নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আধ্যাত্মিক পুরুষ, ধর্মগুরু; খানকা থেকে বলছি।

মুসাফির। হাঁটছি পৃথিবীর পথে পথে, অনিশ্চিত গন্তব্যে। কাগজের নৌকা দিয়ে সাগর পাড়ি দেবার দুরন্ত প্রয়াস

জেড মাহদিন

আমি এতিম, দরিদ্র, মুসাফির। হাঁটছি পৃথিবীর পথে পথে, অনিশ্চিত এক গন্তব্যের উদ্দেশে। আক্ষরিক অর্থেই আমি পথিক। একে একে জীবনযাত্রার সব সুতো কেটে দিচ্ছি। কাগজের নৌকা দিয়ে সাগর পাড়ির দুরন্ত প্রয়াস, যে সাগরের পাড় নেই। আমি একটি রাজ্যের মালিক, রাজা। রাজ্য পুনরুদ্ধার ও নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা অর্জনে চেষ্টিত। আমি মানবতার মুক্তির জন্য বিবেকের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। শোষিত-বঞ্চিতের পাশে দাঁড়াতে চাই।

জেড মাহদিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিপ্লব-প্রতিবিপ্লব ও আমার ভাবনা : প্রেক্ষাপট শাহবাগ স্কয়ার

১৪ ই মার্চ, ২০১৩ সকাল ১০:০৪

তারুণ্যের জোয়ারে উত্তাল শাহবাগ স্কয়ার; উত্তাল সমগ্র বাংলাদেশ। সবার একটাই দাবি- যুদ্ধাপরাধের বিচার চাই, রাজাকারের ফাঁসি চাই। একাত্তরের শত্রুদের, এ দেশে ঠাঁই নাই। সম্প্রতি ফেসবুক-ব্লগ থেকে শাহবাগ চত্বরে জড়ো হওয়া কয়েক হাজার তরুণ তরুণীর মাধ্যমে দেশব্যাপী যে নতুন আন্দোলন-সংগ্রামের সূচনা হল, তা থেকে যে অগ্নিস্ফুলিঙ্গের সৃষ্টি হয়েছে এবং রাজাকারদের ফাঁসির দাবিতে যে গণজোয়ার বইছে, মাত্র দু’দিন আগেও কেউ এমনটি ভাবতে পারেননি। আসলে কি ভাবতে পারেননি? না চিন্তাশীলদের অনেকেই এমন একটি গণবিস্ফোরণের প্রহর গুণছিলেন?



খোদ সরকারও সামাজিক যোগাযোগ সাইট এবং মতপ্রকাশের অবাধ স্বাধীন মাধ্যম এই ফেসবুক-ব্লগকেন্দ্রিক গণঅভ্যুত্থানের বিষয়টি অনেক আগেই আঁচ করতে পেরেছিল। তাইতো আরব বসন্তের পরপরই সরকার সচেতন হয়ে ওঠে। বাংলদেশে যেন এর প্রভাব না পড়ে অর্থাৎ কোন ইস্যুকে কেন্দ্র করে কোনভাবেই যেন তরুণ প্রজন্ম খোলা মাঠে একত্রিত হতে না পারে সেজন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে, উল্লেখযোগ্য হারে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু বাস্তবতা এই যে, আজ জেগেছে সেই তরুণ প্রজন্ম, জেগেছে জনতা, আবালবৃদ্ধবনিতা, সারা বাংলাদেশ। সব বাধা পেরিয়ে শ্রেণী পেশা ছাড়িয়ে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষ ছুটছে আজ শাহবাগের দিকে। সরকার এ গণজোয়ার ঠেকাতে ব্যর্থ হয়।

অবশ্য প্রথম দিকে এতে সরকারেরও প্রত্যক্ষ সহযোগিতা ছিল। কেননা এটা সরাসরি এবং আপাতত সরকারবিরোধী নয়, বরং সরকারের পক্ষেই বলা যায়। অন্যদিকে এছাড়া উপায়ও ছিল না। কারণ জামায়াতও হরতাল ও লাগাতার কর্মসূচী ঘোষণা করে শাপলা চত্বরে অবস্থান নিয়েছিল। যাহোক, শেষ পর্যন্ত এ আন্দোলনের ফলাফল কি হবে বা কোনদিকে মোড় নেবে বলা যায় না। যেহেতু ইতিমধ্যেই এ জনস্রোত নিজেদের পক্ষে নিতে বা এর কার্যকারিতা নস্যাৎ করতে সরকার এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও গোষ্ঠী তৎপরতা চালাচ্ছে।

