নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মাটির ময়না খ্যাত চিত্রপরিচালক তারেক মাসুদ বিশিষ্ট মিডিয়া ব্যক্তিত্ব মিশুক মুনীর " কাগজের ফুল " সিনেমার লোকেশন দেখতে যেয়ে আর ঢাকায় ফেরা হয় নি ।২০১১ সালের ১৩ আগষ্ট মানিকগঞ্জ থেকে ঢাকায় ফেরার পথে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রান হারান তারেক মাসুদ মিশুক মুনীর সহ পাঁচ জন । মর্মান্তিক ওই সড়ক দুর্ঘটনার পর সারা দেশে আলোচনা সমালোচনা ও প্রতিবাদের ঝড় উঠে ছিল । সমগ্র দেশের সাধারন মানুষ এক কাতারে এসে দাড়িয়ে ছিল তথা কথিত এই সড়ক দুর্ঘটনার বিরুদ্ধে । ঐ ঘটনার সবার ই ধারনা হয়েছিল সড়কে তথা কথিত এই ধরনের দুর্ঘটনার হাত থেকে হয়তো জাতি কিছুটা হতে রক্ষা পাবে । কিন্তু বস্তবতা হলো তার উল্টো ।গত ৩ এপ্রিল ২০১৮ রাজধানী কারওয়ান বাজারের মোড়ে বিআরটিসি ও স্বজন পরিবহনের দুটি বাসের রেষারেষির ফলে দুই বাসের চাপায় ডান হাত হারিয়ে মাথায় মারাত্মক আঘাত পান সরকারি তিতুমীর কলেজের স্নাতকের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র রাজীব হোসেন । রাজীব ছিল বড়ই অভাগা তৃতীয় শ্রেনীতে পড়া অবস্হা্য ই ছোট আরো দুই টি ভাই রেখে দুনিয়া থেকে বিদায় নেন মা । রাজীবের মায়ের শোকে তার বাবা ও মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে মারা যান ২০১১ সালে তখন রাজীব আষ্টম শ্রেনীর ছাত্র । খালার বাসায় থেকে লেখা পড়া করে নিজের ও ছোট দুই ভাইয়ের ভবিষ্যৎ স্বপ্নপুরনের পথে হাটছিলেন রাজীব । টিউশনি কম্পিটারের গ্রাফিক ডিজাইনের কাজ আর লেখা পড়া সবই ভাল ভাবে চালিয়ে যাচ্ছিলেন রাজীব । কিন্তু রাজীবের এই পথ চলা বন্ধ হয়ে গেছে দীর্ঘ ১৩ দিন মৃত্যুর সাথে যুদ্ধ করে অবশেষে হার মানতে হলো রাজীব কে । যদি ও পৃথিবীতে রাজীবের জন্য কান্নার তেমন আপন কেউ নেই তবু ও আমার অনুভব আজ দেশের প্রতিটি বিবেকবান মানুষের মনের ভিতরে রাজীবের জন্য কান্না হয়েছে । তবে আমাদের রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে যারা আছেন তাদের আন্তরে কোন আঘাত লেগেছে কি না বা সাধারন মানুষের এই চাপা কান্না তাদের অন্তর ছুয়েছি কি সেটা সব সময় ই প্রশ্নই থেকে যায় ? রাজীব তার ও দুই ভাইয়ের ভবিষ্যৎ স্বপ্ন নিয়ে চলে গেছেন দুনিয়া থেকে । প্রতি দিন কত রাজীবের স্বপ্ন তথা কথিত এই সড়ক দুর্ঘটনার কবর দেয়া হয় তা কে জানে । তবে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির এক পরিসংখ্যান থেকে জানা যায় ২০১৭ সালে বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ৭৩৯৭ জন নিহত ও ১৬ হাজার ১৯৩ জন আহত হয়েছে । আর পুলিশ সদর দপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১৬ সালে ২ হাজার ৫৬৬টি দুর্ঘটনায় ২ হাজার ৪৬৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে ২ হাজার ১৩৪ জন। ২০০৯ সালের হিসাবে ৩ হাজার ৩৮১টি দুর্ঘটনায় ২ হাজার ৯৫৮ জন নিহত ও ২ হাজার ৬৮৬ জন আহত হয়।
