![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি এতিম, দরিদ্র, মুসাফির। হাঁটছি পৃথিবীর পথে পথে, অনিশ্চিত এক গন্তব্যের উদ্দেশে। আক্ষরিক অর্থেই আমি পথিক। একে একে জীবনযাত্রার সব সুতো কেটে দিচ্ছি। কাগজের নৌকা দিয়ে সাগর পাড়ির দুরন্ত প্রয়াস, যে সাগরের পাড় নেই। আমি একটি রাজ্যের মালিক, রাজা। রাজ্য পুনরুদ্ধার ও নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা অর্জনে চেষ্টিত। আমি মানবতার মুক্তির জন্য বিবেকের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। শোষিত-বঞ্চিতের পাশে দাঁড়াতে চাই।
সেদিন একটা দৈনিকের সাপ্তাহিক সাহিত্য সাময়িকীতে চোখ বুলাচ্ছিলাম।
খ্যাতিমান লেখকগণ তাদের প্রিয় গ্রন্থ নিয়ে আলোচনা করেছেন। পড়ে আমাদের বিশিষ্ট লেখকদের সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গির পাশাপাশি কিছু গ্রন্থের বিষয়বস্তু সম্পর্কেও একটা মোটামুটি ধারণা লাভ করা গেছে। এই ধারণার উপর ভিত্তি করেই আমার লেখক হওয়ার ইচ্ছেটা হঠাৎ বিপরীত দিকে মোড় নেয়। গত ১০ বছর ধরে মনের ভেতর লেখক হওয়ার একটা তীব্র বাসনা লালন করে আসছিলাম। কিন্তু আজ মনে হচ্ছে লেখক হওয়ার কোনো দরকারই নেই। কারণ এ ধরণের অবাস্তব, কল্পনাপ্রসু, অর্থহীন, হেঁয়ালী লেখা ও কথা সাহিত্যে প্রকৃতপক্ষে মানবসমাজের ন্যূনতম উপকার আছে বলে মনে হয় না, সময় নষ্ট ও মেধার অপচয় ছাড়া। ডায়রিতে প্রতিক্রিয়া লিখেছি, “লেখক হওয়াটা হবে আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা। যদি কিছু না হতে পারি, লেখক হব। পৃথিবীর বড় বড় লেখক-সাহিত্যিকগণ ব্যর্থতা থেকেই সম্ভবত লেখক হয়ে ওঠেছেন।”
আমি মনে করি একজন চিন্তাশীল ও বিপ্লবীর চোখে সমাজের অসঙ্গতি ও এর সমাধানগুলো প্রকাশের ভাষা আরও সরাসরি হওয়া উচিত। গল্প-উপন্যাসের নামে পাঠকদের সাত সমুদ্র তের নদী পার করানোর কি প্রয়োজন? নিজেই বা কেন ডুবে মরব? অবশ্য যারা চূড়ান্ত সমাধানে বিশ্বাস করেন না, অর্থাৎ দ্বন্দ্ব-ফাসাদ, কলহ, অশান্তি ও নৈরাশ্যকেই মানবজীবনের একমাত্র নিয়তি মনে করেন, তাদের থেকে এর বেশি কিছু আশা করা যায় না; সাময়িক ভোগ-বিলাস, ক্ষণকালের প্রেম-রোমাঞ্চ, অবাস্তব কাহিনীর টার্নিং পয়েন্ট ও কল্পনার ফানুশ ওড়ানো ছাড়া।
বাস্তব জীবনে এরা আদর্শ নন। আজ বাস্তব জগতে যেখানে সমস্যার অন্ত নেই, সেখানে গল্প-উপন্যাসে মেধার অপচয় যথেষ্টই হচ্ছে। এটা এক প্রকার নেশা, মানসিক আসক্তি। যুব-প্রজন্মের সিংহভাগই চিন্তাসমৃদ্ধ ও গবেষণামূলক বই-পুস্তক পাঠে আগ্রহ হারাচ্ছে। ওসবের কথা শুনলে গায়ে জ্বর আসে, তারচেয়ে বরং হুমায়ুন আহমেদ, জাফর ইকবাল বা সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ে মগ্ন হয়ে একটু রোমাঞ্চ খোঁজা ভাল। এতে নাকি জ্ঞান বাড়ে, আবিষ্কারের নেশা জাগে। অথচ এই প্রজন্ম বাংলাদেশের সঠিক ইতিহাসটাই জানে না। বিশেষ সময় ও পরিস্থিতিতে কবিতার অবশ্য একটা আবেদন আছে। কবিতা আবেগ সৃষ্টি করে, উদ্দীপনা জাগায়, হৃদয়ে ঝড় তোলে। তবে জ্ঞান বাড়ায় না।
