নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আপনার বিবেক

মুক্তির কথা

আপনার বিবেক › বিস্তারিত পোস্টঃ

রক্ত স্নাত প্যালেস্টাইন, দখল পুনর্দখলের ইতিহাস গাঁথা বহু অধ্যায়ের গ্রন্থ

১৬ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ৮:১৫



প্যালেস্টাইন অনেক দখল পুনর্দখলের ইতিহাস গাঁথা বহু অধ্যায়ের গ্রন্থ। সেই সলোমান বাদশাহ থেকে শুরু করা যাক। খ্রিষ্টপূর্ব ১২৫০ থেকেই ইস্রাইলিরা ভুমধ্য সাগরের পূর্ব তীরের এই অঞ্চলে দখলে নিতে থাকে। প্রশ্ন থেকে যায় কোথা থেকে এরা আসে?

খ্রিষ্টপূর্ব ৯৬১-৯২২ বাদশাহ সলোমান রাজত্বে অধীনে চলে আসে অত্র অঞ্চল এবং তিনি সেখানে একটি মসজিদ তৈরি করেন। (মুসলিম ইতিহাসে যা আমরা জানি জীনের তৈরি মসজিদ হিসেবে)। সলোমান বাদশাহর রাজত্ব থাকে দুই ভাগে বিভক্ত। খ্রিষ্টপূর্ব ৫৮৬ তে বেবিলিওনিয়রা দক্ষিন ভাগের (যার নাম থাকে জুদাহ) দখল নেয় এবং সেই মসজিদ ভেঙে ফেলে আর ইস্রাইলিদের উতখাত করে। কিন্তু ৭০ বছরের মাথায় ইস্রাইলিরা আবার ঐ অঞ্চলে ফিরে যায় এবং সেই মসজিদ পুনর্নির্মাণ করে। খ্রিষ্টপূর্ব ৩৩৩ এ গ্রীক সেনাপতি অ্যালেকজান্ডার দা গ্রেট ঐ অঞ্চল তার রাজত্বের আওয়াতায় নিয়ে নেয়। কিন্তু তার মাত্র দের শতাধিক বছর পরেই ইহুদীরা ছিনিয়ে নেয় এবং গঠন করে প্রথম ইহুদি স্বাধীন রাষ্ট্র খ্রিস্টপূর্ব ১৬৫ তে। খ্রিষ্টপূর্ব ৬৫ এ ঐ অঞ্চল রোমান রাজত্বের অধীনে চলে যায় আর পরিচিত হয় প্যালেস্টাইন প্রদেশ নামে। কিন্তু কিছুদিনের মাথায় ইহুদীরা রোমান রাজাত্বের বিরুধিতা করলে, তাদের দেশ ত্যাগি হতে হয়। খ্রিস্টাব্দ ১১৮ রোমান রাজা হেদ্রিয়ানের সময় ইহুদীরা আবার ফিরে আস্তে থাকে। কিন্তু আবার বিদ্রোহ করলে ইহুদীদের সম্পূর্ণ রূপে উৎখাত করা হয় এবং কিছু ইহুদীদের দাস হিসেবে বিক্রি করা হয়। ৬৩৮ খ্রিস্টাব্দে ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর (রাঃ) সময় প্যালেস্টাইন রোমানদের কাছ থেকে নিয়ে নেয়া হয়। প্রায় ১৩৮০ বছর এক টানা প্যালেস্টাইন থাকে মুসলমানদের রাজত্বে। একটি বিষয় উল্লেখ যে মুসলিম শাসন আমলে এই অঞ্চল থেকে কোন বাসিন্দাকে উৎখাত করা হয় নাই। বরং মানুষ দলে দলে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করে ইহুদী থেকে মুসলমান, খ্রিস্টান থেকে মুসলমান, হিন্দু থেকে মুসলমান হয়েছে। রাজা শুধুই রাজত্ব দখল করেছে, ভুমি দখল নয়। ফলে প্রকৃত অধিবাসীরা তাদের আবাস থেকে উচ্ছেদ হয় নাই। যদিও প্যালেস্টাইন সহ ভুমধ্য সাগরের পূর্ব তীরের কিছু জায়গা অটোম্যান সাম্রাজ্যের অধীনে চলে যায়। ১৪০০ সালের দিকে অটোম্যান সাম্রাজ্য যা আজ তুরস্ক বা টার্কি নামেই পরিচিত।

