নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেশের খ্যাতনামা এক ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিদ বহুল প্রচারিত একটি দৈনিকের সাক্ষাতকারের শিল্পকারখানা খুলে দেয়ার ব্যাপারে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন বেশির ভাগ দেশ শিল্পকারখানা খুলে দিচ্ছে। আমাদেরও খুলতে হবে। তিনি তার সাক্ষাতকারের আরো বলেন, বিজিএমইএর একটি নীতিমালা ও সরকারের স্বাস্থ্য বিধির কথা বলেছেন। সেই সাথে আমাদের তৈরি পোশাক খাতে আমাদের প্রতিযোগী চীন ও ভিয়েতনাম শিল্পকারখানা খুলে দেওয়ায় আমাদের তৈরি পোশাক কারখানা গুলি তাদের অর্ডার বা কার্যাদেশ হারাতে পারে বলে তিনি মনে করেন। তিনি দোশের এক জন খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ ও সর্বজন গ্রহনযোগ্য একজন ব্যক্তি। তার চিন্তাধারা নিয়ে বিশ্লেষণ বা সমালেচনার যোগ্যতা আমার নেই।
তার দৃষ্টি ভঙ্গি ও মন্তব্য দেশ ও জাতির স্বার্থে অবশ্যই গ্রহনযোগ্য তবে আমাদের দেশ ও রাষ্ট্র ব্যবস্হায় এর প্রয়োগ ও গ্রহনযোগ্যতা নিয়ে ই থেকে যায় প্রশ্ন। স্বাধীনতার পর থেকে প্রতিটি সরকাই আমাদের দেশে শ্রমিকের কে পুতুল নাচের পুতুলে পরিনত করেছে। তথাকথিত শ্রমিক সংগঠন গুলি তাদের ব্যক্তি স্বার্থ হাসিলের জন্য সংগঠনকে ব্যবহার করে আসছে। শ্রমিক সংগঠনের নেতারা ও এই পুঁজিবাদীদের ই একটি অংশ।
আমাদের রপ্তানি আয়ের বড় অংশ ই আসে পোশাক শিল্প থেকে এটা যেমন সত্যি। এই শিল্পের শ্রমিকদের করুন কাহিনী ও আমরা প্রতিনিয়ত ই শুনি। পোশাকশিল্প মালিকদের পেটের ক্ষুধা মিটানোর জন্য অনেক শ্রমিকেই জীবন দিতে হয়েছে। ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুর তাজরীন ফ্যাশনস লিমিটেড এর ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের প্রায় ১১৭ পোশাক শ্রমিকের জীবন দিতে হয়ে ছিল। এই ঘটনার পর সংসদের এক আলোচনায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, “এটি কোনো দুর্ঘটনা নয়, এ ঘটনা পরিকল্পিতভাবে ঘটানো হয়েছে”। বাংলাদের পোশাক শিল্পের বড় ট্র্যাজেডি সাভারের রানাপ্লাজা। ২৪ এপ্রিল ২০১৩ সাভরের রানাপ্লাজার পুরো ভবন ধসে পরে। এ দূর্ঘটনায় প্রায় ১২০০ জন শ্রমিক নিহত এবং দুই হাজারেরও বেশি মানুষ আহত হয় যা বিশ্বের ইতিহাসে ৩য় বৃহত্তম শিল্প দুর্ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। এছাড়াও আরো বেশ কিছু দুর্ঘটনায় অনেক শ্রমিকেই জীবন দিতে হয়েছে। বিশ্বজুড়ে করোনার থাবায় আমাদের রপ্তানিখাত বিশেষ করে পোশাক খাত বিরাট হুমকির মুখে। আমাদের পেশাক শিল্পে এরই মধ্যে সংকট দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশে এই শিল্প টিকে আছে ইউরোপ এবং আমেরিকার বাজারের উপর নীর্ভর করে। সেসব দেশে করোনাভাইরাসের ব্যাপক সংক্রমণের ফলে বহু পশ্চিমা ক্রেতা বাংলাদেশ থেকে তাদের অর্ডার বাতিল কিংবা স্থগিত করছেন। যা আমাদের অর্থনীতির জন্য মোটেও সুখকর নয়।
