নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চরম সব ব্লগ লিখে দেশ,সমাজ,সভ্যতা,বিশ্ব-সংসার সবকিছু পরিবর্তন করে ফেলব।

জাহিদুল ইসলাম ২৭

আমি খোলা মনের মানুষ

জাহিদুল ইসলাম ২৭ › বিস্তারিত পোস্টঃ

কোথাও কেউ নেইঃ উপন্যাস বনাম নাটক।

১৮ ই জানুয়ারি, ২০২২ বিকাল ৪:৪১


নন্দিত কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের তুমুল জনপ্রিয় টেলিভিশন ধারাবাহিক কোথাও কেউ নেই। নব্বইয়ের দশকের এমন কোন বিটিভি দর্শক নেই যিনি নাটকটি দেখেননি। নাটকটি ১৯৯২-১৯৯৩ সাল পর্যন্ত প্রথম বারের মতো প্রচার করা হয়।এটি এতোই জনপ্রিয় হয় যে এর কেন্দ্রিয় চরিত্র বাকের ভাই এর ফাসির আদেশের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ -মিছিল হয়।
হুমায়ূন আহমেদের কোথাও কেউ নেই নামের উপন্যাস অবলম্বনে নাটকটি লেখা হলেও উপন্যাসের সাথে নাটকটির বেশ কিছু বড় রকমের পার্থক্য রয়েছে।আসুন জেনে নেই কি কি সেই পার্থক্য।

১)নাটকে বাকের ভাই কেন্দ্রিয় চরিত্র হলেও উপন্যাসে বাকের অন্য সকল গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রের মতোই একটি চরিত্র।উপন্যাসে ১০০ পৃষ্ঠার আগে বাকেরকে সেরকম ভাবে খুজে পাওয়া যায় না।বরং পুরো উপন্যাসে মুনাকেই বার বার খুজে পাওয়া যায়।গল্পটি যেন মুনা ও তার চারপাশের মানুষদের ঘিরে।

২)নাটকে বাকের তিন জনের দল নিয়ে ঘুরে বেড়ায়।তার সব সময়ের সঙ্গি মজনু ও বদি।উপন্যাসে বাকেরের কোন দল নেই।বাকেরের দল ভেঙে গেছে।বাকের একা একা মাস্তানি করে বেড়ায়। বাকেরের ঘনিষ্ট বন্ধু হিসাবে দেখা যায় সদ্য বিবাহিত এবং বাকেরের দলত্যাগী ইয়াদকে।চরিত্রটিতে বদির ছাপ আছে।

৩)নাটকে মুনার প্রেমিক মামুন প্রাইভেট টিউশনি করে।এক পর্যায়ে তার ছাত্রী বিজরী বরকতুল্লাকে বিয়ে করে।এই বিবাহ সুত্রে সে চাকুরি পায়।উপন্যাসে এরকম কোন কাহিনি নেই। উপন্যাসে মামুন কলেজের প্রফেসর।এক সময় চাকুরি ছেড়ে গ্রামে স্থায়ি হয়।

৪)নাটকে মুনা ও মামুনের বিচ্ছেদের কারন হিসাবে মামুনের তার ছাত্রিকে বিয়ে করার বিষয়টি দেখানো হয়।উপন্যাসে মামুন মুনার সাথে প্রাক বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করায় মুনা মামুনের সাথে সম্পর্ক ছেদ করে।

৫)উপন্যাসে জাহানারা নামে সম্পূর্ন নতুন একটি গুরুত্বপূর্ন চরিত্র আছে।মামুনের সাথে মুনার বিচ্ছেদের পর মামুন গ্রামে তেলের কারখানা করবে বলে গ্রামে ফিরে যায়।ব্যাংক লোনের আবেদন করে।ব্যাংকে তার পরিচয় হয় সেকেন্ড অফিসার জাহানারার সাথে।জাহানারার সাথে মামুনের বিয়ে হয়।উপন্যাসের বড় অংশ জুড়ে মামুন-জাহানারা আখ্যান।

৬)নাটকটি পুরোটাই ঢাকা শহরকেন্দ্রিক।উপন্যাসে মামুনের গ্রামের বাড়ি ও নেত্রকোনায় বকুলের শ্বশুরবাড়ির কাহিনি আছে।

৭)নাটকে মুনার মামা শওকত বাবার কথা শুনে পুলিশের কাছে স্যারেন্ডার করেন,টাকা আত্মসাতের কথা স্বীকার করেন।উপন্যাসে শওকত মামার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়।তিনি চুরির দায় থেকে মুক্তি পান ও ইউনিয়নের চাপে চাকুরি ফিরে পান।

৮)নাটকে কুত্তাওয়ালি রেবেকা হক দারোয়ানকে খুন করিয়ে বাকের কে ফাসিয়ে দেয়।উপন্যাসে এলাকার নতুন মুরুব্বি, কমিশনার পদপ্রার্থি স্থানীয় বাড়িওয়ালা সিদ্দিক সাহেব বাকের কে ফাসিয়ে দেয়।অন্তত বাকের সেরকমই বিশ্বাস করে।