১৯০৩ সালে ২৫ হাজার ইহুদী বসতি গড়ে প্যালেস্টাইনে। তারা মুলত পূর্ব ইউরোপ থেকেই স্থানন্তরিত হয়। তখন প্যালেস্টাইনে মুসলমান ছিল ৫০ লক্ষেরও বেশী। তারপরও সেখানে সহাবস্থানেই ছিল। মুসলমানরা কোন আঘাত, বা হয়রানীও করে নাই। তখনও অটোম্যান সাম্রাজ্যের অধিনেই ছিল প্যালেস্টাইন। ১৯০৭ থেকে ১৯১৪ সালে আরও ৪০ হাজার ইহুদী ইউরোপ থেকে এসে প্যালেস্টাইনে ঘাটি গড়ে।

১৯১৪ থেকে ১৯১৮ সালে প্রথম বিশ্ব যুদ্ধে অটোম্যান সম্রাট (টার্কি বা তুরিস্ক) জোট বাধে জার্মানির সাথে। অন্যদিকে আরব বিশ্ব জোট বাধে ব্রিটিশদের সাথে। জোটের শর্ত থাকে, অটোম্যান সাম্রাজ্য ভেঙ্গে দিয়ে আরবের হাতে তুলে দিবে আরবের অঞ্চলগুলি যার মধ্যে থাকে ত্রান্সজরদান, সিরিয়া, লেবানন এবং প্যালেস্টাইন। ব্রিটিশ অবশ্য ইহুদিদেরকেও এমন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো যে, তাদের জন্যেও একটি স্বাধীন ভূখণ্ড দেয়া হবে। যুদ্ধ পরাজয়ে ভূমধ্য সাগরের পশ্চিম তীরের সেই সব অঞ্চল চলে যায় তুরস্কের হাত থেকে। ১৯১৮ সালে আরব সিরিয়া দখল করে এবং শাহজাদা আল ফায়সাল (আরব হাসেমি বংশধর) হয় সিরিয়ার প্রধান। অবশ্য যুদ্ধের পড়ে লীগ অফ নেশন ফ্রান্সকে দেয় সিরিয়ার কর্তৃত্ব আর ব্রিটেনকে দেয় আজকের এই ইসরাইল, প্যালেস্টাইন, গাজা, ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক। ১৯২১ সালে ব্রিটিশ তার ঐ উপনিবেশকে দুই ভাগে বিভক্ত করে। একভাগ ট্রান্সজর্ডান যা পায় বাদশাহ ফয়সালের ভাই আবদুল্লাহ। আর অন্যভাগ প্যালেস্টাইন রয়ে যায় ব্রিটিশের কর্তৃত্বে। তখনও প্যালেস্টাইনে ৮৬ শতাংশ জনগন ছিল মুসলিম, ১০ শতাংশ ছিল খ্রিস্টান আর ৪ শতাংশ ছিল ইহুদী। ১৯২০ সালের ব্রিটিশ আদম শুমারিতে ইহুদীদের সংখ্যা দেখা যায় ১১ শতাংশ। ১৯৩০ সালের দিকে প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের আগে থেকে, ইউরোপে ইহুদীদের একটু ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখা শুরু হয়ে যায়, আর তার ফলশ্রুতিতে ব্যাপক হারে ইহুদী অভিবাসন শুরু হয়ে যায় প্যালেস্টাইনে। প্রায় লক্ষাধিক ইহুদী স্থানন্তরিত হয় ইউরোপ থেকে প্যালেস্টাইনে। সংখ্যায় বারার সাথে সাথেই বাধে যুদ্ধ স্থানীয় ফিলিস্থিনিদের সাথে। প্রায় ১৩৩ জন ইহুদী আর ১১০ জন ফিলিস্থিনিদের মৃত্যু হয় সেই যুদ্ধে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ইউরোপে নাজি (হিটলারের ফিলসফার) বাহিনী যখন ইহুদী নিধন (হত্যা) করে, তখন যেন ইহুদীরা মরীয়া হয়ে উঠে নিজেদের একটি স্বাধীন ভুখন্ড পাবার জন্যে। বিশ্বজুড়ে ইহুদীদের প্রতি অনেক সহানুভুতও জুটেছিল। হোলকাস্টে প্রায় ষাট লাখ ইহুদী হত্যা করা হয়। পুরো ইউরোপের দুই তৃতীয়াংশ ইহুদী হত্যা করে নাজি বাহিনী। কেন এতো ইহুদী বিদ্বেষ ছিল ইউরোপে? কেউ যদি মনে করে যে ইহুদী বিদ্বেষ ছিল শুধুই হিটলারের মনে। তো ভুল করবেন। হিটলার একা কিছুই করতে পারতো না যদি না ইহুদীদের বিরুদ্ধে বিশাল জনমত না থাকতো। ইহুদীরা ছিল ব্যাবসা, বাণিজ্য, শিল্প সংস্কৃতে, জ্ঞান বিজ্ঞানে ইউরোপের বিশাল প্রতাপের সাথে। তাদের অর্থনৈতিক শোষণে দারিদ্রতায় ভুগে প্রকৃত ইউরোপীয়রা। এমন কিছু ধারণা পাওয়া যায় ইতিহাস থেকে।যাই হোক, ইহুদী বিদ্বেষ কেনো ছিল ইউরোপে, সে নিয়ে আর একদিন লিখা যাবে। আসল কথা হচ্ছে, সেই হোলকাস্টের পর ইহুদীরা মরীয়া হয়ে ওঠে, নিজের একটি স্বাধীন ভূখণ্ডের জন্যে। ব্রিটিশের প্রতিশ্রুতি মতে ব্রিটিশ কর্তৃত্বে প্যালেস্টাইনেই গড়ে ওঠে ইহুদী রাষ্ট্র, ইসরাইল ১৯৪৮ সালের ১৫ মে, জাতি সংঘের মধ্যস্ততায়।

