![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সত্যিই আমাদের সবাইকে অবাক হতে হয় এসব হাস্যকর কথা বার্তা শুনলে .....
শুধু এতটুকুই বলব আল্লাহ যাতে ওনাদেরকে সবকিছু বুঝার ক্ষমতা দান করুক!
প্রথম আলোর লিখাটা সবাই একটু মনোযোগ দিয়ে পড়ুন....
পিলার ধরে নাড়াচাড়া করেছিল হরতাল আহ্বানকারীরা, তাই রানা প্লাজা ধসে পড়ে থাকতে পারে!
এই কথা একজন মন্ত্রী বলেছেন। কোন মন্ত্রী বলতে পারেন, শোনার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষ একবাক্যে বলে উঠবে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী! স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর গদিটা কাঁটায় ভরা, ওই মন্ত্রী পদে বসতে তিনিই রাজি হবেন, কেবল তাঁর পক্ষেই সম্ভব এমন কথা বলা! মাটি খুঁড়ে সন্ত্রাসীদের বের করব, আল্লাহর মাল আল্লায় নিয়ে গেছে, লুকিং ফর শত্রুস থেকে শুরু করে ‘পিলার নাড়ায় ভবন পড়ে’ তত্ত্বের উদ্গাতারা সবাই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন! ব্যাপারটা নিয়ে পরিসংখ্যানবিদদের গবেষণা করা উচিত।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের একটা সার্টিফিকেট আমিও পেয়েছি। এই লেখাটা আমার শিক্ষক অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী কিংবা প্রখ্যাত কাঠামো প্রকৌশলী অধ্যাপক শামীমুজ্জামান বসুনিয়া, যিনি কিনা আবার ইঞ্জিনিয়ারস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের সভাপতি, তিনিও পড়বেন, এই সম্ভাবনা আছে। জামিলুর রেজা চৌধুরী আমাদের ট্রাস পড়াতেন, আমি তাঁর বিষয়ে পরীক্ষায় ৪০-এ ৩৯ পেয়েছিলাম, আর বসুনিয়া স্যার পড়াতেন আরসিসি, কংক্রিট; তাঁর পরীক্ষায় কেমন করেছিলাম মনে নেই, কিন্তু প্রথম দিনেই যে তিনি আমাকে দাঁড় করিয়ে বলেছিলেন, রংপুরের ছেলে হলো সবচেয়ে ভালো ছেলে আর বরিশালের মেয়ে হলো সবচেয়ে ভালো মেয়ে, সেটা মনে আছে। স্যারের বাড়ি রংপুর, শ্বশুরবাড়ি বরিশাল। আমি ছেলে কেমন জানি না, ছাত্র হিসেবে বুয়েটে ভালো ছিলাম না, তবে যত খারাপই হই না কেন, এ-কথা আমি আপনাদের গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি, কোনো নয়তলা ভবনের একটা কলাম দশজনে মিলে সর্বশক্তি দিয়ে ধাক্কা দিলেও কোনো ভবন ভেঙে পড়বে না, তবে এটা বলতে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক হতে হয় না যে এ ধরনের উক্তি করলে সরকার পড়ে যেতে পারে।
রানা প্লাজার ভেঙে পড়া থেকে একটা কথাই বারবার শুধু মনে পড়ছে, ডব্লিউ বি ইয়েটসের কবিতার লাইন থিংস ফল অ্যাপার্ট—সবকিছু ভেঙে পড়ে। চিনুয়া আচেবের একটি বইয়েরও নাম এটি। হুমায়ুন আজাদও সবকিছু ভেঙে পড়ে শিরোনামে বই লিখেছিলেন।
আমি পলায়নবাদী মানুষ। প্রথম দিন ওই দুর্ঘটনার খবর শোনার সঙ্গে সঙ্গে কাঁদতে শুরু করি। ভবনটিতে পোশাক কারখানা ছিল! হায় হায়, না জানি কত হাজার মানুষ ধুলায় মিশে গেছে রক্ত-মাংস-অস্থিসমেত! তারপর দুশ্চিন্তা, ওই গহ্বরের মধ্যে নড়তে পারছে না, চড়তে পারছে না, হয়তো হাত-পা চাপা পড়ে আছে কংক্রিটের নিচে, এমনভাবে একটা মানুষ অন্ধকারে, আলো-বাতাস, খাদ্য-পানি ছাড়া কেমন করে বেঁচে আছে। আমি নিজেকে ওই জায়গায় ভাবি, একটা