| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
'জীবন বীমা'
~~~
সেবার বিশ্ব মা দিবস উপলক্ষে মাকে নিয়ে লেখা আমাদের ম্যাগাজিনের একটি ফিচার দেশে বিদেশে বিস্তর আলোড়ন জাগিয়েছিল।"বিধবা মায়ের অদ্ভুত ব্যাংক" শিরোনামের ফিচারটি অধিকাংশ পাঠক নন্দিত হয় মূলত শিরোনামের জন্য,আর এতে নাম ছড়ায় চারদিকে সাংবাদিক আহাদ চৌধুরীর।যদিও ফিচারের নামকরনের ক্রেডিট সহকর্মী ক্যামেরাম্যান আসিফের। আসিফই এ ফিচারের নামকরণ করেন। আর সেদিন সকালে সেই আমাকে ফোনালাপে বিধবার সাক্ষাতকার নেওয়ার কথা বলেছিলেন।আসিফ বলেছিল আমি যেন তাকে সঙ্গে নেই, কারণ বিধবার ঠিকানা তার জানা আছে।তাই তাকে সাথে করে চাঁদপুর জেলার কচুয়া থানার ডুমুরিয়া গ্রামের মৃত আক্কাস আলীর বউ হালিমা বেগমের সাক্ষাতকার নিতে যাই।সেদিন বিধবার সাক্ষাতকার নিয়ে আশ্চর্য হই আমরা বকলম বিধবার গুরুগম্ভীর, সৃজনশীল কথা শুনে।বিধবার পরনে ভালো পোশাক ছিলনা,ঘরের আসবাব দেখে বুঝা যায় যে নেহাত ঠেকায় পরে বসবাস অনুপযোগী এত ছোট্ট ঘরটাতে দিনযাপন করেন তিনি। কিন্তু তারপরও
সেই প্রথম থেকেই বলতে লাগলেন যে তিনি একজন ধনী মহিলা, তার অনেক ধন সম্পদ রয়েছে এবং এগুলি তিনি কোন একটা ব্যাংকে জমা করে রেখেছেন।আমরা জানতে চাইলাম সেই ব্যাংকটির নাম। তখন বিধবা একটা ফটোগ্রাফ এনে আমার হাতে দিয়ে বলল এই দেখ বাবা এই হলো আমার ব্যাংকের ছবি।কিন্তু আমরা না হেসে পারলাম না এই দেখে বিধবা আমাদের হাতে যে ফটোটা দিয়েছিল সেটা কোন ব্যাংক ভবনের ছবি কিংবা এই সম্পর্কিত কিছু ছিলনা, শুধু একটা ছেলের ফটো।কিন্তু কে এই ছেলে? জানতে চাইলে বিধবা বললেন এটি তার একমাত্র ছেলে শহরে পড়াশোনা করে। মা তার এই ছেলের জন্য নিজে কম খেয়ে কম পরে টাকা বাচিয়ে সেই টাকা দিয়ে পড়াশোনার খরচ চালিয়েছেন এই ভেবে যে ছেলে চাকরি পেয়ে বুড়ো বয়সে মায়ের দেখাশোনা করবে।তাই ছেলেই তার রূপক অর্থে ব্যাংক।মা আশা করে এই বয়সে কষ্ট করে দিনযাপন করে ব্যাংকে সম্পদ জমা রাখলে শেষ বয়সে ব্যাংকটি তার কাজে আসবে। কিন্তু সত্যিই কি সেই ব্যাংক বিধবা মায়ের ঋণ শোধ করবে?এখন কিভাবে দিনতিপাত করে সে মা টি খুব জানতে ইচ্ছে হলো একদিন । তাই সেই ঘটনার ছয় সাত বছর পরে আবারো ব্যক্তিগত আগ্রহে বিধবার কুটিরে হাজির হই। বিধবার শরীর একেবারেই ভেঙে পড়েছিল তখন স্মৃতিশক্তি লোপ হয়েছে অনেকটা ,তাই প্রথমে চিনতে পারেন নি,পরে সাংবাদিক আহাদ চৌধুরী পরিচয় দেওয়াতে তিনি চিনতে পারেন আমি তার কম চেনা অাপন মানুষ হয়ে গিয়েছিলাম ।তাই বুকে জড়িয়ে ধরলো বাবা কেমন আছ? জি, খালাআম্মা আমি ভালো আছি।আপনি কেমন আছেন? আর আপনার সেই অদ্ভুত ব্যাংকটি কোথায়? বিধবা প্রথমে চুপচাপ নিচ দিকে তাকিয়েছিলেন, পরে দ্বিতীয় বার প্রশ্ন করাতে বললেন তার সেই ব্যাংক এখন ধনসম্পদ টাকা পয়সায় পরিপূর্ণ বউ ছেলেমেয়ে নিয়ে ঢাকা থাকে সে। ওহ! আচ্ছা খালাআম্মা আপনার ছেলে টাকা পয়সাকড়ি দেয় কিছু আপনাকে? বিধবা হেসে বললেন ছেলে মাকে টাকা দেয় না ঠিকই তবে মায়ের নামেই টাকা জমাচ্ছে। কিন্তু কোথায়? নিশ্চয় আপনার মত কোন একটা অদ্ভুত ব্যাংকে! তাই না খালা? বিধবা আমার কথা শুনে আবারো হাসলেন।হাঁ ছেলে তার মায়ের নামে একটা অদ্ভুত সুবিধা পাওয়া যায় এমন জায়গায় টাকা জমাচ্ছে, তবে সেটা কোন ব্যাংক নয়।বীমা পলিসি। ডাক্তার যেদিন বলেছিল মা তার আর সর্বোচ্ছ চারপাঁচ মাস হায়াৎ পাবেন তার কয়েকদিন পর ছেলে মায়ের নামে অদ্ভুত একটা বীমা একাউন্ট খুলেছেন।সে বীমা পলিসিতে একমাসের কিস্তি দিয়ে মারা গেলেও পুরো টাকা পাওয়া যায়।
লেখক
জুয়েল মিয়াজি।
ছাত্র,ফোকলোর বিভাগ।জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়। ত্রিশাল, ময়মনসিংহ। 
©somewhere in net ltd.
১|
৩০ শে জুলাই, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:২০
জুয়েল মিয়াজি বলেছেন: সকলের মন্তব্য আশা করছি।