![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রক্ত স্নাত প্যালেস্টাইন, অনেক দখল পুনর্দখলের ইতিহাস গাঁথা বহু অধ্যায়ের গ্রন্থ। সেই সলোমান বাদশাহ থেকে শুরু করা যাক। খ্রিষ্টপূর্ব ১২৫০ থেকেই ইস্রাইলিরা ভুমধ্য সাগরের পূর্ব তীরের এই অঞ্চলে দখলে নিতে থাকে। প্রশ্ন থেকে যায় কোথা থেকে এরা আসে?
খ্রিষ্টপূর্ব ৯৬১-৯২২ বাদশাহ সলোমান রাজত্বে অধীনে চলে আসে অত্র অঞ্চল এবং তিনি সেখানে একটি মসজিদ তৈরি করেন। (মুসলিম ইতিহাসে যা আমরা জানি জীনের তৈরি মসজিদ হিসেবে)। সলোমান বাদশাহর রাজত্ব থাকে দুই ভাগে বিভক্ত। খ্রিষ্টপূর্ব ৫৮৬ তে বেবিলিওনিয়রা দক্ষিন ভাগের (যার নাম থাকে জুদাহ) দখল নেয় এবং সেই মসজিদ ভেঙে ফেলে আর ইস্রাইলিদের উতখাত করে। কিন্তু ৭০ বছরের মাথায় ইস্রাইলিরা আবার ঐ অঞ্চলে ফিরে যায় এবং সেই মসজিদ পুনর্নির্মাণ করে। খ্রিষ্টপূর্ব ৩৩৩ এ গ্রীক সেনাপতি অ্যালেকজান্ডার দা গ্রেট ঐ অঞ্চল তার রাজত্বের আওয়াতায় নিয়ে নেয়। কিন্তু তার মাত্র দের শতাধিক বছর পরেই ইহুদীরা ছিনিয়ে নেয় এবং গঠন করে প্রথম ইহুদি স্বাধীন রাষ্ট্র খ্রিস্টপূর্ব ১৬৫ তে। খ্রিষ্টপূর্ব ৬৫ এ ঐ অঞ্চল রোমান রাজত্বের অধীনে চলে যায় আর পরিচিত হয় প্যালেস্টাইন প্রদেশ নামে। কিন্তু কিছুদিনের মাথায় ইহুদীরা রোমান রাজাত্বের বিরুধিতা করলে, তাদের দেশ ত্যাগি হতে হয়। খ্রিস্টাব্দ ১১৮ রোমান রাজা হেদ্রিয়ানের সময় ইহুদীরা আবার ফিরে আস্তে থাকে। কিন্তু আবার বিদ্রোহ করলে ইহুদীদের সম্পূর্ণ রূপে উৎখাত করা হয় এবং কিছু ইহুদীদের দাস হিসেবে বিক্রি করা হয়। ৬৩৮ খ্রিস্টাব্দে ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর (রাঃ) সময় প্যালেস্টাইন রোমানদের কাছ থেকে নিয়ে নেয়া হয়। প্রায় ১৩৮০ বছর এক টানা প্যালেস্টাইন থাকে মুসলমানদের রাজত্বে। যদিও ১৪০০ সালের দিকে প্যালেস্টাইন সহ ভুমধ্য সাগরের পূর্ব তীরের কিছু জায়গা অটোম্যান সাম্রাজ্যের অধীনে চলে যায়।
১৯০৩ সালে ২৫ হাজার ইহুদী বসতি গড়ে প্যালেস্টাইনে। তারা মুলত পূর্ব ইউরোপ থেকেই স্থানন্তরিত হয়। তখন প্যালেস্টাইনে মুসলমান ছিল ৫০ লক্ষেরও বেশী। তারপরও সেখানে সহাবস্থানেই ছিল। মুসলমানরা কোন আঘাত, বা হয়রানীও করে নাই। তখনও অটোম্যান সাম্রাজ্যের অধিনেই ছিল প্যালেস্টাইন। ১৯০৭ থেকে ১৯১৪ সালে আরও ৪০ হাজার ইহুদী ইউরোপ থেকে এসে প্যালেস্টাইনে ঘাটি গড়ে।
১৯১৪ থেকে ১৯১৮ সালে প্রথম বিশ্ব যুদ্ধে অটোম্যান সম্রাট (টার্কি বা তুরিস্ক) জোট বাধে জার্মানির সাথে। অন্যদিকে আরব বিশ্ব জোট বাধে ব্রিটিশদের সাথে। জোটের শর্ত থাকে, অটোম্যান সাম্রাজ্য ভেঙ্গে দিয়ে আরবের হাতে তুলে দিবে আরবের অঞ্চলগুলি যার মধ্যে থাকে ত্রান্সজরদান, সিরিয়া, লেবানন এবং প্যালেস্টাইন। ব্রিটিশ অবশ্য ইহুদিদেরকেও এমন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো যে, তাদের জন্যেও একটি স্বাধীন ভূখণ্ড দেয়া হবে। যুদ্ধ পরাজয়ে ভূমধ্য সাগরের পশ্চিম তীরের সেই সব অঞ্চল চলে যায় তুরস্কের হাত থেকে। ১৯১৮ সালে আরব সিরিয়া দখল করে এবং শাহজাদা