| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পরশ্রীকাতরতা একটি ব্যধির নাম, যা আমাদের স্বাভাবিক অানন্দময় জীবনের অন্তরায়।মূলত পরশ্রীকাতরতা নামক এই বিশেষ ব্যামোর উৎপত্তি প্রতিযোগিতামুলক মনোভাব থেকে।নিত্যদিন আমরা প্রতিযোগিতার করি,এমনকি! গভীরভাবে পর্যালোচনা করে বলা যায় আমাদের পৃথিবীতে আসাটাও ছিল একটা প্রতিযোগিতা।বিজ্ঞানের ছাত্র ভালো বুঝবে যে,পিতামাতার গ্যামিটের সংমিশ্রণ অর্থাৎ উওজেনোসিস আর স্ফার্মোজেনোসিস এর মিলনে নবজাতকের আবির্ভাব হয়।পিতামাতার শুক্রাণু ডিম্বাণু সংমিশ্রণে কোটি কোটি জাইগোট সৃষ্টি হয় যার মধ্যে একটি মাত্র জাইগোট শুধু টেকসই হয়ে আবির্ভূত হয় পৃথিবীতে,বাকি সবগুলি নষ্ট হয়ে যায়। দ্বিতীয় প্রজন্মের সৃষ্টি হওয়ার কৌশলটা এরকম যে, নিষেকের পর পিতার কোটি কোটি শুক্রাণু সেল মাতার ডিম্বাণুর চারপাশে ঘুরে বেড়ায় ডিম্বাণুতে প্রবেশ করার জন্য, কিন্তু এতসব শুক্রাণুর মধ্যে একটি মাত্র সফল শুক্রাণু মায়ের ডিম্বাণু ভেদনকরতে পারে,বাকি শুক্রাণু নষ্ট হয়ে যায়। অর্থাৎ আমি যে এই পৃথিবীতে আসলাম, তাও ছিল একটা প্রতিযোগিতা, আমি আমার কোটি কোটি ভাইবোনের গ্যামিটের সাথে প্রতিযোগিতা করে তাদের হত্যা করে পৃথিবীতে এসেছি।সেই যে আবির্ভূত হওয়ার প্রথম কান্নার পর অাজ অবধি আমরা প্রতিযোগিতা করে যাচ্ছি তাতে কখনোবা হচ্ছি সফলকাম, আবার কখনোবা ব্যর্থ আর ব্যর্থতা থেকেই সৃষ্টি হয় পরশ্রীকাতরতা। আমাদের সমাজ সংস্কৃতি পারিবারিক জীবন থেকে আমরা পরশ্রীকাতরতার শিক্ষা পেয়ে থাকি।এটা সিস্টেমেটিক ভুল, আমাদের শেখানো হয়।প্রতিযোগিতা, যার ফলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তুঙ্গে যায় ভালোবাসা।অর্থাৎ এই পৃথিবীতে যে সফল প্রতিযোগী সেই হবে সফল মানুষ।এই জন্য দুর্বলেরা হেরে যায়, সফলেরা টিকে থাকে,ফলে দুর্বলেরা নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য পরশ্রীকাতর হয়ে উঠেন।বিষয়টা আরো স্পষ্ট হবে যদি, মানিক বন্ধ্যোপাধ্যায়ের "পদ্মানদীর মাঝি" উপন্যাসের কুবেরের দুই সন্তানের মধ্যকার টাকা নিয়ে কাড়াকাড়ি করার বিষয়টা সম্পর্কে অবগত হওয়া যেতে পারে।কুবের তার দুই সন্তানকে যখন টাকা দিয়েছিলেন, তখন তিনি হাতে তুলে না দিয়ে নদীর পাড়ে ছুড়ে।মেরেছিলেন। তারপর শুরু হয় দুই সহোদরের দ্বন্দ্ব, এখানে দর্শনের ব্যাখ্যা হলো, এই বাচ্ছা দুটিকে বড় হয়ে প্রতিযোগিতা করে বেঁচে থাকতে হবে, তাই তাদের প্রতিযোগিতার শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। এখানে একজন জয়ী হবে আরেকজন ঠকে যাবে। সৃষ্টি হবে দ্বন্দ্বের, ঠকে যাওয়া লোকটি না পাওয়ার বেদনায় বারংবার দুঃখ পাবে তৈরী হবে পরশ্রীকাতরতার।।