নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি ও বলতে চাই !

ওয়াসিম ফারুক হ্যাভেন

ব্লগিং হউক সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার ।

ওয়াসিম ফারুক হ্যাভেন › বিস্তারিত পোস্টঃ

কেন জানি আজ সবই উলোট পালোট?

১৭ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১:১৮

এমন আতংকে আগে কখনোই দিন কাটাই নি। সারা দিন মনের ভিতর এক অজানা ভয় কাজ করে। ফোন বাজলে ধরতে ইচ্ছে করেনা। বন্ধু আত্মীয় স্বজন যারা ফোন করেন সবার ভিতর একই আতংক একই ভয়। প্রতিদিন ই নিউইয়র্ক থেকে বন্ধুরা ফোন করে গত ও মারা গেছে কেউ বলে গত পরশু উনি মারা গেছেন খুবই ভাল মানুষ ছিলেন। আবার কোন বন্ধু ফোন করে ঐ একই কথা আজ ও উনি সে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে কি হয় বলা মুসকিল। ইতালি জার্মান ফ্রান্স স্পেন থাকা আত্মীয় ও বন্ধুর কাছে ও একই কথা। দেশে যারা আছেন তাদের মুখে ও একই কথা। এই একই খবর শুনতে আর ভাল লাগেন না। শুধু মৃত্যুর খবর শুধুই আতংকের খবর। জেল খানার সামন দিয়ে গেলে ও আজ পর্যন্ত ভিতরে যাওয়া হয় নি। তবে এই দীর্ঘ সময়ে নিজেকে চার দেয়ালে বন্দী করে রেখে নিজেকে জেল খানার ঐ বাসিন্দাদের ই মত মন হয়। তার পর ও তো জেল খানায় অনেক মানুষ আছে সবার সাথে আড্ডা দিয়ে ওখানকার বাসিন্দরা সময় পার করতে পারে। কিন্তু আমার এই সময় কেমন যেন এলো মেল একটা দশা কখন নাওয়া কখন খাওয়া কোন কিছুর ই তাল মিলছে না। আচ্ছা জীবনটা এমন হলো কেন আবার কি ফিরে যেতে পারবো অগের সেই চিরচেনা রুপে? ঢাকার শহড়টাকে কেন জানি এখন আর তেমন আপন মনে হয়৷ প্রিয় শহড় ঢাকাকে খুবই অপরিচিত পর মনে হয়। ছোট বেলার যেই বন্ধুকে দেখা মাত্রই বুকে জড়িয়ে ধরে আপন করে নিতাম ওর সাথেও কথা হলো প্রায় চার হাত দুর থেকে। মরন ভাইরাস করোনা সব কিছুই উলোটপালোট করে দিয়েছে। রাষ্ট্র সমাজ ও ব্যক্তিগত দৈনন্দিন জবীনের প্রতিটি কাজের কোন মিল খুঁজে পাইনা। সবকিছুতেই কেমন যেন এলোমে গড়মিল।

ডাক্তার মঈন ও তার বড় ছেলের একটি ছবি খুবই আবেগময় করে তুললো। ডাক্তার মঈনের পা জরিয়ে আছে তার ছেলে। ছবির কেপশনে লিখা করোনার ভয়াবহতায় শুনে বাবার পা ঝাপটে ধরে বাবাকে হাসপাতালে যেতে অনুনয় করছেন ডাক্তার মঈনের ছেলে। কর্তব্যের কাছে পুত্রের আবদার তাচ্ছিল্য করে মানুষকে ভালবেসে মানবতাকে প্রাধান্য দিয়ে মানববতার পেশাকে মনবিক ভেবেই আজ পৃথিবীর মায়া ছেলে চলে গেছেন ডাক্তার মঈন উদ্দিন। ডাক্তার মঈন ছিলেন এক মানব দরদী চিকিৎসক। সর্ব মহলে ‘গরীবের ডাক্তার’ হিসেবে ই পরিচিত ছিলেন সুনামগঞ্জের মঈন উদ্দিন। বুধবার সকালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডাক্তার মঈন উদ্দিনের মৃত্যুবরন করেন। ডাক্তার মঈন শুধু একজন ডাক্তারই ছিলেন না ছিল ভাল সংগঠক ও সিলেটে করোনা যুদ্ধে প্রথম সারির যোদ্ধা ছিলেন। ওসমানী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের উদ্যোগে গঠিত সিলেট করোনা প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কমিটির সদস্য ছিলেন তিনি। এর আগে তিনি এ হাসপাতালের ডেঙ্গু প্রতিরোধ কমিটিসহ আরো কয়েকটি কমিটির দায়িত্ব পালন করেন।

