নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমাদের জাতিয় ইতিহাসে কলংকের দায় মুক্তির আরেক নতুন অধ্যায় রচিত হলো চট্রগ্রামের ডালিম হোটেলের কসাই খ্যাত মীর কাসেম আলী মৃত্যুদণ্ডাদেশের রায়ের বিরুদ্ধে করা রিভিউ পিটিশন খারিজ হওয়ার মধ্যদিয়ে । বর্তমানে চলমান একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য গঠিত ট্রাইব্যুনাল কে নানা ভাবে বিতর্কিত করার জন্য অর্থিক ভাবে যে ব্যক্তি সবচেয়ে বেশী প্রভাব খাটিয়েছে তিনি ই মীর কাসেম আলী । সাম্প্রতি অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের সাথে আলাপ কালে বলে ছিলেন তিনি নাকি মীর কাসেমের রিভিউয়ের রায় নিয়ে উদ্বিগ্ন ।তার এই উদ্বিগ্নতাই মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সকল মানুষের উদ্বেগ আর চিন্তাকে কয়েক গুন বারিয়ে দিয়েছিল । মীর কাসেমের রিভিউয়ের রায় নিয়ে আমার মত অনেকের মনেই অনেক প্রশ্নের ও জন্ম দিয়েছিল । অবশেষে সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটলো ৩০ আগস্ট মীর কাসেম আলী মৃত্যুদণ্ডাদেশের রায়ের বিরুদ্ধে করা রিভিউ পিটিশন খারিজ হওয়ার মধ্যদিয়ে ।
আমাদের দেশে মীর জাফর কিংবা মীরকাসেমদের জন্ম বার বার হয়েছে । মীর জাফর কিংবা মীর কাসেমদের ষড়যন্ত্রকে জাতি রুখেদিয়েছে জীবনের বিনিময় রক্তের বিনিময় ষম্ভ্রমের বিনিময় । একাত্তর তথা আমাদের মুক্তিযুদ্ধ আমাদের জাতিয় জীবনে অহংকার আমাদের গৌরব আমাদের গর্ব । ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্ত আর আড়াই লক্ষ মা বোনের সম্ভ্রমের বিনীময় অর্জিত আমাদের স্বাধীনতা ।বার বার নানা ভাবে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ আমাদের স্বাধীনতাকে নিয়ে নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে এমন কি লিপ্ত আছে একাত্তরের পরাজিত দেশী বিদেশী শক্তি । পচাত্তরে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর থেকেই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকে চির স্হায়ীকরার জন্য প্রত্যেক সরকার ই একাত্তরের পরাজিত শক্তিকে কাজে লাগিয়েছে । ঐ সকল সরকার গুলির পৃস্ঠপোষকতায় একাত্তরের পরাজিত শক্তি ধর্মভিত্তিক রাজনীতির আড়ালে নিজেদের স্বাবলম্বি করতে স্বার্থক হয়েছে ।
অবশ্য আমাদের মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি স্বাধীনতার পর থেকেই একাত্তরের পরাজিত ঘতকদের বিচারের ব্যাপারে ছিলেন সর্বদা জাগ্রত এর ই ফলশ্রুতিতে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃতে ১৯৯২ সালের ২৬ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে লক্ষ জনতার উপস্থিতিতে জনতার কাঠগড়ায় একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের এক প্রতীকী ট্রায়েলের মাধ্যমে গোলাম আযমসহ শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের মৃত্যুদন্ডযোগ্য অপরাধ বলে ঘোষনা দেন ।এর পর থেকেই একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবী আরো শক্ত হতে থাকে । যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষে যারা শক্ত হাতে হালধরে গেছেন তাদের কে রাষ্ট্রীয় ভাবে ও নানা নির্যাতন নিপীড়নের স্বীকার হতে হয়েছে শহীদ জননী জাহানারা ইমামকে ও রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা মাথায় নিয়েই ইন্তেকাল করতে হয়েছে ।
২০০৮ সালে যে জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভূমিধস বিজয় হয়েছিল তার মূলেই ছিল তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে অগ্রাধিকার ভিত্তিক এজেন্ডাভুক্ত করা ।পরে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে ১৯৭৩ সালে প্রণীত ওয়ার্কক্রাইম ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্টের অধীনে একাত্তরের মানবতা বিরোধীদের বিচারের কার্যক্রম শুরু করে । পরে অবশ্য আইনটিকে কয়েকবার সংশোধন করে আরও স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য করে তোলা হয় যা বিশ্বের অন্যান্য দেশে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারে ব্যবহৃত আইনের চেয়ে ই অধিক চেয়ে স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য ।এই আইনের মাধ্যমেই শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। ইতিমধ্যে কু-খ্যাত রাজাকার কাদের মোল্লা, নিজামী, কামারুজ্জামান, আলীম, গোলাম আযমের বিচার কার্যক্রম শেষ হয় ও রায় কার্যকর হয়। সর্বশেষ চট্রগ্রামের ডালিম হোটেলের কসাই খ্যাত মীর কাসেম আলীর রায় ও এখন শুধু মাত্র মাহামান্য রাষ্ট্রপতির ক্ষমা ভিক্ষার অপেক্ষায় ।
