নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি ও বলতে চাই !

ওয়াসিম ফারুক হ্যাভেন

ব্লগিং হউক সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার।

ওয়াসিম ফারুক হ্যাভেন › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছাত্রসংগঠনকে লাঠিয়াল হিসেবে দেখতে চাইনা ।

২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১:৫৫

বাংলাদেশ আওয়ামী ছাত্রলীগ দীর্ঘ নয় বছর যাবৎ বেশ আলোচিত ও সমালোচিত । সম্প্রতি ছাত্রলীগকে সমালোচিত হতে হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনায় আর এই ঘটনার জন্য ছাত্রলীগ যতটুকু সমালোচনার মুখোমখি হয়েছে তার বেশি সমালোচিত হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ভিসি অধ্যাপক আখতারুজ্জামান । বেশ কদিন ধরেই সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিল, ডাকসু নির্বাচন, আন্দোলনকারী ছাত্রীদের যৌন হয়রানির জের ধরে প্রক্টরকে আটকে রাখা, ফলে অজ্ঞাত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় মামলা করা, অতঃপর তদন্ত ও মামলা প্রত্যাহারের দাবি ইত্যাদি নিয়ে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে । আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রীরা একপর্যায়ে ভিসিকে ঘেরাও করে ভিসি সাহেব আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রীদের কবল থেকে নিজেকে রক্ষার জন্য সাহায্য নেন বর্তমান ক্ষমতাশীন রাজনৈতিক দলের ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ অওয়ামী ছাত্রলীগের । ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক জাকির হোসাইনের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের উদ্ধারকারী দল লাঠি শোঠা রড হকিস্টিক নিয়ে নেমে পরে ভিসি মহোদয়কে উদ্ধার কার্যে । আর ছাত্রলীগের ভিসি উদ্ধার কর্মসূচিতে ছাত্রলীগের হামলায় আহত হতে হয় বাম সংগঠনের নেতা কর্মী ও সাধারণ ছাত্রছাত্রী সহ প্রায় চল্লিশ জনকে । তবে সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় ছিল ছাত্রলীগের নারী কর্মী সহ অন্যান কর্মীরা আন্দোলনরত সাধারন ছাত্রীদের উপর শারীরিক হামলা ও বস্ত্রহরনের ঘটনা ঘটিয়েছে তা সত্যি গায়ে কাঁটা দেওয়ার মতো। কালের বিবর্তনে আমরা হয়তো ভুলে গিয়েছিলাম ২০০২ সালের ২৩ জুলাই মধ্যরাতে কথা কিন্তু ২৩ জানুয়ারি ২০১৮ আবার ও আমাদের নতুন করে মনে করিয়েদিল সেই ২০০২ সালের ২৩ জুলাই মধ্যরাতের কথা । ২০০২ সালের ২৩ জুলাই মধ্যরাতে ছাত্রদলের ক্যাডার ও পুলিশ বাহিনী কর্তৃক বর্বরোচিত হামলার শিকার হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন শামসুন নাহার হলের সাধারণ ছাত্রীরা। ছাত্রীরা সেদিন শুধু নির্যাতনের শিকারই হননি, অনেককেই রাতের আঁধারে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় থানায় এবং আটকে রাখা হয় থানা হাজতে। আমি নিশ্চিত যে , ২৩ জুলাই রাতের সেই ভয়াবহতম স্মৃতি শামসুন নাহার হলে বসবাসকারী প্রতিটি ছাত্রীকে আজও তাড়া করে ফেরে। ২৩ জানুয়ারি উপাচার্যের কার্যালয়ের ভেতরে ছাত্রলীগের রড দিয়ে প্রহারের ঘটনাও কখনো ই ভুলতে পারবেন না নির্যাতিতরা।

২৩ জানুয়ারি যখন আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক আখতারুজ্জামানকে অবরুদ্ধ করে রেখেছিল তখন স্বাভাবিক ভাবেই ভিসির দায়িত্ব ছিল আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে আলোচনায় বসা যেহেতু ভিসি মহোদয় এটা করতে ব্যর্থ হয়েছেন এবং নিজের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত ছিলেন তার নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতা নেওয়া অথচ তিনি সেটা না করে সাহায্য নিলেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের যেমনটি করে ছিলেন ২০০৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য এসএমএ ফায়েজ । সেসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী শাহবাগে বাসচাপায় নিহত হলে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শুরু হয়। ওই সময় প্রথমে পুলিশ শিক্ষার্থীদের বেধড়ক পেটায়। পুলিশি নির্যাতনের মুখে শিক্ষার্থীরা চারুকলায় আশ্রয় নিলে সেখানেও আক্রমণ করে পুলিশ, ভাঙচুর চালায় চারুকলায়। এই নির্যাতন ও ভাঙচুরের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা প্রক্টরের পদত্যাগের দাবি জানায়। আন্দোলনের এক পর্যায়ে রোকেয়া হলের প্রক্টর ও বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য এসএমএ ফায়েজ নিজেদের অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে উদ্ধারে ছাত্রদলের সহযোগিতা চাইলে ছাত্রদলের ক্যাডাররা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। আহত হন অনেক শিক্ষার্থী।
দিন বদলেছে, সরকার বদলেছে, ভিসিও বদলেছেন; কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সরকারি দলের ছাত্র সংগঠনের লাঠিয়াল বাহিনীর ওপর নির্ভরতার বদল হয়নি। আজ ২০১৮ সালেও ছাত্রছাত্রীদের দাবিদাওয়ার স‌ন্তোষজনক উত্তর না দিয়ে সরকারী দলের ছাত্রসংগঠনের নিরাপত্তাবলয়ে আশ্রয় খোঁজেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। ২০০২ সালে শামসুন নাহার হলের বৈধ ছাত্রীরাই নাকি ছিলেন হলের নিরাপত্তার জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি। আর আজ নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের দৃষ্টিতে আখ্যা পেয়েছেন সহিংস ও বহিরাগত হিসেবে। ২০০২ সালে বা ২০০৫ সালে তৎকালীন ছাত্রদল যেমন হায়নার হামলেপরেছিল আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রীদের উপর ২০১৮ তে এর কোন পরিবর্তন হয়নি ।

