নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি ও বলতে চাই !

ওয়াসিম ফারুক হ্যাভেন

ব্লগিং হউক সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার ।

ওয়াসিম ফারুক হ্যাভেন › বিস্তারিত পোস্টঃ

একজন খাদিজা ও ঐতিহ্যের ছাত্রলীগ !

০৮ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ২:২৮

সমগ্র দেশে আজ একদিকে যেমন খাদিজার নতুন জীবনের জন্য প্রার্থনা করছে আরেক দিকে বদরুলের জন্য দিচ্ছে ধিক্কার । অশ্রু আর ক্ষোভের মিলনে সবাই যেন আজ রাগে আগ্নিশর্মা । গত ৩ অক্টেবর সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী খাদিজা বেগম নার্গিস বর্বরোচিত চাপাতি হামলার শিকার হন নিজ কলেজের ই অতি নিকটে । হামলাকারী বদরুল আলম সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক । বদরুলের রাজনৈতিক পরিচয় কি তা নিয়ে আমার তেমন মাথা ব্যাথা নেই । বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের তথ্য অনুযায়ি বদরুল সম্পর্কে যতটুকু জানা যায় তা হলো সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার দক্ষিণ খুরমা ইউনিয়নের মনিরগাতি গ্রামের মৃত সাইদুর রহমানের ছেলে বদরুল চার ভাই ও এক বোনের মধ্যে বদরুল দ্বিতীয় মা দিলারা বেগম ছেলের অপকর্মের সংবাদ শোনার পরই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন । ছেলে এমন নৃশংস কাজ করতে পারে বলে বিশ্বাস করতে পারছেন না তিনি আর বিশ্বাস করার ও কথা না দুনিয়ার কোন পিতা-মাতাই চান না তার সন্তান কোন কু-পথে পা বারাক । ছেলেবেলা থেকেই কিছুটা উচ্ছৃঙ্খল হলেও পড়ালেখায় বরাবরই মেধাবী ছিল বদরুল। টানাপড়নের সংসারে পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তি পাওয়ার পাশাপাশি এসএসসি ও এইচএসসিতেও ভালো ফল করে সে। এরপর ভর্তি হয় সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ।অভাবের কারনে শাবিতে ভর্তি হওয়ার পর পর ই লজিং মাষ্টার হিসেবে আশ্রয় নিয়েছিল খাদিজাদের বাড়িতে। কথায় বলে কয়লা ধুইলে ময়লা যায় না আর ঢেকি স্বর্গে গেলে ও বারা ই বানবে । বদরুলের ক্ষেত্রে ও এর পরিবর্তন ঘটে নি । নিজের ছাত্রীর ই উপর পড়ে বদরুলের লোলুপ দৃষ্টি । খাদিজাকে দেখার পর থেকে ই বদরুলের লাম্পট্য আরো বেড়ে যায় প্রেম নিবেদন করে ব্যর্থ হয়ে অনেকটা ই উদাসীন হয়ে পরে বদরুল ।

বদরুলের রজনৈতিক উত্থানের পিছনে একটা মজার গল্প লুকিয়ে আছে । ছাত্রলীগের নিছকই এক কর্মী ছিল বদরুল মিছিলে-মিটিংয়ে মাঝে মধ্যে হয়তো তার দেখা মিলতো ।২০১২ সালের ১৭ই জানুয়ারির এক ঘটনা বদরুলকে পরবর্তীতে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের প্রথম সহ-সম্পাদক পদ বাগাতে প্রধান হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে । ঐ দিন খাদিজাকে উত্ত্যক্ত করতে গিয়ে গণধোলাইয়ের শিকার হয়েছিল বদরুল । যেহেতু ছোট বেলা থকেই লেখাপড়ায় মেধাবী ছিল বদরুল তাই চতুর হওয়াটাই স্বাভাবিক । সেদিনের সেই গণধোলাইকে বদরুল ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে স্বার্থক হয়েছিল । খাদিজাকে উত্ত্যক্ত করতে গিয়ে গণধোলাইকে বদরুল তার উপর শিবিরের হামলা হিসেবে প্রচার করে ই নিজ সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী ছাত্রলীগ সহ দেশের অনেকের মনেই সহানুভূতির জন্ম দিতে পেরেছিল । বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম তখন বদরুলকে নিয়ে সংবাদ শিরোনাম ও করেছিল । ড. জাফর ইকবাল এর মত খ্যাতনামা ব্যক্তি ও বদরুলের জন্য কলম ধরেছিলেন । বদরুলকে শাবি’র টাকায় চিকিৎসা ও করানো হয়, এমন কি প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে ২ লাখ টাকা অনুদান ও দেয়া হয় বদরুলকে।সংগঠনের অনেক উপরের নেতাদের ও দৃষ্টি কারতে সক্ষম হয় বদরুল । আর এতেই বদরুল বনে যায় ছাত্রলীগের বড় নেতা ক্ষমতার দাপটে আরো বকে যায় বদরুল ।