এ বিপ্লব এখনও পর্যন্ত অরাজনৈতিক। স্বতস্ফূর্তভাবে সৃষ্টি হয়েছে এবং জনতার মাঝে ছড়িয়ে পড়েছে। শাহবাগ চত্বরের এ উত্তাল জনসমুদ্র যতক্ষণ পর্যন্ত অরাজনৈতিক ও নিরপেক্ষ চরিত্র বজায় রাখবে, ততক্ষণ এর দাবি ও কার্যকারিতা ব্যর্থ করার শক্তি কারও নেই। আমি নিজে গত দু’বছর ধরে ফেসবুক-ব্লগে যুক্ত থাকায় খুব কাছ থেকে দেখেছি বর্তমান আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা নিয়ে যুব সমাজের হতাশা ও ক্ষোভের মাত্রা। দেখেছি এক একজন তরুণ-যুবকের হৃদয়ে দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকা অগ্নিশিখা। কথা বলেছি তাদের সঙ্গে। এ সম্পর্কে নতুন করে বলার কিছু নেই। উপলব্ধি করেছি, অনলাইন এক্টিভ বিপুলসংখ্যক শিক্ষিত একটা প্রজন্ম নিরপেক্ষ। তারা কোন রাজনৈতিক দল বা উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর লেজুড়বৃত্তি করে না। একটি সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে যেতে চায়। এমনকি যে জামাত-শিবির আজ উন্মত্ত, আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি সেই জামাত-শিবিরেও হাজার হাজার শিক্ষিত আধুনিক তরুণ আছে, যারা সবধরনের লেজুড়বৃত্তি পরিহার করে সত্যিকার অর্থেই দেশ-জাতির সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করতে চায়। মানুষের কল্যাণে জীবন উৎসর্গ করতে চায়। কিন্তু তাদের সামনে সঠিক কোন আদর্শ বা পথ নেই। তথাকথিত জামায়াতে ইসলামী মূলত এই সুযোগটাই কাজে লাগাচ্ছে।

তাহরির স্কয়ার থেকে শাহবাগ চত্বর। আরব বসন্তের ঢেউ যে এত দ্রুত বাংলাদেশেও আছড়ে পড়বে তা হয়তো অনেকেরই কল্পনাতেও ছিল না। আজ দিকে দিকে আগুন, তারুণ্যের জোয়ার। দানা বাঁধছে বিক্ষোভ, বিস্ফোরণের অপেক্ষায়। রাজাকারদের ফাঁসির দাবিতে কারও দ্বিমত নেই। থাকার কথা নয়। তবে এ বিপ্লবকে সফল করতে, সাফল্যের ফসল ঘরে তুলতে এবং প্রতিবিপ্লবের সব পথ রুদ্ধ করতে আমাদের আরেকটু গভীরে যেতে হবে। সুতরাং এক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক আবেগের স্রোতে না ভেসে বরং দূরদৃষ্টি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণের বিকল্প নেই।



আমরা ভাল করেই জানি, তরুণ প্রজন্ম ও সাধারণ জনতা বিপ্লব সংঘটিত করতে পারে, বিপ্লবে নেতৃত্বও দিতে পারে, কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিপ্লব-পরবর্তী দেশ ও জাতিকে টেকসই গণতন্ত্র উপহার দিতে পারে না। যদি না তারা পর্যাপ্ত জ্ঞানগত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়। ফলে পরবর্তী নেতৃত্ব তুলে দিতে হয় অন্যের হাতেই। যেমনটা আমরা সম্প্রতি দেখেছি আরব দেশগুলোতে। বাংলাদেশে বিপ্লব নতুন নয়। বিশেষ করে গণতন্ত্রে অভিযাত্রার পর নিরব বিপ্লব বা ভোট-বিপ্লব হয়ে আসছে নিয়মিতই। শান্তিপ্রিয় জনগণ ও তরুণ প্রজন্ম বারবার শাসক বদল করছে, কিন্তু দেখা যাচ্ছে বেড়াই ক্ষেত খায়, কারও হাতেই গণতন্ত্র নিরাপদ নয়। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান ও একাত্তরের স্বাধীনতা সংগ্রাম এ জাতির গৌরবোজ্জল অধ্যায়। তেমনি ছিয়ান্নব্বইর গণআন্দোলন এবং আজকের শাহবাগ স্কয়ারের গণবিস্ফোরণ কোন অংশে কম নয়। তবু মূল সমস্যাটি আমাদের থেকেই যাচ্ছে। তা হচ্ছে, আজ পর্যন্ত সৎ, দক্ষ, সুশিক্ষিত ও নিরপেক্ষ একটি শাসকশ্রেণী গড়ে ওঠেনি।

কেন গড়ে ওঠেনি? আজ এই প্রশ্নটির উত্তর খোঁজা অত্যন্ত জরুরি । তা না করে আমরা যতই আন্দোলন-সংগ্রাম করি, যতই বিপ্লব সংঘটিত করি, হয় শাসকশ্রেণী গাদ্দারী করবে, আর নয়তো প্রতিবিপ্লব সবকিছু তছনছ করে দেবে।