ডাক্তার মঈনের মৃত্যু আমাদের যেমন কাঁদিয়েছে তেমনই আতংকিত ও করেছে। করোনায় আক্রান্ত হয়ে দেশের একজন বিশিষ্ট শিল্পপতির মৃত্যুর করুন কাহিনী অনেকের ফেইসবুক দেয়ালেই ঘুরছে। ডাক্তার মঈনের মৃত্যুর কাহিনী সেটা ও এক আতংকের বিষয়। ডাক্তার মঈন যখন অসুস্হ্য হয়ে হাসপাতালে তখন তার পরিচিত কোন এক জনকে একটা আইসিও অ্যাম্বুলেন্স ব্যবস্হা করে ঢাকায় প্রেরনের ব্যবস্হার কথা বলছিলেন কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস একজন উদিয়মান ডাক্তার হয়ে আইসিও অ্যাম্বুলেন্স তো দুরে কথা করোনায় আক্রান্ত রোগী শুনে সাধারন অ্যাম্বুলেন্স ও তাকে নিয়ে ঢাকা আসতে রাজি হয় নি। কোন মতে একটা অ্যাম্বুলেন্স যোগার করে কোভিট-১৯ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে যেয়ে কোভিট-১৯ এ আক্রান্ত হওয়া একজন স্বাস্থ্য সৈনিককে ঢাকায় আনতে হয়েছে উন্নত চিকিৎসার জন্য। অথচ আমার দেখেছি অনেককে ই এয়ার অ্যাম্বুলেন্স করে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠাতে। এমন কি দুয়েক দিন আগেও আমারা দেখলাম দেশের একজন বয়োজ্যেষ্ঠ বিশিষ্ট আলেমকে উন্নত চিকিৎসার জন্য হেলিকপ্টার যোগে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আনতে। তবে আমাদের সরকার কেন ডাক্তার মঈনদের বেলায় ব্যর্থ?

আজ কেন জানি মনে হয় আমরা পুরোপুরি ভাবে বিবেক ও উপলব্ধি হীন হয়ে পরেছি। তা না হলে যেই মা সন্তানদের জন্য জীবনটাই শেষ করে দেন সেই মা করোনা আক্রান্ত বলে গুজব তুলে তাকে এলাকা ছাড়া করা কি কোন সভ্য সন্তানের পক্ষে সম্ভব? হ্যা আমি সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার নিয়ামতপুর গ্রামে ৯০ বছর বয়সী অমৃতবালা দাসের কথা বলছি। পাশের বাড়িতে ঢাকা থেকে নিকট আত্মীয়রা এসেছেন শুনে তাদের সাথে দেখাকরতে যান অমৃতবালা সেই সুযোগে ছেলেরা তকে করোনা আক্রান্ত রোগী বলে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। এর চেয়ে ও নিষ্ঠুর ঘটনা দেখেছি টাঙ্গাইলের সখীপুরে বনে। করোনার উপসর্গ থাকায় প্রতিবেশীদের অত্যাচারের ভয়ে গাজীপুরের সালনা থেকে গ্রামের বাড়ী শেরপুরের নালিতাবাড়ী যাওয়ার পথে অসুস্হ্য মাকে গভীর জঙ্গলে ফেলে রেখে পালিয়ে যায় সন্তানেরা।

