নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি ও বলতে চাই !

ওয়াসিম ফারুক হ্যাভেন

ব্লগিং হউক সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার ।

ওয়াসিম ফারুক হ্যাভেন › বিস্তারিত পোস্টঃ

সাম্প্রদায়িকতার নয় চাই সম্প্রীতি বাংলাদেশ।

০৯ ই মে, ২০২০ রাত ১২:৫৭

মানুষের ভিতর ধর্মীয় প্রবনতা আবেগ অনেক সময় এমন ভাবে কাজ করে যা মানুষকে উগ্র কট্টরপন্থীতে পরিনত করে। তখন মানুষ অনেকটা হিতাহিত জ্ঞান হরিয়ে একউগ্র কট্টর ধর্মীয় মৌলবাদী নীতি বশ্বাস করে অনেকটা যন্ত্রমানবে পরিনত হয়। আর এই উগ্র মৌলবাদীদের বিশ্বাস ই কখনো কখনো মানব সভ্যতাকে ধ্বংসের প্রান্তে এনে দাড় করিছে। এর প্রমান আমরা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে চলে আসছে। ধর্মের নামে হিংসা যুদ্ধ বিগ্রহ দাঙ্গা আজো শেষ হয়ে যায় নি যতদিন এই পৃথিবী থাকবে পৃথিবীতে ধর্ম থাকবে ততো দিন ই ধর্মের নামে একটি স্বার্থান্বেষী মহল নিজের হীন স্বার্থ হাসিলের জন্য ধর্মের অপব্যাখা ধর্মীয় হিংসা ও সন্ত্রাস কে টিকিয়ে ই রাখবে। সম্প্রতি আমাদের দেশের দুটি ঘটনা যারা প্রগতিশীল ও মুক্তচিন্তা ও চর্চায় বিশ্বাসী তাদের অনেকটা বেকায়া ফেলে দিয়েছে ।

বিদ্যান্দ ফাউন্ডেশন বর্তমান সময়ের একটি আলেচিত জনপ্রিয় নাম।বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন হলো সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের শিক্ষা সহায়ক একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। ২০১৩ সালের ২২ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মৌলিক শিক্ষা, এক টাকার বিনিময়ে খাবার, এক টাকায় চিকিৎসা দিয়েই এই সংস্হার যাত্রাশুরু। বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠাতা দক্ষিণ আমেরিকার দেশ পেরুতে বসবাসরত বাংলাদেশী স্বপ্নবাজ যুবক কিশোর কুমার দাশ। চাকরি করছেন সেখানকার শীর্ষস্থানীয় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উচ্চ পর্যায়ে। বিদ্যান্দ ফাউন্ডেশন গড়ার পিছনে কিশোর কুমার দাশের জীবনের বিভিন্ন সময়ের ঘাতপ্রতি ই মুল কারন ছিল। কিশোর কুমার দশের সম্পর্কে জানাতে হলে বলতে কিশোরের জন্ম যদি ও নারায়ণগঞ্জে তবে বাবার সরকারি চাকরিসূত্রে বেড়ে উঠেছেন চট্টগ্রামের কালুরঘাটে। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে কিশোর তৃতীয়। নিম্নবিত্ত পরিবারে জন্ম বলে অবহেলা, বঞ্চনা আর দারিদ্র্যের সংগ্রামে নিজেদের টিকিয়ে রাখাটাই তাদের কাছে দুঃসাধ্য ছিল। পরিবারে এক বেলার খাবারের জোগান হলে মাথায় রাখতে হতো অন্য বেলার কথা। পাশে ছিল না কোনো প্রতিবেশী কিংবা কাছের কোনো আত্মীয়স্বজন। কখনো কখনো অনেকে থেকেও যেন নেই।পরিবারের এমন আর্থিক অনটন যখন তাদের পিছু ছাড়ছে না তখন একবার আত্মহত্যার পথে ও পা বাড়াতে চেয়েছিলেন কিশোর। সৌভাগ্যবশত সে যাত্রায় তিনি বেঁচে যান। এরপর অসংখ্য বাধাকে তুচ্ছ করে নিজের স্বপ্নের দুয়ারে পৌঁছেন তিনি। সেই স্বপ্নবাজ কিশোর কুমার দাশ এখন একজন সফল উদ্যোক্তা। দক্ষিণ আমেরিকার দেশ পেরুতে তিনি বসবাস করছেন। চাকরি করছেন সেখানকার শীর্ষস্থানীয় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উচ্চ পর্যায়ে। ২০১১ সালে কিশোর যখন প্রতিষ্ঠিত তখনো স্ত্রীর সাথে সম্পর্কের বিচ্ছেদ ঘটার পর ও হতাশা গ্রস্হ্য হয়ে কিশোর ছোট বেলার ঐ কাজটি আবারো করার চেস্টা করেন। এই যাত্রায় ও কিশোরকে বিধাতা রক্ষা করেন। এর পর থেকেই কিশোরের মনে মানব কল্যানের জন্য কাজে নামার মনোভাব তৈরি হয়। পেরুতে বসেই পরচিত জনদের সহযোগিতায় নারায়নগঞ্জ রেলস্টেশনে অসহায় পথ শিশুদের শিক্ষা আহার স্বাস্থ্য সেবায় " পড়বো . খেলবো . শিখবো " স্লোগান নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন বিদ্যান্দ ফাউন্ডেশন। বর্তামানে সারাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এই সংগঠনটির বরোটি শাখা আছে। যার মাধ্যমে মানব সেবার প্রতিটি কাজের ই তারা এগিয়ে। তবে এবারে দেশের করোনার ক্রান্তিলগ্নে বিদ্যান্দ ফাউন্ডেশনের ভুমিকা সত্যি প্রশংসনীয়।