বিছানায় ৭২ ঘণ্টা বালিশ চাপা দিয়ে রাখলেই আমি বাঁচব না, কোনো লিফটে আধা ঘণ্টা আটকে থাকলেই আমি আতঙ্কে মরে যাব। আমি ভাবতে পারছি না, ভাবতে গেলেই মনে হয়, আমি পাগল হয়ে যাই, রাস্তায় ছোটাছুটি করি, বিষপান করে মরে যাই। আমার শোক কোনো সান্ত্বনা মানে না, যখন ভাবি, ভবনটি পতনের আগে সংকেত দেওয়া সত্ত্বেও এতগুলো মানুষকে জোর করে কাজে ডেকে আনা হলো। এ কোন বিশেষজ্ঞ, যিনি বললেন, একটা কলাম ভাঙলে ভবন ভাঙে না। আমার মনে হচ্ছে, আমার শিক্ষক জামিলুর রেজা চৌধুরী, শামীমুজ্জামান বসুনিয়া আমার গালে কষে চড় মারছেন, এই শিখিয়েছি তোমাদের? তোমরা কেন ছুটে গেলে না সাভারে, কেন বললে না খালি করো ওই ভবন! এ আমার পাপ, ও তোমার পাপ।
কার জমি কে দখল করেছিল? কে পুকুর ভরাট করেছিল কী দিয়ে? জলাশয় ভরাট করা না বেআইনি? কে তাদের ভবন বানানোর অনুমতি দিল? কোন স্থপতি তার নকশা করল? কোন কাঠামো প্রকৌশলী তার কাঠামোর নকশা করল? কে তার নিরীক্ষা করে দিল? ওই ভবন বানানো হয়েছিল কোন উদ্দেশ্যে? কেন একটা দাপ্তরিক ভবনে কারখানা বসানো হবে? তাও এই রকম শ্রমঘন ও অত্যন্ত তাপ-উৎপাদনকারী কারখানা? শ্রম মন্ত্রণালয় কী করল? রাজউক কী করল? আমি আমার কলামে বহুবার লিখেছি, ঢাকা বা তার আশপাশে জমি যেখানে সোনার চেয়ে দামি, জীবনযাত্রা যেখানে ব্যয়বহুল, সেখানে কেন বহুতল ভবনে পোশাক কারখানা হবে? পোশাক কারখানার কাঁচামাল আসে বিদেশ থেকে, পণ্য চলেও যায় বিদেশে, তাহলে কেন এটা সমুদ্রবন্দরের কাছাকাছি এলাকাজুড়ে আনুভূমিকভাবে বেড়ে উঠবে না? এত টাকা আয় হচ্ছে, আপনারা ঢাকা শহর থেকে, বাণিজ্যিক ভবন থেকে, আবাসিক এলাকা থেকে পোশাকশিল্প সরিয়ে নিয়ে যান। কে শুনবে কার কথা? সোনার ডিম পাড়া হাঁস, একে মারা যাবে না। এখন লোভ আর পাপ নিজেই নিজের সোনার ডিম পাড়া হাঁসটাকে জবাই করে চলেছে।
আর বলি হচ্ছে গরিব শ্রমিকেরা। আহা রে আমার শ্রমিক ভাইয়েরা, শ্রমিক বোনেরা। কৈশোর-তারুণ্য-যৌবন তিলে তিলে বিসর্জন দিচ্ছে প্রচণ্ড আলোর নিচে, অহোরাত্র একাগ্র পরিশ্রম, কয় টাকা বেতন তাদের, কোথায় থাকে তারা, কী খায়, স্বাস্থ্যসুবিধা কতটুকু পায়? আমরা কোনো দিন খোঁজ নিতে যাইনি, শুধু চাকা ঘুরেছে, ববিন ঘুরেছে, সুচ ওঠানামা করেছে, বৈদেশিক মুদ্রা এসেছে, আমরা ঢাকার রাস্তায় মার্সিডিজ দেখি, বিএমডব্লিউ দেখি, আর যেসব গাড়ির নাম জানি না, সেসব দেখি। তারই চুয়ে পড়া টাকার ভাগ পাই। নিজেও গাড়ি চড়ি। বৈষম্য বড় বেশি। অবহেলা, অন্যায়, অনৈতিকতা বড় বেশি। আমরা বারুদের স্তূপের ওপরে বসে আছি। পোশাকশ্রমিকেরা একযোগে বেরিয়ে এসে এত দিনের বঞ্চনার প্রতিশোধ নিতে চাইলে সেদিনই আমাদের সাজানো বাগান শেষ হয়ে যাবে। তেমনি করে এতিম গরিব শিশুদের আমরা পাঠিয়েছি কওমি মাদ্রাসায়। তারা কেমন আছে, কোনো দিন জানতে চাইনি। তারা কী পড়ে, তাদের মনোজগতে কী আছে, আমরা খবর রাখিনি। তারা আজ লাখ লাখ বেরিয়ে আসার পর আমাদের টনক খানিকটা নড়েছে, কিংবা আদৌ নড়েনি।
আর সবকিছুর মূলে দেখতে পাই দলীয় রাজনীতি, গণতন্ত্রের পরিণত হওয়া লুণ্ঠনতন্ত্রে, আইনের শাসনের চির-অবসান, সীমাহীন লোভ, অর্থগৃধ্নুতা, মানবিক মায়া-মমতার অবলোপ, দখলবাজি, ঘুষ-দুর্নীতি, কর্তব্যে অবহেলা, এককথায় নৈরাজ্য!
