![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি এতিম, দরিদ্র, মুসাফির। হাঁটছি পৃথিবীর পথে পথে, অনিশ্চিত এক গন্তব্যের উদ্দেশে। আক্ষরিক অর্থেই আমি পথিক। একে একে জীবনযাত্রার সব সুতো কেটে দিচ্ছি। কাগজের নৌকা দিয়ে সাগর পাড়ির দুরন্ত প্রয়াস, যে সাগরের পাড় নেই। আমি একটি রাজ্যের মালিক, রাজা। রাজ্য পুনরুদ্ধার ও নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা অর্জনে চেষ্টিত। আমি মানবতার মুক্তির জন্য বিবেকের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। শোষিত-বঞ্চিতের পাশে দাঁড়াতে চাই।
বাংলাদেশের মতো একটি ছোট্র ও অনুন্নত দেশের পক্ষে বিশ্ব-ক্রিকেটের স্বপ্নিল অঙ্গন চষে বেড়ানো চাট্রিখানি কথা নয়। তাইতো কারও পা মাটিতে পড়তে চায় না। অথচ এ জাতির হাজার বছরের সংগ্রামী ইতিহাসের এটা একটা অংশ মাত্র। বাঙালি আজন্ম সংগ্রামী জাতি। এর প্রতিটি সদস্য জীবনযুদ্ধে ও অন্যান্য সব ব্যাপারে আত্মসম্মানবোধ রক্ষার ময়দানে এক একজন লড়াকু সৈনিক। এরই ধারাবাহিকতায় দীর্ঘদিনের অক্লান্ত পরিশ্রম, কঠোর অনুশীলন ও একনিষ্ঠ সাধনার ফসল- আন্তর্জাতিক ক্রিকেটমঞ্চে বাংলাদেশের গৌরবময় অবস্থান ও সাফল্য এ দেশের সম্পদ; বীরত্বের স্মারক। এ জন্য এ ক্ষেত্রে যেকোনো অর্জন ও বিজয় কোটি কোটি মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে যায়। যুগ যুগ ধরে শোষিত বঞ্চিত হয়ে আসা একটি মানবগোষ্ঠীর এতটুকু প্রাপ্তিতে উচ্ছ্বাসে-উল্লাসে মেতে উঠা, আনন্দের জোয়ারে ভেসে যাওয়া অতি স্বাভাবিক। কেননা বিশ্বের আবেগপ্রবণ জাতির খেতাবটাও আমাদেরই। তবে আজ মনে হয় এ বিষয়ে নজর দেয়ার সময় এসেছে যে, এ ধরণের আবেগ ও বাঁধভাঙ্গা উচ্ছ্বাস আমাদের নতুন প্রজন্মকে শেষ পর্যন্ত কোথায় নিয়ে দাঁড় করাবে?
এক সময় বাংলাদেশে ফুটবল খেলা তুমুল জনপ্রিয় ছিল। এখন সেটা নেই। তার পরও ফুটবল বিশ্বকাপের সময় বাংলাদেশের উন্মাদনা দেখলে শুধু আমি কেন, যে-কেউ অবাক হবে। ভিন দেশের পতাকায় ছেয়ে যায় বাংলার আকাশ। ফুটবলের ক্ষেত্রেই যদি এমন হয়, যেখানে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ নেই, ক্রিকেটের ক্ষেত্রে কেমন হবে বা হচ্ছে বলাই বাহুল্য। অথচ এসবের দ্বারা আমাদের কী পরিমাণ সম্পদ নষ্ট হচ্ছে, শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার ক্ষতি হচ্ছে, দৈনন্দিন ধর্ম-কর্মে বিঘ্ন ঘটছে তা কারও নজরে পড়ে না।
খেলাধুলার প্রতি এ ধরনের আবেগ-উন্মাদনা, প্রচারণা ও জাতীয় গুরুত্ব দেয়া কতটুকু যৌক্তিক তা গুণীজনই বিচার করবেন। এমন আবহ ও প্রেক্ষাপট তৈরির জন্য আমি প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াকেই দায়ি করব। ক্রিকেটের খবর প্রায়ই জাতীয় দৈনিকের প্রধান শিরোনাম হওয়ায় সর্বশ্রেণীর জনসাধারণ বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম প্রবলভাবে আকৃষ্ট হয়। শ্রমিকের কর্ম ফাঁকি, শিক্ষার্থীর ক্লাশ ফাঁকি, চাকরিজীবী ও ভিআইপির অফিস কামাই অহরহ ঘটে। এমনকি হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ডাক্তারকে দেখা গেছে রোগী ফেলে অন্য রুমে দরজা বন্ধ করে টিভিতে খেলা দেখতে।
একটি অনুন্নত দেশে-যেখানে লাখ লাখ গৃহহীন, বস্ত্রহীন, চিকিৎসাহীন, শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত, অন্নের অভাবে ঘর থেকে বের হলে আগুনে পুড়ে মরতে হয়, জীবন্ত দগ্ধ হতে হয়, জলে ডুবতে হয় কিংবা গাড়ির চাকায় পিষ্ট হতে হয়-সেখানে তাদেরই ঘাম ও রক্তের টাকায় বিনোদনের নামে শ’ শ’ কোটি টাকা অপচয় ও লোপাট- বিষয়গুলো আমি মেলাতে পারি না। বহির্বিশ্বে আমাদের পরিচিতির এতই যদি দরকার হয়, ‘আমাদের’ বলতে কাদের, এই মানুষগুলোর? বিদেশে কেন, এরা কি নিজ দেশে মানুষ হিসেবে পরিচয় দেয়ার পথ আছে? বিনোদনেই যদি পেট ভরে, ওপর তলার বাসিন্দারা রাস্তায় রাত যাপন করছে না কেন?
বিশ্ব আজ এমনই আত্মঘাতী প্রতিযোগিতায় মেতে ওঠেছে, জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা ‘মানুষ’ হওয়ার সময় পাচ্ছে না, জ্ঞানার্জনের সুযোগ নেই, এমনকি পারিবারিক-সামাজিক পরিবেশে অবস্থানের অবসর নেই। এর শেষ কোথায়? পাঠকগণকে আমার মতামতের বিপক্ষে কোনো কথা বা পরামর্শ জানাতে বিনীতভাবে অনুরোধ করছি।
জাকির মাহদিন : শিক্ষক, সমাজগবেষক
©somewhere in net ltd.