২৩ জানুয়ারির ঘটনার পর ছাত্রলীগ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বক্তব্যগুলো প্রায় একই। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কতিপয় সহিংস শিক্ষার্থী ও বহিরাগত যুবক রড, লোহার পাইপ, ইট, পাথর নিয়ে উপাচার্য ভবনের তিনটি ফটকের তালা ভেঙে উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে অশালীন বক্তব্য দিচ্ছিল। এক পর্যায়ে উপাচার্যের প্রতি বলপ্রয়োগ ও আক্রমণ করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্য ও শিক্ষার্থীরা মানব বলয় তৈরি করে উপাচার্যকে তার কার্যালয়ে ফিরিয়ে আনে। আর ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বিক্ষোভরতদের উপর হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাদের দাবি, অছাত্রদের কবল থেকে উপাচার্যকে উদ্ধারে গিয়েছিলেন তারা। ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ বলেছেন, ছাত্রলীগ এখানে হস্তক্ষেপ বা মারামারি করতে যায়নি। ছাত্রদল এবং জামায়াত-শিবির এবং কিছু বাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে অবরুদ্ধ এবং তার উপর হামলা করেছে শুনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে সেখানে গিয়েছিল ছাত্রলীগ। একই ধরনের কথা বলেছেন জাকির হোসাইন। তার দাবি, বাইরে থেকে অছাত্র, সন্ত্রাসীদের নিয়ে এসে ক্যাম্পাসে শিক্ষার পরিবেশ অস্থিতিশীল করার জন্য উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করার খবর শুনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা উপাচার্যকে উদ্ধার করতে গিয়েছিল।

যে ছাত্র-ছাত্রীরা নিজেদের ন্যায়সঙ্গতদাবি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবকের কাছে উপস্হিত হয়েছিলেন রাজনৈতিক কারনেই হউক আর ক্ষমতার লোভেই হউক তাদের সেই অভিভাবক তাদের কথা শুনতে বা মানতে পুরোপরি ব্যর্থ হয়ে নিজেকে রক্ষার নাম করে সৃষ্টি করেন এক অরাজগ পরস্হিতি । আন্দোলনরত ছাত্র- ছাত্রীদের মার খেয়ে পরিচয় পেতে হয় বহিরাগত সন্ত্রাসী হিসেবে । আমরা ও চাইনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মত একটি সুপ্রতিষ্ঠিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কোন বহিরাগত সন্ত্রাসীদের দ্বারা আক্রান্ত হউক । তবে ছাত্র-ছাত্রীদের ন্যায়সঙ্গত দাবি আদায়ের আন্দোলন ও কোন গোষ্ঠির দ্বারা আক্রান্ত হবে এটা ও কাম্যনয় । ছাত্রসংগঠন গুলি ছাত্রদের পক্ষে ছাত্রদের ন্যায় সঙ্গতদাবির পক্ষে কাজ করবে কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠির লাঠিয়ালবাহিনী হিসেবে কাজ করবে এটা ও কারো কাম্য নয় ।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ৩:০৫

আবদুল মমিন বলেছেন:

তাওতো ভালো একটা ইতিহাস রচিত হোল , এক সময় এ সকল ছাত্রীরা মা হয়ে তাদের সন্তানদের বলতে পারবে " বাবা পড়া লিখা করতে গেলে কত কস্টইনা করতে হয় ,আহারে আমাদের সময় আমরা কত কষ্ট করেছি নিজেরা পিডা খাইছি ,অন্যরে পিডাইছি ,প্রোক্টর ,শিক্ষক এদের কেও ছাড়িনাই বুজলে বাবা বুজলে?

২| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৮ ভোর ৪:১৩

কানিজ রিনা বলেছেন: আহারে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ, নাপেড়ে
রাস্তালীগ ডেকে আনা। শহরলীগ গ্রামলীগ
থানালীগ সকল এলাকায় অশিক্ষিত লীগরা
দেশ হাতে নিয়েছে। এমন কোনও দিন নাই
পত্রিকায় আসেনা লীগরা দুইগুরুপের হানা
হানী মারামারী। ছাত্রদল বিএনপির কাছে
ছাত্রলীগরা শিক্ষা গ্রহন করেছে যে লাউ সেই
কদু।

৩| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৮:০৩

তারেক_মাহমুদ বলেছেন: খুবই দু:খজনক ঘটনা। আসলে এর জন্য ছাত্রদের রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তি ই দায়ী। ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করা এখন সময়ের দাবী।আপনাকে ধন্যবাদ হ্যাভেন ভাই।

৪| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১০:২২

বিজন রয় বলেছেন: কে শোনে কার কথা!

৫| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১০:৪৫

রাজীব নুর বলেছেন: খারাপ লাগছে বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায় শিক্ষাগ্রহণ না করে আমাদের ভাই বোনেরা এইসব করছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.