এই চাপ আর নিতে পারছি না। যে মায়ের কাছে ফোন এসেছে—‘মা, আমরা চারজন চাপা পড়ে আছি, আমাদের উদ্ধার করো’—তাঁর কেমন লাগছে? এসব খবর আর পড়তে চাই না, টিভি থেকে চোখ সরিয়ে নিই। আর কত কাঁদব! আর কত চুল ছিঁড়ব! অনেক কেঁদেছি, আর কাঁদতেও পারছি না।
এই যখন দেশের সব মানুষের অবস্থা, তখন আসছে অমৃতবচন, খুঁটি ধরে ঝাঁকানোর অভূতপূর্ব বৈজ্ঞানিক তথ্য, যা সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মহা মহা আবিষ্কার হিসেবে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
তবু আশা দেখি, ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে ঢুকছেন সুড়ঙ্গে, ঢুকছেন সাধারণ মিস্ত্রিমানুষ! বের করে আনছেন জীবিত মানুষকে! কতজন রক্ত নিয়ে, অক্সিজেনের সিলিন্ডার নিয়ে বা ওষুধযন্ত্র নিয়ে ছুটে যাচ্ছেন ওখানে। কতজন অর্থসাহায্য করার জন্য সূত্র খুঁজছেন!
এই মানবিক বোধটুকু এখনো সাধারণ মানুষের ভেতর থেকে উবে যায়নি বলেই হয়তো এখনো সূর্য ওঠে, এখনো ভোর হয়, পাখি ডাকে!
আনিসুল হক: সাহিত্যিক ও সাংবাদিক
লিংকু
রানার বর্নার্ঢ জীবন কাহিনী........
উপলক্ষটি আত্মোপলব্ধি ও আত্মসমালোচনার
সাভারে ভবনধস হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রে যাঁদের কথার মূল্য আছে, তাঁরা বলেছেন, বহুতল ভবনটি নির্মাণে নিম্নমানের রড, সিমেন্ট, বালু প্রভৃতি ব্যবহারের কারণে এই ক্ষতি হয়েছে। বক্তব্যটি গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি। আমার অল্প বিদ্যাবুদ্ধিতে যা বুঝি, তা হলো নিম্নমানের রড-বালু-সিমেন্টের চেয়ে নিম্নমানের চিন্তা একটি জাতি ও দেশের জন্য অনেক বেশি ক্ষতিকর।
সাভারে ভবনধসের মতো ঘটনা, আমি দুর্ঘটনা বলতে চাই না, বাঙালির ইতিহাসে দ্বিতীয়টি নেই। যদিও এর চেয়ে বেশি মানুষ বাংলাদেশে অতীতে এক ঘণ্টায় নিহত হয়েছেন, তেমন দৃষ্টান্ত বিরল নয়। ভয়াবহ ঘটনাটি ঘটার পর থেকেই স্থানীয় মানুষ বিশেষ করে, যুব সম্প্রদায় দুর্গত মানুষকে উদ্ধারে যেভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েছে, তার তুলনাও খুব বেশি খুঁজে পাওয়া যাবে না। ফায়ার সার্ভিস, সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি প্রভৃতির সদস্যের সঙ্গে তাঁরা দিন-রাত উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। কেউ তাঁদের ডেকে আনেনি, নিয়োগ দেয়নি অর্থের বিনিময়ে। তাঁরা স্বনিয়োজিত। নিয়োগ যদি তাঁদের কেউ দিয়েই থাকে তা তাঁদের বিবেক। যে বিবেক বাংলাদেশের অধিপতি শ্রেণীর অনেকের মধ্যে লেশমাত্র নেই। বৈশাখের তীব্র গুমোট, কাঠফাটা রোদ। তার মধ্যেই সাধারণ মানুষ নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে মৃতদেহ ও জীবন্মৃত মানুষকে উদ্ধারের কাজ করছেন, তা ঘরের মধ্যে বসে টেলিভিশনে দেখে শ্রদ্ধায় মাথা নত করছি। তাঁদের প্রশিক্ষণ তো নয়ই, অভিজ্ঞতাও নেই ত্রাণকাজের। কিন্তু আছে মনুষ্যত্ববোধ ও মানুষের জন্য অশেষ দরদ; আর আছে কর্তব্যবোধ। এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শত শত চিকিৎসক, সেবক-সেবিকা, শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের যে ভূমিকা দেখলাম, তার জন্য তাঁদের জানাই গভীর শ্রদ্ধা।
