নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গোটা মানব জাতি ই আজ এক কঠিন সময় পার করছে। প্রত্যেকের ই এক আতংকের মধ্যে প্রতিটি মুহুর্ত পার হচ্ছে । করোনা ভাইরাসের থাবায় আজ জীবন জীবিকা সবই স্তব্ধ। পৃথিবীর অনেক দেশ ই করোনার থাবা থেকে কিছুটা মুক্তি পেলেও আমাদের বাংলাদেশ আজ করেনার থাবায় পুরোই নাস্তানাবুদ। ইতোমধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা লাখ ছাড়িয়েছে। মৃত্যুর সংখ্যা ও কম না। ইতোমধ্যে দেশের বেশ কয়েক জন সুপরিচিত মানুষের জীবনের অবসান হয়েছে করোনার থাবায়। আরো কত জীবনের বিনিময় করোনা যুদ্ধে আমাদের জয়ী হতে হবে সেটাই আজ বড় প্রশ্ন হয়ে দাড়িয়েছে। আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্রের অবহেলা ও দায়িত্ব হীনতার মাশুল ই আজ সমগ্র জাতিকে দিতে হচ্ছে। আর এই মাশুল কত দিন গুনতে হবে সেটাও বলা মুশকিল। যদিও কয়েক দিন আগে আমাদের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ সাহেব বলেছিলেন বাংলাদেশে আরো দুই তিন বছর করোনাভাইরাস সংক্রমণ চলবে। পরে এটা নিয়ে হৈচৈ শুরু হলে তিনি অবশ্য তার এই বক্তব্য প্রত্যাহার করতে বাধ্য হন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কি বললেন বা কি প্রত্যাহার করলেন সেটা বড় কথা না বা সেটা বস্তবতা ও না। কারন আমাদের রাষ্ট্রের কর্তাব্যক্তিরা সবসময় ই বাস্তবতা থেকে অনেক দুরে অবস্হান করেন। তারা নিজেদের ভোগবিলাসী জীবনের মাপকাঠিতে ই সমগ্র জাতিকে বিবেচনা করেন। তাই তাদের প্রায় প্রতিটি আচরন ই আমাদের সাধারন মানুষের জীবনে কষ্টের অন্যতম কারন।
আমাদের অর্থনীতি সিংগাপুর কানাডা আমেরিকা বা যে কোন উন্নত দেশের কাছাকাছি বলে আমাদের কর্তাব্যক্তিরা সংসদ বা রাজনীতির মাঠ গরম করলে ও আমাদের সাধারন মানুষের নজরে আজ ও আমাদের অর্থনৈতিক অবস্হা খুবই নাজুক। আমেরিকার প্রতিটি করদাতার জন্য সেই দেশের সরকার বারোশত ডলার ও বাচ্চাদের জন্য পাঁচশত ডলার করে করোনাকালীন সহায়তা প্রদান করলেও আমাদের দেশের পঞ্চাশ লাখ হত দরিদ্র মানুষের জন্য ২৫০০ টাকা প্রদানের কর্যক্রম সহ ত্রানের খাবার নিয়ে যে কান্ড জাতি লজ্জার চোখে দেখেছে তা ভুলতে হয়তো একযুগ পার হয়ে যাবে। যাই হোক গত পহেলা জুন থেকে সরকার তথাকথিত সীমিত আকারে প্রায় সব কিছু উন্মুক্ত করতে থাকলে ও অনেক কিছুই আজ বন্ধ হওয়ার উপক্রম। আমাদের ব্যবসায়ীদের একটি বিরাট অংশ ই ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের ব্যবসায়ী। আর আমাদের ব্যবসায়ীদের এই শ্রেনীর আজ চরম হতাশা ও বিপদের মধ্যে দিন পার করছেন। বিশেষ করে আমাদের দোকানদার শ্রেনী। বিশেষ প্রয়োজনে গত কয়েক দিন আমাকে রাজধানীর বেশ কিছু বড় ও ছোট শপিং মলে যেতে হয়েছে এবং জীবিকার প্রয়োজনে আমি ও একটি ক্ষুদ্র ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত তাই ঐ সকল ব্যবসায়ীদের সাথে আলাপ করে ও নিজের বাস্তব অভিজ্ঞতাকে মিলিয়ে আজ এই দোকানদার শ্রেনী এক মহাসাগরের মাঝ খানে হাবুডুবু খাচ্ছেন।
গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনায় আক্রান্ত রোগীর কথা প্রকাশ হবার পর থেকেই সাধারন মানুষের মনে এক ধরনের ভয় ও আতংকের জন্ম নেয়। সেই থেকেই প্রায় সকল ছোট ব্যবসায় ভাটা শুরু হয়। এর পর ২৬ মার্চ থেকে করোনার আক্রমন ঠেকাতে মানুষকে ঘরে রাখার জন্য সাধারন ছুটি ঘোষানা করে মানুষের মনে এক ধরনের বিভ্রান্তের জন্ম দিয়েছিল সরকার। তার পর ও সাধারন মানুষ তাদের জীবনের কথা ভেবে নিজেদের ঘরের ভিতর বন্দী করতে বাধ্য হয়েছিল। কিছু দিনের মাথায় পেটে ক্ষুধা ও সরকারের অব্যবস্হাপনা মানুষ করোনার ভয় কে পিছু ফেলে পথে নামতে বাধ্য হয়। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ছাড়া সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ই মে মাসের শেষ পর্যন্ত বন্ধ থাকায় প্রায় কয়েক কোটি মানুষ ছিল বেকার। আর এই মানুষ গুলি তাদের জমানো সঞ্চয় ও ধার দেনা করে বন্ধের ঐ সময়টা কোন ভাবে পার করতে পারলে ও এখন আর কোন পথই খোলা নাই। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলার দীর্ঘ এক মাস চললেও ব্যবসার নামে জ্বলছে লাল বাতি। কোন দিন দুই চার শত টাকা বিক্রি হলো ও প্রায় দিন ই শূন্য হাতে ঘরে ফিরতে হচ্ছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলার পর ই চার দিক থেকে শুরু হয়েছে নানান অর্থনৈতিক চাপ বাড়ীওয়ালা ভাড়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জমিদারের ভাড়া কর্মচারীদের বেতন সেই সাথে দীর্ঘ বন্ধ সময়ের বিভিন্ন ইউটিলিটি বিল। সব মিলিয়ে সত্যি এক মহা বিপদের সময়। ব্যবসায়িক ক্ষতির আরো একটি দিক হলো আমাদের দেশ ধার্মীয় ভাবে মুসলিম প্রধান দেশ আর মুসলমানদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব হলো ঈদুল ফিতর। ঈদ উৎযাপনের জন্য প্রতিটি মুসলমান ই তাদের সাধ্যমত পোষাক আশাক সহ নানান জিনিস কিনেন। তাই আমাদের দেশের ব্যবসায়ীদের বাৎসরিক আায়ের একটি বিরাট অংশ আসে এই ঈদের বেচা-কেনা থেকে এর সাথে ছিল বাংগালীর প্রানের উৎসব পহেলা বৈশাখ। সব মিলিয়ে ব্যবসায়ীদের ব্যবসায়িক আয়ের সিংহভাগই করোনার থাবায় হাত ছাড়া। ব্যবসায়িদের ব্যবসাই আজ গলার ফাঁস হয়ে দাড়িয়েছে। পহেলা বৈশাখ ও ঈদুল ফিতর দুই উৎসবের ব্যবসার মুনাফার আশায় তাদের সমস্ত সঞ্চয় ই ব্যবসায়ে বিনিয়োগ করে শূন্য হাতে সবাই আজ দিশেহারা।
যদি ও সরকার ব্যবসা ও ব্যবসায়ীদের টিকিয়ে রাখার জন্য নানান ধরনের প্রনোদনার ঘোষনা করেছেন৷ কিন্তু সেই প্রনোদনার সুষ্ঠু ব্যবহার কত টুকু হচ্ছে বা হবে সেটাই একটা বড় প্রশ্ন। আমাদের দেশের বিভিন্ন সরকারী সুযোগ সুবিধা কখনোই সাধারন মানুষের স্বার্থে তেমন ব্যবহার হয়েছে বলে কেউ মনে করেন না। একজন সত্যিকারের ব্যবসায়ী বা কৃষক ব্যাংক ঋনের জন্য মাসের পর মাস ব্যাংক কর্মকর্তার পিছনে হাটতে হাটতে জুতার তলা ক্ষয়করে নানান অজুহাতে খালি হাতে ফিরতে হয়৷ কথিত বা নামসর্বস্ব ব্যবসার জন্য ব্যাংক ঋনে নিয়ে রাষ্ট্রের হাজার হাজার কোটি লুটপাটের সংবাদ প্রতিনিয়ত সংবাদমাধ্যমের কাছ থেকে আমাদের শুনতে হয়। তাই সরকার ঘোষিত এই প্রনোদনা ও শুধু কথা আর কাগজে কলমেই সীমাবদ্ধ। সত্যিকারের ক্ষতিগ্রস্হ ব্যবসায়িরা এর সুফল এখন পায়নি আর ভবিষ্যতে ও হয়তো গুড়ে বালি।