অমানবিকতার কোন পর্যায়ে আমরা পৌঁছেছি তার প্রমান ঢাকার কেরানীগঞ্জে ত্রাণ দেয়ার নাম করে ১০ বছরের কন্যা শিশুকে ধর্ষন করে স্হানীয় ইউপি সদস্য মীর খলিল। ত্রান দেয়াট নাম কটে চার ঘন্টা নিজ বাড়ীতে আটকে রেখে মানুষরূপী জানোয়ার খলিল ধর্ষন করে শিশু মেয়েটিকে। বরগুনার তালতলী ইউনিয়নের মেম্বার আনোয়ার খান ও মানুষরূপী আরো এক জানোয়া ত্রান দেয়ার নাম করে স্হানীয় বিশ বছরের এক গৃহবধূ কে ধর্ষন করে। নাটোরের লালপুরে উপোস পরিবার ও প্রতিবেশীর জন্য ত্রান চাইতে সরকারি হটলাইনে ফোন করেছিলেন শহিদুল ইসলাম।এতো বড় অপরাধে সহ্যকরতে না পরে শহিদুলকে মেরে রক্তাক্তনকরেছেন ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস সাত্তার।
একদিকে করোনায় মৃত্যুর ভয় অন্যদিকে পেটের ক্ষুধা সবই আমাদের দুমরে মুচরে দিচ্ছে আমাদের। ক্ষুধার্ত মানুষের মুখের খাবার নিয়ে নিলজ্জ বেহায়াপনা। যে যেই ভাবে পারছে চুরি করে নিজেদের পকেট ভারী করছে গরীবের ত্রান চোর কিছু কিছু জনপ্রতিনিধি ও স্হানীয় রাজনৈতিক নেতারা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চাল চোরদের বিরুদ্ধে কঠিন হুশিয়ারী প্রদান করলে ও কে শোনছে তার। চোরে শোনেনা ধর্মের কাহিনী তার পর ও আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের সাধ্য মত চেষ্টা করছেন এই চোরদের দমাতে। চাল চোর তেল চোরদের উৎপাতে মনে হচ্ছে জাতিরজনককে সেই চোরের খনির কথা। এখন ও মনে হচ্ছে পুরো দেশটাই বোধ হয় একটা চোরের খনি। করোনার এই ভয়ংকররূপ না দেখলে আমরা হয়তো বুঝতে ব্যর্থ হতাম কত নিষ্ঠুর নিলজ্জ মানুষ গুলি আমাদের জনপ্রতিনিধি আমাদের রাজনৈতিক নেতা।

চীনের করোনার ভয়াবহতার পর সময় পেয়েও আমাদের দূর্নীতিগ্রস্হ স্বাস্হ্য মন্ত্রনালয় কার্যকর প্রতিরোধ গড়েনি। সেই শুরু থেকেই আমরা শুনে আসছি সবঠিক আছে। চাটুকারিতায় সব ঠিক ছিল কিন্তু করোনা মোকাবিলার প্রস্তুত মোটেও ছিল না। আর করোনারন ভয়াবহতা ও যে কি তা ও হয়তো আমাদের সরকারে থাকা অনেক কর্তাব্যক্তি অনুধাবন করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। তাই হয়তো উহানে করেনার শুরুতে দেশের খ্যাতনামা সাংবাদিকের করেনা মোকাবিলায় আমাদের সরকারের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে স্বস্হ্য মন্ত্রণালয়ের একজন উর্দ্ধতন তাকে ও বলেছিল সব ঠিক আছে। তার ঠাট্টার ছলে বলেছিলেন আপনি কি বাদুড়ের স্যুপ খান। কাটন তথন পর্যন্ত হয়তো তাদের ধারনা ছিল বাদুড়ের স্যুপ ভক্ষনকারীরা ই শুধু করোনায় আক্রান্ত হবে। তাই হয়তো তারা ভেবে ছিলেন সব ঠিক আছে। কিন্তু আজ সবই উলোটপালোট। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে নারায়ণগঞ্জের ডাক্তার শামসুদ্দোহার যখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কছে করোনা পরীক্ষার জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ পিসিআর ল্যাব ও এন-৯৫ মাস্ক চাইলেন নারায়ণগঞ্জের খানপুর ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের জন্য। শিল্প-প্রতিষ্ঠান অধ্যুষিত বন্দরনগরী ও জনবহুল নারায়ণগঞ্জ জেলায় কোনও গবেষণাগার নেই শুনে মাননীয়বপ্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমি অবাক হচ্ছি, সেখানে কোনও গবেষণাগার নেই? বাস্তবতা হলো এই ছিল আমাদের স্বাস্থ্য বিভাগের করোনা নিয়ে প্রস্তুতি, এই হলো আমাদের স্বাস্থ্য বিভাগের সব ঠিক অবস্হা। তাদের ঔ সব ঠিকের খেসারত আজ পুরো জাতিকে দিতে হচ্ছে তা ও আবার জীবন দিয়ে।


মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ২:৩৪

রাজীব নুর বলেছেন: আল্লাহ যখন কোনো জাতির অমঙ্গল চান তখন সেই জাতির মধ্যে বিতর্কের দরজা খুলে দেন এবং তাদেরকে কাজ থেকে ফিরিয়ে রাখেন।

২| ১৭ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ২:৪৫

নেওয়াজ আলি বলেছেন: আল্লাহ আল্লাহ করা ছাড়া আর কোন উপায় নাই

৩| ১৯ শে এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৪:৫৪

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: আমাদের নৈতিক অবক্ষয়গুলো আজ প্রকটভাবে ফুটে উঠছে। বহুদিন ধরে আমরা এগুলিকে এড়িয়ে গিয়েছি। এখন আর চাইলেও ঢাকতে পারছি না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.