দেশ-বিদেশের কোটি কোটি উদ্বিগ্ন মানুষকে সর্বশেষ পরিস্থিতি অবগত করার কাজটি করেছেন সাংবাদিকেরা। সংবাদকর্মীদের দুর্ভাগ্য এই যে দুরূহতর কাজটি করেও তাঁদের কপালে ধন্যবাদ মেলে না। টিভি চ্যানেলের প্রতিবেদক ও ক্যামেরায় যাঁরা কয়েকটি দিন বিরামহীন কাজ করেছেন, তাঁদের কষ্টের বিষয়টি ঘরের মধ্যে বসে বোঝা সম্ভব নয়। অকল্পনীয় হূদয়বিদারক ও বীভৎস দৃশ্য তাঁরা নিজেরা অতি কাছে থেকে দেখেছেন। হাত-পা বিচ্ছিন্ন মানুষ, বিমের চাপায় চ্যাপ্টা মৃতদেহ, অন্ধকূপে সেলাই মেশিনের নিচে চাপা পড়া মানুষের আর্ত-আকুতি, এক ফোঁটা পানি ও অক্সিজেনের জন্য তাঁদের নিস্তেজ কণ্ঠস্বর, তাঁরা নিজের চোখে দেখেছেন ও নিজের কানে শুনেছেন। তার পরও যে তাঁরা সুস্থ থাকতে পেরেছেন, সে জন্য তাঁদের মানসিক শক্তির প্রশংসা না করা খুবই ক্ষুদ্রতা।
ভবনধসের সংবাদ প্রচারের সঙ্গে সঙ্গে যেসব তরুণ-তরুণী স্বেচ্ছায় রক্তদান করতে এগিয়ে আসেন, তাঁদের কাছে আমাদের ঋণ অপরিশোধ্য। যাঁরা পানির বোতল, অন্যান্য পানীয় ও শুকনো খাবার প্রভৃতি সরবরাহ করেছেন, তাঁদের কর্তব্যবোধ অতি প্রশংসার যোগ্য।
আমাদের সব সরকারেরই দোষ-ত্রুটি ও দুর্বলতার শেষ নেই। তা নিয়ে আমরা সমালোচনা করতে কার্পণ্য করি না। অন্যদিকে বাঙালিদের একটি গোত্র সরকারের খোশামুদি করে অপার আনন্দ পায়। আর একটি শ্রেণী যেকোনো ব্যাপারে সরকারকে তুলাধোনা করে পরম তৃপ্তি পায়। পৃথিবীতে সবচেয়ে সহজ কাজ হলো সমালোচনা করা। ভবনধসের পর থেকে সরকার যে ব্যবস্থা নেয়, তাতে বড় ত্রুটি ছিল না।
নয়তলা ভবনের ধ্বংসস্তূপ থেকে পাঁচ দিনে শ চারেক মৃতদেহ এবং আড়াই হাজার আটকে পড়া মানুষকে উদ্ধার করা অত্যন্ত বড় কাজ। ফায়ার সার্ভিস, সেনাবাহিনী, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ, র্যাব, পুলিশের সদস্য এবং অন্য স্বেচ্ছাসেবী উদ্ধারকর্মীদের যদি আমরা ধন্যবাদ না জানাই, তা হবে খুব নিম্নমানের দীনতা। গোটা প্রক্রিয়ার সঙ্গে যাঁরা যুক্ত ছিলেন না, কাছে থেকে না দেখেছেন, শুধু টিভি পর্দায় দেখে তাঁদের পক্ষে আংশিকও উপলব্ধি করা সম্ভব নয়। দেয়াল ও সেলাই মেশিনের নিচে চাপা পড়া গলিত লাশ ও জীবিত মানুষ। তাঁদের টানাটানি ভয়াবহ কাজ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তেমন একজন সরকারপ্রধান, যাঁর সঙ্গে আন্তরিকভাবে কথা বলা যায়। বিভিন্ন সময় জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে দেখেছি, তাঁর সঙ্গে খোলামেলাভাবে মতবিনিময় করা যায়। যদি তাঁর কোনো ব্যাপারে দ্বিমত থাকে, সেটাও তিনি স্পষ্টভাবেই প্রকাশ করেন, রেখে-ঢেকে বলেন না। তাঁকে কোনো যুক্তিপূর্ণ পরামর্শ দিলে তিনি তা শোনেন ও বাস্তবায়নের নির্দেশ দেন। তবে স্তাবক ও সুবিধাভোগীরা তাঁর সেই উদারতার সুযোগ নিতেও কার্পণ্য করেন না।