নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি ও বলতে চাই !

ওয়াসিম ফারুক হ্যাভেন

ব্লগিং হউক সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার।

ওয়াসিম ফারুক হ্যাভেন › বিস্তারিত পোস্টঃ

তেলের তেলেসমাতিতে অসহায় জনগন।

১০ ই আগস্ট, ২০২২ সকাল ১১:৪২

তেলের তেলেসমাতি আমাদের পিছু মোটেও ছাড়ছে না। কখনো ভোজ্য তেল আবার কখনো জ্বালানি তেল। এখনো ভোজ্য তেলের বাজার অস্থিরই রয়ে গেছে। শুনছি প্রতি লিটার ভোজ্য তেলের দাম ২০ টাকা বাড়ানো জন্য নাকি মিল মালিকরা দাবি জানাচ্ছে। তার মধ্যে গত ৫ আগস্ট ২০২২ ছুটির দিন রাতে কাউকে কিছু না জানিয়ে চুপে চুপে আমাদের দেশে সব ধরনের জ্বালানি মুল্য সর্বকালের সর্ব রেকর্ড অতিক্রম করেছে। গরীবের ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ৪২.৫ শতাংশ বাড়িয়ে প্রতি লিটার ১১৪ টাকা করা হয়েছে৷ আর ধনীরা নাকি পেট্রোল ও অকটেন ব্যবহার করে তাই আমাদদের এই বাই প্রোডাক্ট পেট্রোলের দাম ৫১.৬ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ১৩০ টাকা লিটার আর অকটেনের দাম ৫১.৬৮ শতাংশ বাড়িয়ে ১৩৫ টাকা লিটার করা হয়েছে। আমাদের সরকারের কর্তাব্যক্তিদের দাবী আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বৃদ্ধির ও আমাদের পাশ্ববর্তী দেশ ভারতে আমাদের থেকে তেলের দাম কম হওয়ায় ভারতে তেল পাচার রোধের জন্য ই নাকি জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে । আবশ্য আমাদের দেশের কর্তাব্যক্তিরা এই বৃদ্ধির ডিজিটাল নাম দিয়েছে সমন্বয়। তবে সমন্বয় বলতে আমরা সাারন ভবে যেই ভাবে বুঝি অবশ্য আমাদের কর্তাব্যক্তিদের সেই বুঝের ধারনা সম্পুর্ন ভিন্ন তাদের ভাষায় সমন্বয় মানেই শুধু দাম বৃদ্ধি। এই নিয়ে আমদের পাশের বাড়ীর আনিস মামার কথা মনে পরলো। আনিস মামা শুধু মাত্র মানুষের কাছ থেকে হাওলাদ নিয়েই যেত সেই হাওলাদ পরিশোধের বেলায় আনিস মামার অযুহাতের কমতি ছিল না তাবে আনিস মামা ছিলেন অত্যন্ত রসিক তাই কোন পাওয়ানাদার তার কাছে পাওয়ানা টাকা ফেরৎ চাইলে তিনি রসিকতা করে বলতেন আরে ভাই জানেন আমার বাবা মা কেন আমার নাম রাখছে আনিস? আমি শুধুই সবার কাছ থেকে শুধুই আনবো কিন্তু ফেরৎ দিবো না! ঠিক আনিস মামার সেই উক্তির মতই আমাদের বর্তমান সরকারের কর্তাব্যক্তিদের ব্যবহৃত শব্দ সমন্বয়। ২০২০ সালের করোনা মহামারির পর বিশ্বের প্রতিটি রাষ্ট্র ই বিভিন্ন ভাবে ক্ষতির শিকার এর পর শুরু হল রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ। করোনা মহামারিতে রাষ্ট্রীয় ভাবে আমাদের কত ক্ষতি হয়েছে তা আমাদের রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে থাকা কর্তাব্যক্তিরাই ভাল ভাবেই বলতে পারবেন। কারন আমাদের সাধারণ মানুষ কখনো সরকারের কর্তাব্যক্তিদের কাছ থেকে সঠিক তথ্য পাই না বা তারা ও আমাদের সেই তথ্য দিতে চায় না। কারন তাদের দৃষ্টিতে আমাদের দেশের সাধারন মানুষ মানেই বোকা ! তবে করোনার মহামারি তে দেশের প্রায় সকল খেটে খাওয়া মানুষ যে চরম ভাবে বিপর্যস্ত তা বলার অপেক্ষা রাখে বলে আমার মনে হয় না। করোনা মহামারির মধ্যে দেশের লাখ লাখ মানুষ কর্মচ্যুত হতাশা গ্রস্হ ভাবে জীবন ধারন করছেন। আমরা দোখেছি শহড় থেকে গ্রামে মানুষ পরিবার পাঠানোর হিরিক। আমি যেহেতু ঢাকার শহড়ের বাসিন্দা তাই ঢাকার শহরের কথাই বলছি এখনো ঢাকার শহড়ের অধিকাংশ আবাসিক বাড়ীর দেয়ালে টু-লেট ঝুলছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মুল্য ঊর্ধ্বগতিতে আজ সাধারন মানুষের জীবন বিপন্ন প্রায়। এর মধ্যে জ্বালানি তেলের এই অস্বাভাবিক মুল্য বৃদ্ধি আমাদের সাধারন মানুষে অস্তিত্ব কোথায় নিয়ে দাড় করাবে তা নিয়ে দেখে দিয়েছে বড় সংশয়।