তৈরি পোষাক রপ্তানিতে আমাদের মুল প্রতিদ্বন্দ্বী চীন ও ভিয়েতনাম করোনার থাপা প্রথমই আঘাত হানে চীনে। একটি অপরিচিত মরন ভাইরাসের আক্রমন চীন কিভাবে প্রতিহত করছে তা বিস্ময় করছে। আর যদি আসি ভিয়েতনামের কথা এরা তো করোনা প্রতিরোধে আশ্চর্য করছে বিশ্ববাসীকে ১০ কোটি মানুষের দেশে মাত্র ২৬৮ আক্রন্তের মধ্যে কোন মৃত্যু ছাড়াই নিয়ন্ত্রণ করেছে করোনাকে। কিন্তু আমারা করোনা নিয়ে যা তা কোন সুস্হ্য পৃথিবীতে গ্রহনযোগ্য হতে পারে না। ইতোমধ্যে আমাদের করেনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার খুবই উদ্বেগজনক। প্রতিদিন ই আক্রান্তের সূচক উপরে দিকে। আবার যথেষ্ট পরীক্ষা ও হচ্ছেনা পরীক্ষা হলে ও ফলাফল যথাসময়ে পাওয়া যাচ্ছে না। ঢাকা ফেরত পিরোজপুর সদর উপজেলার এক গার্মেন্ট কর্মীর নমুনা পরীক্ষায় জানা গেছে তিনি করোনা পজিটিভ। কিন্তু রিপোর্ট আসার আগেই তিনি ঢাকার আশুলিয়ায় তার কর্মস্থলে যোগ দিয়েছেন। ২৮ এপ্রিল পিরোজপুর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এম ই এক ভয়ংকর তথ্য জানিয়েছেন। যা রীতিমতো আঁতকে উঠার মত। ২৩ এপ্রিল নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য বরিশালে পাঠানো হলে ২৭ এপ্রিল রাতে তারা রিপোর্ট হাতে পান। এর মধ্যে যা হবার তা হয়ে গেছে ২৫ এপ্রিল তাকে চাকরির রক্ষায় আশুলিয়া আসতে হয়। সব জায়গাই দায়িত্বজ্ঞান আর পেটের ক্ষুধা নিয়েই প্রশ্ন।
গত কয়েক দিন আমরা জনপ্রতিনিধি ও স্হানীয় রাজনৈতিক নেতাদের সাধারন মানুষের সরকারী খাদ্য সহায়তা নিয়ে তো আর ঘৃনিত কান্ড দেখলাম। তবে সবচেয়ে হতাশ করছে আমাদের তৈরী পোশাক করখানার মালিকদের কান্ড দেখে। গত ৫ এপ্রিল যখন কারখানা খোলার সিদ্ধান্ত হয় তখন ঢাকামুখি মানুষের ঢল নিঃসন্দেহে ছিল একটা অমানবিক কাজ। পেটের ক্ষুধা, চকুরি রক্ষা আর করোনায় মৃত্যুর ভয় তারা করছিল আমাদের শ্রমিক ভাইবোনদের। এর পর যখন নানা মুখি সমালোচনার মুখো মুখি হতে হয় শিল্প মালিকদের তারনপর তারা সরকারের পরবর্তী ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটির সাথে তাদের ছুটি ও বর্ধিত করেন। এর পর গত ২৫ এপ্রিল বিশেষ স্বাস্থ্য বিধি মানার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সীমিত পরিশরে কারখানা চালুর করা
হয়। কিন্তু বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে আমরা যা দেখলাম তা হলো বেশিরভাগ কারখানাই কোন ভাবেই স্বাস্হ মানা হয় নি রবং সেই গাদাগাদি পরিবেশেই চলছে অধিকাংশ কারখানা। পোশাক শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে ইতোমধ্যেই দুই শতাধিক গার্মেন্ট শ্রমিক করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। যা সত্যি উদ্বেগের বিষয়। এর মধ্যে প্রতিদিন ই খবর আসছে বিভিন্ন স্হানে বেতনের দাবীতে পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভ ভাংচুরের কাহিনী। সরকার ইতোমধ্যে শ্রমিকদের বেতন পরিশোধের জন পোশাক শিল্প মালিকদের পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা দেিয়ার পর ও কেন শ্রমিকদের বেতনের জন্য আন্দোলন করতে হবে এটা কোন ভাবেই মেনে নেয়া যায় না। কেন মালিকরা তাদের শ্রমিকদের বেতন দিতে ব্যর্থ হচ্ছেন কেন শ্রমিকরা বেতনের জন্য আন্দোলন করছেন তা একটি বার ও কি সঠিক ভাবে বিজিএমইএ ও সরকার ভেবে দেখেছেন?