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর অমূল্য সময় নষ্ট করে ভবনধসের প্রসঙ্গ নিয়ে আমার মতো অভাজনের সঙ্গেও অনেকক্ষণ কথা বলেছেন। দুর্ঘটনার সংবাদ শোনার পর থেকে সরকার সাধ্যমতো যত ব্যবস্থা নিয়েছে, বিশেষ করে, আটকে পড়াদের জীবিত উদ্ধারের ব্যাপারে, তার বিস্তারিত বিবরণ দেন। প্রধানমন্ত্রী হয়েও উদ্ধারকাজে অনেক খুঁটিনাটি বিষয়ে তিনি দৃষ্টি রেখেছেন শুনে অবাক হয়েছি। তা তিনি করেছেন শুধু প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নয়, ব্যক্তিগত আগ্রহ থেকে, তাতে সন্দেহ নেই। যেসব শ্রমিক দৈবক্রমে বেঁচে গেছেন, তাঁদের সুচিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যাপারেও তাঁর উদ্বেগ লক্ষ করেছি।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে আমার মনে হয়েছে, ভবনধসে প্রাণহানি ও এত শ্রমিকের আহত হওয়ায় তিনি মর্মাহত। অন্য সময় তাঁকে যতটা প্রাণবন্ত দেখি, রোববার তা দেখিনি। তাঁকে দেখেছি অনেকটা বিমর্ষ। সম্ভবত দেশের পোশাকশিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে তিনি চিন্তিত। আগে থেকেই বিরূপতা ছিল, এবার বিদেশি আমদানিকারকেরা হয়তো কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। সে আভাস আন্তর্জাতিক মিডিয়া থেকে জানা গেছে। তাতে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পড়বে মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব।
উদ্ধারকাজে সরকারের প্রচেষ্টার প্রশংসা করেও বলা যায়, হাজার হাজার মানুষের জীবন বাঁচানোর প্রশ্ন যেখানে, সেখানে বাইরে থেকেও সাহায্য নেওয়া উচিত ছিল। ভারত, থাইল্যান্ড, চীন ও জাপানের সহায়তা চাওয়া যেত। বিশেষ করে, ভারতের ডিজাস্টার রেসপন্স ফোর্সের সহায়তা হতো সবচেয়ে কার্যকর। তা হলে হয়তো আরও কয়েক শ মানুষের জীবন বাঁচত।
যাঁরা চলে গেছেন, মৃত্যুর আগে কেমন ছিল তাঁদের অনুভূতি, পৃথিবী সম্পর্কে কেমন ধারণা নিয়ে তাঁরা চলে গেছেন, তা আমরা কোনো দিনই জানতে পারব না। কিন্তু যাঁরা মরণসাগরের কিনারা থেকে ফিরে এসেছেন, সেসব মানুষের অবস্থা দেখার দুর্ভাগ্য আমাদের হচ্ছে। ভবনধস হলে তার ছাদ ও দেয়ালচাপায় আহত ব্যক্তিদের জখম কত রকম হতে পারে, তা রানা প্লাজার আহত ব্যক্তিদের না দেখলে অনুমান করাও সম্ভব নয়। ঢাকা মেডিকেলের ২০৬ নম্বর মহিলা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ময়মনসিংহের রোজিনা, রংপুরের মমতা, খুলনার শিরিনা, যশোরের ফেলী, রাজবাড়ীর ঝর্ণা ও অন্যরা কাতরাচ্ছেন। পৃথিবী যে কত নিষ্ঠুর, তা তাঁদের চেয়ে বেশি আর কেউ জানে না। নিজেদের যে শারীরিক যন্ত্রণা, তা অনেকেই ভুলে গেছেন। কারণ, তাঁদের কেউ হারিয়েছেন মাকে, কেউ আদরের ছোট বোনটিকে মরতে দেখেছেন, কেউবা মেয়েকে।
