম- তায়েফ থেকে আবহা ফ্লাইট আছে কিনা। কোন ফ্লাইটেই খালি নেই। শেষ ভরসা হিসাবে মাহমুদ ভাইকে ফোন দিলাম। উনি বললেন উনি এখন মক্কা আছেন, রাত ১১টার দিকে তায়েফ ফিরবেন। তারপর উনি নিজেই আমাদেরকে নিয়ে আবহা রওনা হবেন। আমরা বেশ আশ্বস্ত হলাম। যদিও একটু সন্দেহ ছিল উনি ড্রাইভ করতে পারবেন কিনা- সারা দিন গাড়ী চালিয়েছেন।



আমরা SAPTCO বাসস্ট্যান্ডে বসে আছি, এরি মধ্যে মাগরিবের আযান হয়ে গেল। রাত ১১টা পর্যন্ত কি করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। সাথের মেয়েরা বললো আমরা মার্কেটে ঘুরতে যেতে পারি, কেনাকাটা করবো আর গত রাতে না খেতে পারা আল-বাইকের টেস্টও নেয়া যাবে। তথাস্ত... ঠিক হলো মাগরিবের নামাজের পরপরই আমরা বের হয়ে যাব।

আমরা ছেলেরা মাগরিবের নামাজ শেষে মেয়েদের জন্য অপেক্ষা করছি। তাদের আসার নাম নেই। কতোক্ষন লাগে? ওদের নিয়ে একটা ঝামেলা, কোথাও গেলে মিনিমাম আধাঘন্টা। অনেক্ষন পর ওরা আসলো, আয়েশের সাথে সাজুগুজু করলো, এদিক উদিক তাকালো –উঠার কোন নাম গন্ধ নেই। এদিকে ভাতিজা ফোন করে তাড়াতাড়ি বের হবার তাড়া দিচ্ছে। আমরা ছেলেরা যারপরনাই বিরক্ত। এতো টেনশনের সময়েও ওরা কিভাবে এতো অলস হতে পারে ভেবে পাই না।



উঠতে যাব এমন সময় SAPTCO এ্যানাউন্সমেন্ট- আবহা যাবার যাত্রী খুঁজছে। নিজের কানকেও বিশ্বাস হলো না। কিভাবে সম্ভব? এখনতো কোন বাসই থাকার কথা না। দৌড়ে রিপোর্ট করলাম, বার বার জিজ্ঞেস করলাম ঠিকশুনছি তো? ... বাসে উঠে মাহমুদ ভাই ও ভাতিজাকে বিদায় জানালাম। তখনও বিশ্বাস হচ্ছিল না আমরা আবহাগামী বাসে বসে আছি।

বাসে আমরা ৩ ফ্যামিলি আর ২ জন লোক মাত্র। লোকদুজন মাঝ পথে নেমে যায়। পুরোটা বাসে তখন আমরা ৬ জন আবহা’র যাত্রী। ... সে অন্যরকম অনুভূতি। কারোই ঘুম আসছিলো না। ভাবলাম কিভাবে কি হয়ে গেল। এটাকি সত্যিই মিরাকল?



যদি আমরা মাইক্রোবাসে যাওয়ার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না করতাম তাহলে? যদি ফ্লাইটের টিকেট পেয়ে যেতাম? যদি মাহমুদ ভাই তখনি এসে পড়তো?যদি রাতের জন্য হোটেলে উঠে যেতাম? এবং যদি মেয়েরা নামাজে আর সাজুগুজুতে দেরী না করতো তা হলে হয়তো বেরিয়ে পড়তাম, বাসের দেখা পেতাম না। অনেকগুলো “যদি” আছে বলেইতো এটা মিরাকল- সবচয়ে ভালো অপশনটিই আমাদের ভাগ্যে এসেছিল। কোনরকম অতিরিক্ত পরিশ্রম আর টাকা ছাড়াই রাত ৩টায় আবহা এসে পৌছলাম। শুধুমাত্র ছিল টেনশন- মহান আল্লাহকে ধন্যবাদ জানালাম।



মেয়েরা আহ্লাদিত স্বরে বললো- দেখেছ আমরা দেরী করেছি বলেই বাসটি ধরতে পেরেছ। এই প্রথম মেয়েদের সাজুগুজুর মহাত্ম অনুধাবন করলাম।

আমাদের বাসের ২ জন ড্রাইভার ছিল, ফিলিপেনো আর কেরেলান। ভাষাগত সমস্যার করনে জানতে পারিনি কিভাবে বাসটি অফশিডিউলে আবহা যাচ্ছে। আমাদের প্রচেষ্টাও কমছিল। কিছু রহস্য অমীমাংসীতই থাকুকনা। (শেষ)



নোটঃ বেশ ভালোভাবেই ঈদটি পালন করতে পেরেছিলাম।

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে জানুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৫:১৭

হিরো বলেছেন: ধন্যবাদ।

২১ শে জানুয়ারি, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:০০

মধুমিতা বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ।

২| ২১ শে জানুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৫:৩৭

বড় বিলাই বলেছেন: হা হা হা। ভাগ্যিস সাজুগুজু করে দেরী করা হয়েছিল। :P

২১ শে জানুয়ারি, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:০২

মধুমিতা বলেছেন: হুম ... সাজুগুজু ছিল বলেই রক্ষা । আপনাকে ধন্যবাদ।

৩| ২১ শে জানুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৫:৪৯

রাজামশাই বলেছেন: SAPTCO - বাসের এক বিশাল জার্নি করছিলাম - দাম্মাম টু তাবুক - এরপর আর SAPTCO মুখো হই নাই ।

২১ শে জানুয়ারি, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:০৪

মধুমিতা বলেছেন: বিশাল জার্নি ... আমরা সৌদি এয়ারের ভাড়া জানলে SAPTCO মুখো হতাম না। পড়ে জেনেছিলাম ভাড়া প্রায় সমান সমান। ভালো থাকবেন।

৪| ২৩ শে জানুয়ারি, ২০১২ সকাল ১০:৪৭

মুহিব বলেছেন: কতকাল পরে এই পর্ব আসল।

২৩ শে জানুয়ারি, ২০১২ সকাল ১১:২৯

মধুমিতা বলেছেন: লিখতে একটু দেরী হয়ে গেল ... পড়ার জন্য ধন্যবাদ

৫| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৫:১৯

জীবন্মৃত০১ বলেছেন: প্লাস...

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ দুপুর ১২:৩১

মধুমিতা বলেছেন: ধন্যবাদ।

৬| ০১ লা জুন, ২০১২ সকাল ৯:১১

বিতর্কিত বিতার্কিক বলেছেন: শেষ ভাল যার সব ভাল তার। ভালোয় ভালোয় ফিরেছেন সেটাই বা কম কিসে।

০২ রা জুন, ২০১২ দুপুর ১২:৫১

মধুমিতা বলেছেন: পড়ার জন্য ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.