৯)নাটকে বাকের,বদি ও মজনুর বিরুদ্ধে শান্তি কুটিরের দারোয়ানকে হত্যার অভিযোগ আনা হয়।বদি প্রলোভনে পড়ে রাজ সাক্ষী হয়ে বাকেরের বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়।এতে বাকেরের ফাসি হয়ে যায়।উপন্যাসে যেহেতু বাকেরের কোন দল নেই, তার একার বিরুদ্ধেই মামলা হয়।বাকেরের কোন বন্ধু ইয়াদ বা মাখনা তার বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান করে না।বাকেরের প্রতিপক্ষ তিন জন মিথ্যা সাক্ষি দাড় করায়।বাকেরের উকিল সেই সাক্ষ্যতে কোন ভুল ধরতে না পারায় তার ফাসির আদেশ হয়ে যায়।

উপন্যাসে কাহিনিতে একটি অসঙ্গতি আছে।বাবু(বকুলের ছোট ভাই) বকুলের বিয়ের পর বকুলের শ্বশুড় বাড়িতে বেড়াতে যায়।বকুলের স্বামী ডা.জহির তাকে স্থানীয় স্কুলে ভর্তি করে দেয় এবং নিজের কাছে রেখে দেয়।এই ঘটনা লেখক ভুলে গিয়ে বাবুকে দ্বিতীয় বারের মতো বকুলের শ্বশুড় বাড়িতে পাঠান মুনার সাথে।জহির তাকে দ্বিতীয় বারের মতো স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেয়।

আমরা জানি নাটকের ভাষা আর উপন্যাসের ভাষা এক নয়।এটুকু স্বীকার করেও বলা যায় নাটক থেকে উপন্যাসের কাহিনি খানিকটা ভিন্ন।এতে অবশ্য পাঠকের লাভই হয়েছে।নাটক এবং উপন্যাসের কাহিনি হুবাহু এক হলে নাটক দেখা পাঠকের কাছে উপন্যাসের আকর্ষন অনেকটাই কমে যেত।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:৩২

ঋণাত্মক শূণ্য বলেছেন: আমি যদিও ছোট ছিলাম; কিন্তু মনে আছে কি টান-টান উত্তেজনা নিয়ে সবাই শেষ পর্বটা দেখেছিলো।

১৮ ই জানুয়ারি, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:৪৩

জাহিদুল ইসলাম ২৭ বলেছেন: আমিও ছোট ছিলাম।মরুব্বিদের ভিসিআর আসক্তির ঠেলায় অনেক পর্ব মিস হয়েছে সে সময়।

২| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০২২ রাত ৯:০২

শায়মা বলেছেন: নাটক বানাতে গিয়ে সৃজনশীল লেখকের কিছু সৃজনশীলতা পরিবর্তন হয়েছে বা করেছেন হয়ত।

কিন্তু সব কিছুর পরেও মূল উপন্যাসের শেষ দৃশ্য অসহনীয় যে কষ্টের জন্ম দেয় হৃদয়ে তার তুলনা আর কিসে হয় জানা নেই আমার। :(

১৮ ই জানুয়ারি, ২০২২ রাত ৯:২৫

জাহিদুল ইসলাম ২৭ বলেছেন: জেলার তাকে জিজ্ঞেস করেন,"আপনি মৃতের কে?"
মেয়েটি শান্ত গলায় বললো,"আমি ওর কেউ না,কেউ না।"

অল্প কথায় গভীর ভাবাবেগের প্রকাশ মনে হয় কেবল হুমায়ূন আহমেদের মতো শক্তিশালী লেখকের পক্ষেই সম্ভব।

৩| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০২২ রাত ৯:২৬

শায়মা বলেছেন: হ্যাঁ কলিজা ফেটে যায়।

কাঁদতে কাঁদতে শেষ আমি। ঐ মেয়েটার বুকের মধ্যের চাপা কষ্ট এবং তার বাইরের নির্লিপ্ততা কি করে মানুষের বুকের গভীরেও ঢুকিয়ে দেওয়া যায় সে হুমায়ূন আহমেদ ছাড়া আর কে জানে?

১৮ ই জানুয়ারি, ২০২২ রাত ৯:৩৯

জাহিদুল ইসলাম ২৭ বলেছেন: শেষ অংশটুকু এত হৃদয়বিদারক যে,যে কারো মনে গভীর বেদনাবোধ জাগিয়ে তুলবে।যে বাকের সমাজের সকল মানুষের সুখে-দু:খে পাশে ছিল,আজ তার লাশ গ্রহন করার জন্য মুনা ছাড়া কেউ নেই।

৪| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০২২ রাত ৯:৪৪

শায়মা বলেছেন: সেখানেই ছিলো আসলে নামাকরণের সার্থকতা।

কোথাও কেউ নেই

১৮ ই জানুয়ারি, ২০২২ রাত ৯:৫৭

জাহিদুল ইসলাম ২৭ বলেছেন: একদম ঠিক বলেছেন।লেখক কাহিনির সাথে উপন্যাসের নাম সুন্দর ও স্বার্থক ভাবে মিলিয়ে দিয়েছেন।

৫| ১৯ শে জানুয়ারি, ২০২২ ভোর ৪:১৩

নেওয়াজ আলি বলেছেন: মাঝে মাঝে এখনো নাটকটা দেখি।

১৯ শে জানুয়ারি, ২০২২ রাত ৯:০২

জাহিদুল ইসলাম ২৭ বলেছেন: কয়েক বছর আগে বিটিভিতে দ্বিতীয়বারের মতো দেখেছিলাম।এটি শুধু নাটক নয়,এটি ইতিহাস।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.