পুরুষদের ১০১ এবং পাশের ১০২ নম্বর ওয়ার্ডের রোগীদের অনেকেরই জখমের সঙ্গে কিডনি নষ্ট হয়ে গেছে পানিশূন্যতা ও রক্তক্ষরণে। হেমোডায়ালেসিসসহ যথাযথ চিকিৎসা চলছে। সিনিয়র ও জুনিয়র চিকিৎসক, মেডিকেলের ছাত্রছাত্রী ও সেবিকারা সার্বক্ষণিক নজর রাখছেন আহত ব্যক্তিদের প্রতি। শুধু পেশাদারি থেকে বা চাকরির কারণে নয়, মানবিক দরদ থেকেও।
সব পেশার মানুষের মধ্যেই ভালোত্ব রয়েছে। অতি অল্পসংখ্যক দলীয় কর্মকর্তার আচরণে পুলিশের প্রতি মানুষের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে নেতিবাচক মনোভাব। অথচ পুলিশ প্রতিদিন মানুষকে সাহায্য করছে। ঘটনার দিন বিএনপির হরতাল ছিল। আমি কোনোভাবে সাভার যাওয়ার চেষ্টা করছিলাম। দু-একটা বাস ও বেবিট্যাক্সি চলছিল। আমি যাব, এ কথা শুনে বঙ্গবন্ধু ভবনের কাছে ডিউটিতে থাকা পুলিশের কয়েকজন সদস্য বললেন, এ পরিস্থিতিতে যেতে পারবেন না, তবে যদি যেতেই চান স্যার, তাহলে আপনাকে আমরা শ্যামলী পর্যন্ত পৌঁছে দিতে পারি। হাসপাতালে আমি আহত ব্যক্তিদের দেখতে যাব, গাড়ি দরকার, বলামাত্র ঢাকার পুলিশ কমিশনার বেনজীর আহমেদ পুলিশসহ আমাকে গাড়ি দেন। আমরা কারও উপকারের কথা স্বীকার করি না বলে আজকাল কেউ কারও উপকার করতে উৎসাহ পান না।
অবশ্য ভবনধসের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ‘স্তম্ভ নাড়াচাড়া’র কথায় সরকারের খুব ক্ষতি হয়েছে। নির্বাচনের বছর। আওয়ামী লীগেরই হয়েছে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি। দেড় বছর হরতাল দিয়ে গাড়ি ভাঙচুর করে বিএনপি-জামায়াত যেটুকু লাভবান হয়েছে, তার চেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে ওই বক্তব্যে। জনগণ মনে করছে, সরকার যেকোনো ব্যাপারে বিএনপি-জামায়াত-শিবিরকে অযৌক্তিকভাবে দোষারোপ করে।
ভবনধসের মূল কারণ নিম্নমানের সিমেন্ট, রড, বালু নয়—নষ্ট রাজনীতি। কীর্তিমান সোহেল রানার বর্ণাঢ্য জীবনের ইতিহাস যদি আমরা পাঠ করি, তাহলে আর কোনো কিছু জানার দরকার হয় না। সংবাদপত্রে সামান্য লেখা হয়েছে। ‘অষ্টম শ্রেণী পাস কিশোর রানার সঙ্গে ১৯৯৪ সালে পরিচয় হয় সাভার কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি হেলালের গাড়িচালক জাকিরের। জাকিরের সহায়তায় সন্ত্রাসী কাজে জড়িয়ে পড়েন রানা। পরে রানার বড় বোন সুফিয়ার সঙ্গে বিয়ে হয় জাকিরের। ২০০৬ সালে জাকির র্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন। এতে রানার হাত রয়েছে বলে অভিযোগ আছে। সুফিয়ার দ্বিতীয় বিয়ে হয় র্যাবের এক কর্মকর্তার সঙ্গে। রানার মালিকানাধীন দুটি দোকান র্যাবের এক