এখন পর্যন্ত পরশ্রীকাতরতা সম্পর্কে বাক্যালাপ করে আমরা একটা সিদ্ধান্তে আসছি যে,পরশ্রীকাতরতা নিঃসন্দেহে সুখে থাকার বাধা সরুপ, এটি আমাদের সুখী সমাজ গঠনের বাধা সরূপ। পরশ্রীকাতরতা এমন একটা সমস্যা যার পিছনে প্রকৃতিরও কঠোর ভুমিকা থাকে ।
***কথা হলো, যে সমস্যা জনে জনে বিরোধ বাধায় তার কি কোন সমাধান নেই? সমস্যা থাকলে সমাধানও থাকে। পরশ্রীকাতর রোগ থেকে রেহাই পাওয়ারও ব্যাবস্থা অাছে।বদলাতে হবে দৃষ্টিভঙ্গি, শুধু আমি অামি কিংবা আমার আমার করার অভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে , পরপ্রেমিক হতে হবে,নিজের বৃহত স্বার্থ ত্যাগ করে সুখে থাকার অভ্যাস তৈরী করতে হব।অতীব জরুরি বদলাতে হবে ভোগবাদী প্রবণতার বাজে অভ্যাস। ***স্টুডেন্ট লাইফের পরশ্রীকাতরতা ***
স্টুডেন্ট লাইফে পরশ্রীকাতরতা নামক অসুখ সম্পর্কে বলার আগে একটা প্রবাদ সম্পর্কে ধারণা নেওয়া যেতে পারে। বলা হয়ে থাকে যে সমবয়সীর কল্যাণ হওয়া ভালো কিন্তু না হওয়া আরো ভালো। ঘরে থেকে ঘরের মানুষও পর। এটা একটা ভয়ংকর নিন্দনীয় সত্য কথা। আমাদের
স্টুডেন্টদের মধ্যে দেখা যায় যে, যে ছেলেটার সাথে আমার খুব ভালো সম্পর্ক হঠাৎ তার ভালো রেজাল্ট, ভালো কর্মফল আমাদের দুখী করে তোলে। কিন্তু বিষয়টা যদি আমরা সবাই ভালোভাবে নেই তবে সুখে থাকতে পারব,যেমন ধরুণ আমার বন্ধু রহিম প্রথমবার বিসিএস ক্যাডার হতে পেরেছে , কিন্তু আমি হতে পারি নি, তো! কি হয়েছে।এক্ষেত্রে সাদা মনের পরিচয় দিতে হবে,রহিমতো আমার বন্ধুই, সে হয়েছে তো কি হয়েছে, সামনে আমিও হব,সে হয়েছে তার মানে এই না যে আমি হতে পারবো না। এমতাবস্থায় রহিমেরও উচিৎ তার বিসিএস ক্যাডার না হতে পারা বন্ধুর সাথে স্বাভাবিক আচরণ করা, তবেই নিধন হবে পরশ্রীকাতর নামক মানসিক সমস্যার। নাম বলবো না, আমার এক পরিচিত বন্ধু জনকণ্ঠ পত্রিকার রিপোর্টার, আমার বন্ধু জাতীয় দৈনিকে কাজকরে দেখে বন্ধুমহলের কেউ কেউ আমার রিপোর্টার বন্ধুকে ক্রেডিট দিতে চায় না,বরং তার অতীত জীবনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কটুক্তি করা হয়। বন্ধুরা ভাবে যে বন্ধুর সুনামে তাদের মানের ক্ষতি হয়।কিন্তু কথা ভুল, আমার বন্ধু একটা জাতীয় দৈনিকে কাজ করে সেটা আমার জন্য গৌরবের কথা,বন্ধু মারফত হয়তো কোন একসময় আমি নিজেও ভালো পজিশনে যেতে পারব।হয়না এমন যে, হঠাৎ আমি প্রশাসন কর্তৃক নিন্দিত হচ্ছি, এমতাবস্থায় আমি বন্ধুর কথা বলে, প্রশাসনকে মিডিয়ার ভয় দেখাতে পারি।