আল ফায়সাল (আরব হাসেমি বংশধর) হয় সিরিয়ার প্রধান। অবশ্য যুদ্ধের পড়ে লীগ অফ নেশন ফ্রান্সকে দেয় সিরিয়ার কর্তৃত্ব আর ব্রিটেনকে দেয় আজকের এই ইসরাইল, প্যালেস্টাইন, গাজা, ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক। ১৯২১ সালে ব্রিটিশ তার ঐ উপনিবেশকে দুই ভাগে বিভক্ত করে। একভাগ ট্রান্সজর্ডান যা পায় বাদশাহ ফয়সালের ভাই আবদুল্লাহ। আর অন্যভাগ প্যালেস্টাইন রয়ে যায় ব্রিটিশের কর্তৃত্বে। তখনও প্যালেস্টাইনে ৮৬ শতাংশ জনগন ছিল মুসলিম, ১০ শতাংশ ছিল খ্রিস্টান আর ৪ শতাংশ ছিল ইহুদী। ১৯২০ সালের ব্রিটিশ আদম শুমারিতে ইহুদীদের সংখ্যা দেখা যায় ১১ শতাংশ। ১৯৩০ সালের দিকে প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের আগে থেকে, ইউরোপে ইহুদীদের একটু ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখা শুরু হয়ে যায়, আর তার ফলশ্রুতিতে ব্যাপক হারে ইহুদী অভিবাসন শুরু হয়ে যায় প্যালেস্টাইনে। প্রায় লক্ষাধিক ইহুদী স্থানন্তরিত হয় ইউরোপ থেকে প্যালেস্টাইনে। সংখ্যায় বারার সাথে সাথেই বাধে যুদ্ধ স্থানীয় ফিলিস্থিনিদের সাথে। প্রায় ১৩৩ জন ইহুদী আর ১১০ জন ফিলিস্থিনিদের মৃত্যু হয় সেই যুদ্ধে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ইউরোপে নাজি (হিটলারের ফিলসফার) বাহিনী যখন ইহুদী নিধন (হত্যা) করে, তখন যেন ইহুদীরা মরীয়া হয়ে উঠে নিজেদের একটি স্বাধীন ভুখন্ড পাবার জন্যে। বিশ্বজুড়ে ইহুদীদের প্রতি অনেক সহানুভুতও জুটেছিল। হোলকাস্টে প্রায় ষাট লাখ ইহুদী হত্যা করা হয়। পুরো ইউরোপের দুই তৃতীয়াংশ ইহুদী হত্যা করে নাজি বাহিনী। ব্রিটিশের প্রতিশ্রুতি মতে ব্রিটিশ কর্তৃত্বে প্যালেস্টাইনেই গড়ে ওঠে ইহুদী রাষ্ট্র, ইসরাইল ১৯৪৮ সালের ১৫ মে, জাতি সংঘের মধ্যস্ততায়।
১৯৪৮ সালে ব্রিটিশ প্যালেস্টাইনে তার কর্তৃত্ব ছেড়ে দেয়। জাতি সংঘ প্রস্তাব দেয় প্যালেস্টাইনে দুই ভিন্ন রাষ্ট্র একটি মুসলমানদের জন্যে আর অন্যটি ইহুদীদের জন্যে। আর ভূখণ্ড দেয়ায় হয় ৫৫ শতাংশ ইহুদীদের যেখানে ইহুদী জনসংখ্যা ছিল ৩০ শতাংশেরও কম। অন্যদিকে ৭০ শতাংশেরও বেশী জনগোষ্ঠীর জন্যে থেকে যায় মাত্র ৪৫% ভূখণ্ড। এই প্রস্তাবে যদিও আরব রাষ্ট্রগুলি নাখোস ছিল। হয়ে যায় অনেক খণ্ড যুদ্ধ। কিন্তু ইহুদীদের সাথে কিছুতেই পেড়ে উঠে নাই ফিলিস্থিনিরা, এমনকি আরবরা। কখনও তারা সামরিক শক্তিতে কখনও কূটনৈতিক শক্তিতে হেরে গিয়েছে। অন্যদিকে ইসরাইল ধীরে ধীরে (আসলে অতটা ধীরে না, বলতে গেলে খুব দ্রুতই) ইহুদীরা দখল করতে থাকে প্যালেস্টাইনের ভুমি। শুধুই প্যালেস্টাইনের ভুমি না, ইসরাইল রীতি মতো আতঙ্কে রাখছে আরব দেশগুলিকে। বিভিন্নি খণ্ড যুদ্ধে ইসরাইল দখল করে নেয় লেবানন, সিরিয়া, মিশর সহ প্রতিবেশী অনেক দেশের ভূখণ্ড। আবার কিছু কিছু কূটনৈতিক তৎপরতায় ফেরতও পেয়েছে, প্রতিবেশী আরব দেশগুলি।
এই যুদ্ধ কতো দূর যাবে? আর কতো মানুষ প্রান হারাবে? হয়তো হাজার বছর পড়ে, এমনই কেউ ইতিহাসের পাতায় গুনবে সেই সব ঝড়ে পড়া প্রানের সংখ্যা।
©somewhere in net ltd.