এবার আসি সরকারের জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি উল্লেখিত কারন গুলি নিয়ে। সরকারের একটা দাবী বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির করনে নিরুপায় হয়েই তেলের দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছে সরকার। গত সোমবার (৮ আগস্ট) সকালে দেখা যায়, প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুডের দাম আগের দামের চেয়ে ৭৪ সেন্ট কমে ৯৪ দশমিক ১৮ ডলারে দাঁড়ায়। আর ইউএস ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের মূল্য ব্যারেলপ্রতি ৬৭ সেন্ট কমে ৮৮ দশমিক ৩৪ ডলারে দাঁড়িয়েছে। যা ২০২০ সালের এপ্রিলের পর সর্বনিম্ন মুল্য। এর আগে ২০১৪ সালে তেলের দাম যখন বিশ্ববাজারে অনেক কম ছিল তখন কিন্তু আমাদের দেশে তেলের দাম কমিয়ে সমন্বয় করা হয় নাই । গত সাত বছরে বিপিসি নাকি প্রায় ৪৩ হাজার কোটি টাকা মুনাফা করেছিল। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন বিপিসির আয় করা ৪৩ হাজার কোটি টাকা গেল কোথায়? বিপিসির আয় করা ৪৩ হাজার কোটি টাকা বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। এই সরকার নাকি উন্নয়নের সরকার তাই তারা তাদের উন্নয়ন কে ধারাবাহিক করতে বিভিন্ন স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে প্রচুর টাকা নিয়ে গেছে। যা আমাদের জন্য এক ভয়বহ অবস্হার তৈরি করেছে বলে আমার ধারনা। কারন বিপিসির হাতে যদি তাদের সঞ্চয় করা ৪৩ হাজার কোটি টাকা জমা থাকতো তা হলে হয়তে আজ আমদের সাধারন জনগনের মাথায় জ্বালানি তেলের সর্ব কালের সবচেয়ে বেশি মুল্য বৃদ্ধি বোঝা বইতে হতো না।