১৯৪৮ সালে ব্রিটিশ প্যালেস্টাইনে তার কর্তৃত্ব ছেড়ে দেয়। জাতি সংঘ প্রস্তাব দেয় প্যালেস্টাইনে দুই ভিন্ন রাষ্ট্র একটি মুসলমানদের জন্যে আর অন্যটি ইহুদীদের জন্যে। আর ভূখণ্ড দেয়ায় হয় ৫৫ শতাংশ ইহুদীদের যেখানে ইহুদী জনসংখ্যা ছিল ৩০ শতাংশেরও কম। অন্যদিকে ৭০ শতাংশেরও বেশী জনগোষ্ঠীর জন্যে থেকে যায় মাত্র ৪৫% ভূখণ্ড। এই প্রস্তাবে যদিও আরব রাষ্ট্রগুলি নাখোস ছিল। হয়ে যায় অনেক খণ্ড যুদ্ধ। কিন্তু ইহুদীদের সাথে কিছুতেই পেড়ে উঠে নাই ফিলিস্থিনিরা, এমনকি আরবরা। কখনও তারা সামরিক শক্তিতে কখনও কূটনৈতিক শক্তিতে হেরে গিয়েছে। অন্যদিকে ইসরাইল ধীরে ধীরে (আসলে অতটা ধীরে না, বলতে গেলে খুব দ্রুতই) ইহুদীরা দখল করতে থাকে প্যালেস্টাইনের ভুমি। শুধুই প্যালেস্টাইনের ভুমি না, ইসরাইল রীতি মতো আতঙ্কে রাখছে আরব দেশগুলিকে। বিভিন্নি খণ্ড যুদ্ধে ইসরাইল দখল করে নেয় লেবানন, সিরিয়া, মিশর সহ প্রতিবেশী অনেক দেশের ভূখণ্ড। আবার কিছু কিছু কূটনৈতিক তৎপরতায় ফেরতও পেয়েছে, প্রতিবেশী আরব দেশগুলি। একজন সাধারণ মানুষের দৃষ্টিকোণ থেকে আজকের ফিলিস্থিনিদের উপর এই মুহুর্মুহু মর্টার শেল ও বোমা নিক্ষেপ করে, গুলি করে, ঘরবাড়ি চুরমার করে হত্যা করাকে যেমন অস্বাভাবিক, নারকীয় হত্যাযজ্ঞ মনে হয়। ইহুদীদের দৃষ্টিতে কিন্তু এসব হচ্ছে যুদ্ধ জয়ের আনন্দ। তাদের দৃষ্টিতে তারা যুদ্ধ জয় করছে। নিজেদের জন্যে একটি স্বাধীন শক্তিশালী দেশ গঠন করছে।