বাংলাদেশ ছাত্রলীগ একটি বিরাট ও ঐতিহ্যবাহী প্রধান রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন । বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ইতিহাস গৌরব, ঐতিহ্য, সংগ্রাম ও সাফল্যে মন্ডিত। ১৯৪৮ সাল থেকে শুরু করে বর্তমান পর্যন্ত দেশ ও জনগনের স্বার্থরক্ষার্থে প্রত্যেকটি আন্দোলনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ প্রধান ভূমিকা রেখেছে। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতা কর্মীদের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্ব পূর্ন ।১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধের উদ্দেশ্যে ছাত্রলীগ মুজিব বাহিনী গঠন করে, যুদ্ধে অংশগ্রহন করে এবং বাংলাদেশ বিজয় লাভে ভূমিকা পালন করে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ।বর্তমানে এই ছাত্র সংগঠনটির সদস্য ও সমর্থক কত তা সঠিক ভাবে বলা মুসকিল । আমাদের বর্তমান রাজনীতিতে মেধার চেয়ে পেশী শক্তিকে ই প্রাধান্য দেয়া হ্য় বিধায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগের রাজনিতী ও তার বাহিরে যেতে পারেনি তাই এই সংগঠনটিতে ও ভাল খারাপের মিশ্রন অস্বীকার করার কিছুই নেই । আর এটাই বাস্তবতা ।

নানা সময় আমরা দেখেছি ও দেখছি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কিছু নেতা কর্মীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধংসাত্বক এবং আইনবিরোধী কাজে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।বিশেষ করে ৯ ডিসেম্বর ২০১২ ছাত্রলীগের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালযয়ের কিছু নেতা কর্মী বিনা কারণে প্রকাশ্য-দিবালোকে শত শত মানুষ ও আইনরক্ষা বাহিনীর সদস্য এবং সাংবাদিকদের ক্যামেরার সামনে নৃশংসভাবে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয় দর্জ্জি শ্রমিক বিশ্বজিৎ দাসকে ।পরবর্তীতে সরকারের পক্ষ থেকে এই ঘটনায় জড়িত কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে মামলা করা হয় এবং তাদের ফাঁসির রায় দেয়া হয়। এর পর ও ছাত্রলীগের অনেক নেতা কর্মীর বিরুদ্ধে খুন ধর্ষন চাঁদাবাজি টেন্ডার বাজি সহ বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগ উঠে । নিজেদের দলীয় কোন্দলে নিজেদের মধ্যে কোপাকুপি ও খুনাখুনির ঘটনা প্রায় ই সংবাদ মাধ্যমের শিরোনাম হচ্ছে । ছাত্রলীগের নানা অপকর্মে এক সময় খোদ আওয়ামীলিগের সিনিয়র নেতারা ও ক্ষুব্ধ হয়ে পরেছিলেন । এমন কি আওয়ামীলিগ সভানেত্রী মাননীয় প্রধান মন্ত্রী ও এক সময় বলতে বাধ্য হয়েছিলেন যে ছাত্রলীগের অভিবাবকত্ব আমি নিতে পারবো না ।

আমি আগেই বলেছি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ একটি বিরাট ও ঐতিহ্যবাহী প্রধান রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন ভাল খারাপের মিশ্রন এখানে থাকবে এটাই স্বাভাবিক । খারাপ রা সব সময় ই খারাপ কাজ করবে এটাই বাস্তব সত্য । তবে কোন খারাপ মানুষের খারাপ কর্মের জন্য কোন পুরো সংগঠন কে দায়ীকরা যায় না বা করা ও ঠিক হবে না যদি না ঐ খারাপ কাজের জন্য খারাপ ব্যক্তি ঐ সংগঠন থেকে কোন আশ্রয় প্রশ্রয় না পায় ।তবে আমি অত্যন্ত মর্মাহত হয়েছি বদরুলের বেলায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগের মত একটি সাহসী সংগঠনের বিবৃতিতে । কোন কিছু যাতাই বাছাই করার আগেই তাদের পক্ষ থেকে বিবৃতি দেয়া হলো বদরুল ছাত্রলীগের কেউ না ।তাদের এমন বক্তব্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সহ নানা মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় উঠে সবখানেই প্রকাশ পায় ছাত্রলীগের শাবির কমিটির তালিকা প্রকাশের সেই পেড । মাননীয় প্রধানমন্ত্রী খাদিজার উপর হামলার ব্যাপারে বলতে গিয়ে বলেছেন অপরাধী যে দলের ই হউক না কেন তাকে সাজা পেতেই হবে । মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এমন বক্তবের পর আমরা অনেটা আশ্বস্ত যে কোন ভাবেই খাদিজার উপর হামলাকারী আইনের হাত থেকে কোন ভাবেই রক্ষা পাবে না । মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের মত ই ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছ থেকে এমন বক্তব্য আমরা আশা করে ছিলাম ।কিন্তু বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা সেই সৎ সাহস টুকু দেখাতে পুরো পুরি ব্যর্থ হয়েছে । যা আমাদেরকে শুধু হতাশ ই করেনি বরং করেছে চিন্তিত । কারন আজকের ছাত্র সংগঠনের নেতারা ভবিষ্যতে হয়তো দেশ পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত হবেন । কিন্তু তারা যদি প্রথমেই কোন ছলচাতুরি বা মিথ্যার আশ্রয় নেয় তা হলে আমাডের দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ কোন পথে যাবে সেটা একটা বড় প্রশ্ন ? খাদিজার উপর হামলাকারি এখন আইনের হাতে বন্দি আমরা চাইবো এই হামলার সুষ্ঠ বিচার হবে । আর কোন খাদিজাকে যেন এমন হামলার স্বীকার না হতে হয় ।আর কোন অপবাদ যেন না ছুতে পারে বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে । আমি যখন এ লেখা লেখছি তখন খাদিজা হাসপাতালে জীব ও মৃত্যুর মাঝামাঝি দাড়িয়ে শুধুই মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে । আমাদের একমাত্র চাওয়াই এখন মৃত্যুকে জয় করে সুস্হ্য হয়ে আমাদের মাঝে নতুন জীবন নিয়ে ফিরে আসবে খাদিজা ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.