জ্বালানি তেলের এই অস্বাভাবিক মুল্য বৃদ্ধিতে আমাদের সাধারন মানুষের জীবন প্রবাহ চরম ভাবে বাঁধাগ্রস্ত হবে তা আর বলতে হবে না। তেলের দাম বৃদ্ধির ঘোষনা আসার পর ই আমাদের পরিবহন সেক্টরে চলে আসে বড় ধরনের নৈরাজ্য গন পরিবহন সহ সকল ধরনের পরিবহন ভাড়া বেড়েছে আর না বেড়েই বা উপায় কি? বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরী কমিশনের আইন অনুযায়ী জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি আগে অবশ্যই একটি গন শুনানির ব্যবস্হা করতে হবে তার পর সকলের মতামতের ভিত্তিতে দাম বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা আছে কি না থাকলে ও কি পরিমান দাম বাড়ানো হবে তা কমিশন থেকে সিদ্ধান্ত আসবে। তবে এবার সরকার নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে নিজেদের প্রশাসনিক ক্ষমতার বলে ইচ্ছা মত মুল্য বৃদ্ধি করে জনগনকে মহা সংকটে পতিত করেছে। সামনে আসছে সেচ মৌসুম ১১৪ টাকা লিটার তেল কিনে কৃষক তাদের সেচ কার্য কত নির্বিঘ্নে চালাতে পারবে। অপর দিকে সারের মুল্য বৃদ্ধি সেই সাথে গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুতের চলছে মহা সংকট সব মিলিয়ে আমাদের খাদ্য উৎপদান বিঘ্নিত হওয়ার আশংকা তৈরি হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনা গত ২৭ জুলাই কোন এক অনুষ্ঠানে আমাদের অবহিত করেছিলেন যে, আমাদের পেট্রোল ও অকটেন আমদানী করতে হয় না কারন পেট্রোল ও অকটেন গ্যাসের বাই প্রোডাক্ট। তার পর ও অযৌক্তিক ভাবে পেট্রোল ও অকটেনের দাম বৃদ্ধি করতে যথা ক্রমে ৫১ দশমিক ৬ প ৫১ দশমিক ৬৮ শতাংশ। পেট্রোল ও অকটেন নাকি ধনীদের পন্য! বেকারত্বের কষাঘাতে দেশ জর্জরিত বিকল্প কর্ম সংস্থা হিসেবে আমাদের দেশের লাখো তরুন আজ মোটর বাইকে রাইড শেয়ারিং করে পরিবার পরিজন নিয়ে দুমুঠো খেয়ে বেঁচে আছে। আর এই প্রতিটি মোটর বাইকের জ্বালানি পেট্রোল বা অকটেন। এবার আসি তেল পাচার প্রসঙ্গে। বাংলাদেশ থেকে ভারতে তেলের দাম কম হওয়ায় নাকি আমাদের দেশ থেকে তেল পাচার হয়। যেহেতু ভারত বাংলাদেশ পাশাপাশি দেশ তাই ভারতে তেল দাম বেশি হলে বাংলাদেশ থেকে তেল পাচার হতেই পারে। আর সীমান্ত চোরাচালান রোধের জন্য আমার বিজিবি সহ অনেক বাহিনী ই কাজ করে যাচ্ছে তাই তাদের গাফলতির জন্য যদি দেশ থেকে তেল পাচার রোধ করতে সরকার ব্যর্থ হয় তার খেসারত কেন দেশের সাধারন মানুষকে দিতে হবে?