গত কয়েক দিন আগে অর্থাৎ ৫ মে বিদ্যান্দ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা কিশোর কুমার দাশ প্রতিষ্ঠানটির সর্বোচ্চ পথ থেকে অব্যাহতি চেয়ে একটি আবেদন করেন। আর এই আবেদনের পর থেকেই একটি নোংরা ধর্মীয় উগ্রবাদী মহল এটা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার পায় তারায় লিপ্ত। বিদ্যান্দ অর্থটা এমনই দাড়ায় বিদ্যার মধ্যে আনন্দ অর্থাৎ আনন্দের মাধ্যমে বিদ্যা অর্জন করা। তার লক্ষ্যে অসহায় শিশুদের জন্য যা যা করার দরকার তার প্রায় পুরোরাই করতে চেস্টা করে যাচ্ছেন বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন।
এই বিদ্যান্দ নামটি নিয়ে ও নাকি অনেকের আপত্তি। বিদ্যান্দের ফেইসবুক পেইজের তথ্যমতে, বিদ্যানন্দ নামটি দিয়েছেন এক মুসলিম ব্র্যান্ড এক্সপার্ট। 'আনন্দের মাধ্যমে বিদ্যা অর্জন' এই লক্ষেই তিনি এই নাম দিয়েছিলেন। অনেকেই ব্যক্তির নাম থেকে বিদ্যানন্দ নামের উদ্ভব ভেবে ভুল করেন। তবে ধর্মীয় ধারনা আসতে পারে বলেই বছর দুয়েক আগে নামটি পরিবর্তনের জন্য একটি প্রস্তাব ও রাখা হয় কিন্তু সেই প্রস্তাব সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবীরা মেনে নেয় নি।