যুদ্ধাপরাধের বিচার অবশ্যই হতে হবে। জামায়াতে ইসলামীর তরুণ প্রজন্ম যদি যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষ নেয় তাহলে এদেরও শাস্তির আওতায় আনা উচিত। প্রতিহিংসার রাজনীতি, পিটিয়ে মানুষ হত্যা, ভাংচুর, ফেৎনা, জ্বালাও-পোড়াও নীতি অবশ্যই ইসলামে নেই, নিজেদের অস্তিত্ব যতই সংকটে পড়ুক। আর তা যদি হয় নিজেদেরই দোষে তা হলে তো কথাই নেই। ইসলামের নাম দিয়ে এসব চলতে পারে না। তবে এরা ন্যায়বোধেই এসব হত্যা ভাংচুর করে যাচ্ছে এবং নিজেদের কেউ মারা গেলে বলছে ‘শহীদ’। ইসলামের নাম দিয়ে এসব প্রপাগাণ্ডা যেমন সমর্থনযোগ্য নয়, তেমনি সমর্থনযোগ্য নয় সরকারের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড, সীমাহীন জুলুম-অত্যাচার, বিরুদ্ধবাদীদেরকে দমন-পীড়ন, হত্যা-গুম ও অগণতান্ত্রিক আচরণ।



বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এ দেশের বিপুল সংখ্যক আধুনিক শিক্ষিত ও তরুণ মেধাবী একটা প্রজন্মকে সুপরিকল্পিতভাবে প্রশিক্ষণ দিয়েছে ও একটি আদর্শে দীক্ষিত করেছে- তা সঠিক হোক বা না হোক। এ বাস্তবতা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এর সমাধান কি? শহরে-বন্দরে, আনাচেকানাচে তাদের যে লাখ লাখ কর্মী নিয়োজিত আছে এদের শেষ করে দেওয়া? তা কি সম্ভব? যদি কেউ এ পথে অগ্রসর হতে চায় তাহলে আমার মনে হয় গৃহযুদ্ধের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। গৃহযুদ্ধ না হলেও অন্তত এদের অনুসারীরা থাকবেই। যেমনভাবে একাত্তরের পরেও ছিল। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, এরা আমাদেরই ভাই-ভাতিজা, পাড়া-প্রতিবেশি। একাত্তরের পরে যাদের জন্ম। এ প্রজন্মটি ভুল শিক্ষার শিকার। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এদের দোষ নেই। সুতরাং এদের সংশোধনের শান্তিপূর্ণ কোন পথ কি খুঁজে বের করা যায় না?

কওমী মাদ্রাসা পড়ুয়াদেরও অধিকাংশই হয়তো আধুনিক শিক্ষা গ্রহণ করেনি। কেউ কেউ বিপথগামী বা জঙ্গীবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত। কিন্তু তাই বলে ঢালাওভাবে সবাইকে দায়ি করা যায় না। বিশেষ করে এদের অনেকেই আজও যে চারিত্রিক দৃঢ়তা, আত্মিক পরিশুদ্ধতা, পারিবারিক দায়-দায়িত্ববোধ ও সামাজিক নীতি-নৈতিকতা ধারন করে এবং রাষ্ট্রীয় নিয়ম-শৃঙ্খলা মেনে চলে তা দেখলে অবাকই হতে হয়। রাষ্ট্র ও সমাজ এদের প্রতি সহযোগিতার হাত প্রসারিত করলে এবং এদের মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনলে আমরা জাতি হিসেবে প্রভূত উন্নতি লাভ করব নিঃসন্দেহে।



কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়ারাও সবাই ধোয়া তুলসি পাতা নয়। সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, মাস্তান অভাব নেই। এরা সমাজ-বিচ্ছিন্নও নয়। সুতরাং সব ক্ষেত্রেই যেহেতু ভাল-খারাপ আছে এবং কাউকেই আমরা বাদ দিয়ে চিন্তা করতে পারি না, তাই সবাইকে নিয়েই একটা সুখী সমৃদ্ধ সমাজ-রাষ্ট্রের কথা ভাবতে হবে। বর্তমান প্রতিহিংসাপরায়ণ রাজনীতি, দলীয় মনোবৃত্তি, চলমান দ্বন্দ্ব-সংঘাত, আক্রমণাত্মক নীতি প্রভৃতিকে আমরা প্রবলভাবে ঘৃণা করি, অনলাইন একটিভিস্টরা ঘৃণা করে। আমরা চাই সবাইকে নিয়ে বাঁচতে। সবার জন্য এ দেশ। সবার জন্য সবাই।



বিশেষ দ্রষ্টব্য: এ লেখাটি শাহবাগ আন্দোলন শুরু হওয়ার ৪দিন পর লিখেছিরাম, কিন্তু ব্যস্ততার কারণে প্রকাশ করতে পারিনি। ইতোমধ্যেই এর অনেক পয়েন্ট প্রাসঙ্গিকতা হারিয়েছে। তবুও এর কিছুটা প্রাসঙ্গিকতা এখনও থাকায় প্রকাশ করলাম।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.