স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী বাংলাদেশ সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফের কাছে৪৫০ কোটি ডলারের ঋণ চেয়েছে৷ ঋণের অঙ্ক খোলাসা করা না হলেও এই তথ্য নিশ্চিত করেছে সরকার ও আইএমএফ দুই পক্ষই। অনেকের ই ধারনা আইএমএফ এর ঋনের শর্ত পুরনের জন্য ই নাকি তেলের দাম বৃদ্ধি। বাস্তবে কি আইএমএফ ঋনের শর্ত হিসেবে তেলের দাম রাড়াতে বলেছে? না মোটেও না। আইএমএফ আমাদের দেশের তেলের সরবরাহ মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতির পরিবর্তন করতে বলেছে। খুচরা পর্যায়ে তেলের দাম নির্ধারণে সারা বিশ্বের অভিজ্ঞতায় প্রধানত তিনটি পদ্ধতি লক্ষ্য করা যায়। ১.মার্কেট ডিটারমাইন্ড অর্থাৎ বাজার দরের সাথে নিয়মিত সমন্বয় পদ্ধতি ২. প্রাইস সিলিং বা সর্বোচ্চ মূল্য বেধে দেয়ার পদ্ধতি ৩. ফিক্সড প্রাইস বা একদর পদ্ধতি। আমাদের দেশে তেলের দাম নির্ধারণ হয় সরকারের নির্বাহী আদেশে ফিক্সড প্রাইস বা একদর পদ্ধতিতে। আর এই ফিক্সড প্রাইস বা একদর পদ্ধতি ই মুল্য নির্ধারণে একটা বাজে পদ্ধতি। আর আইএমএফ থেকে আমাদের দেশের তেলের মূল্য নির্ধারণ ব্যবস্থা সংস্কারের তাগিদ দিয়ে আসছে। তবে আইএমএফ এর ঋনের শর্ত হিসেবে সার সহ বিভিন্ন পন্যের ভুর্তকি কমানোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে।

যেই কারনেই জ্বালানি তেলের দাম বাড়িছে সরকার তা দেশের সাধারন মানুষকে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ঠেলে দিয়েছে। বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকার বরাবরই নিজের জনগনের সরকার জলকল্যানের সরকার বলে দাবী করলে ও তারা আজ সাধারন জনগনের কাছ থেকে অনে দুরে সরে গেছে। ২০১৮ সালের রাতের আধারে কেলেংকারী ভোটে ক্ষমতায় এসে ২০২২ রাতের আধারে জনগনের মতামতকে উপেক্ষা করে প্রশাসনিক আদেশে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি করতে হলো। এই মুল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে গত ৭ আগস্ট বিকেলে
বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোর বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করলে বিনা উস্কানিতে পুলিশ প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠনসমূহের’ নেতা কর্মীদের উপর নিলজ্জ ভাবে লাঠি চার্জ করে এতে তাদের অন্তত ২০ নেতা-কর্মী গুরুতর ভাবে আহত হয়েছে। এই ঘটনাকে ভিন্নভাবে উপস্হাপনের জন্য ইতোমধ্যে পুলিশ বাম ছাত্র সংগঠনের ২১ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ২০-৩০ জনকে আসামি করে মামলা করেছে। জন স্বার্থ নিয়ে কোন প্রতিবাদ সমাবেশ করলে সেখানে পুলিশের লাঠিচার্জ এর পর মামলা কোন সুষ্ঠ সভ্য রাষ্ট্রের নাগরিকের কাম্য হতে পারে না। কিন্তু আমাদের ভাগ্য এতটাই খারাপ যে আমাদের ন্যায় সঙ্গত দাবী নিয়ে কথা বললে ও আমাদের পুলিশের গুলিতে জীবন দিতে হয়, পুলিশের হাতে লাঠিপেটার শিকার হতে হয় সহ্য করতে হয় মামলার খড়গ। জ্বালানি তেল ডিজেল, পেট্রোল ও অকটেনের দাম বৃদ্ধির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়েছে। রিটে তেলের দাম বৃদ্ধি করে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের জারি করা গেজেট স্থগিত, বাতিল ও প্রত্যাহার চাওয়া হয়েছে। আশা মহামান্য হাইকোর্ট দেশের সাধারন জনগনের বর্তমান অসহায় অবস্হার বিবেচনা করে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের জারি করা জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির গেজেট অবশ্যই বাতিল করে রায় দিবেন।


মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই আগস্ট, ২০২২ দুপুর ১২:০৫

সৈয়দ মশিউর রহমান বলেছেন: তেলেসমাতির কথা বললে কাউয়ারা কষ্ট পায়।

২| ১০ ই আগস্ট, ২০২২ বিকাল ৩:৩৬

খাঁজা বাবা বলেছেন: জন দুশমন সরকার

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.