![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
তওবা এবং নিষ্কলংকতা
বাস্তবিকপক্ষে মানুষ বড়ই অপরাধী। অপরাধ করাটা যেন তার মজ্জাগত ব্যাপার। অপরাধপ্রবণতা তার মধ্যে এমনভাবে সক্রিয় যেমন শিরা-উপশিরায় রক্তের প্রবাহ সদা-সক্রিয়। এজন্য কাউকে একেবারে নিষ্পাপ নিষ্কলুষ হতে হবে এমন দাবি করা যায় না। আল্লাহ তাআলা কাউকে একেবারে নিষ্পাপ থাকতে বাধ্য করেননি। তাঁর দাবি হচ্ছে, মানুষ যখনই কোন অপরাধ করে বসবে সাথে সাথে তওবা করে নেবে এবং পুনরায় সঠিক পথে ফিরে আসবে। কখনো তার পদস্খলন হলে সাথে সাথে সতর্ক হয়ে যাবে। কখনো হোঁচট খেয়ে মাটিতে উল্টে পড়ে গেলে সাথে সাথে উঠে দাঁড়াবে, শরীরে কোন ময়লা লেগে থাকলে তা ঝেড়ে ফেলবে এবং পুনরায় লক্ষ্যপথে এগিয়ে চলবে।
মানুষের আত্মাও বলতে গেলে তার দেহের মত। উভয়ই সব সময় পাক-পবিত্র থাকতে চায়। কেননা দেহ ও আত্মা থেকে সব সময় এমন জিনিস বের হয় এবং তার মধ্যে বাইরে থেকে প্রবেশ করে যা অনবরত গোসল এবং পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখঅর দাবি জানায়। দেহে এমন সব গ্রন্থি এবং কলকব্জা রয়েছে যা সব সময় লালা নির্গত করে। সে যে যমীনের বুকে বাস করে তার পরিবেশ অনবরত তার দেহে ধুলোবালি জমা করে। অতএব স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য এসব ময়লা দূর করে ফেলা একান্ত প্রয়োজন।
অনুরূপভাবে মানুষের অন্তরও খারাপ কাজের দিকে ঝুঁকে পড়ে। তাছাড়া অন্যদের সাহচর্যে সে নানারূপ পরীক্ষার সম্মুখীন হতে পারে এবং নিত্য নতুন উত্তেজনার শিকার হতে পারে। এজন্য প্রয়োজন বারবার তওবা করার এবং ক্ষমা প্রার্থনা করার –যাতে অন্তরের ময়লা দূর হতে পারে এবং কালো দাগ বিলীন হয়ে যেতে পারে। যেমন গোসলের মাধ্যমে দেহ থেকে ময়লা দূর করে তা পরিস্কার রাখা হয়। কুরআন পাকের নিম্নোক্ত আয়াত সেদিকেই ইঙ্গিত করেছেঃ
নিশ্চিতই আল্লাহ তাআলা তওবাকারীদের ভালবাসেন এবং পবিত্রতা অর্জনকারীদের পছন্দ করেন।–সূরা বাকারাঃ ২২২
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম সব সময় তওবা করতেন এবং ক্ষমা প্রার্থনা করতেন। অন্যদেরও তিনি এ কাজে উৎসাহিত করতেন এবং বলতেনঃ
তোমরা আল্লাহর কাছে তওবা কর। আমি আল্লাহর কাছে দৈনিক একশো বার তওবা করে থাকি।
এই গুণের জন্য কুরআন মজীদ নবী-রাসূলদের প্রশংসা করেছে। হযরত সুলায়মান আলায়হিস সালাম সম্পর্কে বলা হয়েছেঃ
অতি উত্তম বান্দাহ, বারবার খোদার দিকে প্রত্যাবর্তনকারী।
-সূরা সাদঃ ৩০
আল্লাহ তাআলা মুমিন লোকদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন যে, তিনি তাদেরকে ব্যক্তি-স্বার্থের মালিন্য, প্রবৃত্তির তাড়না এবং জীবনযাত্রার পথের বিপর্যয় থেকে রক্ষা করেন। কেননা জীবনের প্রতিটি মুহুর্তেই তারা ঈমানের পরীক্ষার সম্মুখীন হয়। নিম্নোক্ত আয়াত এই বাস্তব সত্যকেই তুলে ধরেছেঃ
ঈমানদার লোকদের সাহায্যকারী ও পৃষ্ঠপোষক হচ্ছেন আল্লাহ। তিনি তাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করে আনেন। আর যারা কুফরীর পথ অবলম্বন করে তাদের পৃষ্ঠপোষক হচ্ছে আল্লাহদ্রোহী শক্তি ‘তাগুত’। এটা তাদেরকে আলো থেকে অন্ধকারের দিকে টেনে নিয়ে যায়।–সূরা বাকারাঃ ২৫৭