কর্মকর্তাকে উপহার দেওয়া হয়। হেলালের সৌজন্যে রানার উত্থান হলেও তাঁর মালিকানাধীন চৌধুরী এন্টারপ্রাইজের অফিস দখল করেন রানা। সেখানে আটতলা ‘রানা টাওয়ার’ নির্মাণ করা হয়। ২০০৮ সালে গুম হন হেলাল। এর সঙ্গে রানার সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ছাত্রলীগে যোগ দেন রানা। ১৯৯৮ সালে সাভার পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হন তিনি। গত জানুয়ারিতে পৌর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক হন।’ [সমকাল, ২৮ এপ্রিল]
তাঁর জীবনালেখ্য থেকে আরও জানা যায়, ‘১৯৯৬ সালে ছাত্রলীগের নেতা থাকার সময় থেকেই জমির ব্যবসা শুরু করেন রানা। শুরু হয় রানার উত্থান। ২০০৩ সালে গ্রেপ্তার হন তিনি। তাঁর বাবা আবদুল খালেক ওরফে কলু খালেক বিএনপিতে যোগ দিলে ১২ দিন পর জামিনে মুক্তি পান রানা। কলু খালেক গত ডিসেম্বরে আবার আওয়ামী লীগে যোগ দেন। বাবার বিএনপিতে যোগ দেওয়ার সুযোগ কাজে লাগিয়ে তখনকার ছাত্রলীগ নেতা রানা বাসস্ট্যান্ড-সংলগ্ন রবীন্দ্র সাহার ২৬ শতাংশ ডোবা জমি দখল করেন। এর সামনেই রানার বাবার ক্রয়সূত্রে আরও ২৬ শতাংশ জমি ছিল। বাবার জমি ও দখল করা জমিতে ২০০৬ সালে ‘রানা প্লাজা’ নির্মাণ করা হয়। ২০১০ সালে পৌরসভার অনুমোদনে ভবনটিকে পাঁচতলা থেকে নয়তলায় উন্নীত করা হয়।’ [ঐ]
রানার কর্মময় জীবনকাহিনি যদি কেউ লেখেন তা ১০ খণ্ডেও কুলাবে না। আওয়ামী লীগ একটি অসাম্প্রদায়িক সংগঠন। কিন্তু দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতির কারণে সেই দলের কত নেতা যে দুর্বল হিন্দুদের বাড়িঘর জোতজমি জবরদখল করেছেন—তার একটি দৃষ্টান্ত রানা। আওয়ামী লীগের অসাম্প্রদায়িক ভাবমূর্তি নস্যাৎ করে দিয়েছেন এই নব্য ধনী যুবনেতা। টিভিতে দেখলাম, অসহায় রবীন্দ্রনাথের ভীতসন্ত্রস্ত মুখ। তিনি টিভি প্রতিবেদককে বলছেন, ‘আপনারা তো চইল্যা যাইবেন, আমার নিরাপত্তা কেরা দিব।’ তিনি রানাকে ভালো চেনেন। এই সমাজকেও চেনেন। আরও ভালো চেনেন রাষ্ট্রকে। তিনি জানেন, রানা বেরিয়ে আসবেন। রবীন্দ্র বাবুর স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি কে দেবে? তাঁর অবস্থা যদি আমরা বিবেচনায় না রাখি, তাহলে ভবনধসের মর্ম উপলব্ধি করতে পারব না।
সাভারের ঘটনার পর মনে করেছিলাম, এই ঘটনা সমগ্র জাতির চৈতন্যে গভীর প্রভাব ফেলবে। রাজনীতিকেরা উপলব্ধি করবেন, নষ্ট রাজনীতির ফলাফল শেষ পর্যন্ত শুভ হয় না। পোশাকশিল্পের নেতারা ভেবে দেখবেন শুধু মুনাফা অর্জনই বড় ব্যাপার নয়, শ্রমিকের জীবনেরও একটি মূল্য আছে। খুবই তাৎপর্যের বিষয়, গত ১০-১৫ বছরে পোশাকশিল্পে যত অগ্নিকাণ্ড হয়েছে বা ভবনধস, তাতে শুধু শ্রমিকেরাই নিহত হয়েছেন। কারখানার চেয়ারম্যান, পরিচালক, এমডি, ম্যানেজার মারা যাননি। কারখানায় কি শুধু শ্রমিকেরাই থাকেন, নাকি মালিক-কর্মকর্তারাও?