আমার বন্ধু পড়াশোনা শেষ করে পুলিশ, আর্মি কিংবা ম্যাজিস্ট্রেট হলে, আমি হিংসে করবো কেন? এটা তো আমার জন্য ভালো যে, আমি যখন বিপদে পড়ব তখন আমার বন্ধুই আমাকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসবে।আমার সহপাঠী মিডটার্মে ভালো করেছে এতে আমি মনখারাপ করবো কেন, অথবা তাকে ক্রেডিট দিতে আমি সংকোচ বোধ করবো কেন?যে ভালো রেজাল্ট করেছে, সে নিশ্চই জানে কিভাবে পড়লে ভালো করতে হয়, আমি পরশ্রীকাতর না হয়ে তার হতে ভালো রেজাল্ট করার কায়দাকানুন শিখে নিতে পারি।অথবা সে পড়াশোনায় ভালো তো কি হয়েছে, আমার তো শিল্পে ভালো দখল অাছে, অথবা আমি রাজনীতি ভালো বুঝি,ভবিষ্যতে নেতা হতে পারি, অথবা পড়াতে ভালো পাড়ি অথবা ছবি ভালো আকঁতে পারি। আমাদের ছাত্রদের মধ্যে একটা কমিউনিটি গড়ে উঠে,যেমন যারা ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে তাদের একটা কমিউনিটি যারা ফাইনাল ইয়ারে পড়ে তাদের আরেকটা কমিউনিটি।এখন দেখা যায় যে ফার্স্ট ইয়ারের স্টুডেন্ট কমিউনিটির ভালো দিকগুলি ফাইনাল ইয়ারের স্টুডেন্টদের সহ্য হয়না।আবার ফাইনাল ইয়ারের সাফল্য জুনিয়রদের হিংসুটে করে তোলে। ফলে তৈরী হয় মনকষাকষির, এমনো হয় যে পরশ্রীকাতর বড় ভাই/ বোন ফার্স্ট ইয়ারের স্টুডেন্টদের বিরুদ্ধে মিথ্যা রটনা রটিয়ে দেয়।এই ঘটনা আবার ফার্স্ট ইয়ারের স্টুডেন্টরাও তৈরী করে। এভাবে তৈরী হয় বিরোধের, কমে যায় ভালোবাসা এবং সৌহার্দ্য।তবে এ সমস্যাটিরও সমাধান আছে, সেটি হলো ছোটবড় যাই হোক না কেন, সবার উচিৎ সবাইকে ক্রেডিট দেওয়ার মানসিকতা তৈরী করা। সবকিছুরই পজেটিভ নেগেটিভ সাইট থাকে, পজেটিভ চিন্তায় ভালো থাকা যায়,নেগেটিভ চিন্তা হবে মন খারাপের কারণ।আমি অমুক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি বলে, আমার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া বন্ধুর শ্রী দেখে কাতর হবো না,কারণ জীবনে ভালো করার সম্ভাবনা আমাদের দুজনেরই অাছে, অথবা যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ে পড়ে সে তো আমার বন্ধুই, আমার বন্ধু প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে, সেটা হতে পারে আমার অহংকারের জায়গা।মোট কথায় সুখে থাকতে চাইলে কারণে অকারণেও সুখে থাকা যায়।তবে বদলাতে হবে পরশ্রীকাতর হওয়ার মনোভাব, শেষ কথা হলো প্রতিযোগিতা বাড়ুক সমস্যা নাই, আমরা যেন পরশ্রীকাতর না হই।কারণ এটি আমার মত সকল স্টুডেন্ট সহ প্রত্যেকটি মানুষের সুখে থাকার অন্তরায়।

©somewhere in net ltd.