সেদিন অর্থাৎ ৫ এপ্রিল ২০১৮ ভোরে নিজ চোখেই দেখেছি রাজধানীর চন্দ্রিমা সুপার মার্কেটের সামনে বিকাশ পরিবহনের দুই বাসের বেপরোয়া প্রতিযোগিতা । ছয় বছর বয়সী মেয়ের জীবন বাঁচাতে দুই বাসের চাপায় পরে মেরুদন্ডের হার গুড়া গুড়া হয়ে জীবন মৃত্যুর মাঝ পথে দাড়িয়ে আছেন ২৬ বছর বয়সী আয়েশা খাতুন । একই দিনে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার মগটুলা এলাকায় ঘটছে এক হূদয়বিদারক ঘটনা বেপরোয়া চালকের নিষ্ঠুরতা প্রকাশ্যে ছেলের চোখের সামনে পিষ্ট করে মারল জন্মদাত্রী মাকে । যখন মায়ের শরীরের উপর বাসের চাকা তখন আমার গায়ের সব শক্তি দিয়ে বাসটাকে ঠেলে সরাতে চেয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া ছেলে তুহিন। কিন্তু তুহিনের ব্যর্থচেষ্টা বাঁচাতে পারে নি মা শিউলি আক্তারকে । আর তুহিনের সেই বাস ঠেলে সরানোর ছবি নিয়ে কিছুক্ষনের জন্য হলেও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদের ঝড় তুলেছিল । ১১ এপ্রিল ২০১৮ রাজধানীর ফার্মগেটে সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে পা হারাতে বসেছেন র্যাংগস প্রপার্টিজের অভ্যর্থনাকারী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী রুনি আক্তার । আজ যখন রাজীবের দুনিয়া ছেড়ে চলে যাওয়া নিয়ে মন খারাপ তখন ই খবরের কাগজে দেখতে হলো হৃদয়ের হাত হারানোর সংবাদ । গোপালগঞ্জে পরিবহন শ্রমিক খালিদ হাসান হৃদয় । কাজ শেষে বাসে করে বাড়ী ফেরার পাথে বাসের পাশ ঘেঁষে একটি ট্রাক যাওয়ার সময় হাত হারান খালিদ হাসান হৃদয় । হৃদয়ের ভাগ্যে কি আছে তা একমাত্র সৃষ্টিকর্তা ই জানেন ।
একটি দুর্ঘটনা একটি মানুষের জীবনের একটি পরিবারের আজীবনে কান্না । আমি আবার ও জোর গলায় ই বলছি এসব কান্না কখনো ই রাষ্ট্রপরিচালকদের কানে প্রশাসনের কানে পৌছায় না । যদি তারা এই কান্না অনুভব করতে পারতেন তা হলে কেমন করে বর্তমান সময়ের নৌ পরিবহনমন্ত্রী জনাব শাজাহন খাঁন সাহেবের মত মানুষ কখনো ই বলতে পারতেন না কেবল গরু-ছাগল চেনার যোগ্যতায় থাকলেই গাড়ি চালানোর লাইসেন্স পাওয়ার যোগ্যতা রাখে । বর্তমান যোগাযোগমন্ত্রী ক্ষমতা নেয়ার পরে মনে পরেছিল ভারতীয় চলচিত্র " নায়ক " এর কথা । হয়তো অনিল কাপুরের মত ওবায়দুল কাদের ও পরিবহন সেক্টরের মাফিয়াদের কালোহাত গুড়িয়ে দিবেন । না আমার সেই স্বপ্ন পুরন হয়নি । এত সব ঘটনা পর তথাকথিত দুর্ঘটনার নামে এত মানুষ খুন করেও রাজধানীসহ সারা দেশের পরিবহন ব্যবসার মাফিয়ারা বিনাদ্বিধায় ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে । জানিনা আর কত রাজীব খুন হলে আর কত হৃদয় বা আয়েশা পঙ্গু হলে আর কত তুহিন মা হারা হলে আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্র ও প্রশাসনের ঘুম ভাঙ্গবে কবে এদেশে সাধারন মানুষ পরিবহন মাফিদের হাত থেকে মুক্তি পাবে ?
২| ১৯ শে এপ্রিল, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৩৮
বাবিতো বলেছেন: আমি নবাগত: দেশের দায়িত্বশীল ব্যক্তি যদি বলে বিভিন্ন চিহ্ন চিনতে পারলে ড্রাইভিং লাইসেন্স দিতে সে দেশে আর নিয়ম কানুন কি ভাই? মানুষের জীবন বড় নয়, বড় হয়েছে আমার রাজনীতি। কোথাই নাই তিনি, কি মোটর শ্রমিক, কি গার্মন্টস, কি পেশাজীবি? দেশে এভাবে চলবে? চলুক? আমার কি? হয়তো কোন একদিন আমারও হতে পারে এরকম?
©somewhere in net ltd.
১| ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ৯:৪৪
রাজীব নুর বলেছেন: আসলে আমরা হাজার চিৎকার চেচামেচি করলেও লাভ নেই। সমস্ত ক্ষমতার মালিক সরকার। সরকারের নড়ে চড়ে বসতে হবে।