আমাদের দেশে একটি বহুল প্রচলিত " প্রবাদ নামে না কাজে পরিচয় "। অন্ধ ছেলের নাম পদ্মলোচন রাখলে ও কোন লাভ হবে না। তাই নাম যাই হউক কাজটাই শ্রেয়। তাই হয়তো অনেক কট্টর মুসলিম এই বিদ্যান্দ নামের মর্মভেদ কে অন্যভাবে নিয়েছেন তাদের ধারনা হয়তো এই বিদ্যান্দ ফাউন্ডেশন যার প্রধান একজন হিন্দু এরা হয়তো ভুলিয়ে ভালিয়ে মুসলমান শিশুদের হিন্দু ধর্মে দীক্ষিত করা চেষ্টা করছে। অথচ তারা হয়তো কোন ভাবেই অবগত নন যে এই বিদ্যান্দ ফাউন্ডেশন স্বেচ্ছাসেবীদের অধিকাংশ ই মুসলমান। যাই হউক ৫ মে তারিখে যখন কিশোর কুমার দাশের বিদ্যান্দ ফাউন্ডেশনের প্রধানের পদ থেকে অব্যাহতির কথা প্রকাশ পায় তখন কিছু অখ্যাত সংবাদ মাধ্যাম এটাকে একটি ভিন্ন রূপে রূপান্তরিত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়। আর সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আরো একটি ধর্মান্ধ উগ্র গোষ্ঠী এমন ভাবে বিষয়টিকে উপস্হাপনের চেষ্টা করছেন যা সত্যি ঘৃনিত। তাদের মতে কিশোর শুধু মাত্র হিন্দু হওয়ার করনেই মুসলমানদের বিভিন্ন চাপের কাছে নতিস্বীকার করেই তাতে এই পদ ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে। তাদের ধারনা মতে মাতে বাংলাদেশে হিন্দুদের অস্তিত্ব বিপন্ন হওয়ার পথে। যারাই এমন উস্কানিমূলক কথা বলছেন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিদ্বেষ মুলক পোষ্ট করছে তাদের মনে রাখা উচিত আমাদের যোগ্যতার ভিত্তিতে মন্ত্রীপরিষদের সদস্য থেকে প্রতিটি পদেই বিভিন্ন ধর্মের মানুষ বিভিন্ন পদে অধিষ্ঠিত আছেন। এমন কি কিশোর কুমার দাশ ও তার স্ব পদে বহাল আছেন। আর যে কোন সংগঠনে ই একটি নির্দিষ্ট পদ পদবী কখনোই চিরস্হায়ী না। এটা গনতান্ত্রিক নিয়ম ও না আর এমনটি হলে সেটা কোন সংগঠের জন্য কল্যান ও বয়ে আনতে পারে না।

যারা ধর্মীয় উগ্রবাদ ও উস্কানিতে বিশ্বাসী আমি তাদের বলতে চাই বাংলাদেশ যুগ যুগ ধরে ধর্মীয় সম্প্রীতি উপর ভিত্তি করেই চলে আসছে। ১৯৭১ সালের মহান মুক্ত যুদ্ধে আমার মুল মন্ত্রই ছিল অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত করা। আজো আমাদের দেশে রোজা ও পুজা ঈঁদ ও বড়দিন একসাথে পালিত হয়। আমার সবচেয়ে প্রিয় যেই বন্ধুরা আছেন তাদের অনেকেই হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান। প্রতিটি পার্বণ ই আমরা একে অপরের সহযোগি হয়ে পালকরি। আগেই বলেছি আমাদের এই সম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার জন্য শকুনের চোখ সব সময়ই তাক হয়ে আছে। ঐ শকুনদের কিছু তান্ডব আমাদের ব্যথিত ও আতংকিত করে। এই তো সেদিন ৩ মে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলা চরম্বা ইউনিয়নের বিবিরবিলা শান্তিবিহারে রাতের আধারে হামলা শান্তি বিহারেন। এলাকার মাছ ব্যবসার ঘটনা কে কেন্দ্র করে জনৈক রকি বড়ুয়ার সঙ্গে স্হানীয় কয়েক জনের বিরোধের কারনেই এই হামলা। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের সংবাদে জানাযায় স্হানীয় সাংসদ ও সরকার দলীয় স্হানীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে এই হামলা। আর আগে ও কক্সবাজারের রামু ব্রাহ্মন বাড়ীর সহ দেশের অনেক স্হানেই কিছু স্বার্থন্বেষী মহল তাদের ব্যক্তিগত বা রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সম্পত্তি বা ধর্মীয় উপাসনালয়ে হামলার ঘটনা আমরা দেখেছি। অবশ্য এর জন্য সরকার ও যথাযথ ব্যবস্হা নিয়ে তা নিয়ন্ত্রন করে দোষীদের আইনের আওতায় আনতে স্বার্থক হয়েছে। ধর্মীয় উগ্রবাদীদের নানা ধরনের অপতৎপরতা শুধু কি আমাদের বাংলাদেশ ই হয়? না মোটেও না কয়েকদিন আগে ভারতের দিল্লির তে হিন্দু উগ্র মৌলবাদীদের যে নারকীয় তান্ডব বিশ্ববাসী দেখেছে তা সত্যিই ভারতের মত একটি প্রগতিশীল গনতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য লজ্জাজনক। এর আগে ও ২০০২ সালে ভারতের গুজরাটে ও ঘটেছিল ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা তাদেও অনেক মানুষকে মৃত্যুবরন করতে হয়েছিল। আফগানিস্তানের তালেবান বা মধ্যপ্রাচ্যের আল কায়েদা বা ইসলামিক স্টেট নামের ধর্মীয় উগ্র মৌলবাদী জঙ্গি সংগঠন গুলি সারা বিশ্বের শান্ত বিনষ্টের অন্যতম কারন হয়ে দাড়িয়েছে। ধর্মান্ধতাকে কাজে লাগিয়ে ধর্মীয় উগ্রবাদের থাবা আজ বিশ্বব্যাপী।