বিবিসি সংলাপে বিজিএমইএর সভাপতি বলেছেন, ভবনধসের সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ করে সংবাদমাধ্যম দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে। তাঁর ভাষায়, ‘মিডিয়া তার দায়িত্ব পালন করেছে, ঠিক আছে। কিন্তু আমরা বারবার এসব দেখাচ্ছি। এতে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে।’ সংবাদ গোপন করলেই কি দেশের ভাবমূর্তি বাড়ত?
কষ্ট হয় একটি কথা ভেবে যে বিজিএমইএর নেতারা জানেন না, পোশাকশিল্পের মালিকদের দেশের মানুষ খুবই মর্যাদা দেয়। যাঁদের কারখানার মানসম্মত ভবন রয়েছে, যাঁরা সময়মতো বেতন পরিশোধ করেন, তাঁদের সম্পর্কে মানুষের বা মিডিয়ার কোনো অভিযোগ নেই। অভিযোগ শুধু তাঁদের বিরুদ্ধে, যাঁরা নষ্ট। যাঁরা নিয়মিত বেতন দেন না। যাঁরা শ্রমিকদের মনে করেন দাসদাসী। যাঁরা শ্রমিকদের পুড়িয়ে মারেন। দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করলে তারাই করেন, মিডিয়া নয়।
ধারণা করেছিলাম, সাভার ঘটনার পর পোশাকশিল্পের নেতারা গলার সুর নরম করবেন, কিন্তু দেখা যাচ্ছে তাঁদের ঝাঁজ আরও বেড়েছে। কণ্ঠ আরও উঁচু। তাঁদের ভবিষ্যতে বড় বিপদে পড়ার আগে আত্মসমালোচনা ও আত্মোপলব্ধি প্রয়োজন রয়েছে।
মুসলিমবিরোধী রাজনীতির কারণে যেমন বিধ্বস্ত হয় টুইন টাওয়ার, আমাদের নষ্ট রাজনীতির কারণেই ধসে পড়েছে রানা প্লাজা। পি ভি নরসীমা রাও তাঁর আত্মকথায় লিখেছেন, ‘বাবরি মসজিদ তো ধ্বংস নয়, ওরা ধ্বংস করেছে আমাকেই।’ আমার ধারণা, রানা প্লাজা শুধু নয়, সেই সঙ্গে বিধ্বস্ত হয়েছে মহাজোট সরকার।
সৈয়দ আবুল মকসুুদ: গবেষক, প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক।
লিংক
২| ৩০ শে এপ্রিল, ২০১৩ সকাল ১০:৪৮
সুমন জেবা বলেছেন: ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে ঢুকছেন সুড়ঙ্গে, ঢুকছেন সাধারণ মিস্ত্রিমানুষ! বের করে আনছেন জীবিত মানুষকে!
এই মানবিক বোধটুকু এখনো সাধারণ মানুষের ভেতর থেকে উবে যায়নি বলেই হয়তো এখনো সূর্য ওঠে, এখনো ভোর হয়, পাখি ডাকে!
৩| ৩০ শে এপ্রিল, ২০১৩ সকাল ১০:৫১
গোয়েন্দাপ্রধান বলেছেন: ei dalal vondo anisul kuarn nia ultapalta like abar koi amra muslm ei chease re cena ase.e to ekbr alu r kolame liksilo ami awami league er proti sohanuvutisil ...
৪| ৩০ শে এপ্রিল, ২০১৩ সকাল ১১:৩০
সুজাহায়দার বলেছেন: পোশাক কারখানার কাঁচামাল আসে বিদেশ থেকে, পণ্য চলেও যায় বিদেশে, তাহলে কেন এটা সমুদ্রবন্দরের কাছাকাছি এলাকাজুড়ে আনুভূমিকভাবে বেড়ে উঠবে না? এত টাকা আয় হচ্ছে, আপনারা ঢাকা শহর থেকে, বাণিজ্যিক ভবন থেকে, আবাসিক এলাকা থেকে পোশাকশিল্প সরিয়ে নিয়ে যান।
কিন্তু তা তো করা যাবে না ভাই, তাহলে ঢাকার গুরুত্ব যে কমে যায়. দেখেন না সরকারী বেসরকারী সব অফিস ঢাকা কেন্দ্রিক
৫| ৩০ শে এপ্রিল, ২০১৩ সকাল ১১:৩৭
আমাবর্ষার চাঁদ বলেছেন: ধন্যবাদ..............
©somewhere in net ltd.
১|
৩০ শে এপ্রিল, ২০১৩ সকাল ১০:২১
আহলান বলেছেন: নোটেড ..