যে ইউরোপীয়রা, যে জার্মান ইহুদী নিধন করলো, তারা আজ ইহুদীদের বন্ধু, কিন্তু শত্রু হয়ে গেলো ফিলিস্থিনি মুসলিমরা! আসলে শত্রু ফিলিস্থিনি মুসলিমরা না। ফিলিস্থিনি মুসলিমতো কাবাব মে হাড্ডি। ওদের সরিয়ে নিজেদের রাষ্ট্রের আয়তন বৃদ্ধি করাই তাদের প্রাথমিক লক্ষ্য। সময় মতো তারা আরবের অন্যান্য দেশকে যে ধরবে না, তা কে জানে? দ্বিতীয় কথা হচ্ছেঃ ইসরাইলের এই নারকীয় হত্যাযজ্ঞে আরব কেন নিচ্চুপ? আসলে আরব রাজ্যে কোথাও গণতন্ত্র নেই। এসব দেশে রাজা, বাদশাহ, শাহজাদা, আর স্বৈর শাসকরা নিজেদের ক্ষমতা ধরে রাখতেই ফিলিস্থিনিদের এই সমস্যা জিয়িয়ে রাখতে চাচ্ছে। যেমন, আমাদের ছোট বেলায় রাতে ঘুম পাড়াতে, কিংবা ঘুমের ঘড়ে খাবার খাওয়াতে, মায়েরা বড় শিয়ালের ভয় দেখাতো। শিয়াল কাছাকাছি থাকুক আর নাই থাকুক, আমরা কিন্তু ভয়ে ঘুমিয়ে পড়তাম, বা খাবারও ঠিক মতোই খেতাম। মায়ের কাজ সহজ হয়ে যেত। ঠিক তেমন এসব রাজা, বাদশাহরা, স্বৈরশাসকরা তাদের জনগণকে ইসরাইলের ভয় দেখিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখেন।

তৃতীয়তঃ অ্যামেরিকাসহ যে সব দেশ অস্ত্রের ব্যাবসা করে, তারা এই ইসরাইলের ভয় দেখিয়ে আরব বিশ্বে অস্ত্র বিক্রি থেকে সৈন্য ভাড়া দেয়ার ব্যাবসাটিও জমজমাট ভাবে করতে পারেন।

চতুর্থতঃ মাতুব্বররা তাদের মাতুব্বরি ধরে রাখতেও এমন সমস্যা জিয়ে রাখেন।

যে ঘৃণা সৃষ্টির ফলে ইহুদীরা হোলকাস্টের স্বীকার হয়েছে দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধে, তেমন ঘৃণাই যদি আবার সৃষ্টি হয়, তো শুধু মাত্র শক্তি দ্বারা কি নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে? যুদ্ধ কোন সমস্যার সমাধান না। যুদ্ধ বরং সমস্যাকে ঘনীভূত করে। ভালোবাসায় টিকে থাকে অস্তিত্ব। জাপানিরা, নিজেদের পাল্টে ফেলেছে। বিশ্বের সকল সুন্দর কাজে নিজেদের ব্যাস্ত রেখেছে। আজ তাই তারাও উন্নতির চরমে। ফিলিস্থিনিদের ভূখণ্ড ফিলিস্থিনিদেরকে ফিরিয়ে দেয়াই হবে, স্থায়ী শান্তির পথ। আরও একটি বিষয় বুঝার আছে। ভুমি দখল, আর রাজ্য দখল এক কথা নয়। ভুমি দখলে সাধারণ মানুষ নিঃস্ব হয়ে যায়, সাধারণ মানুষদের চলে যেতে হয় নিজেদের ভুমি ছেড়ে। আর রাজ্য দখলে শুধুই ক্ষমতার পালা বদল হয়। সাধারণের উপর প্রভাব প্রকট নাও হতে পারে। অন্তত তাদের ভুমিটুকু থেকে যায় নিজেদের। অটোম্যানের সাম্রাজ্য দখল, মুঘলদের ভারত দখল এসব ছিল শুধুই ক্ষমতা দখল। কিন্তু কোন সাধারণের ভুমি দখল হয় নাই। আর ইসরাইল করছে ভুমি দখল, প্রাণ দখল। নৃশংস ভাবে নিরীহ মানুষ হত্যা করে, যে রাষ্ট্র গড়তে চাচ্ছে ইসরাইল, সে রাষ্ট্র কি ইতিহাসের মতো মুছে যাবে না কোন দিন? যে ঘৃণা ছড়িয়ে দিচ্ছে পৃথিবীতে, সেই ঘৃণাই কি তাদের পতন ডেকে আনবে না, কোন একদিন? ইতিহাস পুনরাবৃত্ত হয়, যদি কোন জাতি ইতিহাস থেকে না শিখে। তাই কোন বুদ্ধিমান ইহুদীও মেনে নিতে পারে না এই অসভ্য, বর্বরতাকে। আর কোন সভ্য মানুষ এমন পৈশাচিক হত্যাযজ্ঞ দেখে চুপ থাক কিভাবে?

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.