মানবতার কোন দল ধর্ম বা গোষ্ঠী থাকেনা বা থাকতে নাই। যে মানবতায় বিশ্বাস করে তার কাছে মানুষই প্রাধান্য। তবে মনবতার মুখোশের আড়ালে কেউ যদি কোন বিদ্বেষ মুলক কাজ করে ও গ্রহনযোগ্য নয়। কিশোর কুমার দাশ ও তার সংগঠনের কর্মীরা নিঃসন্দেহে মানবতার ফেরিওয়ালা। তাই তাদের নিয়ে কোন স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর নানান অপ চেষ্টা কখনোই স্বার্থক হয় নি হবে ও না। আর লোহাগাড়ার বৌদ্ধ মন্দিরে হামলা ও ভাঙচুরের সাথে যে বা যারাই জড়িত সে যতই ক্ষমতাধর হউক না কেন তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় এনে বিচারের মাধ্যমে উপযুক্ত বিচার কার্যকর করতে পারলেই ধর্মীয় উগ্রবাদের কালো থাবা থেকে আমাদের অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশেকে মুক্ত করা সম্ভব।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই মে, ২০২০ রাত ১:২৬

রাজীব নুর বলেছেন: ধর্ম নয় মানবতাই আসল।
ধর্ম থেকে দূরে থাকো, মানবতাকে আকড়ে ধরো।

২| ০৯ ই মে, ২০২০ রাত ২:৪৫

নেওয়াজ আলি বলেছেন: চমৎকার লেখা। মানুষের জন্য মানুষ। জয় হবে মানবতার

৩| ০৯ ই মে, ২০২০ রাত ২:৪৯

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: ধর্মও থাকবে আবার সম্প্রীতিও থাকবে এতো দেখছি সোনার পাথর বাটি।

৪| ০৯ ই মে, ২০২০ রাত ৩:১১

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: শেষের দিকে বিচারের কথা শুনে আমার একটা গল্প মনেপরে গেল।এক দরিদ্র মহিলা,তার উপর পাশবিক নির্যাতন হওয়ায় সে গেছে কোর্টে বিচার চাইতে।উকিল সাহেব সব শুনে বলছে এই মামলায় আসামীর অবশ্যই সাজা হবে।কারন আপনি আসামীর গাল কামড়ে দিয়েছেন আর এইআসামীর গালে কামড়ের দাগ আছে।বিচারের দিন মহিলা বলছে,আমি বিচার চাই না।উকিল বলছে কেন?মহিলা বলছে, বিচারকের গালেও কামড়ের দাগ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.