আমাদের দেশে করোনা ভাইরাসে আক্তান্ত রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যা প্রতিদিন ই বেড়ে চলছে। তার মধ্যে সীমিত পরিশরে খোলার কথা বলে একে একে অনেক কারখানাই খুলে দেওয়া হচ্ছে। যেখানে শারীরিক দুরত্ব স্বাস্থ্য বিধি কোন ভাবেই মানা সম্ভব না। করোনা একটি ভয়াবহ ছোয়াচে ভাইরাস আর তৈরী পোশাক করখানায় প্রতিটা কাজেই একে অপরের সাথে সম্পৃক্ত তাই এখানে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা যথেষ্ট ভাবেই থেকেই যাচ্ছে। সিঙ্গাপুর ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি অ্যান্ড ডিজাইনের (এসইউটিডি) ডেটা ড্রাইভেন ইনোভেশন ল্যাবের গবেষকদের মতে বাংলাদেশ থেকে ১৯ মের মধ্যে ৯৭ শতাংশ, ৩০ মে মধ্যে ৯৯ শতাংশ বিলীন হবে আর পুরোপুরি বিলিন হতে সময় নিবে ১৫ জুলাই। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) রোগতত্ত্ববিদ এবং ভাইরোলজিস্টদের মতে, বাংলাদেশে সব মিলিয়ে দুই ধাপে করোনার সর্বোচ্চ সংক্রমণ হতে পারে। প্রথমটি হতে পারে মে থেকে মে মাসের শেষ নাগাদ। তবে সর্বোচ্চ সংক্রমণ দুই মাসের মধ্যেই ঘটবে। সে হিসেবে মধ্য জুন পর্যন্ত যেতে পারে। অবশ্য এসব কিছুই নির্ভর করছে করোনা নিয়ন্ত্রণে দেশে নেওয়া কর্মসূচিগুলো ঠিক কতটা সঠিকভাবে মানা হয়, সেটার ওপর। আমাদের বর্তমানে করোনার যে সংক্রমণের হার তাতে কোন তথ্যেট উপর ভিত্তি করে সিঙ্গাপুর ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি অ্যান্ড ডিজাইন (এসইউটিডি) এমন রিপোর্ট তৈরি করছে তা নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন থেকে যায়। ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) শ্রমিকদের কাজে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য সুরক্ষা না দিলে করোনা ভাইরাসের মহামরি আশংকা করে এক বিবৃতি ও দিয়েছে। বিবৃতিতে বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে আইএলওর বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর টুমো পটিআইনেন বলেন, ‘যেহেতু কিছু কিছু শিল্প ধীরে ধীরে কার্যক্রম শুরু করছে, আইএলও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নিরাপদে কাজে ফিরে আসা নিশ্চিত করতে একটি তিন ধাপের কৌশল তৈরি করেছে। প্রথম পদক্ষেপ হলো নিয়োগকারী ও শ্রমিকের মধ্যে আলোচনার ওপর ভিত্তি করে কাজের জন্য বেশ কয়েকটি সুরক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গ্রহণ এবং করোনাভাইরাসের ঝুঁকি ভাগ করে নেওয়া।’
উৎপাদন বন্ধ করে অর্থনীতির চাকা সচল রাখা সম্ভব নয়। তবে অর্থনীতির চাকা সচল করতে গিয়ে করোনার ভয়াবহ থাবা যদি কড়াল ভাবে গ্রাস করে আমাদের দেশে মহামরির মহাবির্পযয় নেমে আসে তবে সেই বির্পযয় থেকে দেশের মানুষকে রক্ষা করা খুবই মুশকিল হয়ে যাবে। ইতোমধ্যে আমাদের স্বাস্থ্য খাতের বেহাল দশার কথা আমাদের সকলের কাছেই স্পষ্ট। আমারদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যথাসাধ্য চেষ্টা করে ও বিশেষ বিশেষ কারনে মানুষকে পুরিপুরি ঘরমুখি করতে পারেনি। এর পর কারখানা খুলেদেয়ার কারনে শিল্পাঞ্চলে লোক সমগম কয়েকগুন বেড়ে যাচ্ছে। তাই সব মিলিয়ে করোনার ভয়াবহতা আমাদের কোন দিকে নিয়ে দাঁড় করা তা বলা খুবই মুশকিল। তবে এতটুকু আশা করবো দেশের অর্থনীতির পাশাপাশি দেশের মানুষকে করোনার ভয়াবহ ছোবল থেকে রক্ষাকরতে সরকার ও কারখানার মালিকের শ্রমিকের শারীরিক ও মানসিক সুরক্ষার প্রতি যথাযথ গুরত্ব দিবেন।
২| ৩০ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১:৩৯
নেওয়াজ আলি বলেছেন: হতাশা গ্রাস করলে মানুষ জ্ঞান শূ্ণ্য হয়ে পড়ে
৩| ৩০ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১:৪১
আমি ব্লগার হইছি! বলেছেন: এখন তারা কোন কথা শুনবে না, জোর করে সব খুলে দিতে পারে। কিন্তু অন্ধ হলেও প্রলয় বন্ধ হয় না। মার্কেট, কারখানায় যখন একজন দুইজন করে দশজন আক্রান্ত হবে তখন আবার সব বন্ধ করতে বাধ্য হবে।
৪| ৩০ শে এপ্রিল, ২০২০ ভোর ৪:৩১
রুদ্র নাহিদ বলেছেন: লাশের ওপর দিয়ে চাকা ঘুরে যাবে....
©somewhere in net ltd.
১| ৩০ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১২:৫২
রাজীব নুর বলেছেন: করোনা আর আমরা খেলছি -
কাবাডি ...
কা বা ডি ...