এ কথাও মনে রাখা প্রয়োজন যে, আমাদের দ্বারা যে ভুলভ্রান্তি হয়ে যায় তার ধাপগুলোর মধ্যে যথেষ্ট ব্যবধান রয়েছে। একই জিনিস কারো জন্য সঠিক এবং বৈধ গণ্য হয়, কিন্তু অপরের জন্য ভ্রান্ত ও অবৈধ প্রমাণিত হয়। কবি বলেনঃ
একই কাজের ফল দ্বিবিধ হতে পারে
একজনের জন্য যা নেকী
অন্যের জন্য হতে পারে গুণাহের পর্যায়ভুক্ত।
তাসাওফপন্থীদের কথার অর্থও খুব সম্ভব তাইঃ
ধার্মিক লোকদের নেক কাজ নৈকট্যলাভকারী লোকদের অপরাধ বলে গণ্য হয়।
এই আলোচনার উদ্দেশ্য হচ্ছে, প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে এ থেকে ফায়দা উঠানো এবং এর আলোকে অপরাধীদের অপরাধ এবং উদ্যত যুবকদের বেপরোয়া কার্যকলাপের চিকিৎসা করা। “ঈমান বর্তমান থাকলে গুনাহ কোন ক্ষতি করতে পারে না”।–এই ভ্রান্ত এবং নেতিবাচক দর্শনের কোন ভিত্তি নেই। এই দৃষ্টিভঙ্গী মুসলমানদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ায় তাদের যথেষ্ট ক্ষতি হয়েছে। এই ধ্যান-ধারণা একদিকে তাদের সভ্যতা-সংস্কৃতি, শক্তি সামর্থ্য এবং রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বের পতন ঘটিয়েছে, অপরদিকে তা ঈমানকে একটি নৈতিক দুর্গ এবং জাতীয় সংহতি ও নিরাপত্তার গ্যারান্টি হিসেবে এর যথেষ্ট ক্ষতিসাধন করেছে। তাছাড়া ঈমান যে জ্ঞানকে আলো দান করে এবং অন্তরকে প্রত্যয়ে পরিপূর্ণ করে দেয়, উল্লেখিত ধ্যানধারণা তার এই মর্যাদাকেও চরমভাবে আহত করেছে এবং সর্বপ্রথম তার অবয়বকে বিকৃত করে ছেড়েছে।
আমরা একথা বলছি না যে মানুষ অপরাধ করে বসলে চোখের পলকেই কাফির হয়ে যায়। ঈমানের প্রসঙ্গটি এর চেয়ে নাজুক। আমরা অবশ্যই এ কথা বলব যে, দুষ্কর্ম যখন ঈমানকে গ্রাস করে নেয় এবং তার উপর অবিরত আক্রমণ চালাতে থাকে, এভাবে দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হয়ে যায় এবং ঈমান ঘুটঘুটে অন্ধকারে হাবুডুবু খেতে থাকে –এই অবস্থায় তওবার অগ্নিস্ফুলিংগ উদ্ভাসিত হয়ে এই অন্ধকারের পর্দাকে ভেদ করতে পারে না। এ ধরনের অন্তর থেকে, শেষ পর্যন্ত ঈমান ধীরে ধীরে বিদায় নিতে থাকে, হৃদয়ের সৌন্দর্য বিলুপ্ত হয়ে যায় এবং সে ভয়াবহ জাহিলিয়াতের দিকে ধাবিত হয়। আল্লাহ তাআলার নিম্নোক্ত বাণী সম্পর্কে চিন্তা করে দেখা যাকঃ
হ্যাঁ, যে ব্যক্তি পাপ কামাই করেছে এবং পাপের জালে জড়িয়ে পড়েছে সে-ই হবে জাহান্নামী এবং চিরকাল জাহান্নামেই থাকবে। -সূরা বাকারাঃ ৮১
রাত-দিন অতিবাহিত হতে থাকে, দুষ্কর্ম নিজের জাল বিস্তার করতে থাকে, আর অমনোযোগী ব্যক্তি অপমান ও লজ্জার বিছানায় বেহুঁশ অবস্থায় পার্শ্ব বদল করতে থাকে। তার ঠিকানা দোযখ ছাড়া আর কি হতে পারে? আর তা কতই না নিকৃষ্ট ঠিকানা।
আয়াতে উল্লেখিত (সাইয়েআত) শব্দটি এখানে যদি শিরক এবং মূর্তিপূজা অর্থে ব্যবহৃত হত, তাহলে আয়াতের কোন অর্থই হয় না। এ আয়াত মূলত ইহুদী আলেমদের প্রসঙ্গে নাযিল হয়েছে এবং তাদেরকেই সম্বোধন করা হয়েছে। মূর্তিপূজার অর্থ করার সুযোগ কোথায়? আভিধানিক অর্থ এবং শরীআতের পরিভাষাগত দিকটিও এ ধরনের ব্যাখ্যা করার পথ বন্ধ করে দেয়। এজন্য কোন সুযোগই অবশিষ্ট থাকে না।
©somewhere in net ltd.