চট্রগ্রামের ডালিম হোটেলের কসাই খ্যাত মীর কাসেম আলী সম্পর্কে আমরা অনেক কিছু জানলে ও নতুন করে আবার একটু জেনে নেই কে এই মীর কাসেম আলী আর কিভাবে ই বা তার উত্থান ? ১৯৮৩ সালে এরশাদ সরকারের আমলে মীর কাসেম আলীর উত্থান হয় শুরু হয় ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড গঠনের মাধ্যমে। যার প্রতিষ্ঠাতা ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন এই মীর কাসেম । জামায়াতে ইসলামীকে শক্তিশালী আর্থিকভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে অবশ্য ১৯৭৭ সাল থেকে ই কাজ করে আসছেন মীর কাসেম। একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি বাহিনী সারাদেশে বাঙালি নিধন শুরু করলে স্বাধীনতার লড়াইয়ে অস্ত্র হাতে নেয় এ দেশের মানুষ।আর তখন ই চট্টগ্রাম শহর শাখা ছাত্রসংঘের সভাপতি ছিলেন মীর কাসেম আলী সেই সূত্রে ছিলেন চট্টগ্রামে আল-বদর বাহিনীর ও নেতা। যদিও জন্ম গতভাবে মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার চালা গ্রামের বাসিন্দা মির কাসেম । বাবা তৈয়ব আলীর কর্মক্ষেত্র চট্রগ্রাম হওয়ায় চট্রগ্রামেই বেড়ে উঠা তার । চট্টগ্রামের মানুষ তাকে চিনতো মিন্টু নামে।মুক্তিযুদ্ধকালীন চট্টগ্রামের ত্রাস কাসেম আলী রাজনৈতিক ও আর্থিক ক্ষেত্রে অসাধারণ ধূর্ততার স্বাক্ষর রেখে দ্রুত নিজের উন্নতি ঘটিয়েছেন।এমনকি ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন হওয়ার পর নাকি সবচেয়ে বেশি টাকা দিয়ে আন্তর্জাতিক লবিস্ট ও নিয়োগ দিয়েছেন এই যুদ্ধাপরাধী ।২০১৩ সালের ২৮ এপ্রিল জাতীয় সংসদে তৎকালীন আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন,মীর কাসেম আলী মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারকাজ প্রশ্নবিদ্ধ করতে যুক্তরাষ্ট্রের একটি লবিস্ট প্রতিষ্ঠানকে দুই কোটি ৫০ লাখ ডলার দিয়েছেন। লবিস্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জামায়াতের চুক্তির কপি এবং টাকা দেওয়ার রসিদ রয়েছে সরকারের কাছে।
আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের স্বদেশী বিরোধিতাকারীরা সাধারনত সেই সময় ধর্মের দোহায় দিয়েই বিরোধিতা করার চেষ্টা করছে অনেকেই আমাদের মাহান মুক্তিযুদ্ধকে হিন্দু-মুসলিম যুদ্ধ বলে চালানোর চেষ্টা ও করেছিল যাতে করে আমাদের দেশের সংখ্যাগরিষ্ট সাধারন মুসলমানদের সমর্থন আদায় করা সহজ হয় । আমাদের মুক্তিকামী সাধারন মানুষের কাছে এর পরেও ঐ জানোয়ারেরা বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে পারে নি । পরাজিত করতে পারেনি আমাদের স্বাধীনতার চেতনাকে ।পচাত্তরের পটপরিবর্তনের পর ও স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি ধর্ম ও বিত্তকে কাজে লাগিয়ে জন্ম দিয়েছে ধর্মীয় উগ্রবাদ তথা ধর্মীয় জঙ্গিবাদ যা আজ আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় আতংক । বঙ্গবন্ধু কণ্যা দ্বিতীয় বার সরকার গঠনের পর থেকে ই শুরু হয়েছে একাত্তরের মানবতা বিরোধী তথা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার যা জাতির দীর্ঘ আন্দোলন ও প্রতিক্ষার ই ফসল । এ বিচারের মাধ্যমে দল মত নির্বিশেষে সকল মানবতা বিরোধী তথা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন হবে এটা জাতির যেমন প্রত্যাশা তেমন ই মানবতা বিরোধী তথা যুদ্ধাপরাধীরা কিভাবে এত অর্থ বিত্তের অধিকারি হলো তা ও জাতি জানতে চায় সেই সাথে তাদের সমস্ত সম্পত্তি বায়জাপ্তের ও দাবি আজ সমগ্র জাতির । যদি মানবতা বিরোধীদের আয়ের উৎস বের করা যায় এবং বাংলাদের মাটিতে তাদের রাজনীতি সম্পুর্ন ভাবে নিষিদ্ধ করা যায় তা হলে অবশ্যই এদেশ থেকে জঙ্গিবাদের ও মূল উৎপাটন করা সম্ভব ।
©somewhere in net ltd.
১| ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৩:২২
চাঁদগাজী বলেছেন:
৩ লাখ রোহিংগার জন্য সব আরব দেশ থেকে টাকা এনে, সেগুলো দিয়ে ব্যাংক করেছিলো।