২০০৮ সালে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দায়র মাঝে ও আমাদের ক্ষুদ্র বা মাঝারি ব্যবসায়ীদের তেমন কাবু করতে পারে নি। তার পর ২০১৩ সালে শেষ দিকের জ্বালাও পোড়াও আন্দোলন ও ব্যবসায় তেমব প্রভাব পরে নি। ঐ সময়ে ও আমাদের ব্যবসায়িদের মনের ভিতর আশার প্রদীপ জ্বলছিল। সার্বিক ভাবে আজ কেন জানি আমাদের ব্যবসায়ীদের মনের ভিতর সেই আলো আর জ্বলছে না। চার দিকে আমাবশ্যার অন্ধকার কখন এই মহামারির হাত থেকে জীবন জীবিকার উদ্ধার হবে তা কোন ভাবেই বলা সম্ভব হচ্ছে না। বিশেষজ্ঞদের ধারনা বাংলাদেশে করোনার সংক্রমণ এখনও চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেনি৷ সেটি কোথায় গিয়ে ঠেকবে তা এখনো নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারছেন না৷ অন্যদিকে সারা বিশ্বের মত বাংলাদেশের অর্থনীতি ও প্রচন্ড চাপের মুখে ৷ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ ধারণা করছে যে করোনার প্রভাবের ফলে বিশ্ব অর্থনীতি এ বছর তিন শতাংশ সংকুচিত হবে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে অর্থনীতিতে মন্দা পরিস্থিতি কতদিন স্থায়ী হবে এবং আমাদের অর্থনীতি এমন সংকটময় পরিস্থিতি থেকে কীভাবে বের হয়ে আসবে? প্রশ্ন যতই আসুক এর মধ্যে যদি সকরার আমাদের সাধারন ব্যবসায়ীদের ব্যবসা বানিজ্যের স্বার্থ রক্ষায় ও আমাদের অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখার জন্য আন্তরিকতা সাথে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহন করে এবং চাটুকারদের এই মুহুর্তে দুরে সরিয়ে রাখে তা হলেই চলমান ও আগামী ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট থেকে দেশের সাধারন মানুষ নিজেদের উদ্ধার করতে সক্ষম হবে।
২| ২৩ শে জুন, ২০২০ দুপুর ২:৪৯
নেওয়াজ আলি বলেছেন: দেখার কেউ নাই । মধ্যবিত্ত ডুবে যাচ্ছে
৩| ২৩ শে জুন, ২০২০ বিকাল ৪:২৪
রাজীব নুর বলেছেন: ভীষন কষ্টে আছি। করোনা। এর মধ্যে নাই চাকরি। ঘর সংসার তো আছে। অন্তত পক্ষে খেতে তো হয়।
৪| ২৩ শে জুন, ২০২০ বিকাল ৪:৩০
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: চিন্তার কোনও কারণ নেই তার পরও আমাদের ৮% জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে। সব পুষিয়ে যাবে। তবে সত্যি কথা হলও আমরা ধুঁকে ধুঁকে মরার সিদ্ধান্ত নিয়েছি মনে হয়। তারচেয়ে বরং সাহস করে কঠিন লকডাউন দিয়ে নিজেদের করোনা থেকে বাচার সর্বচ্চ চেষ্টা করা উচিত। যেটা ১ বা ২ মাস পরে করতে হবে সেটা এখনই সাহস করে করা উচিত।
©somewhere in net ltd.
১| ২৩ শে জুন, ২০২০ দুপুর ২:৪০
সরলপাঠ বলেছেন: আগামী ২ বছর অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখার সময়। এই ২ বছর প্রবৃদ্ধি থেকেও কর্মসংস্থান বেশী গুরুত্ব পাওয়া উচিৎ। বিশ্ব অর্থনীতির জন্যে যা চ্যালাঞ্জের, আমাদের জন্যে তা নতুন সুযোগ। এখন দেখার বিষয় আমাদের সরকার এবং উদ্যোক্তারা এই সুযোগ কতটুকু বুদ্ধিমত্তা ও দক্ষতার সাথে কাজে লাগাতে পারে।