আসলে আমি লেখা ও সাহিত্যের বিপক্ষে নই। কিন্তু আমাদের বুঝতে হবে সাহিত্য কি। সত্যিকার জ্ঞান অর্জনে সহায়ক লেখাই বা কি। আমাদের দেশে প্রতিবছর একুশে বইমেলা কেন্দ্রিক যে সাহিত্য গড়ে উঠেছে বা পার্শ্ববর্তী দেশ ও পশ্চিম থেকে সাহিত্যের নামে আমরা যা আমদানি করছি তাই কি সাহিত্য? প্রতিদিন শত শত জাতীয় দৈনিকে যে হাজার হাজার কলাম ও মন্তব্যধর্মী লেখা ছাপা হয় তাই কি জ্ঞান? প্রশ্নগুলো হয়তো কিছুটা মৌলিক, তাই সামান্য তিক্ত! যদিও কাউকে আক্রমণ বা একপেশে সমালোচনা করা আমার উদ্দেশ্য না।
সংবাদপত্রগুলো যা করছে, প্রথমত সংবাদ প্রদান ও অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরি। যেহেতু সামগ্রিকভাবে ভালো সংবাদের ঘাটতি, তাই পত্রিকাজুড়ে দুঃসংবাদ ও অপরাধ চিত্র। এতে করে সর্বস্তরের অস্বাভাবিক ঘটনা, দুঃসংবাদ ও জঘন্য অপরাধগুলো দিন দিন আমাদের কাছে ‘স্বাভাবিক’ ঠেকছে। সুতরাং জ্ঞান, ইতিবাচক মানসিকতা এবং শক্তিশালীদের পক্ষ থেকে দুর্বলদের জন্য গঠনমূলক পদক্ষেপের অভাবে ‘অবাধ তথ্যপ্রবাহ’ উপকারের পরিবর্তে চরম ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। দ্বিতীয়ত একদল পেশাজীবী লেখক/কলামিস্ট/সাংবাদিক বিপ্লবাত্মক সামাজিক-রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সরাসরি অংশ না নিয়ে বরং সুসজ্জিত রুমে বসে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে কেবল লেখালেখি নিয়েই দিনাতিপাত করেন। আর নিজেদের সুবিধামত সমকালিন ঘটনাবলী ও পরিস্থিতির মনগড়াা ব্যাখ্যা দাঁড় করান। বাস্তব কর্ম ও চিন্তার সঙ্গে গভীরভাবে সম্পৃক্ত থাকলে খুব বেশি লেখার সময় নেই, প্রয়োজনও নেই।
সেদিন কথা প্রসঙ্গে একজন বললেন, কেবল লেখার জন্য লেখা নয়, চাই সংস্কার; পরিবর্তন। সাবেক সেনা প্রধান মঈন উদ্দীন আহমেদ ওয়ান-এলিভেনের পর বাংলাদেশের রাজনীতি ও রাষ্ট্র পরিচালনায় একজন অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হয়ে ওঠেছিলেন। এর সূত্র ধরে পরবর্তীতে তিনি যখন বিশাল এক বই লিখলেন, অনেকেই বিশ্বাস করতে পারেনি যে, ‘তিনিও’ লিখতে পারেন। আজকাল ক্ষমতাবানদের অনেককেই বই লিখতে দেখা যায়, সারা জীবনেও লেখালেখির সঙ্গে যাদের কোনো সম্পর্ক ছিল না। তাই এক সাংবাদিক মন্তব্য করেছিলেন, বাংলাদেশে এখন লেখক-কবির সংখ্যা কাক-পক্ষীর চেয়ে বেশি। আসলেও তাই। লেখা যেন এখন কিছু লোকের শখ, আর কিছু লোকের পেশা। আত্মসমালোচনামূলক, অনুসন্ধানধর্মী ও জ্ঞানগর্ভ লেখনি বিরল। এর পাঠকও কম।
©somewhere in net ltd.